এক রাতের বউ পর্ব_০৫

0
3831

#এক রাতের বউ
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৫

কথাটা বলে আমার পায়ের উপর পাড়া দিয়ে বিছানার উপর উঠে যায় আর বলে আমার বিছানায় তোর জায়গা নেই।
ব্যাথায় আমি ফ্লোরে শুইয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে কাঁদছি শুনেছি বাসর ঘরে স্বামী স্ত্রীর কথা কত মধুর হয় আর আমার কোই ভেবেছিলাম সব কষ্ট শেষ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নরখে এসে পরেছি যেখান থেকে চাইলেই পালাতে পারবো না।

সারারাত ফ্লোরেই কাটিয়ে দেই কাঁদতে কাঁদতে। শীতে মনে হচ্ছিল ফ্লোরের ভেতরে ঢুকে যাই গায়ের উপর কিছু দিয়ে জরিয়ে রাখবো সেটার ও কিছু নেই।
রুমে বেডের উপর কম্বল সেটা উনি জরিয়ে ঘুমাচ্ছেন
আর ঘুমানোর আগে ইচ্ছে করে এসি অন করে রেখেছেন।

সকালে ফ্লোর থেকে উঠে বাথরুমে চলে আসি আর এই দামী লেহেঙ্গা খুলে ফেলি আমাকে এখানে এসে পরার জন্য ও জামা কিনে দিয়েছেন ম্যাম সেখান থেকে একটা জামা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে রুমে চলে আসি।

সকালে সবার জন্য আমিই নাস্তা বানাই সবাই ব্রেকফাস্ট করে নেয়।

মা বলেন উনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই কফি খান।
উনি এখনো উঠেনি।

সকাল ১০ টা উনি ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।

আমিও কফি বানিয়ে রুমে নিয়ে যাচ্ছি।
রুমে ঢুকতেই দেখলাম উনি বাথরুম থেকে বের হলেন একটা শুধু টাওয়াল পরে ভেজা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে।

আমি উনার পেছনে দাঁড়িয়ে বললাম আপনার কফি।

উনি আমার দিকে পেছনে ঘুরলেন তবে চোখে মুছে রাগের ছাপ হামিম আমার হাতের কফি মগের দিকে তাকালেন আর মগ টা ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
সম্পূর্ণ গরম কফি আমার হাতের উপর পরে।
সেই হাত আবার চেপে ধরে আর হামিম বলে।

হামিম: তোর সাহস দেখে তো আমি অবাক কাল রাতে কি বলেছিলাম ভুলে গেছিস বউ হওয়ার চেষ্টা করবি না আমার আর আমার থেকে দূরে থাকবি আমার কোনো কাজ তুই করবি না তাহলে আরও খারাপ লুক দেখবি আমার। বলেই আমার হাত ঝাড়া মেরে সামনে থেকে চলে যায়।

হাত চেপে কাঁদতে থাকি দৌঁড়ে বাথরুমে চলে আসি আর কল ছেড়ে হাত কলের নিচে ধরে রাখি।

কিছুক্ষণ পর চোখে মুছে পানি ছিটিয়ে বের হয়ে আসি। রুমে কোথাও হামিমকো দেখতে পাইনা তাই নিচে চলে আসি। আর মা বলে হামিম না খেয়েই চলে গেছে।

আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি বলে হামিম খায়নি…!
কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে।
স্যার আর ম্যাম আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা দিচ্ছেন আদর করছেন না খেলে খাইয়ে দিচ্ছেন বাবা যখনই অফিস থেকে বাড়ি ফিরেন আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসেন।

আমি মা কে বলি…
ছোটো থেকে মা’র ভালোবাসা পাইনি আদর পাইনি আজ তোমাকে পেয়ে আমার মায়ের অভাবটা পূরণ হয়েছে মা.!
দু’জনেই আমাকে জরিয়ে ধরলেন।
আজ রাতে হামিম বাড়ি আসেনি…!

এভাবেই চলতে থাকে অপমান আর ছোটো করে কথা বলে আমাকে ইনসাল্ট করা উনার প্যাশন হয়েগেছে।

এরমধ্যে আমার গায়ে উনি আর হাত দেননি..!

আমি উনাকে রুমে কোথাও না দেখতে পেয়ে বেডের উপর থাকা উনার শার্ট টা আলমারি তে রাখার জন্য শার্টটা নিয়ে আলমারির সামনে এসে আলমারিতে মাত্র হাত দিলাম আর ওমনি পেছন থেকে উনি আমার হাত ধরে টান দিয়ে উনার দিকে ঘুরিয়ে আমার গালে ঠাসসস করে চড় মারে আমি আজকেও তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে যাই।

উনি আমার হাত ধরে টেনে তুললেন তারপর আবারও আরেক গালে ঠাসসস করে চড় মারে আমি আবারও পরে যাই।

হামিম: তোকে বলেছি না আমার জিনিস থেকে দূরে থাকবি। তোর আমার আলমারিতে হাত দেওয়ার সাহস হয় কি করে? তুই বুঝিস না তোকে আমার সহ্য হয় না। বলেই আমাকে সোফার উপর ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।

আমি রুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসি।
আমাকে ছুটতে দেখে মা পেছন পেছন আসে আমি একটা বন্ধ রুমে ঢুকে বসে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে দেই।

মা পেছন থেকে এসে আমার কাঁদে হাত রাখে!
মা: কি হয়েছে তোর কাদছিস কেন প্রীতি?
আমি: কিছু হয়নি মা! (চোখের জল মুছতে মুছতে বললাম)

মা: আমি না তোর মা আমার দিকে তাকা..!

আমি উনার দিকে ঘুরতেই উনি আমার আমার গালে আঙুলের ছাপ দেখে আর ঠোঁট কেটে রক্ত পরতে দেখে মা জিজ্ঞেস করে।

মা: হামিম তোর গায়ে হাত তুলেছে প্রীতি?

আমি প্রতি উত্তরে কেঁদেই যাচ্ছি।

মা: আমি এখনই ওকে জিজ্ঞেস করছি কেনো তোর গায়ে হাত তুলেছে।

আমি: না মা প্লিজ তুমি উনাকে কিছু জিজ্ঞেস করো না। মা বলো তো আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ আমাকে উনি কেনো সহ্য করতে পারেন না কেনো আমাকে দেখলেই রেগে যায় আমি যে টাকার জন্য উনাকে বিয়ে করিনি আমি লোভী নই মা। (মাকে জরিয়ে ধরে কাদতে থাকি)

মা: বিয়ের পরেরদিন ও তোর গালে ছাপ ছিলো আমি তোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেদিন তুই বলেছিলি তোর মেক-আপ এ এলার্জি আছে সেটা কি মিথ্যে বলেছিলি প্রীতি সেদিনও কি হামিম তোর গায়ে হাত তুলে ছিলো? সত্যি কথা বলবি প্রীতি.!

আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে হাবোধক ইশারা করলাম। মা আমাকে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন।

মা: আমি ভাবতেও পারছি না আমার ছেলে আমারই বউমাকে এভাবে টর্চার করছে। মানে তোদের বিয়ের আজ ১৫দিন হয়েছে তোদের মধ্যে কিছুই হয়নি?

আমি আবারও মাথা নাড়ালাম এবার না বোধক ইশারা করলাম।
মা: চিন্তা করিস না তোর বউয়ের অধিকার আমি দেওয়াবো তোকে..
তারপর আমার চোখের জল মুছে দিলেন।

এত কিছুর পরও আমি হামিমের আড়ালে ওর টুকিটাকি কাজ করে দেই। রাতে ঘুমিয়ে গেলে কম্বল মুড়ে দেই।

সাত দিন পর.!

আজ আমরা সবাই এক সাথে ডিনার করছি…!
খাওয়া শেষে মা হামিমের সামনে এক গ্লাস দুধ দেন। সেটা হামিম খেতে চায় না কিন্তু মা জোর করলে সে খেয়ে নেয় তারপর রুমে চলে যা।

আমি তখন মাকে দেখেছিলাম দুধের গ্লাসে কি জেনো মিশাচ্ছিলো।

আমি কিচেনে যেতে নিলে মা আমার হাত ধরে টেনে উনার রুমে নিয়ে আসেন। বাবা হল রুমে বসে ল্যাপটবে বসে কাজ করছিলেন। আমি উনার পি এ ছিলাম এখন ও আছি উনাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েই কিচেনের দিকে যাচ্ছিলাম…!
আমি: মা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

মা উনার একটা লাল শাড়ি আমাকে দিয়ে বলে এখনই পরতে আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই আমাকে ঠেলে বাথরুমে ঢুকিয়ে দেয়। আর শাড়ি পরে বের হতেই চুল গুলো ছেড়ে দেয় হালকা লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে দেয়। তারপর হাত ধরে টানতে টানতে আমাদের রুমের সামনে নিয়ে আসেন।

এদিকে হামিমের মাথা ঘুরছে সব কিছু দুইটা দুইটা দেখছে। রুমের মাঝ খানে দাঁড়িয়ে আছে।

মা: যা রুমে যা।

আমি: না মা প্লিজ আমি আবারও থাপ্পড় খেতে চাই না।

বলতে বলতে ম আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকে দেয়।

এদিকে আমি সোজা গিয়ে পরি হামিম এর উপরে। হামিম পেছনে ঘুরতে যাবে আমি ওর ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যেতে নিলে হামিম আমাকে ধরে ফেলে আর নেশা ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আমিও ওর চোখের মাঝে হারিয়ে যাই জানি না কি হচ্ছে কিন্তু সব কিছু খুবই অদ্ভুত লাগছে।
টোটাল ফিল্মি স্টাইলে আমাকে ধরে রেখেছে হামিম তারপরেই আসতে আসতে আমার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর হামিম বলে।

: তুমি খুব সুন্দরী আমার দেখা সেরা নারী চাইলেও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারি না চম্বুকের মতো কাছে টানো তুমি আমাকে শত চেষ্টা করেছি তোমার থেকে দূরে থাকার তারপরেও তোমার honestly & innocent ফেস আমাকে বাধ্য করেছে তোমাকে ভালোবাসতে ।
হামিম এর কথা গুলো শুনে আমি আমার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না ঠিক শুনছি তো..?
এদিকে হামিম এই কথাগুলো বলা শেষ হলেই আমাকে উঠিয়ে দাঁড় করায় আর আমার ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট জোড়া মিশিয়ে নেয়।
তারপর আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

তারপর সারারাত আমি হামিমের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকি পৃথিবীর শ্রেষ্ট ফিলিং এটা যা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।

সকালে…

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here