এক মুঠো ভালোবাসা 💝পর্ব:১৪

0
1014

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৪

মেহের এক ধ্যানে তাকিয়ে তাকিয়ে আছে বকুল ফুলের গাছটার দিকে। গাছটায় ফুলে ফুলে ভর্তি। কিন্তু নিচে একটাও ফুল নেই।যেগুলো আছে মাটির ফাঁকে অর্ধেক অংশ ঢোকা। উপায় না পেয়ে এগিয়ে গেল গাছটার নিচে। অর্ধ বকুল ফুল গুলো কুড়িয়ে নিজের ওরনার ফাঁকে নিয়ে নিলো। অতঃপর পুকুরের দিকে এগিয়ে গেল। সিঁড়িতে পা রেখে দুহাতে ফুলগুলো থেকে ভালোভাবে মাটি ছাড়িয়ে নিল। হাতের মাঝে বন্দী করে উঠে আসতে নিলে শক্তপোক্ত পুরুষের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেত নিল। হাত দিয়ে তার শার্টের চেপে ধরলো। ভয়ে ভয়ে উপরের দিকে তাকাতে নিবিড়ের হাসৌজ্জ্বল মুখটা ভেসে উঠলো। এক মুহুর্তের মধ্যেই সবটা রাগ উধাও হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষন পর নিবিড়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। ফুলের কথা মাথায় আসতেই পানির দিকে তাকালো । ফুলগুলো পানিতে ভাসছে। কত কষ্ট করে ফুলগুলো ধুলো দূর করলো। সব কষ্ট যেন বিফলে গেল। মুখ কালো করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
নিবিড় বাহুতে হাত রেখে মেহেরকে পুকুরের দিকে ঘুড়িয়ে নিল।কানের কাছে মুখ নিয়ে স্লো কন্ঠে বলল…

— “একবার ভালোভাবে পুকুরের পানির দিকে তাকাও ।দেখ বকুল ফুল গুলো কতো সুন্দর লাগছে”।

গভীর দৃষ্টি দিয়ে ফুলগুলোর দিকে তাকাতেই মন ভালো হয়ে গেল তার। আকাশের চাঁদের প্রতিচ্ছবি পানির ভেতরে ফুটে উঠেছে। একদম বকুল ফুলের মাঝ বরাবর। পানির ভেতরে কমলা রং দেখা যাচ্ছে।তার উপর সাদা রং বেশ মানিয়েছে। মুখ ফুটে নিজের অজান্তেই বলে উঠলো..– “খুব সুন্দর”!

— “হ্যা খুব সুন্দর” !

–” কিন্তু আমার বকুল ফুলগুলো তো হারিয়ে গেল”। (মন খারাপ করে মেহের)

বাহু থেকে হাত সরিয়ে নিল নিবিড়। পকেটে রাখা সতেজ ফুলগুলো তুলে মেহেরের হাতের ভাজে বন্দী করে দিল। নিজের হাতে ফুলের অস্তিত্ব পেয়ে মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠল মেহেরের।খুশীতে পায়ের পাতা উঁচু করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল নিবিড়ের গালে। নিবিড় নিজের গালে স্পর্শ করে আঙুলের ডগায় নিজের ঠোঁট ছুয়ালো।

— “তাহলে আমার ধারণাই ঠিক। মাঝরাতে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পুকুর পাড়ে এসেছ?? যাতে কেউ তোমাদের না দেখে। বাট ইউস আইডিয়া ইস এভসুলেটলি রং। সেই তো আমি জেগেই গেলাম”।

তনুর ঝাঁঝালো কষ্ঠস্বর শুনে ফিরে তাকালো মেহের নিবিড়। তনুকে দেখে চরম বিরক্ত হলো নিবিড়।ভয়ে নেতিয়ে গেল মেহের। গ্ৰামের মানুষগুলোকে খুব ভালো করে চেনে সে‌। তীল করে তাল করা এদের অভ্যাস। কিন্তু নিবিড়ের তাতে কিছু যায় আসে না। সে তৃক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল…

— “যখন জানোই আমরা নিজেদের চাহিদা মেটাতে এতো রাতে এখানে এসেছি, তাহলে তুমি এসেছ কেন?? আমাদের সঙ্গি হতে “?

— “হা হা হা ! আমি কেন তোমাদের সঙ্গি হতে আসবো ? আমি কি মেহেরের মতো নষ্টা মেয়ে নাকি? যে নিজের শরীর দিয়ে অন্যকে হাত করবো” ?

ধর্যের বাঁধ ভেঙে গেল নিবিড়ের‌ এতোক্ষণ নিবিড়কে খারাপ বলেছে ,,সেটা সে বিনা শর্তে মেনে নিয়েছে। কিন্তু মেহের কে দেওয়া উপাধি সে মেনে নিতে পারল না। অজান্তেই নিজের গায়ের সব শক্তি দিয়ে তনুর গালে চড় বসিয়ে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল…

— “মেহের নষ্টা মেয়ে নয়? নষ্টা মেয়ে তুমি! যে যেমন বাকিদের তেমনই ভাবে”!
চলো মেহের !

হাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নিবিড়। গালে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সংযত করছে তনু!

–“খুব ভালো করেছ ,আমাকে মেরে। এইসবের মূল্য দিতে হবে তোমার প্রাণের মেহেরকে। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ”!

_______________________
— “এই মেয়ে তোর কোনো শিক্ষা দিক্ষা নেই নাকি ? আমাদের বাড়িতে আগে ছেলেরা খাবে তারপর মেয়েরা। আর তুই ছেলেদের খাওয়ার আগেই খেতে বসে গেলি”? ( রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তনুর দাদী )

তনুর দাদীকে দেখে মাথা নিচু করে উঠে দাড়ালো মেহের। সবে ১.০৫ বাজে। দুপুরের রান্না চলছে। তনুর কথায় মন খারাপ করে ঘরে বসে ছিল। কাল সারাদিন + সকালে ব্রেক ফাস্ট না করাতে শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছিল মেহেরের। তাই সবার আগে খেতে বসেছে।যদি বুঝতে এই বাড়ির কোনো নিয়ম আছে তাহলে ভুলেও তা লঙ্গন করতো না।
নিম্ন স্বরে বলল..

— “খুব ক্ষুধা লেগেছিল দাদি । সকালে কিছু খাইনি তো তাই”।

তিনি কিছুক্ষণ মেহেরের খাবারের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বললেন..

— “এই সামান্য খাবার খেলে তোর পেট ভরে যাবে। ভরবে না‌। তুই ইচ্ছে করে আমাদের বাড়ির নিয়ম ভেঙ্গেছিস। বাড়ির মেয়ের বিয়েতে কাজের লোক নিয়ে এসেছে ? যদি এই বাড়িতে বিয়ে না হতো।তাহলে ধাক্কা মেরে তোকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিতাম। এই বাড়িতে তোদের মতো মানুষের জায়গা হয়না। যে বাড়ির লোকরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন। সেই বাড়ির মেয়ে কেমন আল্লাহ মালুক। আমি তো বিয়ে দিতেই বারণ করেছিলাম”।

ছলছল করে উঠলো মেহেরের চোখ। জীবনের অনেক কথা শুনেছে। এমন কথা কখনো শুনেনি।প্রতি মুহূর্ত অপমানিত হতে হচ্ছে। নিবিড় বড়দের সাথে বিয়ের হিসেবে বসেছে‌। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যেতে চাইছে তার পরিবার।। কথাগুলো শুনে পেট ভরে গেছে মেহেরের। হাত ধুয়ে উঠে যেতে নিলে আটকে দিলেন তিনি। কাঠ কাঠ গলায় বললেন…

— “এই বাড়িতে কেউ অন্ন নষ্ট করে না। তাই তুইও তার দুর্সাহস দেখাস না। চুপচাপ খাবারগুলো শেষ করে তবেই উঠবি। নাহলে এই বাড়িতে আমি তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ছাড়ব “।।

কথাগুলো বলে হনহন করে চলে গেলেন তিনি। করুন চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে তুচ্ছ হাসলো মেহের ।আজ এই দিনটাও তার দেখতে হলো। সেদিন জীবনের ইতি টানলে আজ এমন দিন তাকে দেখতে হতো না।

…….

প্লেটে পানি পড়তেই চোখ তুলে তাকালো মেহের। তনু অসহায় মুখ করে তার পাশে বসে আছে। তবুও কিছু বললো না। নত সুরে খেতে লাগল।
মেহেরের ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে তনু। পেস্ট করে রাখা গোল মরিচ গুঁড়ো মেহেরের প্লেটে ঢেলে দিল। তবুও প্রতিবাদ করলো না মেহের। কথা বাড়ালে তনু হয়তো আরো অনেক কিছু করবে। তাছাড়া এই খাবারগুলো যে করেই হোক তাকে শেষ করতেই হবে।

— “এইয়া কিতা করতাসেন আপামনি ? এতোগুলান ঝাল তো মাইয়াডা খাইতে পারবো না”। (টেবিল সাজাতে সাজাতে ফুলি)

— “ও একবারো তোরে বলছে ,,খেতে পারবে না। তাহলে তুই এতো পাকনামি করছিস কেন?
কাজের লোকের প্রতি কাজের লোকের প্রতি দয়া। যা নিজের কাজ কর”!!

ফুলি ভেংচি কেটে জগ নিয়ে বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে যেতেই মুখ খুললো তনু..

— “সকালে আমাকে অপমান করেছিলিস ,, নিবিড় কে দিয়ে চড় মারিয়েছিস। এটা হচ্ছে তার ট্রাইলার ।এখনো পুরো সিনেমা দেখানো বাকি আছে।
যদি নিজের ভালো চাস, এখান থেকে চলে যা। আমি আবারো বলছি, চলে যা।”।

মেহের তনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পূর্ণরায় খাবারে মন দিল। খাবারের শেষ লোকমা মুখে পুড়ে গ্লাসের পানি ঢেলে হাত ধুয়ে নিল। প্লেটটাকে একটু দূরে সরিয়ে হাত বাজ করে টেবিলের উপর রাখলো। হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। ঝালে হাত পা কাঁপছে।কান দিয়ে যেন ধোঁয়া উঠছে। চোখ ঠোঁট লাল হয়ে গেছে।

কাঁধে হাত রাখলে মাথা তুলে তাকালো মেহের ।নিশি এসেছে। প্রীজে থাকা সাদা মিষ্টি টা নিঃশব্দে মেহেরের মুখে পুড়ে দিয়ে পাশে বসলো সে। করুন সুরে বলল..

— “যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। ভুলে যাও। ভাইয়াকে কিছু জানিও না।তাহলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।(কিছুক্ষণ পর আবার)
যদি পারো তনুর কথা মেনে নিও”।

মলিন হাসলো মেহের। চোখে অশ্রু আর মুখে লোক দেখানো হাসি। রুমের দিকে পা বাড়ালো সে। যাওয়ার আগে মৃদু কন্ঠে বলে গেল…

–” আমি ওতোটা স্বার্থপর নই যে, নিজে সুখী হতে পারি নি বলে অন্যকে সুখী হতে দিবো না। ডোন্ট ওয়ারি, শুধু তোমার ভাই কেন? কেউ জানবে না”।

(চলবে… ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here