এক মুঠো ভালোবাসা 💝পর্ব:০৫

0
1287

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৫

অন্ধকারের মাঝে নিবিড়ের বুকের সাথে মিশে আছে মেহের। শরীর থেকে গরম আবরণ বের হচ্ছে তার। জানান দিচ্ছে জ্বর এসেছে। নিবিড় আলতো জরিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একটু পর পর রুমালটা ভিজিয়ে মাথায় পট্টি দিয়ে দিচ্ছে।মেডিসিন খাওয়ার পর বমি আগের থেকে অনেকটা কমে তো এসেছে, কিন্তু জ্বর বেড়েছে। মেহেরের ভাব ভঙ্গি দেখেই নিবিড় বুঝতে পেরেছিল, জ্বর আসবে। তাই মেডিসিন কিনে এনেছিল। কিন্তু কোনো খাবার মেহের কে খাওয়াতে পারেনি। বিধায় মেডিসিনও খাওয়ানো হয়নি।
বাসের ব্রেক করাতে সামনের দিকে কিছুটা হেলে পড়লো যাত্রীরা। নিবিড় কোনোরকম সামনের সিটে হাত রেখে নিজেকে সামলে নিলে। কিছু বলার আগে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিল। ইতিমধ্যে বাস এসে পৌঁছেছে তার গন্তব্যে। দৃষ্টি সরিয়ে মেহেরের পিঠে হাত রাখলো। ধীর কন্ঠে বললো…

— “মেহের চোখ খুলো। আমরা পৌঁছে গেছি”।

কয়েকটা ডাক দিয়েও ঘুম ভাঙাতে ব্যর্থ হলো নিবিড়।মেহের জ্ঞান হারিয়েছে। বাস ভর্তি যাত্রী ফাঁকা হয়ে গেছে। বাসে নিবিড় মেহের আর ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ছাড়া কেউ নেই। বোতলের ছিপি খুলে হাত ভিজিয়ে মেহেরের চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিল। উঠার বদলে চোখ পিটপিট করে নিবিড়কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে পূর্ণরায় ঘুমিয়ে পড়েছে। বিরক্তিকর একটা ভাব ফুটে উঠেছে নিবিড়ের ললাটে। একটু হেলে পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েকজনকে ট্রাই করলো । কিন্তু ফলাফল জিরো। রিসিভ হলো না।

নিবিড়কে নাজেহাল অবস্থা দেখে এগিয়ে এলো বাস কন্ডাক্টর। মৃদু কেঁশে বললেন…

— “হয়তো কখনো বাসে উঠেনি। তাই এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আপনি আর ম্যামকে ডাক দিয়েন না স্যার। আমি বরং একটা সিএনজি ঢেকে নিয়ে আসি। আপনারই তো বউ, কষ্ট করে কোলে তুলে সিএনজি পর্যন্ত নিয়ে যাবেন”?

মাঝখানে কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। গভীর ভাবলো নিবিড়। সত্যিই মেয়েটা ভিশন অসুস্থ। ওকে তুললে ভালো ভাবে ক্লান্ত শরীর নিয়ে হাঁটতে পারবে না। তাছাড়া কিছুই খায়নি। বিনা শর্তে রাজি হয়ে গেল নিবিড়। নিবিড়ের সম্মতি পেয়ে মিনিট অপেক্ষা করলো না কন্ডাক্টর। পা চালিয়ে বাস থেকে নেমে গেলেন। সিএনজি ঠিক করে মিনিট পাঁচেক পর আবার ফিরে এলেন। বাসের সিঁড়িতে এক পা রেখে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন…

–” স্যার ম্যামকে নিয়ে আস্তে আস্তে নেমে আসুন । সিএনজি ঠিক করা হয়ে গেছে”।

কন্ডাক্টরের কন্ঠস্বর শুনে মাথা থেকে খসে পড়া রুমালটায় বোতলের সবটুকু পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিল। বোতলটা জানালার কাঁচ বেঁধ করে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিল। ছিপিটা বাসের মধ্যেই রয়ে গেল।
মেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এলো নিবিড়।মেহেরকে সিএনজি তে বসিয়ে দিল। কন্ডাক্টরের সাথে হাতে মিলিয়ে ছোট করে একটা” ধন্যবাদ” দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো নিবিড়।

___________________
— “মা বাবা কোথায় তোমরা। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসো। দেখ তোমাদের প্রাণপ্রিয় ছেলে নিবিড় বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে। শুধু নিয়ে আসে নি, একদম স্টার জলসা সিরিয়ালের মতো কোলে করে নিয়ে এসেছে”!( চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে নিশি)

–” চুপ করবি তুই? সারাদিন মাথার মধ্যে উল্টাপাল্টা ভাবনা ঘোরে। এজন্য বারবার বলেছি,, সিরিয়াল দেখিস না। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনে না। তৌফিক কে বললো, তোকে বিয়ে না করে।টিভি সিরিয়াল কে বিয়ে করতে। কারন তুই আর সিরিয়াল কম্পিলিটলি একই”।

নিবিড় তৃক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে নিশির দিকে তাকালো।এই মেয়েটার মাথায় সবসময় উদ্ভর কিছু ঘুড়তেই থাকে। মেহেরকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় শুইয়ে দিলো। ফট করে চোখ খুলে তাকালো মেহের। এতোক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকতে প্রচন্ড বিরক্ত লেগেছে তার। চোখ খুলতেই নিবিড়ে মুখটা ভেসে উঠলো তার চোখের সামনে। ভুতুড়ে ঢোক গিলে উঠে বসলো। এতোক্ষণ নিবিড়কে বিরক্ত করার জন্য চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। নিবিড় মেহেরের দুষ্টুমি গুলো বুঝতে পারলো, কিন্তু বাক্য উচ্চারণ করলো না। ইতিমধ্যে নওরাজ সাহেব নাজমা এসে দাঁড়িয়েছে ড্রয়িং রুমে। নওরাজ সাহেব গম্ভীব ভাবে বললেন….

— “কে ও। আর এতোরাতে আমার বাড়িতে কি করছে? আমাদের না জানিয়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এলে, তোমার থেকে এটা আমি এক্সপেক্ট করি নি”?

— “ওনি কিছু করেনি, আমি এখুনি চলে যাবো”।(করুন সুরে মেহের)

— “কে কিছু করেনি?? দয়া করে বলবে আমাকে ? তোমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেছে নাকি চলে যেতে বলেছে। মুখ থেকে আরেকটা শব্দ যদি বের হয় ,, তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।। আশ্চর্য 😡😡,, বসো ওখানে!
বাবা তুমি ওদের মতো সিরিয়াল দেখা শুরু করলে কবে থেকে। আমিও তোমার থেকে এক্সপেক্ট করি নি”। (বিদ্রুপ করে নিবিড়)

— “কি বলতে চাইছো তুমি”?

— “বাবা মাঝরাতে একটা মেয়েকে বিয়ের শাড়ি পড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসলেই সে বউ হয় যায়।সিরিয়াল না দেখলে জানতে পারতাম না। কিন্তু একটু মিস্টেক হয়েছে। ও আমার বউ না, একটু ইনপ্রটেন্ট কাজে নিয়ে এসেছি।
নিশি যা ওকে তোর রুমে নিয়ে যা। একটা ভালো জামা দে, শাওয়ার নিক। তারপর কিছু খাবার দিস। সারা রাস্তা বমি করতে করতে এনার্জি নষ্ট করে ফেলেছে…। মেহের তুমি ওর সাথে যাও”!

— “ভাইয়া এটা তুই কি করলি , এক মুহুর্তের জন্য হলেও ভেবেছি। সিরিয়ালের মতো তোর বউকে টর্চার করবো। সবটা ভেস্তে দিলি”।(মুখ কালো করে নিশি)

— “ঠিক আছে তৌফিকের মাকে বলল, যাতে তোকে অনেক টর্চার করে। এবার যা”।

মাথা নেড়ে হাসিমুখে সবাইকে সালাম দিয়ে নিশির সাথে চলে এলো মেহের। মেহের নিশির রুমটাকে ভালো ভাবে দেখছে।নিশির রুমটা মেহেরের রুমের চেয়ে দ্বিগুণ বড়। জিনিসপত্র বেশী। মেহেরের বাবা যেহুতু অনেক টাকা আছে। তাই মেহেরের রুমেও অনেক কিছু আছে।
নিশি কাবার্ড থেকে একটা চুরিদার বের করে এগিয়ে দিল মেহেরের দিকে। মেহের হাত বাড়িয়ে স্বযত্নে চুরিদার নিয়ে নিল। অতঃপর নিশির দেখানো ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

______________________
— “খুব কষ্ট হচ্ছে, মেয়েটার কাহিনী শুনে। মা বাবা হারা অবুঝ একটা মেয়ে। আজ থেকে ও আমাদের সাথে এই বাড়িতে থাকবে। কখনো নিশি আর মেহেরের মধ্যে তফাৎ খুঁজতে যাবোনা।
তুই তো বললি ওর জ্বর এসেছে, মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছিস তো”?( কৌতূহল নিয়ে নাজমা)

— “মেডিসিন কিনেছি তো, পকেটে আছে।খাইয়ানো হয়নি”!( পকেট থেকে বের করে নিবিড়)

— “তাহলে মেডিসিন গুলো পকেটেই রেখে দে..! যত্তসব। যা গিয়ে দিয়ে আয়”।(চেঁচিয়ে বললেন নওয়াজ সাহেব)

কথা শেষ হবার আগেই নিবিড় ছুটলো নিশির রুমে।দরজা খুলে রেখে নিশি খাবার আনতে গেছে। বেশ সুবিধাই হলো নিবিড়ের। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো কিন্তু কোথাও মেহেরকে দেখা যাচ্ছে না।ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে। বড় বড় পা ফেলে সেদিকে এগিয়ে গেল সে। তিন চার বার নক করার পরেও ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ এলো না। কেউ আছে কিনা চেক করার জন্য ধাক্কা দিলে দরজা খুলে গেল।সাথে সাথে চোখ চড়কগাছ নিবিড়ের। ভেজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে মেহের।চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। শাওয়ার এখনো চলছে। শাড়িটা নিচে পড়ে আছে।।নিবিড়কে দেখে উল্টোঘুড়ে গেল মেহের। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সে।ওয়াশরুমের ছিটকিনি টা অন্যরকম। আটকাতে পারে নি মেহের। ভেবেছিল ,, এসময় কেউ আসবে না। কিন্তু হঠাৎ নিবিড়ের আগমন হবে বুঝে উঠতে পারে নি। টান দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল নিবিড়। নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে তার।একটু আগে নিজেই মেহের কে শাওয়ার নিতে বলছে।এখন নিজেই এসে চেক করছে।মেয়েটা কি ভাবলো তাকে। নিজেকে সামলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো…

–” আ’ম সরি মেহের । বুঝতে পারিনি ,,তুমি ওখানে ছিলে। অনেকবার ডাক দিয়েছিলাম কিন্তু সারা দাও নি।। তারাতাড়ি শাওয়ার শেষ করে বেরিয়ে এসো”।

প্রায় দশ মিনিট পর বেরিয়ে এলো মেহের। এখনো চুল থেকে পানি ঝরছে। দুজনের কেউ লজ্জায় একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। মেডিসিন গুলো মেহেরের হাতে দিয়ে কখন কোনটা খেতে হবে বুঝিয়ে দিল। বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ালে হলো তার বিপরীত। পানিতে স্লীপ করে সোজা ফ্লোরে নিবিড়। হাত বাড়িয়ে মেহের কে ধরে নিজেকে ব্যালেন্ড করা চেষ্টা করলো। ঘটনাচক্রে দু’জনেই ঠাস করে নিচে।

(চলবে… ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here