এক মুঠো ভালোবাসা 💝পর্ব:১২

0
976

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১২

অজান্তেই নিবিড় ফোন বের করে পরপর কয়েকবার ছবি তুলে নিয়ে মেহেরের। সেদিকে আক্ষেপ নেই মেহেরের। সে শান্ত মনে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। অপেক্ষা করছে ওয়েটার কখন খাবার সার্ভ করবে। তনুর কয়েকজন ফ্রেন্ড,,তনু ,নিবিড়, নিশি, তৌফিক,,আর মেহের এসেছে। মিনিট পনেরোর মাথায় খাবার দিয়ে গে। পলকহীন ভাবে খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। এতো এতো খাবার দেখে পেট ভরে গেছে তার। একপ্রকার খাবার খাবে না বলে জেদ ধরে বসে রইলো। কখনো খাওয়া হয়নি, যদি ভালো না লাগে।
সামান্য একটু ভুল হলেই সেটা নিয়ে সিনক্রেট করবে তনু। ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও হাত বাড়িয়ে নুডুলসের প্লেটটা মেহের দিকে এগিয়ে দিয়ে স্লো কন্ঠে বললো..
— “এইটা খেয়ে নাও”।

কোনো প্রতি উত্তর না দিয়ে প্লেট থেকে চামচ তুলে নুডুলস খেতে লাগলো। কাঁটা চামচের ফাঁক দিয়ে নুডুলস গুলো বেরিয়ে যাচ্ছে।এই খাবারটা সে আরো একবার খেয়েছিল। বিয়ের শপিং করতে যখন গিয়েছিল।তবে কোনো রেস্তোরাঁয় না, বাড়িতে পার্সেল করে এনেছিল।করুন চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে। অতঃপর টুং টুং শব্দ করে হাত থেকে চামচটা প্লেটে রেখে দিল।
আড় চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো নিবিড়। পা দিয়ে চেয়ারটাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিল। চামচটা হাতে তুলে, নুডুলস নিয়ে মেহেরের মুখে মুড়ে দিল। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল..

— “ভালোভাবে দেখ আমি কিভাবে নুডুলসটা চামচে তুলি ,তুমিও সেমভাবে তুলে নিও। কেমন”।।

মেহের গভীর দৃষ্টি দিলো নিবিড়ের হাতের দিকে ।যেন এই কাজটাই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিবিড় নুডুলসের উপর চামচটা স্বল্প সময় ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে নিল। পূর্ণরায় মেহেরের মুখে তুলে দিল। ওষ্ঠ যুগলের মাঝে চামচের হালকা ধাক্কায় কিছুটা থুতনিতে গড়িয়ে পড়লো। হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলতে নেওয়া আগেই নিবিড় তুলে নিজের মুখে পুড়ে নিল। ছলছল করে উঠলো মেহেরের চোখ। প্রথমবার কেউ তার এতো যত্ন করছে। কার্ণিশ ঘেঁষে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লে , হাত তা ধরে নিল সে। মাথায় হাত রেখে অনুভূতি পূর্ন কন্ঠে বলল..
— “আমার স্পর্শে কি তুমি সামান্য পরিমাণে ব্যথিত হচ্ছো‌। তাহলে বলে দাও,আমি কখনো তোমাকে ব্যথিত হতে দিবো না।তবুও চোখের জল ফেলে না”।

ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো মেহের। এই মানুষটার আশেপাশে থাকলে নিজেকে পূর্ণ মনে হয়। আর তিনি বলছে আমি ব্যথিত হচ্ছে। আমি কেন কোনো মেয়েই হবে না। এইসব ভেবে মাথা নিচু করে নিল সে।

চারদিকে মানুষের করতালিতে শব্দে ধ্যান ভাঙলো নিবিড়ের। তনু রক্তচক্ষু দিয়ে দুজনকে গিলে খাচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সংযত করছে। কিন্তু বেশিক্ষন পারলো না। শব্দ করে উঠে দাড়ালো সে। চেঁচিয়ে বলল..

— “এই তাহলে আসল কারণ। আমি তো অন্যকিছু ভেবেছিলাম।আমার কালকেই ভাবা উচিত ছিলো। শুধু দরজায় নক না করে ভেতরে যাওয়ার জন্য কেন বকবে।
পাবলিক প্লেসে এইটা রাস্তার মেয়েকে খাইয়ে না দিলেও পারতে।যে যা কখনো চোখে দেখে নি। তার সেটা না খাওয়াই স্রেও”।

মাথা তুলে তাকালো না মেহের। অপমানে ভেতরটা ভেঙ্গে গেছে। কখনো তনুর মতো ভেবে দেখেনি সে। অবশ্য একবার ভেবে দেখা উচিত ছিল। নিজেকে আজ বড্ড বোঝা মনে হচ্ছে। নিবিড় মেহের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বললো…

— “তোমাকে আমি কতোবার বলেছি, মেহের আমাদের বাড়ির কাজের লোক নয়। এতো গুলো কথা শুনালাম কিন্তু সত্যি কথা কি জানো, কুকুরের লেজ জীবনেও সোজা হয়না। ইউর বিহেবিয়ার লাইক বি টাইল”।

— “হাউ ডেয়ার ইউ বাই টাইল। টাইল আমি না তুমি। কি জানো বলেছ ? মেহের তোমাদের বাড়ির কাজের লোক নয়। আই সি।ও তোমার আশ্রিতা। আর আশ্রিতা আশ্রয় দেওয়া মহৎ কাজ। কিন্তু তুমি তাকে খাইয়ে দিচ্ছো।তার মুখেরটা খাচ্ছ। লাইক সিরিয়াসলি..
আচ্ছা মেহের তোমার আশ্রিতা নাকি আশ্রিতা নামক রক্ষিতা। কে হয় তোমার…

ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিল মেহের। লাইফে অনেক কিছু তাকে শুনতে হয়েছে। কিন্তু কখনো তার চরিত্র নিয়ে কিছু শুনতে হয়নি। কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে। নিঃশব্দে দৌড়ে বেরিয়ে গেল সে।
নিবিড় কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। একদিকে বোনের প্রতি ভালোবাসা অন্যদিকে মেহেরের প্রতি দায়িত্ববোধ। কোনোটাই অবহেলা করতে পারছে না সে।আঙুল তুলে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ।পাশে মেহেরের অনুপস্থিত অনুভব করে বেরিয়ে এলো সে।

_________________
নদীর তীরে বসে আছে মেহের। তার খুব নিকটে বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে রাগ সংযত করার চেষ্টা করছে সে।তখন মেহেরকে নিয়ে সোজা নদীর পাড়ে চলে এসেছে। সূর্য অস্ত গিয়েছে বেশকিছু আগে। আকাশের রক্তিম আভাগুলো কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদায় নিয়ে তারাদের দেখা মিলবে। ইতিমধ্যে চারদিকে অন্ধকারে অনেকটা ছেড়ে গেছে।
নিবিড় হাত সরিয়ে মেহেরের কোলে মাথা রাখল । তবুও কোনো‌ ভাবাবেগ হলো না মেহেরের । মেহের নিজের গ্ৰামে চলে যেতে চেয়েছে,, তাই নিয়ে ইচ্ছে মতো ঝেড়েছে নিবিড়। তনুর পুরো রাগ ঝেড়েছে মেহেরের উপর। বেশ কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙ্গে মুখ খুললো মেহের..

–” আচ্ছা আজ আমি আপনার দেওয়া লাল রঙের শাড়িটা পড়েছে। কাজলে নয়ন রাঙিয়েছি , লাল আভায় অধর সাজিয়েছি। কেমন লাগছে আমায় বললেন না তো”??

মাথা তুলে উঠে বসলো নিবিড়। কিছুক্ষণ মোহনীয় দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকিয়ে রইল। আজ সে নতুন একজন মেহের কে দেখেছে। যাকে বলে, রক্তিম রানি মেহের। এমন রুপে সব রাগ যেন উধাও হয়ে গেছে তার। আঁচলে ঢাকা হাত জোড়া বের করে কৌতূহলী হয়ে বলল..

— “চুড়ি গুলো কেন পড়োনি”??

নেতিয়ে গেল সে। চুড়িগুলো তার হাতের চেয়ে ছোট সাইজের হয়েছিল ।তাই চেষ্টা করেও পড়তে সক্ষম হয়নি।

— “চুড়িগুলো হাতের মুঠোয় যাচ্ছে না”।

— “কোথায় সেগুলো”।

সংক্ষেপে উত্তর দিলো “গাড়িতে”। অপেক্ষা করলো না নিবিড়। দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়ির কাছে পৌঁছে গেল। গাড়ির ব্যাক সিট পড়ে আছে চুড়ির মুঠো গুলো।আলতো ভাবে কিছুক্ষণ এপিঠ ওপিঠ করে পর্যবেক্ষণ করে নিল। উপরের ঝিকিমিকি করা ছোট ছোট পাথর গুলো খসে পড়েছে। অর্থাৎ মেয়েটা চেষ্টা করেছে।

মেহেরের পাশে বসে হাত বাড়িয়ে দিল সে। মেহের কাঁপা কাঁপা হাতে নিবিড়ের হাতের করতলে নিজের হাতের করতল স্পর্শ করলো।একটা একটা করে স্বযত্নে চুড়িগোছা মেহেরের হাতে পড়িয়ে থামলো না নিবিড়।এক হাতের সাথে অন্যহাত মেশালো দুহাতের চুড়ির স্পর্শে ঝুনঝুন শব্দ নির্জন জায়গাটা শব্দের তালে ছেয়ে গেল।অনেক ধরনের চুড়ি পড়েছে সে, কিন্তু কখনো এমন শব্দ শুনে নি সে। দূরে গাছে ডালে বসে থাকা একজোড়া পাখি সায় দিলো তার মধুর কন্ঠে। মেহের চুড়িতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল..

— “এই ধরনের ম্যাজিকেল সাইন্ড আমি কখনো চুড়ির মাঝে শুনিনি। এটা সত্যিই ম্যাজিকেল চুড়ি”।

ম্যাজিকেল শব্দঠি শুনে হাসলো নিবিড় । বলল..
— “এটা ম্যাজিকেল চুড়ি নয়‌। এই যে ছোট ছোট পাথর গুলো দেখছো। এটা হচ্ছে একটি পাথরের সাথে অন্য পাথরের সংঘর্ষের আওয়াজ। যদি সবগুলো পাথর থাকতো তাহলে আরো সুন্দর আওয়াজ তৈরি করতো”।

মুখটা ছোট হয়ে গেল তাঁর। যদি তখন বৃথা চেষ্টা না করতো তাহলে এখন সেই সুন্দর ধ্বংনিটা সে শুনতে পারতো। মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল..

— “কষ্ট পেও না। এমন চুড়ি আমার নজরে এলে আমি আবার তোমাকে কিনে দিবো। কেমন”?

শ্বাস টানলো সে। নিজের হাতের বাজে নিবিড়ের হাত যুগল বন্দী করে। চোখে চোখ রেখে বলল..

— “এতো কেন করছেন আমার জন্য? কে আমি”?

অবাক হয়ে মেহেরের চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল। সত্যিই তো কে মেয়েটা,, কেন তার কষ্টে বেশী ব্যথিত নিবিড় হয়।যার কোনো ভাষা তার কাছে নেই। সত্যি বলতে ‘” কে আমি শব্দটির মাঝে লুকিয়ে আছে হাজারো অধিকার। ভালোবাসা 💝

______ “কে আমি ”তিন শব্দের বচন হলেও
লুকিয়ে আছে হাজারও দায়িত্ব বোধ, অধিকার
যা বোঝার ক্ষমতা সবার হয় না।✨

— ইফা 🌿

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here