#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৯
— “এভাবে না খেয়ে থেকে কি প্রমান করতে চাও তুমি?? আমরা তোমাকে না খাইয়ে রেখেছি না-কি মায়ের কাছে আমাকে কথা শোনাতে চাই” ?? (দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিবিড়)
নিবিড়ের কথায় শুনে মাথা তুলে তাকালো মেহের ।ঠিকঠাক হয়ে বসলো।বেড়ের এককোণে পড়া থাকা ওরনাটা ভালোভাবে গায়ে জরিয়ে নিল।
মেহেরের ভাব ভঙ্গি দেখে নিবিড় বুঝতে পারলো ,, তাকে ভেতরে আসার অনুমতি দিয়েছে।।রুমে ঢুকে প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে মেহেরের পাশে বসলো।কান্না করাতে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। সাজগোজ লেপ্টে আছে।।এই রুপে যতবারই মেহেরকে দেখে ততবারই অন্যকিছু করার তীব্র হাহাকার বিরাজ করে নিবিড়ের ভেতরে ।মেয়েটাকে দেখলে এক নিমেষেই সব ক্লান্তি দুর হয়ে যায় তাঁর। ইচ্ছে করে পূর্বের মতো কিছুক্ষণ মনে ভরে দেখতে ।কিন্তু আপাতত সেই ইচ্ছেটা পূরন করার বৃথা চেষ্টা করলো না নিবিড়।মুখের ভঙ্গিমা শক্ত করে কাঠ কাঠ গলায় বললো…
— “সেদিন যখন তোমার গালে চড় মারলাম তখন তো এমন ছিঁচকাদুনের মতো কাঁদো নি।তাহলে আজ কেন কাঁদছো ? আমার মাকে জানাতে চাও ,,আমি তোমার গায়ে হাত তুলেছি??অনেক খাবার বাঁচানো হয়ে গেছে এবার খেয়ে নাও।। নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে।তখন কে তোমার সেবা করবে”??
করুন চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে মেহের । কাউকে দেখাতে সে কাঁদছে না।আজ নাম না জানা কান্না তার ভেতরটা ভেঙ্গে দিচ্ছে। নিবিড়ের কাছ থেকে একটু যত্ন সে আশা করেছিল।আর নিবিড় তাকে কটুকথা শুনিয়ে দিল। মাথা নত করে মৃদু স্বরে বললো…
— “আমার সেবা কাউকে করতে হবে না।টানা দুই-তিন দিন না খেয়ে থাকার অভ্যাস আমার আছে। শুধু শুধু কেন খাবার বাঁচাতে যাবো”।।
চরম বিরক্ত হলো নিবিড়।একটা কথা বললে পাঁচটা শুনিয়ে দেয়।।আর নিজের ভেতরের নরম মনটাকে শক্ত রাখতে পারলো না।মেহেরের দিকে সামান্য এগিয়ে দুগালে হাত রাখলো।।মুচকি হেসে বললো…
— “আমি জানি গ্ৰামের মেয়েদের না খেয়ে থাকার অভ্যাস আছে।। কিন্তু আমার পাগলিটার যে সেই অভ্যাস নেই।।সে তো আমার উপর বড্ড অভিমান করে আছে। শুধু মাত্র আমার জন্য দুপুর থেকে না খেয়ে আছে। ইভেন্ট কেদে-কেটে মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।। বিলিভ মি, আমার মন বলছিল তুমি কিছু খাওনি।তাই আমিও খাইনি। আর আমি না-খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ হয়”।।
মাথা তুলে তাকালো মেহের। মানুষটা তার জন্য না খেয়ে আছে । ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার। ভেতরের চেপে রাখা অশ্রু গুলো আর আটকে রাখতে পারলো না। শব্দ করে কেঁদে দিল।গাল থেকে হাত সরিয়ে নিবিড়ের বুকে মাথা রাখল।। নিবিড় দুবার মেহেরের পিঠে হাত রাখতে নিয়েও রাখলো না। পরেরবার বিনা বাধায় হাতটা রাখল। মেহের কোপাতে কোপাতে বললো…
— “আপনি অনেক খারাপ সবসময় আমাকে বকেন ।একটুও ভালোবাসেন না। জানেন আমি ছোট থাকতে আমার বাবা মারা যান।মাকে কখনো দেখিনি।
ছোটবেলা থেকে অন্যর বাজে কথা শুনে বড় হয়েছি।আমার জন্য না-কি আমার বাবা -মা মারা গেছে।এই কথাগুলো শুনে আমার একটুও কষ্ট হয়না ,, যতটা আপনার কথায় কষ্ট হয়। এতোটা কষ্ট হয়, যতটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।আচ্ছা কেন এমন হয়”??
সাথে সাথে নিবিড়ের হাতটা স্তব্ধ হয়ে গেল । কি উত্তর দিবে মেয়েটা কে সে।। এটা তার ভালোবাসা না-কি জাস্ট ভালোলাগা ।হতেও তো পারে মোহ।। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য নিবিড় মুখ খুললো…
— ”মেহের এবার উঠ।তোমার অভ্যাস ভালো নয়। তুমি আবার আমার শার্টে নাক মুছে ফেলবে”।।
নাক মোছার কথা,, কান পর্যন্ত পৌঁছালে ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেহের।পরপর দুইবার নাক টানলো।। কিন্তু ফলাফল জিরো।নিবিড় বাঁধা দেওয়ায় আগেই পেটের কাছে টি শার্ট টেনে একটু ঝুঁকে নাক পরিষ্কার করে নিল।।মেহেরের বিহেভিয়ারে নাক চেপে ধরলো নিবিড়।।ফট করে একটানে টি শার্টটা খুলে মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিল। বললো..
— “এবার মন মতো নাক পরিষ্কার করে নাও।।তারপর জানালা দিয়ে ফেলে দিও কেমন”?
মেহের অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নগ্ন অবস্থায় দেখে লজ্জা পেল সে। মেহের কে লজ্জা পেতে দেখে বললো…
— “হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না ।যাও এই ড্রেসটা চেঞ্জ করে এসো। পেটের ছুচো গুলো দৌড়াদৌড়ি করছে। খবরদার শাওয়ার নিবে না”।।
নিবিড় সচরাচর খবরদার শব্দটি ব্যবহার করে না।এবার খবরদার বলেছে মানে তাকে নিবিড়ের কথা মতো চলতে হবে। সমস্যা হলো অন্যজায়গা ,, মেহের ওয়াশরুমে গেল না। জামা কাপড় সব নিশির রুমে ।একটাও সাথে আনা হয়নি। কেঁদেই সময় পায়নি আনার। মুখ গোমড়া করে বললো..– “জামা কাপড় নিশু আপির কাছে ।আনা হয়নি”!!
— “ঠিক আছে তুমি যাও !! আমি নিশির কাছ থেকে এনে দিচ্ছি”।।
তবুও পা বাড়ালো না মেহেরের।সে চাইছে না ,,, সেদিনের ঘটনার পূর্ণরাবৃত্তি হোক । মেহেরের মনের ভার বুঝতে সময় নিল না নিবিড়।। মৃদু হেসে বললো..
–” চিন্তা করো না,, তেমন কিছু হবে না।আমি নক করলে তুমি হাত বাড়িয়ে জামা কাপড় গুলো নিয়ে আবার লক করে দিবে ।ব্যস তাহলেই হবে”।।
আইডিয়াটা বেশ পছন্দ হলো মেহেরের। বাক্য উচ্চারণ না করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।।
______________________
তিনবার নক করতেই ভেতরে থেকে দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিল মেহের।। নিবিড় জামা কাপড় এগিয়ে দিলো না। কিছুক্ষণ গভীর ভাবে মেহেরের হাত পর্যবেক্ষণ করলো।।হাতের রেখাগুলো খুব হিজিবিজি। মাঝবরাবর একটা লালচে তিল ।চুড়ির সাইজ মেনশন করলো।যে চুড়িগুলো নিবিড় কিনেছে তা মেহেরের হাতে যাবে কি-না ভাবছে।– “কই দিন”!! মেহেরের ডাকে হুঁশ ফিরল তার।জামা-কাপড় এগিয়ে দিল।রুমের দিকে কিছুক্ষণ দৃষ্টি দিল।একটা বড় বেড,, ঝুলন্ত আয়না ,, একটা টেবিল আর ছোট একটা আলমারি ছাড়া কিছু নেই।। রুমের দেয়ালের মাঝে মাঝে লাল রং গুলো উঠে উঠে গেছে।।
বেডের উপর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো নিবিড়।মেহের আসলেই খাবার প্লেটটা এগিয়ে দিলো। মৃদু হেসে বললো,,…– “খেয়ে নাও”!!
সাথে সাথে প্রশ্ন করলো মেহের,,– “আপনি খাবেন না”।
— “তুমি খাও ।।আমি পরে খেয়ে নিব”।
কথা বাড়ালো না মেহের ।প্লেট হাতে নিয়ে খাবার মাখিয়ে নিবিড় মুখের দিকে এগিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ খাবারের লোকমার দিয়ে তাকিয়ে থেকে মুখে তুলে নিল সে!!!
চলবে…🎀🎀
প্রচুর ব্যস্ত আছি,, তবুও দিলাম।
ব্যস্ততার মাঝে ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।।
দরকারী প্রয়োজনে কিংবা আমার সাথে কথা বলতে চাইলে দয়া করে আইডিতে নক করবেন।।আমি পেজের মেসেঞ্জার চেক করি না ।।💝