এক মুঠো ভালোবাসা 💝পর্ব:১০

0
998

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১০

— “মিঠাই সিরিয়ালে যে উচ্চে বাবুকে দেখতে পারছ না। সেই উচ্চে বাবুর যময ভাই হচ্ছে, আমার ভাই নিবিড়। সারাদিন শুধু চোখ রাঙায়”।।(গালে হাত দিয়ে সিরিয়াল দেখছে। আর মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলছে)

মেহের কিছুক্ষন সিরিয়ালের সিদ্ধার্থের দিকে তাকিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো। কোথাও একটা অদ্ভুত মিল আছে দুজনের মাঝে। কিন্তু এক্সজেকলি কোথায় মিল আছে বুঝতে পারছে না। অবশেষে মেলাতে সক্ষম হলো। ক্ষনেক্ষনে সিদ্ধার্থের কপাল কুঁচকানোর সাথে নিবিড়ের সামঞ্জস্য রয়েছে। গালে হাত দিয়ে মৃদু হাসলো সে। আবার সিরিয়াল দেখায় মন দিল। একপ্রকার বাধ্য হয়ে এখানে বসে আছে সে। নিশি সিরিয়াল দেখাতে নিয়ে এসেছে। মুখের উপর না করতে পারে নি।
স্বশব্দে টেবিলের উপর গ্লাস রাখলো নিবিড়। সবাইকে জানাই দিচ্ছে নিবিড় এসেছে। সবাই চোখের পলক নিবিড়ের দিকে দিল। অফিস থেকে আসেনি রুম থেকে বেরিয়েছে। আজকে অজানা নিমিত্তে অফিসে যেতে ইচ্ছে করেনি তার। কালকে অফ ডে।
নিশি – মেহেরের দিকে ক্ষূদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো সে।মেহের সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল।‌নিশি মেহেরের বাহু শক্ত করে ধরলো। ঘনঘন চোখের পলক ফেলছে ।মনে হচ্ছে বিড়াল মাছ চুরি করতে এসে ধরা পড়েছে। নিবিড় না থাকলে এতোক্ষণে হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তো মেহের‌। কিন্তু তা কোনো মতে সম্ভব নয়।দাঁতে দাঁত চেপে হাসি আটকানো বৃথা চেষ্টা করছে সে। রিং টোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙল সবার। নিশি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।। হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে নিম্ন সুরে বললো…

–” ভাইয়া ফোন বাজছে । কোনো দরকারী ফোন হতে পারে। রিসিভ কর!”!

প্রথমে রিসিভ করার চেষ্টা করলো না সে।বাজতে বাজতে কেটে গেলো।পূর্ণরায় ফোন বাজতেই কপালের কোণে বিরক্তিকর একটা ভাব ফুটে উঠলো নিবিড়ের। এগিয়ে গিয়ে ল্যান্ডফোন রিসিভ করলে, ভেসে এলো এক অতি পরিচিত গলা ।ওপাশ থেকে শোনা গেল মৃদু করুন সুর। ক্রমাগত বলছে..

— “বুবু আইজকা আমি তোমাগো বাসাতে যাইতে পারুম না। হঠাৎ কইরা জুঁইয়ের বাবা অসুস্থ হইয়া পড়ছে। মাথা পানি দিবার পর এহন একটু ভালো আছে। কহন আবার অসুস্থ হইয়া যায় তা তো কহন যায় না। আমি কাইলা ঠিক সময়ে চইলা যামু”।

–” এখন কেমন আছে চাচাজান “? (কৌতূহল নিয়ে নিবিড়)

— “এহন অনেক ভালা আছে বাবা? তোমরা আইজকার দিনডা একটু সামলাইয়া লও। আমি কাইল থেকে আর কামাই করমু না”।।

একটু বলতেই ওপাশের লাইনটা কেটে গেল। নিবিড় ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ আনমনে ভাবলো। এগিয়ে যেতে যেতে বললো…

— “আজকে জয়ীতা চাচী আসতে পারবে না। হঠাৎ করে চাচাজান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এবার দুজনে গিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়”।

গত তেরো‌ বছর ধরে এই বাড়িতে কাজ করে চলেছে জয়ীতা। সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে। তার স্বামীর অসুস্থতা ছাড়া কোনোদিন কামাই করেনি।
রিমোট টা হাতে নিয়ে চ্যালেন চেঞ্জ করতে লাগলো নিবিড়।‌ পরপর কয়টা চ্যানেল চেঞ্জ করার পর আটকে গেল ক্রিকেট খেলার চ্যানেলে।চরম উদাসীন হলো নিশি। সারাদিন পর একটু সিরিয়াল দেখবে, সব ভেস্তে গেল। করুন সুরে বলল..

— “ভাইয়া আর একটা পর্ব আছে। প্লীজ দে…!!!

নিবিড় চোখ গরম করে তাকাতেই চুপসে গেল নিশি। পাঁচের মতো মুখ করে বসে রইল। ইতিমধ্যে নাজমা কিচেনে চলে গেছে।চাল ধুয়ে চুলায় বসিয়ে দিল। গ্যাসের চুলা অন‌ করে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দিল। মিনিট পাঁচেক পেরুবার আগেই আগুন নিভু নিভু জ্বলছে। একটু পর ধপ করে নিভে গেল। করুন চোখে চুলার দিকে তাকিয়ে পূর্ণরায় লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু আগুন জ্বললো না। বোঝার বাকি রইল না, সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। গতকাল জয়ীতা গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সিরিয়ালে আসক্তিতে কথাটা বেমালুম ভুলে গেছে। চোখ গিয়ে আটকে গেল নিচে রাখা মাটির চুলায়। উপর থেকে সামান্য পরিমাণে কালচে ছাই, আর চুলার চারদিকে কালি দেখা যাচ্ছে। গতমাসে ৫ দিন গ্যাস ছিল না তখন জয়ীতা মাটির চুলায় রান্না করেছিল।
দ্রুত পায়ে কিচেন ত্যাগ করলেন তিনি। ডাইনিং গোছাতে গোছাতে বললেন.

–” সিলিন্ডারের গ্যাস নেই, ফুরিয়ে গেছে। মাটির চুলায় রান্না করলে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তারচেয়ে অনলাইনে খাবারের অডার দে “।

— “বাইরের খাবার খেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড় তো”।

” আর কোনো উপায় নেই”। সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে থামলেন তিনি। এতোক্ষণ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে মেহের। কম বেশী মাটির চুলায় রান্না করেছে সে। আজ মানুষটা না খেয়ে থাকবে, এটা হতে দেবে না মেহের।উঠে দাঁড়ালো মেহের।
— “আন্টি আমি দেখছি” !!!
শরীরের পেঁচানো ওরনাটা ভালোভাবে কোমরে পেঁচিয়ে কিচেনের দিকে ছুটলো সে। চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে কাঠ, ডাল পালা তার নজরে এলো না। অপেক্ষা না করে বাগানের দিকে পা বাড়ালো। বাগানের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট কাঠের টুকরো একত্রিত করলো। বুকে হাত দিয়ে তৃপ্তিকর দম ছাড়লো। বেশী না পাড়ুক অন্তত নাজমার জন্য খাবার তো বানাতে পারবে। কাঠ গুলো তুলতে গেলে বাঁধলো আরেক বিপত্তি। একটা তুলছে আরেকটা হাতের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে। অসন্তুষ্ট হয়ে কাঠহীন কিচেনে ফিরলো সে। উদ্দেশ্য কোনো কিছু সাহায্য নেওয়া। ছাঁকনি হাতে নিয়ে বের হওয়ার আগেই কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ অনুভব করলো সে। পেছনে তাকাতেই নিবিড়ের হাস্যেজ্জ্বল মুখটা ভেসে উঠলো। নিবিড় কাঠগুলো নিয়ে এসেছে। শব্দহীন তৃপ্তিকর হাসলো মেহের। এই মানুষটা কিছু বলার আগেই ম্যাজিক করে বুঝে যায়।
নিবিড় এগিয়ে গিয়ে তাকের উপর বসে পড়ল।অনেক কষ্ট হয়েছে কাঠগুলো তুলে আনতে। কিন্তু মেহেরের মুখের হাসির সাথে সাথে সব কষ্টগুলো বিদায় নিয়েছে।

____________________
আলু কাটছে মেহের। উচ্চে আর বেগুন কাটা হয়ে গেছে।লবন দিয়ে সেগুলো ভিজিয়ে রেখেছে। আজকে রাতের খাবার হবে আলু দিয়ে উচ্চে ভাজি ,, বেগুন ফ্রাই ,, ইলিশ মাছ ফ্রাই। নিবিড় উনুনে কাঠ দিচ্ছে।আজ সে যে করেই হোক রান্না শিখেই ছাড়বে। ইতিমধ্যে বত্রিশ বার আগুন নিভিয়ে ফেলেছে আর মেহের ফুঁ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। ভাত রান্না হয়ে গেছে ।নিবিড় এখন ইলিশ মাছ ফ্রাই করছে। দু হাত দূর থেকে ইলিশ মাছ গুলো‌ ক্রমাগত নাড়াচাড়া করেই চলেছে। একটাও আর আস্তো মাছ নেই আলু ভর্তা হয়ে গেছে।

মেহের করুন‌ চোখে ইলিশ মাছ গুলো দিকে তাকিয়ে একটা বাটিতে তুলে রাখলো। ভিজিয়ে রাখা বেগুনে মশলা মাখিয়ে ফ্রাই প্যানে বসিয়ে ঢেকে দিল। নিবিড় ঢাকনা সরিয়ে নিজের মতো নাড়তে লাগল। বিমুখ হলো মেহের। না নিজে সরছে, না মেহেরের কথা শুনছে।
পূর্ণরায় আগুন নিভে গেল। এভাবে আর মেহেরকে ডাকলো না। একটু ঝুঁকে নিবিড় ছাইয়ের উপর ফুঁ দিল। বিধায় স্বল্প ছাই নিবিড়ের চোখে। দুহাতে চোখ ঢলছে আর বলছে ….

— “মেহের আমার চোখ। আমি আর জীবনেও চোখে দেখতে পারবো না।তোমাকে দেখতে পারবো না”।

তট জলদি কাছে এলো মেহের। নিবিড়ের গালে হাত রেখে চোখে ফুঁ দিলো। চোখজোড়া লালচে হয়ে গেছে। নিজের বাহুতে ভড় করে নিবিড়কে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে চোখে পানি দিতে লাগলো।নিবিড়ের কথা থামছে না সে চেচিয়েই যাচ্ছে। তার চেঁচানো শুরু নিশি আর নাজমা কিচেনে চলে এসেছে।
সবকিছু জানতে পেতে নিঃস্পৃহ হলেন নাজমা।কাঠ কাঠ গলায় বললেন…

— “নিবিড় কিচেন থেকে যা।কাজের কাজ কোনোটাই হচ্ছে না, শুধু অকাজে ভরিয়ে রেখেছিস। যা….!!

— “আহহহ মা…। এমন করছো কেন ? আমি অলরেডি দুই আইটেমের খাবার বানিয়ে ফেলেছি ।
আরেক আইটেম আছে। ওটা হলেই চলে যাবো “।(ভাব নিয়ে নিবিড়)😎

— “আরেকবার আয় তুই উনুনের কাছে ।।খুন্ডি গরম করে যদি তোর পিঠে আমি না লাগিয়েছি ।।তাহলে আমার নাম মেহের নাম😡”(অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে মেহের)

(চলবে… ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here