#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_8(#অতীত_স্পেশাল_2)🌸
Writer::Shaanj Nahar Sanjida
।
।
এই নাও তোমার পড়া শেষ!(স্যার)
আলহাদুলিল্লাহ।(আমি খুশি হয়ে)
স্যার আমার কথা শুনে হাসি দিল।
স্যার তাহলে আমি খেলতে যাই।
বলেই একটা দৌড় দিলাম।তখনই দাদুম সামনে পড়লো।
স্যার এখন গেছে?(আমান)
না।(আমি মাথা নেড়ে)
তাহলে?তুই কি স্যারকে পড়াস নাকি স্যার তোকে পড়ায়?(আমান ভ্রু কুঁচকে)
তাতো আমিও ভাবি!(আমি বিড়বিড় করে)
কিছু বলেছিস?(আমান)
না। দাদুম যাই না খেলতে।(আমি এইবার কেদে দিয়ে)
আমান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো
যা।কিন্তু সন্ধ্যার আগে চলে আসবি।
ইয়ে।
বলেই একটা দৌড় দিলাম।আর কে আটকায় আমাকে!আগে বের হই সন্ধ্যার আগে আসবো না পরে তা পরে দেখা যাবে।
সরি স্যার।বাচ্চা মানুষ আর কি করবেন?(আমান)
বুঝতে পারছি স্যার।কিন্তু মেয়েটা পড়ালেখায় ভালো মনোযোগ দিলে অনেক আগে যেতে পারবে।(স্যার)
হুম।চলুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
বলেই আমান স্যারকে এগিয়ে দিয়ে আসলো।
।
।
অন্যদিকে
আমি খেলার পাল্লায় পড়ে এতই মগ্ন ছিলাম যে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে খেয়ালই করিনি।
এইরে আজ আমাকে নির্ঘাত একশোটা কথা শুনাবে।এখন কি করবো?(আমি মনে মনে)
আমি চুপি চুপি বাড়িতে ঢুকতে লাগলাম তখনই দাদুম আমাকে আটকে
আমি তোকে দেখতে পেয়েছি!(আমান)
দূর।কি করে জানতে পেরে যাও তুমি?(আমি নিরাশ হয়ে)
কারণ আমি তোকে বড়ো করছি তুই আমাকে না।(আমান)
সেই এক কথা!(আমি মুখ ফুলিয়ে)
যা হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বস।আমি আসছি।(আমান)
আবার পড়তে বসবো!(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)
হুম।আবার পড়তে বসবি।(আমান)
দূর ভাল্লাগেনা।
বলেই মুখ ফুলিয়ে রুমে চলে গেলাম।
আমান হাসতে হাসতে।
পাগল মেয়ে একটা।কই গো ওর নুডুলস হয়েছে?(আমান)
হো।বাবা হইছে।এই লন।
বলেই কাকিমা নুডুলসের বাটিটা আমানকে দিলো।ওইটা নিয়ে আমান রুমে গেলো।
।
।
রুমে
গিয়েই দেখে ফুল সুন্দর করে পড়তে বসেছে।
বাহ!ফুল দেখি খুব ভালো মেয়ে হয়েছে গেছে।(আমান ফুলের পাশে বসে)
ভালো মেয়ের কিছুই না।আজ অনেক বকা খেয়েছি আর খেতে চাই না তাই পড়তে বসেছি।(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)
এইরকম বাধ্য হলে তো আর দাদুম বকে না।তুই তো বাধ্য হোস না।(আমান)
পড়তে দাও।
বলেই বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।
এই নে।খেলে এসেছিস খিদে লেগেছে।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
বলেই দাদুম আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
আমিও বাধ্য মেয়ের মত খেয়ে দেয়ে পড়তে লাগলাম। দাদুম আমাকে পড়াতে লাগলো।
দুই ঘণ্টা পর আমান কাজের জন্য একটু বাহিরে গেছে এসে দেখে ফুল টেবিলে বইয়ের উপর মুখ রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।আর তা দেখে আমান মুচকি হেসে ফুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
সারাদিন দুষ্টামি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে আমাদের ফুল।
বলেই কোলে করে এনে বিছানায় শুয়ে দিলো।কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে দিল পরেই চাদর টেনে, রুমের লাইট অফ করে দরজা হালকা করে লাগিয়ে দিলো।
।
।
এইভাবেই হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে কাটতে লাগলো আমাদের দিন।আমরা দাদা নাতির ঝগড়া খুনসুটি চলতেই লাগলো।একটা স্বপ্নের মতো ছিলো আমাদের সেই দিন গুলো।রোজ সকালে ফজরের নামাজ শেষ করে দাদুম আমাকে টেনে তুলতো যাতে আমি মসজিদে গিয়ে আরবী পড়ি।আর আমিও এতো সকালে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য মুখ ফুলিয়ে থাকতাম।তবে সেখানে গিয়ে পড়তে আমার ভালোই লাগতো।পড়া থেকে আসার পরই দাদুম আমাকে রেডি করে দিতো,,খাইয়ে দিতো,,চুলে দুটো বেনু করে দিত।তারপর উনার হাত ধরে আমি নাচতে নাচতে স্কুলে যেতাম।সেখানে আমার অনেক বন্ধু ছিল ঠিকই তাদের সাথে আমি অনেক খেলতাম কিন্তু কেউ না তেমন আমাকে ভালোবাসত না কারণ আমার বাবা মা ছিলো না।গ্রামে মা বাবা ছাড়া ছেলে মেয়েদের কেনো যেনো অন্য চোখেই দেখা হতো।অনেক ঝগড়াও করতাম,,যে খেলায় চিটিং করতো তার সাথে।এমন একটা দিনও ছিলো না যে দাদুম আমাকে নিতে এসে একটা হলেও আমার বিচার পেয়েছে।স্কুল শেষে দাদুম যখনই আমাকে নিতে আসতো তখনই রাস্তা দিয়ে যেতাম আর কিছু না কিছু একটা খেতাম।একদিন মালাই আইস ক্রিম,,তো এক দিন ঝাল মুড়ি,,আরেক দিন চটপটি,,আরেক দিন ফুসকা,,চকলেট,,চিপস,,আরো অনেক কিছু দাদুম আমাকে কিনে দিতো।মাঝে মধ্যে দাদুও খেতো আমার সাথে।আমরা অনেক মজা করে বাড়ি ফিরতাম।
স্কুলে ফার্স্ট গার্ল ছিলাম ঠিকই কিন্তু তা শুধু দাদুমের কারণে উনি আমাকে পড়াতেন।এমনি তো আমার লেখা পড়ার দিকে কোনো মনোযোগই ছিলো না।আমি স্কুলে যেতাম শুধু খেলতে।কারণ আমি খেলতে ভালোবাসতাম।এইভাবেই কেটে গেলো একটা বছর।
।
।
আমার যখন আট বছর বয়স তখন একদিন আমি স্কুলে ক্লাস করছিলাম।তখন হটাৎ কেনো জানি হেড স্যার আমাকে ডেকে পাঠানো হলো।আমি হেড স্যারের রুমে গিয়ে দেখি কাকা দাড়িয়ে আছে।কিন্তু উনার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।অনেক কেঁদেছেন মনে হয়।আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
কাকা তুমি কাদঁছো কেনো? কেউ কি তোমাকে বকেছে?বকলে দাদুমকে বলো উনি ওই লোককে বকে দিবে।আমাকে কেউ বকলে আমি তো দাদুমকে বলি পরে উনিই বকে দেন।(আমি)
আমার কথা শুনে যেনো কাকা আরো কাদতে শুরু করলো।
চলো মা।(কাকা কাদতে কাদতে)
কোথায় যাবো?স্কুল থেকে চলে গেলে দাদুম আমাকে বকবে।(আমি)
তোমার দাদুমের কাছেই যামু।(কাকা আমার হাত ধরে)
দাদুম বলেছে?(আমি অবাক হয়ে)
হুম। এহন চলো।
বলেই কাকা আমার হাত ধরে নিয়ে গেল।আর স্যার বলো একজনকে দিয়ে পরে নাকি আমার ব্যাগ পাঠিয়ে দিবে।
আমরা যেতে যেতে
ভালোই হয়েছে কাকা তুমি এসেছো।আমার না আজ একটুও পড়তে ভালো লাগছিলো না।আজ আমার দাদুমের সাথে খেলতে ইচ্ছে করছে।আমি এখন গিয়েই দাদুমের সাথে খেলবো(আমি)
কাকা আমার কথার উত্তরে কিছুই বললো না।শুধু চোখের জল ফেলতে লাগলো।
আমি উনার চোখের জলের কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না।তবে কেনো জানি উনার চোখের জল দেখে আমারও খুব কাদতে ইচ্ছে করলো।কিন্তু কেনো তা জানি না!
বাড়িতে ঢুকেই দেখি অনেক লোক সবাই কান্না করছে।আরমান আঙ্কেল,,আয়শা আন্টি সুমাইয়া আপু,,সাগর ভাইয়া আর তাদের সাথে আরেকটা ছেলে(সমুদ্র) আমি নাম জানি না।তারা সবাই কেনো কাদঁছে!অনেক কাদছে।বাড়ি ভর্তি লোক সবার মুখই গোমড়া।তাদের ছেড়ে যেনো কেউ চলে গেছে।তাই সবাই এমন করে কাদছে।কিন্তু কে চলে গেছে।আমি বাড়ির আরেকটু ভিতরে গিয়ে দেখি একটা খাটের মত কিছু একটার উপর সাদা কাপড়ে দাদুমকে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।আর উনি চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।সবাই কাদঁছে আর এর মধ্যে দাদুম কি করে ঘুমিয়ে আছে।একটা শব্দ পড়লেও তো দাদুর ঘুম ভেঙে যায় তাহলে সবাই এতো শব্দ করে কাদছে এতেও দাদুমের ঘুম ভাঙলো না?আর উনি এই রকম খাটে কেনো ঘুমাচ্ছে?যখন পাশের বাড়ির খালা মারা গেছে তখন উনাকে এমন খাটে শুয়ে থাকতে দেখেছি তবে কি দাদুম,,?তাহলে এইজন্য সবাই কাদঁছে।কিন্তু দাদুম কি করে?আজ সকালেও তো উনি ঘুম থেকে উঠিয়ে আমাকে মসজিদে পাঠালো।আমাকে তৈরি করে,,আমাকে খাইয়ে চুল বেঁধে দিলো।আমাকে স্কুলে নিয়ে গেলো।সকালেও তো উনি কতো সুন্দর আমার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো হটাৎ কি হলো?স্কুলে যাওয়ার সময়ও তো উনি ঠিক ছিলো।আমাকে বলেছিলো আমি যেনো দুষ্টামি না করি!ভালো করে লেখাপড়া করি,, কারো সাথে ঝগড়া না করি,,সবার সাথে যেনো বন্ধুত্ব করি।তবে কি করে এতো তাড়াতাড়ি কি করে উনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।আমি কি করে থাকবো?আমি কি করবো? কার কাছে বায়না ধরবো? কার সাথে খেলবো? কার সাথে ঝগড়া করবো?কে আমাকে বকবে?কে আমাকে জোর করে পড়তে বসাবে?আমি কার সাথে হাসবো,, কার বুকে মাথা রেখে কাদবো?কে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারাবে?আমি তো কোনো দিন ভাবি নি দাদুমকে ছাড়া আমার জীবন?আমার বুঝ হাওয়ার পর থেকেই তো দাদুমই আমার আপনজন।ঘুম থেকে চোখ খোলার পর থেকে ঘুমের জন্য চোখ বুজার আগ পর্যন্ত আমি শুধু দাদুমকেই পেয়েছি।জীবনের একটা মুহূর্তও দাদুমকে ছাড়া আমি ভাবনা করা তো দূরে থাক আমি জীবনেও কল্পনা করিনি। দাদুমকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো?
এইসব ভাবতেই চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসলো।চোখের পাতা ভার হয়ে আসতে লাগলো।আমি যেনো কার বুকে ঢলে পড়লাম।
।
।
চলবে,,,