এক রাতের বউ পর্ব_০৬

0
3260

#এক রাতের বউ
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_06

সকালে…
আমার আগে হামিমের ঘুম ভেঙে যায়।
আমি ওর বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছি দেখে অবাক হয় সাথে নিজেকে ও আমাকে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় দেখে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়।
আমি কম্বল নিয়ে নিচে পরে যাই আর ঘুম ভেঙে যায় বিছানার উপর বসে কম্বলের এক কোনা ধরে আনছে এদিকে আমি কম্বল ধরে টানছি শেষে বেডের ওপর পাশে একটা টাওয়াল ছিলো সেটা জরিয়ে নিচে নেমে আসে ঠিক আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে আর এদিকে আমি কম্বল পেচিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

বাহিরে এসেই আমাকে জেরা করছে।
হামিম: কি করেছো তুমি রাতে আমার সাথে…?
আমি: আমি কি করেছি আপনি করেছেন যা করেছেন একা পেয়ে আমার সর্বনাশ করেছেন।
হামিম: আমি কিছুই করিনি তুমি আমার ইজ্জত লুটেপুটে খেয়েছো।
আমি: ইজ্জত সেটা আবার লুটেপুটে খায় কিভাবে?
হামিম: আমার ইজ্জত খেয়ে এখন নেকামো করছো?
আমি: আমি কিছুই করিনি আমি রুমে ডুকতেই আপনি বলেছিলেন আপনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন এইটা সেইটা কত কিছু বলেছিলেন আর আমার কাছে এসে ছিলেন।
হামিম: আমি তোমাকে কিছুই বলিনি!

আমি: কিছুই বলেননি না। টান দিয়ে খুলে দিবো নাকি টাওয়াল টা।

হামিম: এই না। (বলেই সামনে থেকে একটু দূরে সরে গেলো)
তারপর হামিম আর কিছু বলতে যাবে তখনই রুমে দরজা খুলে একজন স্টাফ রুমে ঢুকে পরলো আর সেটা দেখে আমি চিৎকার দিয়ে হামিমের পেছনে লুকিয়ে পরলাম।

হামিম: রুমে ঢুকার আগে পারমিশন নিতে হয় সেই টুকু কমন সেন্স নাই নাকি তোমার যা বলছি। (এক ধমক দিয়ে বললো স্টাফ কে আর স্টাফ আমতা আমতা করে রুমের দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো)

এবার হামিম আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল..!
হামিম: কাল আমার মাথা ঠিক ছিলো মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল আর কাল কি না কি তোমাকে বলেছি আমার সেটাও মনে নাই গত কাল রাতে আমাদের মাঝে কি হয়েছে কি হয়নি আমার তাতে কোনো আগ্রহ নেই সব কিছু ভুলে যাও আমি আর কখনো তোমার কাছে যাবো না তোমার কাছে যেতেও চাই না।
যা হয়েছে একটা এক্সিডেন্ট ভেবে ভুলে যাও.!

এই কথাগুলো বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো হামিম আর আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছি.!
গত কাল রাতেও ভেবেছিলাম আজ থেকে হয়তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু সকাল হতেই সব আগের মতো হয়ে গেলো কোয়াশার মতো ধোঁয়াশা।

আজ থেকে আমি এমন বিহেভ করছি জেনো আমরা হ্যাপি আছি সংসার জীবনে জেনো সব কিছুই নরমাল।
আমি বাহিরে সবাইকে সবটা নরমাল দেখালেও রুমের মধ্যে হামিম কে ইগনোর করি ও যেখানে যায় সেখানে যাই না কথা বললে উত্তর দেই না। ওর হয়তো আমার বিহেভে সমস্যা হচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।

কিছুপর পর…!

মা বাবা গ্রামের বাড়ি গেছেন বাড়িতে ভালো লাগে না উনাদের ছাড়া কেমন জানি খালি খালি লাগে।
বারবার কল করে বলি তারাতাড়ি চলে আসতে আর তারা আগামীকাল কে সকালে আসবে।

রাতে হামিম বাড়ি এসে বলে কাল ওর কয়েকজন বন্ধু আসবে বাড়ি।

পরেরদিন সকাল সকাল উঠো কিচেনে এসে রান্না করছি..!

দুপুরের দিকে সবাই চলে আসে আর তাদেরকে ডাইনিং টেবিলে খেতে দিয়ে দেই। সবাই খাচ্ছে হাসাহাসি করছে আর জিজ্ঞেস করে ভাবি কোথায় দেখা করানোর জন্য কিন্তু আমি উনাদের সামনেই আছি আর হামিম একবারও বলছে না আমিই ওর স্ত্রী তার মধ্যে একটা ছেলেকে দেখছি আমার দিকে বার বার বাজে নজরে দেখছে কিন্তু এ কথা হামিম কে বললে সে বিশ্বাস করবে না কারণ আমি ওর কেউ নই আর ওরা ওর বন্ধু।
সবার খাওয়া শেষ হতেই আমি কিচেনে চলে আসি আর সবার আড়ালে ওই ছেলেটাই আমার পেছন পেছন কিচেনে চলে আসে কিচেনে তখন আমি একাই ছিলাম। আর হঠাৎ পেছন থেকে আমার হাত ধরে আমি ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকাই আর দেখি এই সেই ছেলে।
আমি তার এই ব্যবহারে রেগে তার গালে দেই এক চড় সে রেগে গিয়ে আমার সাথে জবরদস্তি করার চেষ্টা করছে আমি চিৎকার করছি কিন্তু আমার চিৎকার কেউ শুনতে পারছে না ভেতরে সবাই বক্সে গান বাজাচ্ছে এদিকে নিজেকে বাঁচানোর সর্ব চেষ্টা করছি এদিকে সেদিকে বারবার বারি খাচ্ছি আর আমার সাথে লেগে অনেক কিছু উপর থেকে নিচে পরে যায়।
ওইদিকে দুইবার কলিংবেল বাজানোর পরও কেউ দরজা খুলেনি বলে মিসেস নার্গিস উনার হ্যান্ড ব্যাগ থেকে এক্সট্রা চাবি বের করে দরজা খুলে ভেতরে আসে আর এসেই এত লাউড মিউজিক শুনতে পায়।
এদিকে মিসেস নার্গিস লক্ষ্য করেন কিচেন থেকে প্রীতির আওয়াজ আসছে আর ঠাস ঠুস কিছু পরতেছে। মিসেস আর মিস্টার খান কিচেনের দিকে আসছেন। ওইদিকে ওই ছেলে টা প্রীতির জামার হাতা টান মেরে ছিড়ে ফেলেছে।
ইতি কাঁদছে আর নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এই দৃশ্য দেখে মিস্টার খানের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। উনি পেছন থেকে ছেলে টার ঘাড়ে দরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করায় আর ইচ্ছে মতো কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে প্রীতি দৌঁড়ে গিয়ে মিসেস নার্গিস কে জরিয়ে ধরলেন আর নিজের গায়ে পরা ছিলো চাদর সেটা দিয়ে প্রীতিকে ঢেকে দেয়।
মিস্টার খান মারতে মারতে ছেলেটা কে হামিমের পায়ের কাছে ফেলে।
রহুলকে মাটিতে পরে থাকতে দেখে গান বন্ধ করে ওর কাছে গিয়ে ওকে উঠিয়ে দাঁড় করায় আর জিজ্ঞেস করে ওর এই অবস্থা কে করেছে।

মিস্টার খান: আমি করেছি কেনো কি করবে তুমি?
হামিম: বাবা তুমি ওকে মেরেছো এইভাবে কিন্তু কেনো?
নার্গিস খান: কেনো জানতে চাস তুই এদিকে বন্ধু দের নিয়ে গান বাজাচ্ছিস আর ওইদিকে কিচেনে এই তোর লোফার বন্ধু তোর বন্ধু বলতেও আমার ঘৃণা করছে.।

হামিম: কিন্তু ও কি করেছে?
মিস্টার খান: কি করেনি বল তোরই বাড়ি এসে প্রীতির ইজ্জতে হাত দিতে যাচ্ছিল এই লোফার ছেলে।
হামিম: কি বলছো তুমি?
বাকিরা সবাই অবাক কি করেছে রুহুল আবার।
হামিম: কি হয়েছে রুহুল?
রুহুল: আমি কিছু করিনি রে ওই কাজের মেয়েটাই আমাকে ইশারা দিয়ে কিচেনে যেতে বলে ছিলো। আর আমিও সুন্দরী মেয়ে দেখে চলে যাই।

প্রীতি: উনি মিথ্যে বলছেন।
মাহিম: জাস্ট সেট-আপ। এতদিন তো তোকে আমি ছোটোলোক লোভী মেয়ে ভাবতাম আর আজ প্রমাণ করে দিলি লোভীর সাথে তুই চরিত্রহীন ও কয়টা ছেলে লাগে তোর একটা দিয়ে হয় না। তোর এই চেহারা দেখতেও ঘৃণা করছে এখন আমার চরিত্রহীন মেয়ে।

প্রীতি: বাসসস মিঃ মাহিম খান… বিয়ের পর থেকে অনেক বাজে কথা বলেছেন আমার গায়েও হাত উঠিয়েছেন কিন্তু আমি কিচ্ছু বলিনি আমি আগেও বলেছিলাম আপনাকে আমাকে যা ইচ্ছা বলুন কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলবেন না কি ভাবেন কি আপনি নিজেকে আপনি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে আপনি নিজের যোগ্যতায় আসেননি সব কিছু আপনার বাবার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে গড়িয়েছেন এই বাড়ি গাড়ি অফিস সব কিছুই আপনার বাবার পরিশ্রমে গড়া আপনার এতে কোনো হাত নেই কোথাও নেই শুধু পারেন বাবার টাকায় ফুটানি করতে।
আপনার বাবা মা’কে নিজের বাবা মার মতো ভালোবাসতাম তাই উনারা যখন বার বার রিকুয়েষ্ট করেছিলেন আপনাকে বিয়ে করার জন্য আমি উনাদের না করতে পারিনি আর আপনার ছবি দেখে আপনার প্রেমে যাই আপনার সাথে একটা হ্যাপি লাইফের স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি গরিব কিন্তু আমার টাকা পয়সার দিকে কোনো লোভ নেই কখনো ছিলো ও না। বিয়ের প্রথম রাতেই আপনার ভয়ংকর চেহারার সাথে পরিচয় হই তবুও আপনার থেকে ভালোবাসা প্রত্যাশা করেছিলাম কিন্তু রোজ রোজ আপনার কথা বার্তা সহ্য না হলেও হজম করেছি আমি ছোটো থেকে কষ্ট করেই বড় হয়েছি টাকার মূল্য আমি বুঝি দশ টাকা খরজ করতে গেলে আমি দশবার ভাবি আর সে জায়গায় আপনি দিনের পর দিন আমাকে লোভী বলেছেন টাকার জন্য বিয়ে করেছি বলেছেন আমি সব মেনে নিয়েছি কিন্তু আজ আপনার বন্ধু আমার সাথে যা করার চেষ্টা করছিলো তার পরে আপনার যা করার প্রয়োজন ছিলো সেটা আপনি না করে উল্টো আমারই চরিত্রের উপর আঙ্গুল তুলছেন বাহহহ শুনে রাখুন মিঃ হামিম খান আপনার মতো ছেলেদের ছায়ার উপর দিয়েও চলার রুচি আমার নেই গরিব হতে পারি কিন্তু আত্মসম্মান জীবনের থেকেও বেশি প্রিয়।
আপনার বাবা মার বিয়েতে দাওয়া সব কিছু রুমে আলমারী তে রাখা আছে চেক করে নিবেন আর আমার সাথে যা যা আছে আমি এখানেই খুলে রেখে দিচ্ছি শরীর থেকে খুলে সব জিনিস টেবিলের উপর রেখে দিলাম সাথে বিয়ের আংটি টা আঙুল থেকে খুলে রেখে দিলাম।
বাকিরা: ভাবি আপনি তখন বলেননি কেনো আপনিই মিসেস হামিম..!
আমি: যার জন্য মিসেস হামিম হয়েছি সেই পরিচয় করায়নি তাহলে হাত বাড়িয়ে নিজে থেকে নিজের পরিচয় কিভাবে দিতাম?

বাকিরা: সরি আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি ভাবি।

আমি: টেনশন করবেন না মিঃ হামিম আপনার ডিভোর্স পেপার আমি পাঠিয়ে দেবো শুধু সাইন করে দিবেন আর লাস্ট কথা লোভী বা চরিত্র হীন কোনো টাই নই আমি।
হামিম দুই চোখ দিয়ে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে।
হেঁটে স্যারের সামনে আসলাম।
আমি: স্যার আমার কি আপনার অফিসের পি.এর জবটা আছে নাকি নেই?
স্যার: তোর সাথে এত কিছু হয়েছে আর তুই আমাদের বললি না কেনো?
আমি: স্যার জবটা?
স্যার: আছে কাল থেকে জয়েন্ট করবি।
ম্যাম: প্রীতি তুই চলে যাবি মা?
আমি: হ্যাঁ মা আমার যে এখানে থাকার আর কোনো উপায় নেই।
কথা বলে এক কাপড়ে বাড়ও থেকে বেরিয়ে আসি একবারও পেছনে ফিরে তাকাইনি।

হামিমের বন্ধুরা: হামিম তুই তো রুহুলের চরিত্র কেমন জানিস ও মেয়ে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারে না এটা আগে থেকেই আর সেটা জেনেও তুই ভাবিকে এভাবে অপমান করলি তাও সবার সামনে এটা ঠিক করিসনি পস্তাতে হবে। বলে সবাই চলে যায়।
রুহুল কিছু না বলেই মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।
মিসেস নার্গিস ফ্লোরে বসে পরেন।
নার্গিস: আমাদের বাড়ির লক্ষী যে চলে গেলো!
মিস্টার খান: চলো রুমে চলো।
হামিম সোজা রুমে চলে আসে আর রুমের সব করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিচ্ছে।

আজ দিন সম্পূর্ণ শেষ হলো বাড়ির মধ্যে কেউই হামিমের সাথে কথা বলছে না এমন ভাব করছে হামিম বাড়িতেই নেই।

রাতে হামিম: তোমরা সবাই এমন করছো কেনো আমার সাথে ওই লোভী চরিত্র হীন মেয়ে চল গেছে ভালোই তো হয়েছে।
হামিমের মুখো এ কথা শুনে মিস্টার খান উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঠাসসসসস সোজা হামিমের গালে।
মিস্টার খান: আজ পর্যন্ত তোমার গায়ো হাত তুলিনি আর সেটাই আমার বড় ভুল আরও আগেই শাসন করা উচিত ছিলো। প্রীতি কোনো চরিত্র হীন মেয়ে না প্রীতির মতো মেয়ে খুঁজলে একটা পাবে না। চলে আসো আমার সাথে। হাত ধরে টানতে টানতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে যাচ্ছেন।

হামিম: কো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here