এক রাতের বউ পর্ব_০৪

0
3715

#এক রাতের বউ
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৪

আজ আমার গায়ে হলুদ আমাদের আত্মীয় স্বজন তেমন নেই আশে পাশের প্রতিবেশীরাই সব।
সকাল সকাল কমিউনিটি সেন্টারে চলে আসলাম।
এখানে এসে আমার চোখ তাক লেগে গেলো। এত সুন্দর করে সাজানো সব জায়গায় শুধু ফুল এইরকম শুধু অন্যের বিয়ে দেখেই আসছি আর আজ আমার সেম ভাবে বিয়ে হবে আমি কখনো ভাবিনি আমার কপালে আল্লাহ এত সুখ রেখেছেন জীবনে শুধু কষ্ট ছাড়া কিছুই পাইনি। আর এখন আল্লাহ সুখের সীমানা রাখেননি। হলুদের স্টেজ টা আরও বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগছে।

একটা রুমে চলে আসি আর আমার সাথে তিনজন মেয়ে।
হলুদের শাড়িটা একজন খুব সুন্দর করে পরিয়ে দেয়। আরেকজন চুল বেধে দিচ্ছে আরেকজন পায়ে কি জেনো করছো। আরেকজন কসমেটিক বের করছে এখন হয়তো সাজাবে।
দুই ঘন্টা পর তিন জনেই আমার সামনে থেকে সরে গেলেন আর আমাকে বড় আয়নার সামনে বসিয়ে দেয়। আমি নিজেকে দেখে চিনতেই পারছি না এটা কি আমি Like Seriously…! এটা আমি নিজেকে দেখতে দেখতে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম আর হাসতে হাসতে গোলগোল ঘোরাঘুরি করতে শুরু করি।
“এই কি করছো কি তুমি পরে যাবে আজ তোমার হলুদ একবার পরে ব্যাথা পেলে সারাজীবন সেই ব্যাথা থাকবে চুপচাপ বসো ছুটাছুটি করো না আমরা গেলাম আবার কাল আসবো” পার্লারের আপুরা কথাগুলো বলে চলে গেলো।

তারই কিছুক্ষণ পর ম্যাম আর স্যার আসলেন রুমে।
আমাকে দেখে ম্যাম আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের কোণে থেকে আঙুল দিয়ে একটু কাজল আঙুলের মাথায় লাগিয়ে আমার কানের পেছনে ছুঁইয়ে দেয় আর বলে কারো জেনো নজর না লাগে।

আমার সৎ মা আমার কাছে আসবে তো দূরের কথা সে দুঃখেই বাঁচতেছে না।
কেনো আমি বিয়ে হয়ে চলে যাচ্ছি বলে না কারণ হচ্ছে আমার বিয়ে হয়ে গেলে সংসারের সব কাজ উনার করতে হবে আর আমি জব করে যা মাইনে পেতাম সবটাই তো উনার হাতে দিতাম এখন থেকে তো সেটাও বন্ধ এই জন্য মুখ ফুলিয়ে বাহিরে বসে আছে আব্বু এসেছিলো একবার আমাকে জরিয়ে ধরে আর কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে যায়।

১০মিনিট পর আমাকে স্টেজে নিয়ে বসানো হয়। ক্যামেরা ম্যান ভিডিও করছে।
সবাই একে একে আমার পাশে বসছে আর গায়ে হলুদ ছুঁইয়ে দিচ্ছে সাথে সামনে যা যা সাজানো আছে সেগুলো থেকে একটু একটু খাইয়ে দিচ্ছে।

“এত মিষ্টি মনে হয় আমি বছরেরও খাই না আজ যা খাওয়াচ্ছে আল্লাহ ডায়বেটিস না হলেই বাঁচি। (মনে মনে)”

রাত ১২টায় হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয় মাঝখানে ম্যাম এসে খাইয়ে দেয় আমাকে ম্যাম আর স্যার সত্যিই ভালো।
পরেরদিন বিয়ের কার সাজি করা হচ্ছে।
বিকেল তিনটা বাজে সেই তিনজন পার্লারের আপুরা চলে আসে। আমি ওয়াশরুম থেকে বিয়ের বাড়ি লেহেঙ্গা পরে বেরিয়ে আসি। বাহিরে আসতেই একজন আপু আমার চুল ঠিক করে দেয় ফাস্ট আরেকজন আপু চুল বেঁধে দেয়। চুল বাঁধা হলে আমাকে মেক-আপ করতে শুরু করে। ভালা ভালা ন্যাচরাল লুক টা কে আমার ভূত বানাবে।
” আজ মনে হচ্ছে কালকের থেকে বেশি টাইম লাগছে রেডি হতে” (মুখ ফসকে বলে ফেললাম)

“কালকে হলুদ ছিলো তাই মিডিয়াম সাজ ছিলো আর আজ বিয়ে তাই গরজিয়াছ সাজ হবে বুঝেছো মায়াবী কন্যা তাই টাইম লাগবে” (ফাস্ট আপু)

“আজ এত সুন্দর করে সাজাবো দেখবে তোমার বর তোমার থেকে চোখই সরাতে পারবে না” (দ্বিতীয় আপু)

এই আপুর কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলি।

“লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা” (তৃতীয় আপুর কথা শুনে বাকি দুইজন হেঁসে দিলো সাথে উনিও হেসে দিলেন পরে গেলাম আমি ফাঁকা বাঁশের চিপায়।
আমাকে রেডি করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
পার্লারের আপুরা চলে যায়।
আমাকে স্টেজে নিয়ে বসানো হয় একদম উনার পাশাপাশি উনার দিকে তাকাতে পারছি না মাথা নিচু করে আছি।

তারপর কাজী সাহেব আসেন এবং বিয়ে পরানো শুরু করেন।

কাজী সাহেব শুরুতে উনাকে কবুল বলতে বলেন উনি তিনবার কবুল বলেও দেয় পরে আমাক কবুল বলতে বলেন দুইবার আব্বুর দিকে তাকাই আব্বু চোখ দিয়ে ইশারা করলো কবুল বলতে তারপর কবুল বলেও দিলাম। বিদায়ের সময় আব্বুকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করি মা’কে ও জরিয়ে ধরে কান্না করি।

রাতে স্যারের বাড়ি নিয়ে আসা হয় আমাকে একটা রুমে বসিয়ে সবাই চলে যায়। দেখে মনে হচ্ছে না এটা কোনো বাসর ঘর ফুলের ছিটে ফোঁটাও নাই। কিন্তু রুমটা বেশ সুন্দর।

কিছুক্ষণ পর ম্যাম আসেন সাথে কয়েকজন মহিমা ও আমার বয়সি মেয়ে ম্যাম এর হাতে খাবার ট্রে..!
ম্যাম আমার সামনে বিছানায় বসে।

“খিদে পেয়েছে না তোর হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি”

“কিন্তু ম্যাম…”

“কি বললি খাবি মার আমি কি এখনো তোর ম্যাম আছি নাকি গাধী আমি তো আজ থেকে তোর মা৷ মা বলবি বুঝেছিস?”

“হ্যাঁ”

“বল মা”

“মা হ্যাঁ মা আর আমি মা’ই বলবো” কথা বলতেই চোখের কোনে এসে জমলো পানি।

মা: আর কিছু মনে করিস না মা রুম সাজানো হয়নি বলে আসলে হামিমের ফুলে এলার্জি আছে তাই আমি সাজাতে বারণ করেছি।

প্রীতি: No Issues…!

প্রীতিকে খাওয়ানো হলে মিসেস নার্গিস বলেন। স্বামী স্ত্রীর এক সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পরতে হয়। এদিকে হামিমের কোনো খবর নেই।
পাশের আন্টি বলে বউমা তুমি একাই পরে নেও।

নিচে অনেকেই বলাবলি করছে হামিমের বউ দেখতে পুরো হামিমের মতোই হয়েছে আর দু’জনকে পারফেক্ট মানিয়েছে।

আন্টির কথা অনুযায়ী একাই নামাজ আদায় করি।
তারপর সবাই রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। একা একা বিছানার উপর হাত পা গুটিয়ে বসে আছি। একজন অচেনা অজানা ছেলে আর আমি কতশত নেগেটিভ কথা মাথায় আসছে।
দুইবার মাথায় জোরে হাত দিয়ে চা-টা মারি তবুও কথা গুলো মাথায় অটোমেটিক চলে আসছে।
রাত ১২টা বেজে গেছে উনার এখনো আসার নামে খবর নেই এদিকে আসতে আসতে বাড়ির হইচই কমে যাচ্ছে।
আমি বসে বসে উনি কখন আসবে সে প্রহর গুনছি…!

রুমের সব গুলো লাইট অন এদিকে আমার ঘুম পাচ্ছে একবার ভাবছি ঘুমিয়ে পরি আরেকবার ভাবছি রুমে এসেই যদি উনি দেখেন প্রথম রাতেই নতুন বউ বিছানায় পরে পরে ঘুমাচ্ছে উল্টা পাল্টা কিছু মনে করলে তখন এইসব ভেবেই বসে বসে ঝিমাচ্ছি।

রাত বাজে ১টা ৪০…..
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে নড়েচড়ে উঠলাম।
উনি ঠুসস করে দরজা খুলে রুমে ঢুকলেন আর দরজা খুলে ভেতরে এসেই আবার ঠাসস করে দরজা আটকে দেয় আর হেলতে দুলতে হেঁটে আসছে উনাকে দেখে আমি উঠে উনার কাছে যাই আর পা ধরে উনাকে সালাম করার জন্য উনার পায়ের সামনে বসি….

আর উনি আমাকে এক লাথি দিয়ে অন্য দিকে ফেলে দিলেন।
চোখ দু’টো আগুনের লাভার মতো লাল হয়ে আছে।
চোখ বড় বড় করে আমার ডান হাতের কবজি শক্ত করে ধরে উঠিয়ে দাঁড় করালেন।
আমি ব্যাথায় কুকড়াতে থাকি আর উনি বলতে শুরু করেন।

হামিম: কি ভেবেছিস কি আমি হামিম খান তোকে ভালোবেসে পছন্দ করে বিয়ে করেছি। যেই হামিম খানের পেছনে মেয়েদের লাইন লেগে থাকে আর সেই হামিম খান তোর মতো ছোটোলোক মেয়েকে বিয়ে করবে টাকার জন্য বিয়ে করেছিস না আমাকে তোদের মতো মেয়েদের তো এটাই ব্যবসা বড়লোক ছেলের বাপ মাকে পটিয়ে উনাদের একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করবি আর সব টাকা পয়সা হাতাবি তোদের মতো লোভী ছোটোলোক মেয়েদের আমি খুব ভালো করেই চিনি।

উনার কথাগুলো শুনে চোখের কার্নিশ বেয়ে অটোমেটিক পানি পরছে কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
হ্যাঁ আমি মানছি আমি গরিব কিন্তু আমি লোভী নই আপনাকে আমি টাকার জন্য বিয়ে করি নাই আমাকে স্যার আর ম্যাডাম রিকুয়েষ্ট করেছিলো তাই রাজি হয়েছি।

হামিম: চুপ কর তুই বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছিস কি ভেবেছিস তোর মিথ্যে কথা শুনে আমি গলে যাবো আর তোর মতো লোভী মেয়েকে বুকে জরিয়ে নেবো বিয়ের জন্য তো ১০লক্ষ্য টাকার শপিং করেছিস আর বলছিস তুই টাকার জন্য বিয়ে করিসনি লোভী নস তুই।

আমি: আপনি বিশ্বাস করুন আমি এইসব করিনি এইগুলো তো স্যার আর ম্যাম কিনেছেন।

হামিম: নেকামি করছিস আমার সামনে এভাবে আর কত ছেলের সামনে নেকা কান্না করেছিস দেখে তো প্রোফেশনাল মনে হচ্ছে…!

আমি: দেখুন মুখ সামলে কথা বলুন আমাকে যা ইচ্ছা বলেন কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে কিছু বলবেন না আমি সহ্য করবো না।

হামিম: কি করবি কি তুই?

আমি: আপনার যদি আমাকে পছন্দই না তাহলে কেনো করলেন আমাকে বিয়ে?

হামিম ঠাসসসস করে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আমার গালে চড় মারলেন।
তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে গেলাম গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে প্রীতির গায়ের রং ফর্সা তাই স্পষ্ট আঙুলের ছাপ বোঝা যাচ্ছে লাল হয়ে আছে।
থাপ্পড়ের জন্য ঠোঁটের কোণে কেটে রক্ত বের হচ্ছে।
প্রীতি মাটিতে বসে কেঁদেই যাচ্ছে।

হামিম: আমি তোকে নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে করিনি মা বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছে তোর সাথে আর নয়তো আমার জুতা ও স্পর্শ করার যোগ্যতা তোর নেই…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here