এক রাতের বউ পর্ব_০৩

0
3914

#এক রাতের বউ
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৩

রাতে রান্না শেষ করে আমরা এক সাথেই খেলাম তারপর রুমে এসে কম্বল মুড়ো দিয়ে ঘুমিয়ে পরি।
সকাল সকাল রুম ভেঙে যায় নামাজ আদায় করে রান্না শুরু করে দেই।
প্রতিদিনের ন্যায় কাজের মেয়ের মতো খেটে অফিস চলে আসি।
অফিস এসে টুকটাক কাজ করি তারমধ্যেই স্যার ডাকলেন। চলে আসলাম উনার কেবিনে নেই কেবিনের বাহিরে বারান্দায় চোখ গেলে দেখলাম দুই হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে সাথে ম্যাডাম ও আছেন।
আমি তাদের কাছে আসলাম।

“স্যার আমাকে ডেকেছেন”

“তোমার ম্যাম তোমার সাথে কথা বলবে”

“তুমিই বলো না” (ম্যাম স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল স্যার আবারও ম্যাডামকে বললেন সেই জেনো বলে)

ম্যাম আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার দুই হাত উনার হাতের মধ্যে নিলেন আর বলতে শুরু করেন।

“প্রীতি তুমি অনেক লক্ষী মেয়ে তোমাকে তিন বছর ধরে চিনি তুমি তোমার স্যারের নিজের বাবার মতো খেয়াল রাখো আর আমাদের কেও ভালোবাসো তোমার মতো Honest মেয়েই আমাদের ছেলের জন্য আমরা খুঁজছি প্লিজ তুমি আমাদের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও প্রীতি আমরা তোমাকে নিজের মেয়ের মতো রাখবো আমাদের ছেলে হামিম একটু বদমেজাজি রাগী কিন্তু মনের দিক দিয়ে খুব ভালো প্রীতি তুমি প্লিজ রাজি হয়ে যাও তোমার ফ্যামিলিকে রাজি আমরা করাবো”

“স্যার ম্যাম কি বলছেন” (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম)

“তোমার স্যারই কাল বাড়ি গিয়ে আমাকে তোমার কথা বলেছে আর আমিও একবারেই রাজি হয়ে গেছি প্রীতি”

আমি কি বলবো এভাবে হুটহাট বিয়ের জন্য রাজি হওয়া যায় নাকি আর আজ পর্যন্ত যাকে দেখিইনি তাকে কিভাবে বিয়ে করবো না জানি লোকটা কেমন তার স্বভাব চরিত্র কেমন আর সোজা বিয়ে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম।

এদিকে এবার স্যারও এসে আমার হাতে ধরলেন এখন কি করবো কিভাবে না করবো।
এত জোরাজোরি করলেন যে আমি না করতে পারলাম না হ্যাঁ বলে দিলাম।
স্যার ম্যাডাম বললেন আজ লাঞ্চেই উনারা আমার বাড়ি আসবেন। আমিও মাথা নাড়ালাম ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসছি আর রান্না করছি আব্বুকে সব বলেছি আব্বু মা’কে বলেছে তাতে তার কোনো কিছু যায় আসে না পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছে।
দুপুর ১২টা ৪০মিনিট রান্না শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে রাখি সাথে আমিও রেডি হয়ে যাই।

কিছুক্ষণ পর স্যার ম্যাডাম আসেন।
দুপুরে খেতে খেতে কথা বলছে সবাই। তাছাড়া সয়ার ম্যাডাম আজও আমার খাবারের প্রসংশা করলেন।
বিয়ের কথা বলতে সৎ মা শুরুতে ইচিং বিচিং করেছিলো কিন্তু আব্বু রাজি হয় বলে সে আর কিছু বলে না।

“আগামী শুক্রবার প্রীতি আর আমাদের ছেলে হামিমের বিয়ে আর এই হলো হামিমের ছবি” (স্যার)

আব্বু ছবিটা হাতে নিয়ে বললেনঃ
“মাশা আল্লাহ আপনার ছেলে তো হীরের টুকরো”
আব্বুর মুখে প্রসংশা শুনে আড় চোখে ছবিটা দেখার চেষ্টা করে কিন্তু দেখতে পারছে না। আব্বু ছবিটা মার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল।
নাও দেখো..!
মা ভ্রু কুঁচকে ছবিটা নিলো আর ছবিটা দেখে তার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো।
” এটা আপনার ছেলে পুরো হিরোদের মতো” (মা)
“আপনাদের মেয়েও তো হিরোইনের মতো” ( ম্যাম)
তারপর আরও কিছুক্ষণ কথা বার্তা বললেন স্যার ম্যাম বলেছন তাদের কোনো দাবি নেই তারা শুধু আমাকে চায় আর আমি তাদের বাড়ির বউ হবো সো আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত যা যা লাগবে সে গুলো সব কিছু উনারাই বহন করবেন।
স্যার ম্যাডাম বিকেলের দিকে চলে যান। টেবিলের উপর রাখা আছে উনার ছবি অনেক ইচ্ছে হচ্ছে দেখতে কিন্তু দেখবো কি না সেটা ভেবেই ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি ধূূর বাবা এতো ভেবে কাজ নেই দেখেই ফেলি।
দৌড়ে এসে ছবি হাতে নিয়ে ওড়নার নিচে লুকিয়ে রুমে চলে আসলাম দরজা আটকে দিলাম।
দরজার সাথে হেলান দিয়ে ছবিটা নিজের চোখের সামনে দরলাম। প্রথম নজরেই ভালোবেসে ফেলেছি এত কিউট বলার মতো না। তিন ইঞ্চ লম্বা চুল মায়াবী ডাগর ডাগর আঁখি (চোখ) গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট গায়ের রং ফর্সা হিরো স্টাইল দেওয়ালে এক পা দিয়ে দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শার্টের গলায় ব্লাক সানগ্লাস হোয়াইট শার্ট নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট জাস্ট Awesome লাগছে ছবিতেই না জানি বাস্তবে দেখলে কি হবে আমার।

সন্ধ্যার দিকে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে ছিলাম। আর শুরু হয়ে যায় সৎ মার কেটকেট।

“বড় বাড়ি বিয়ে হচ্ছে বলে অহংকারে রুমের বাহিরে পা পরছে না নবাব নন্দিনীর আলো জমিদারের বেটি ঘর তে বাইর হো রাতের খাবার রানবো কেডা কিরে বাহির হোস না ঘরতে”

কিছু না বলে দরজা খুলে বের হলাম আর রান্না ঘরে চলে গেলাম।
রাতে রান্না শেষ হলে সবাই এক সাথে খেয়ে দেয়ে রুমে চলে আসি।
যতক্ষণ জেগে ছিলাম ছবিটাই তাকা মানুষ টাকে দেখেছি আর ঘুমানোর সময় বালিশের উপর রেখে দেই।

দুইদিন পর থেকে বিয়ের সব কেনাকাটা শুরু হয়ে যায়।
অনেক বড় বড় শপিংমলে নিয়ে যায় আমাকে এত বড় শপিংমলে আজ প্রথম আসি শপিংমলের ভেতরে যে এত সুন্দর হয় জানতাম না। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে আমি ভাগ্য হয়নি আসার আর আজ আল্লাহ রহমত করেছেন এত সুন্দর সুন্দর বিয়ের ড্রেস কি বলবো কিন্তু এইগুলো দাম শুনে আমার কলিজা সহ আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমি স্যার আর ম্যামকে বারবার বলি এত নামি-দামি পোশাক কিনার কোনো প্রয়োজন নেই কিন্তু তারা আমার কথা শুনেই না। শপিংমল থেকে বের হয়ে কসমেটিকস এর শপে আসলেন আর যা যা প্রয়োজন সব কিনলেন।
বিয়ের লেহেঙ্গাই কিনেছে দুই লক্ষ টাকা দিয়ে কসমেটিক এ গেলো এক লক্ষ এখন আপনারাই বলেন আমার মতো গরিব ঘরের মেয়ের এইগুলো কি মানায় মনে হচ্ছে জেনো স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমার এগুলো একটু ভালো লাগছে না এত টাকা নষ্ট করছেন আমার জন্য কিন্তু আমি কি করবো অনেকবার বারণ করেছি কিন্তু উনারা তো আমার কোনো কথাই শুনতেছেন না শুধু কিনেই যাচ্ছে।
শেষে আসলাম জুয়েলারি শপে।
শপের অর্ধেক জিনিস মনে হচ্ছে বাহির করে এনে রাখছে আমার সামনে তবুও ম্যাম বলছে আরও নিয়ে আসতে।
দু’জনেই একটার পর একটা আমাকে পরাচ্ছে আর দেখছে কোনটায় কেমন লাগে আমাকে।
রাত ১০টায় আমি বাড়ি ফিরে আসি। আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে উনারা চলে যান।

রাতে ঘুমে বিছানার উপর উপর হয়ে শুয়ে পা দু’টো আকাশের দিকে করে হাতে ছবিটা নিয়ে ছবির মানুষটাকে দেখছি আর বলছি।
দুইদিন পর আমার বিয়ে আমার এই ছবিতে থাকা রাজকুমারের সাথে কিন্তু আমার এক জিনিস খুব স্ট্রেঞ্জ লাগছে আমিও উনাকে ছবিতে দেখেছি কিন্তু উনি তো আমাকে দেখেনি আর ছোটো থেকে দেশের বাহিরে ছিলেন অনেক শিক্ষিত স্মার্ট তাহলে আমাকে না দেখেই বিয়ে করতে রাজি হলেন কেনো আমাকে দেখতেও চায়নি আবার আমি গরিব ও কেমন জেনো মনের ভেতর খুদখুদ করছে।

চলবে?

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here