#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_21
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
আমি আর সমুদ্র ভিজে শরীরে মাথা নিচু করে বেডের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।বেডে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আমাদের মা মানে আলো।
সরি বলছি আলো।(আমি)
লাগবে না আমার সরি।(আলো মুখ ফুলিয়ে)
আর এমন হবে না আলো।(সমুদ্র)
আজ কেনো হলো?তোমরা কি করে ভিজলে আমাকে ছাড়া।আমিও ভিজতাম বৃষ্টিতে তোমাদের সাথে কিন্তু তোমরা আমাকে ছাড়াই ভিজেছো।(আলো)
সরি।নেক্সট টাইম তোমাকে সাথে নিয়ে ভিজবো।আব্বু প্রমিজ।(সমুদ্র আলোর সামনে হাঁটু মুড়ে)
সত্যিই!(আলো)
সত্যিই।এখন মুখ ফুলিয়ে বসে থেকো না প্লিজ।(আমিও আলোর সামনে হাঁটু মুড়ে বসলাম)
ওকে আম্মু আব্বু তোমরা বেস্ট।
বলেই আলো আমাদের জড়িয়ে ধরলো।
এইটাই মনে হয় একটা পরিবারের সুখ।সকল দুঃখ কষ্ট সব সময় এক সাথে থাকে।এইটাই তো শক্তি তাই না?আমার পরিবারই আমার শক্তি।
।
।
আমি ফ্রেশ হয়ে আলোকে গোসল করিয়ে তৈরি করছি তখনই সমুদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
আলমারি খুলে বাহিরে যাওয়ার কাপড় বের করে আবার তৈরি হতে শুরু করলো।
কোথাও যাবে?(আমি)
হুম।বাহিরে একটু কাজ আছে ফিরতে লেট হবে।হয়তো দুপুর আর রাতের খাবার খেতে পারবো না।(সমুদ্র)
ও আচ্ছা।তাহলে তাড়াতাড়ি এসো।(আমি)
আসার সময় চকোলেট নিয়ে এসো আব্বু।(আলো সমুদ্রের কোলে উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো)
ওকে আম্মু।
বলেই সমুদ্র আলোকে কোলে তুলে একটা চুমু দিলো।তারপর আমার কাছে এসে কপালে একটা চুমু দিয়ে আলোকে আমার কোলে দিয়ে বাহিরে চলে গেলো।
।
।
দুপুরে খাবারের টেবিলে
আমি আলোকে খাইয়ে দিচ্ছি আর আলো পুতুল নিয়ে খেলছে।মা আর সোনালী সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।মিতু ভাবীর আজ বলে ছুটি।মিতু ভাবীর দায়িত্ব এই কয়দিন সোনালী পালন করবে কড়া আদেশ মার।এই এক সপ্তহের মধ্যে নাকি উনি সোনালী আপুকে কাজ শিখিয়ে ছাড়বে।আর এতে যেনো আমরা কোনো নাক না গলাই।আমরাও আর মার সাথে পেরে উঠতে পারলাম না।মা নিজের হাতে সোনালী আপুকে সব শিখাচ্ছে।সত্যিই এক জন মাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।উনিই পারেন একটা সন্তানকে সঠিক ভাবে মানুষ করতে।নিজের সন্তান আছে বলে এখন বুঝতে পারছি মা হওয়া যেমন আনন্দের তেমন অনেক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হয়।সন্তানের বলার আগে বুঝে নেয়ার ক্ষমতা রাখতে হয়।আসলে মা মানেই সুপার ওম্যান।সব কিছুর সমাধান একটাই আর সেটা হচ্ছে মা।যেনো এটা একা শব্দ না একটা অনুভুতি,একটা শক্তি।
যাই হোক আমি আলোকে খাওয়াচ্ছি আর ভাবছি আমি কি একটা ভালো মা হতে পারবো তখনই মিতু ভাবী আমার পাশে এসে বসলো।
ফুল দে আমি আলোকে খাইয়ে দিচ্ছি।(মিতু)
না ভাবী।আলোর খেতে অনেক দেরি হয়।আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুমি গিয়ে বরং খেয়ে নাও।(আমি)
আমার খাওয়া শেষ।এখন আমি আলোকে খাইয়ে দিচ্ছি তুই গিয়ে খেয়ে নে।
বলেই আমার কাছ থেকে প্লেটটা নিয়ে নিলো।
ওকে ভাবী।আলো বড়ো আম্মুকে বিরক্ত করো না।(আমি আলোর মাথায় হাত দিয়ে)
ওকে আম্মু।(আলো)
আমি একটা প্লেট নিয়ে টেবিলে বসলাম।
মা আমার খাবারটা বেড়ে দাও তো!
কেমন বউ শাশুড়িকে বলছে খাবার বেড়ে দিতে।(খালাম্মা খাবার খেতে খেতে)
আপা এমন করে কেনো বলছেন আমার মেয়ে হলেও তো আমি খাবার মুখে তুলে দিতাম আর ও তো খাবার বাড়ার কথা বলছে।এতে আর এমন কি!মা হয় মেয়ের জন্য এইটুকু তো করতেই পারি।
বলেই মা আমার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলো।
আসলে খালাম্মা কি বলেন তো!এই বাড়িতে কখন শাশুড়ি মা হয়ে যায় বউ মেয়ে হয়ে যায় আপনি বুঝতেই পারবেন না।এই জন্যই তো আমাদের পরিবারে কোনো তুলনা হয় না।(সোনালী খালাম্মার প্লেটে খাবার দিতে দিতে)
খালাম্মা দাত চেপে সহ্য করতে লাগলো।
কিছুদিন থাকুন ভালোবাসা আপনার রূপও পরিবর্তন করে দিবে।(সোনালী খালাম্মার কানে কানে ফিসফিস করে)
খালাম্মা সোনালীর দিকে বড়ো বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
মা আজ বাবা আসলো খেতে?(আমি খেতে খেতে)
তোর বাবা বলছে তার নাকি অনেক দরকারি কাজ পড়ে গেছে।তাই আজ রাতেও লেট আসবে।আর বলছে কি যেনো ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে তাই রাতে সবাই যেনো এক সাথে বসার ঘরে থাকি।(আয়শা)
কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা হবে?(আমি)
আচ্ছা ফুল সমুদ্র কই? ও তো অফিসেও যায় না।(মিতু)
বাবা বাহিরে গেছে।বলছে আসতে লেট হবে।আমি বলছি আমার জন্য চকলেট আনতে!(আলো খেতে খেতে)
তাই নাকি?
বলেই আরো এক লোকমা খাইয়ে দিল মিতু।
।
।
কিছুক্ষণ পর
আলোকে আমি আমার কোলে ঘুম পাড়িয়ে এখন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।আর ভাবছি কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে বাবা?আর সমুদ্রই বা কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো!
।
।
রাতে
আমরা সবাই একসাথে বসে আছি।বাবা আর সমুদ্র এক সাথে এসেছে।সমুদ্রের হাতে কাগজে মুড়ানো কি যেনো আছে!
সবাই এসে পড়েছ?(আরমান)
চোখ কি কোম্পানির লেপটপে রেখে এসেছো।নাকি এই বাড়ি হাজারটা মানুষ থাকে যে তুমি দেখতে পাচ্ছো না সবাই এসেছে কি না?(আয়শা ক্ষেপে)
এমন করে বলছো কেনো?কোম্পানিতে মিটিং এর সময় এটা বলি তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।(আরমান)
এই বাড়ির কোম্পানির হেড আমি(আয়শা)
ভুল হয়ে গেছে ম্যাম।এখন আসল কথায় আসি।সমুদ্র দেখা।(আরমান)
ফুল এই নে দেখ(সমুদ্র ওর হাতে থাকা জিনিসটা আমাকে ধরিয়ে দিলো)
কি এইটা?(আমি হাতে নিয়ে)
খুলে দেখ।(সমুদ্র মুচকি হাসি দিয়ে)
ওকে।
বলেই আমি খুলতে থাকি।
খুলে দেখি তার মধ্যে একটা কার্ড ছিলো।একটা বিয়ের কার্ড
র্কার্ডটা খুব সুন্দর।কিন্তু এইটা কার বিয়ের কার্ড?(আমি)
দেখ ভিতরে নাম লিখা আছে?(সমুদ্র)
আমি কার্ডটা খুলেই অবাক হয়ে গেলাম।
আমি এমন অবাক হয়েছি যে আমার হাত পা ঠান্ডা হতে শুরু করলো।
এতে কি আছে?যেটা দেখে তুই বরফ হয়ে গেলি।দে তো দেখি।
বলেই সোনালী আপু আমার কাছ থেকে কার্ডটা নিলো।
ও তেরি।(সোনালীও কার্ড দেখে অবাক)
দূর।আমি দেখি।
বলেই মিতু নিলো।
হ্যা?(মিতুও অবাক হয়ে)
তোদের এই ইন্ডিয়ান সিরিয়াল টাইপ রিয়েকশন দেখে আমার রাগ হচ্ছে।কি আছে ওতে দে আমাকে?
বলেই আয়শা মিতুর কাছ থেকে কার্ডটা নিলো।
আলহাদুলিল্লাহ।তাহলে তো আরো কাজ বেড়ে গেলো।এদিকে হাতে তো আর সময় নেই।তার উপর দুটো বিয়ে আমার তো সব চেয়ে বেশি কাজ দুটো মেয়ে আর একটা ছেলের বিয়ে।(আয়শা এক্সসাইটেড হয়ে)
তুমি কবে কি করে?কখন তোমার মাথায় আমাদের বিয়ের কথা আসলো!(আমি অবাক হয়ে)
অনেক আগেই এসেছিলো। জাস্ট কোনো ভালো সুযোগ পাচ্ছিলাম না।তাই ভাবলাম এখন করা যাক। তোর কোনো সমস্যা নেই তো সোনালী?(সমুদ্র)
মজা করছিস ভাই।আমি তো সেই খুশি আমার সাথে তোর আর ফুলেরও বিয়ে হবে।এটা ভাবতেই আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে!(সোনালী এক্সসাইটেড হয়ে নাচতে নাচতে)
আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন ছিলো এই কার্ড তুমি কখন ছাপালে?(মিতু)
আমারও একই প্রশ্ন!(সোনালী)
ভাবী সোনালী বলছি সব।আজকে যখন আমি দুপুরে বেরিয়ে যাই তখন আমি সোজা বাবার অফিসে যাই।সেখানে গিয়ে বাবাকে আমার পরিকল্পনা বলি।তিনি এই বিয়েতে কোনো আপত্তি করেনি।বরং আরো খুশি হয়েছে।তারপর বাবার সাথে আমি সায়ানদের বাসায় যাই।উনাদের আমাদের কথা বলি তারাও কোনো আপত্তি করে নি।তারা আরো এক্সসাইটেড হয়ে গেছে একদম সোনালীর মত।(সমুদ্র)
আমার শশুর বাড়ি বলে কথা।(সোনালী ভাব নিয়ে)
তারপর সেখান থেকে আমি আর বাবা কার্ড ছাপাতে যাই। ইমারজেন্সি এই কার্ড গুলো ছাপিয়ে আনি।সরি ফুল তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলে কিছু বলিনি।কার্ড কি তোর পছন্দ হয়েছে?(সমুদ্র)
আমি কোনো কথাই বলছি না।
ফুল!তোর মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে কেনো? জ্বর এসেছে নাকি?(সমুদ্র)
আরে আমার দেবর সাহেব এই লাল জ্বরের না।এই লাল মনের তাই না আমাদের লজ্জাবতী লতা।(মিতু ভাবী আমাকে খোচা মেরে)
ভুল বলেছো ভাবী লজ্জাবতী লতা না উনি হচ্ছে লজ্জাবতী ফুল।(সোনালী)
ভাবী আপু তোমরাও না।(আমি লজ্জা পেয়ে)
হ্যা হ্যা।
সবাই হাসছে।
আচ্ছা শুনো শুনো।কালকে সবাই শপিং এ যাবে। কার কি লাগবে লিস্ট করে নাও আর রাতের মধ্যেই।পড়ে বলবে আমার এটা আনা হয় নি ওটা আমার লাগতো।এমন করলে কিন্তু চলবে না।স্পেশালি তুমি আয়শা মনে করে সব লিস্ট করবে।(আরমান)
ইসস!লিস্ট আমি ঠিকই করি।তুমিই লিস্ট মত কিছু আনতে পারো না।অযথা আমাকে দোষ দিবে না।(আয়শা)
আচ্ছা বাবা।সব দোষ আমার হয়েছে।এখন রাতের খাবার দাও খুব ক্ষিদে পেয়েছে।আর তোমার বোন কোথায়?(আরমান)
উনি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।(আয়শা)
আল্লাহ বাঁচাইছে।(আরমান হাফ ছেড়ে)
কিছু বললে?(আয়শা)
কিছু না কিছু না। চলো চলো খাবো।(আরমান)
আলো কোথায়?(সমুদ্র)
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।বলেছিলো আমাদের সাথে জেগে থাকবে।অনেকক্ষন জেগেও ছিলো পরে ঘুমিয়ে পড়েছে।(আমি)
কার্ড পছন্দ হয়েছে?(সমুদ্র)
হুম।অনেক সুন্দর!(আমি)
তোর ধুমধাম করে বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ হবে।(সমুদ্র)
থ্যাঙ্ক ইউ।(আমি মুচকি হেসে)
সমুদ্রও মুচকি হাসি দিলো।
।
।
ঘুমানোর সময়
ভাবী এটা কি হলো?এটা কিন্তু ঠিক না?(সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে)
তাইনাকি!বিয়ের আগে বর এবং কনে এক সাথে থাকার নিয়ম নেই।(মিতু)
কিন্তু ও তো অলরেডি আমার বউ।আমাদের বাচ্চাও আছে।(সমুদ্র)
আমি জানি ও তোমার বউ।আর সার্টিফিকেট হিসেবে বাচ্চাকে দেখাতে হবে না।(মিতু ভাব নিয়ে)
তাহলে ভাবী আমার বউকে আমায় দিয়ে দাও প্লিজ!(সমুদ্র)
দেবো তো দেবো।বলছি তো দেব।না তো আর করিনি।কিন্তু বিয়ে হওয়ার পর।আর বিয়ের হওয়ার আগ পর্যন্ত ফুল আমার সাথে আমার রুমেই থাকবে।no comments।
বলেই মিতু সমুদ্রের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
এতক্ষন পর্যন্ত তাদের দেবর ভাবীর কথা শুনছিলাম আমি।রাতের খাবার শেষ হতে না হতেই মিতু ভাবী আমাকে তার সাথে জোর করে তার রুমে এনে বেডের উপর বসিয়ে দিলো।আর কড়া গলায় বলে দিলো বিয়ের আগ পর্যন্ত আমাকে তার সাথেই থাকতে হবে সমুদ্রের সাথে বিয়ের আগ পর্যন্ত ভুলেও আমি যেনো না থাকি।আমারও কেনো জানি এই কথায় সায় দিতে মন চাইলো।বিয়েতে এমন খুনসুটি তো আমিও চেয়েছিলাম।ধীরে ধীরে সবই পূরণ হচ্ছে আমার।
দেখলি ফুল আমি কথা গুলো বলাতে সমুদ্রের মুখ কেমন চুপসে গেলো!(মিতু ভাবী খুশি হয়ে)
এমন করা কি ঠিক হচ্ছে ভাবী!(আমি সংকোচ বোধ করে)
আরে বাদ দে।যা হচ্ছে শুধু উপভোগ কর।এই মুহূর্ত আর কোনো দিন ফিরে পাবি না।বুঝলি?নে এখন ঘুম কালকে সকালে অনেক কাজ করতে হবে।(মিতু)
ওকে ভাবী।
বলেই আমি ভাবীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলাম।উনিই পরম যত্নে বোনের মতো আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
।
।
চলবে,,,