এক ফোঁটা প্রেমের বিষ পর্ব-২৬ শেষ পর্ব

0
4008

#এক_ফোঁটা_প্রেমের_বিষ
#Tahmina_Akhter

[অন্তিম অংশ]

রৌদ্রময় দিন। আকাশে আজ সাদা এবং নীলচে মেঘের ভেলা উড়ে যাচ্ছে অজানা পথে। আকাশের বুকে ডানা মেলে উড়ছে নানান পাখি। মাঝে মাঝে দুএকটি ঈগলের দেখা মিলছে। বাতাসের তোড়ে গাছপালা গুলো এপাশ থেকে ওপাশ হেলছে দুলছে।

রাস্তায় ছোট-বড়ো সকল যানবাহন জ্যামে আঁটকা পড়েছে। জ্যামের আঁটকে আছে শোয়েবের গাড়ি। গাড়িতে বসে প্রহর গুনছে ঠিক কখন এই জ্যাম থেকে রক্ষা পাবে। হসপিটালের ডিউটি শেষ করে আজ খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে শোয়েব। শোয়েবের মেয়ে দুটোর বয়স এখন দুইমাস। খিলখিলিয়ে হাসে। শোয়েব সারাদিনের ক্লান্তি নিমেষে ভুলে যায় দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকালে।

জ্যাম ছুটে যায়। শোয়েব ধীরে ধীরে গাড়ি নিয়ে রওনা হয় নারায়ণগঞ্জের পথে।

বাসায় পৌঁছেতেই শোয়েব দেখলো ঘরের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি শোয়েবের মা এবং দুই মেয়েও বাড়িতে নেই। চিন্তিত ভঙ্গিতে ইরাবতীর কাছে কল দেয় শোয়েব। ইরাবতী কল রিসিভ করে শোয়েবকে বললো,

— ভাইয়া, পপুলার হসপিটালে চলে এসো।

— কিন্তু, কি হয়েছে? মা, মাহি আর মেহনুবা কোথায়?

— ভাবিকে নিয়ে হসপিটালে এসেছি আমরা। ভাবির অবস্থা ভালো নয়। সকাল থেকে শ্বাস নিতে প্রবলেম হচ্ছিল। আমরা সবাই মিলে ভাবিকে নিয়ে হসপিটালে চলে এসেছি। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো আমার খুব ভয় হ…

ইরাবতী পুরো কথাটি সম্পুর্ন করতে পারেনি। কারণ, শোয়েব কল কেটে দিয়েছে।

শোয়েব স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর কত অপেক্ষা, আর কত চোখের অশ্রু ঝড়ালে তার মন সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবে।

মিলির সেই রাগী চেহারা, কান্না মাখা চোখ, শত অবেহলা পেয়েও ঠোঁটে মুচকি হেসে ঝুলিয়ে রাখা, মিষ্টি চোখে তাকিয়ে মধুর সুরে কথা বলা ” মন” কি কখনো সুস্থ হয়ে শোয়েবকে “ভালোবাসি” কথাটি বলার সুযোগ দিবে না?

চোখের কোণে জমে থাকা জল শার্টের হাতা দিয়ে মুছে গাড়ির চাবি নিয়ে দৌঁড় লাগায় হসপিটালের উদ্দেশ্য।

হসপিটালের একটি অভিজাত কেবিনে শোয়েবের পুরো পরিবার একসাথে জড়ো হয়ে আছে। মেহনুবা ওর দাদির ঘাড়ে মুখ গুজে অঘোরে ঘুমিয়ে আছে। আর মাহি তার মায়ের পাশে শুয়ে আছে। নিত্যদিনের মতো আজও ওর মায়ের পরনের মেক্সির কোণা ধরে টানাটানি করছে। শাফায়াত আহমেদ, মরিয়ম, ইরাবতী, নূরী, নুশফা মেহের, সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে বেডে শুয়ে থাকা মিলির দিকে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউই বুঝতো পারছে না!

আল্লাহ তাআ’লা বুঝি কাউকে কেড়ে নিয়ে কাউকে প্রাণ দিতে ভালোবাসেন। পুরো পৃথিবীতে প্রতিদিন অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আবার অনেকেই সদ্য জন্মগ্রহন করে। হয়তো, পৃথিবীর এই এক আশ্চর্য নিয়ম।

এমন সময় কেবিনের দরজা খুলে হতদন্ত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে শোয়েব। পুরো শরীর ঘেমে নিয়ে একাকার। চিন্তিত ভঙ্গিতে শাফায়াত আহমেদের সামনে এসে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে শোয়েব হাহাকার করে জিজ্ঞেস করলো,

— বাবা, আমার মন বেঁচে আছে তো?

ছেলের হাহাকারের দৃশ্য দেখে শাফায়াত আহমেদের চোখে জল চলে আসে। মরিয়ম চোখের জল ছেড়ে দেয়। একমাত্র ছেলেকে কোনোপ্রকার কষ্টে রাখেননি তারা। কিন্তু, এই বয়সে এসে ছেলের কষ্ট দেখে যাবেন তারা ভাবতেও পারেননি।

— শো..য়ে..ব???

কারো ভাঙা গলায় নিজের নাম শুনে শোয়েব ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকায়। মূহুর্তের মধ্যে শোয়েবের মনে হলো ওর মস্তিষ্ক ওকে ভুল কিছু সিগনাল দিচ্ছে। পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে যদি সে কারো হাতের সার্পোট না পায় তবে মাটিতে লুটিয়ে পরবে।

ইরাবতী এগিয়ে এসে ওর ভাইয়ের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যায় বেডের সামনে। বেডের পাশে রাখা টুলে শোয়েবকে বসিয়ে দিয়ে ইরাবতী মাহিকে কোলে নিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

কেবিন জুড়ে পিনপতন নীরবতা। জানালার বাতাসের তোড়ে সাদা পর্দা গুলো উড়ছে। শোয়েব অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলির মুখের দিকে। কতগুলো দিন পর সেই বাদামী চোখগুলো দেখতে পেল! চোখগুলো সেই আগের মতো নজরকাড়া নেই। কিন্তু, এই চোখের দিকে তাকালে কেন যেন ভীষণ শান্তি পাচ্ছে শোয়েব। হাত বাড়িয়ে মিলির গালে হাত রেখে সেই লাল তিলটাকে স্পর্শ করতেই মিলি চোখ বন্ধ করে ফেললো।

শোয়েব মিলিকে চোখ বন্ধ করতে দেখে ফেলে। শোয়েবের মনে হলো এই বুঝি মিলি আর চোখ খুলবে না। তাই, টুল ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায়। মিলির মুখের সামনে উপুড় হয়ে নিস্তেজ গলায় প্রশ্ন করে,

— চোখ আর কত বন্ধ রাখবে, মন? আমি তোমার এই দুই চোখ মন ভরে দেখতে চাই।

মিলি বহু কষ্টে চোখ খুলে তাকায়। ঝাপসা হয়ে আছে মিলির দুচোখ। হয়তো, এতদিন চোখ বন্ধ করে রাখার প্রভাবে। শোয়েব চট করে মিলির বুকে মাথা পেতে দেয়। মিলি শোয়েবের মাথায় হাত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু, শক্তি কুলোয় না। নিজের বুকে স্যাতেস্যাতে অনুভব হয়। তারমানে শোয়েব কাঁদছে!

— আপনি কাঁদছেন???

এতটাই ধীরে কথাটি বলেছে যে হয়তো শোয়েব ছাড়া এই কেবিনের দেয়াল মিলির কথা শুনতে পায়নি। শোয়েবের কান্নার বেগ আরও বেড়ে যায়।

ধীরে ধীরে শোয়েব শান্ত হয়। চোখ মুছে মিলির পাশে শান্ত হয়ে বসে। মিলির একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

— আর কখনোই তোমাকে আমার জীবন থেকে হারাতে দিব না। তোমার অস্তিত্ব আমার জীবনে কি তা একমাত্র আমিই জানি। আমি এতদিন এই আশায় বেঁচে ছিলাম। তুমি কোনো একদিন ফিরে আসবে আমার কাছে। আমার সেই বিশ্বাসের মান ওপর ওয়ালা রেখেছেন।

মিলি নির্বিকার হয়ে আছে। শোয়েব সেই আগের মতো তার সঙ্গে কথা বলছে। যখন প্রথমবারের শোয়েবের কাছ থেকে ভালোবাসার কথা জানতে পেরেছিল । কিন্তু, সাইফ এসে ওর পুরো জীবনটা থমকে দিয়ে গেছে।

— মিলি, আসব?

দরজার খুলে ভেতরে উঁকি দিয়ে অনুমতি চাইলো নূরী। মিলি আর শোয়েব দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ, নূরীর কোলে শোয়েবের প্রথম কন্যা মেহনুবা। শোয়েব ইশারায় নূরীকে ভেতরে আসতে বললো। নূরী প্রথমে ঢুকে পরলো। তারপর, একে একে পরিবারের সকল সদস্য কেবিনের ভেতরে চলে এসেছে।

মিলি তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে আছে নিজের দুই শিশু কন্যার দিকে। মিলির চাহনি বুঝতে পারে শোয়েব। নূরীকে ডাক দিয়ে বলে,

— আপা, মেহনুবা আর মাহিকে মিলির কোলে দাও।

শোয়েব খেয়াল করল এই কথাটি শোনার পর মিলির চোখ আনন্দে চকমক করছে। শোয়েব মিলিকে সাহায্যে করে শোয়া থেকে উঠে বসার জন্য। মিলির ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বসে থাকতে। একদিকে অনেকদিন একই শুয়ে থাকার কারণে মেরুদণ্ডে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। অন্যদিকে শারিরীক দুর্বলতা।

মিলির কোলে মেহনুবাকে দিয়ে নুরী একপাশে যেয়ে দাঁড়ালো। মিলির মেহনুবার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই যে কখন পর চোখ থেকে জল গড়িয়ে মেয়ের গালে টুপ করে পরেছে মিলি টেরও পায়নি। মেয়ে তো নিজের গালে ভেজার উপস্থিতি পেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ওঠে। মেয়ের কান্না দেখে মিলি বিচলিত হয়ে পরে। শোয়েব হাত বাড়িয়ে মেহনুবাকে কোলে তুলে নেয়। মেয়ে একবারে বাবার কোলে ওঠে লক্ষী মেয়ের মতো চুপ হয় যায়।

ইরাবতী যখন মাহিকে মিলির কোলে দেয়। তখন মাহি একটি অভাবনীয় কান্ড ঘটায়। আর তা হলো প্রথমবারের মতো মাহি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে ওর দন্তহীন মাড়ি দেখিয়ে হাসতে থাকে। মেয়ের হাসি দেখে মিলির অন্তরখানি জুড়িয়ে যায়। শোয়েব সহ বাকি সবাই ভীষণ অবাক হয়। মাহি জন্ম হবার পর থেকেই ওর মায়ের পাশে শুয়ে থাকতে পছন্দ করতো। আর, এখন মাকে সুস্থ সবল দেখতে পেয়ে মায়ের সাথেই প্রথম হাসিটা বিনিময় করলো!

দীর্ঘ সাতদিন হসপিটালে থাকার পর মিলি সুস্থ হয়ে বাড়িতে যায়। মাহি আর মেহনুবা মিলিকে ছাড়া একদণ্ড কারো কোলে থাকে না শুধুমাত্র শোয়েবকে ছাড়া।

শোয়েব যখন হসপিটাল থেকে ফিরে এসে মেয়েদের সাথে গল্প করে, খেলা করে তখন মিলি মনোযোগী হয়ে সবটা দেখে। মিলি যদি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত তবে কি এত সুন্দর মূহুর্তের প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারত!

_____________________

হুট করে একদিন শোয়েব মিলিকে নিয়ে কক্সবাজার চলে যায়। মেয়েরা তাদের ফুপিদের কাছে। মিলি ঘুরতে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শোয়েব কিছুই বলে না শুধু হাসে। মিলি বিরক্তিকর সুরে গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে পরে থাকে।

কাঙ্ক্ষিত হোটেলে চেক-ইন দিয়ে শোয়েব আর মিলি নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে যায়। রুমে ঢোকার পর মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। কারণ, পুরো রুম দেখে মনে হচ্ছে রুমে জুড়ে শুধু ফুলদের আবাসস্থল।

মিলি যখন ওর বাদামী চোখ দিয়ে চারদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল ঠিক তখনি শোয়েব পেছন থেকে এসে মিলিকে কোলে তুলে নেয়। মিলি আচমকা এমন স্পর্শ পেয়ে ভয়ে চিৎকার করতে গিয়েও থেমে যায়। কারণ, শোয়েবের শরীর থেকে আসা মিষ্টি ফ্রেগারেন্স মিলির নাসরন্ধ্রে জানান দেয় যে, ও শোয়েবের কাছেই আছে।

— পছন্দ হয়েছে তোমার?

— অনেক.. অনেক পছন্দ হয়েছে। ধন্যবাদ এত বড়ো সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।

শোয়েবের গলা জড়িয়ে ধরে বলল মিলি। মিলিকে নিজের বুকের সঙ্গে আরও গভীরভাবে মিশিয়ে নেয়। ফিসফিস করে মিলিকে আবেদনময়ী কন্ঠে শোয়েব বললো,

— তোমার ধন্যবাদ দিয়ে আমার কি হবে মন? আমার তো অন্য কিছুই চাই।

মিলি শোয়েবের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। শোয়েব মিলিকে আর লজ্জা না দিয়ে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।

ব্যাগ থেকে একটি প্যাকেট বের করে এনে মিলির হাতে দিয়ে বললো,

— অনেকদিন হলো তোমাকে শাড়িতে দেখি না। আজ না-হয় আমার তৃষ্ণার্ত আঁখি যুগল তোমায় শাড়িতে দেখে প্রশান্তি পাক।

মিলি মাথা নিচু করে শোয়েবের হাত থেকে প্যাকেটটি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

দশমিনিট পর মিলি শাড়ি পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।

পুরো রুমে মোমবাতির আলো। লালচে আলোতে পুরো ঘরটায় যেন স্বর্গ নেমে এসেছে। মিলি পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে শোয়েবকে খুঁজে পায়।

খাটের দুই পাশে সাদা পর্দা ঝুলে আছে। রুমের একপাশে ছোট্ট দুটি টবে নাম জানা গাছ টাঙিয়ে রেখেছে। শোয়েব বামহাতে ভর দিয়ে শরীর বাঁকা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এ্যাশরঙা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজার পরনে। আমার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে আমি মাথা নিচু করে মুচকি হাসি দিয়ে ফেলি।

কতদিন পর আজ আমার মনকে শাড়িতে দেখলাম আমি। কালো স্লিভলেস ব্লাউজ আর নীল রঙের শাড়িতে আজ অন্যরকম মোহনীয় সৌন্দর্য নিয়ে আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিলি।

শোয়েব উঠে দাঁড়ায় ধীরপায়ে এগিয়ে যায় মিলির দিকে। মিলি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শোয়েব মিলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া এই রুমে আর অন্য কোনো শব্দ আপাতত বিদ্যমান নয়।

মিলির গালে একটি চুমু খায় শোয়েব। মিলি তরিৎ গতিতে শোয়েবের চোখের দিকে তাকালে শোয়েব মিলিকে বুকে জরিয়ে নেয়। মিলি শোয়েবের বুকে মাথা রেখে শান্তির শ্বাস নেয়।

এইভাবেই কেটে যায় পাঁচ মিনিটের মতো।

কিছুসময় পর মিলি বললো,

— আমি যা কিছু করেছি তার জন্য কি আপনি আমায় ক্ষমা করেছেন?

মিলির মুখ এই কথা শুনে শোয়েব মিলিকে আরও শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বললো,

— শরৎ কে আর হৃদয়য়েশরী কে আমি বা তুমি কেউই আর এই নামগুলো মনে রাখতে চাই না। না চাইব বন্ধুর আড়ালে শত্রু বেশে থাকা সাইফ নামক অমানুষের নাম মনে রাখতে। যত জনম বেঁচে থাকব শোয়েব আর মিলি হয়ে বাঁচব আমরা। কারণ, এই নাম দুটোকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে আমাদের জীবনে মঙ্গলজনক কিছুই হয়নি। বরং, অতীতের কিছু অবিচ্ছেদ্য অংশের কারণে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।

— হুম, ভুলে যাব সেই নামগুলো।

— মন???

— হুম??

— একটা জিনিস ভেবে দেখেছো??

— কি??

— তুমি আগের থেকে অনেক মোটা হয়ে গিয়েছো।

শোয়েবের মুখ থেকে এই কথা শুনে মিলি রাগে ফুসতে থাকে। মিলি রাগ করে নিজেকে শোয়েবের বুক থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু, শোয়েব যেন আরও শক্ত ভাবে মিলিকে আঁকড়ে ধরে।

— তুমি মোটা হয়েছো বলে তোমাকে আরও বেশি আবেদনময়ী লাগছে, আমার মন।

ব্যস মিলি লজ্জায় লাল। সেই সুযোগে মিলিকে কোলে তুলে নেয় শোয়েব। তারপর, এগিয়ে যায় রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায়।

সেখানে যেতেই সমুদ্রের বাতাসের তোড়ে মিলির খোলা চুল এলোমেলো হয়ে উড়তে থাকে। শোয়েব মিলিকে কোলে নিয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকায়। চাঁদের আলোয় আজ পুরো সমুদ্রকে আরও ভয়ংকর সুন্দর দেখাচ্ছে।

মিলি শোয়েবের কোল থেকে নেমে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।

— আহহ্

কারো আর্তনাদ শুনে মিলি ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো শোয়েব পাশের রুমের বারান্দার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসে ওঠেছে। মিলি কিছুই বুঝতে পারে না। তাই শোয়েবকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই শোয়েব মিলির হাত ধরে টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে আসে।

— আরে কি হয়েছে বলবেন তো নাকি?

— কত্ত বড়ো সাহস আমারই সামনে আমার মনের দিকে তাকায়! ওর তো কপাল ভালো পর কপাল ফাটিয়েছি নয়তো আজ ওর দুচোখ আমি ঘেঁটে দিতাম কাঁটা চামচ দিয়ে।

মিলি শোয়েবের কাছ থেকে এই কথা শুনে এক দৌঁড়ে বারান্দার দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পাশের বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখল, আনুমানিক চব্বিশ বছর বয়সী একটা যুবক কপালে টিস্যু দিয়ে চেপে ধরেছে।

মিলি শোয়েবের সামনে এসে কোমড়ে হাত রেখে বললো,

— এইটা কি করলেন, আপনি?

— বেশ করেছি। আমার মনের দিকে যে তাকাবে তার এমনই হবে। বলেই মিলির হাত ধরে এগিয়ে যায় ফুলের বিছানার দিকে।

হাঁটতে হাঁটতে মিলি শোয়েবের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

— সাইকো ইজ ব্যাক। না জানি সামনে আরও কত নাকচুবানি খেতে হয় আমায় ! তার এক ফোঁটা প্রেমের বিষে আমার ভালোবাসা বিষাক্তময় ভালোবাসা হবে। তার ভালোবাসায় বিষ থাকলেও তার প্রতি আমার এক ফোঁটাও আসক্তি কমবে না।

#সমাপ্ত

(আসসালামু আলাইকুম। অবশেষে, শেষ হলো শোয়েব-মিলির এক ফোঁটা প্রেমের বিষ এর গল্প। জানি না আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here