#এক রাতের বউ
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
#পর্ব_07 (অন্তিম পর্ব)
হামিম: কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?
মিস্টার খান: চুপচাপ আসো আমার সাথে।
একটা বন্ধ রুমের সামনে এসে হামিমের হাত ছেড়ে দেয়। হামিম বুঝতে পারছে না এই ঘুমের সামনে কেনো নিয়ে আসলো ছোটো থেকে তো এই রুম বন্ধই দেখছে হামিম।
হামিম: এখানে কেনো নিয়ে আসছো?
মিস্টার খান: ভেতরে চলো।
ভেতরে ঢুকে হামিম অবাক অনেক গুলো কম্পিউটার আর সবগুলো মনিটরে পুরো বাড়ির সিন দেখাচ্ছে কে কোথায় যাচ্ছে কি করছে সব কিছুর পুরো বাড়ির কোনায় কোনায় সিসি ক্যামেরা আছে। আর সেটা হামিম জানতো না।
পেছন থেকে মিসেস নার্গিস: তোকে ছোটো থেকে মাথায় তুলে বড় করেছি যখন যা চেয়েছিস সব দিয়েছি কষ্ট কি বুঝতে দেইনি ভেবেছিলাম বাহির থেকে পড়ে আসলে ভালো মানুষ হতে পারবি কিন্তু তুই আমাদের কে ভুল প্রমান করে দিয়েছিস তোকে আমার ছেলে ভাবতেও আমার শরীর ঘৃণঘৃণ করছে। পুরো বাড়ির সব কিছু তুই এখানে দেখতে পারবি আর হ্যা বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত কত টর্চার করেছিস মেয়েটার উপর মেয়েটা তোকে ভালোবাসে বলে সব সহ্য করেছে তুই এখন এখানে বসে বসে দেখবি তুই কি কি করেছিস। এই তুমি চলো।
দু’জনেই রুমের দরজা বন্ধ করে চলে যায়।
হামিম আরও অবাক হলো ওর রুমেও সিসি ক্যামেরা আছে দেখে।
যাইহোক বিয়ের রাত থেকে দেখা শুরু করলো।
প্রীতি বউ সেজে বসে আছে দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগছে কিছুক্ষণ সবাই আসে আর ওকে খাইয়ে চলে যায়। তারপরেও প্রীতি একা একা বসে আছে রাতে যখন হামিম রুমে প্রবেশ করলো আর প্রীতি ছুটে আসলো হামিম প্রীতিকে লাথি মেরে ফেলে দিলো থাপ্পড় দিলো আরও কত কথা বলে গিয়ে শুয়ে পরলো।
পরেরদিন কফির মগের গরম কফি প্রীতির হাতে ফেলে দেয় তারপরেও যা যা অত্যাচার করেছে হামিম সব কিছুই হামিম দেখছে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে। এত কিছু সহ্য করেও প্রীতি যখন হামিম ঘুমিয়ে যেতে ওর শরীরে কম্বল দিয়ে দিচ্ছে মাথার পাশে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে চুলে হাত বুলাতে দেখা যাচ্ছে রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে হামিম কে নকল করতে দেখা যাচ্ছে।
রুমে হামিম না থাকলে হামিমের সকল কাজ প্রীতি করে আর হামিম কে বলা হতো স্টাফ করেছে।
হামিম ঘুমিয়ে গেলে প্রীতি রোজ রাতে হামিমের মাথার পাশে বসে বলতো… আই লাভ ইউ….. তারপর ফ্লোরে বসে থাকতো আর পরে সেই ফ্লোরেই কাঁপতে কাঁপতে শুয়ে ঘুমিয়ে যেতো। এত কিছু দেখে হামিমের চোখ বেয়ে পানি পরে যায়
আজকের ঘটনা।
বন্ধুরা বাড়িতে আসার পর থেকে রুহুল কুদৃষ্টিতে বার বার দেখছে প্রীতিকে ডাইনিং টেবিলেও বারবার প্রীতির দিকে তাকাচ্ছে খাওয়া শেষে সবাই রুমে চলে আসে একটা মনিটরে দেখাচ্ছে আরেকটা মনিটরে দেখাচ্ছে সবার পেছন থেকে রুহুল আসে না রুহুল সবার আড়ালে প্রীতির পেছন পেছন কিচেনে চলে যায় আর প্রীতি সেটা জানেও না। আর কিচেনে কি কি হয়েছে সব কিছুই দেখছে হামিম।
এখন হামিমের রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে কপালের রোগ বের হয়ে ফুলে গেছে মুখ লাল হয়ে গেছে আর তখনই সেখানে প্রীতিকে রক্ষা করে ওর আব্বু।
সবার সামনে যখন আমার প্রীতিকে সাপোর্ট করার দরকার ছিলো তখন আমি কি করলাম।
নিজের ইগোকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিলাম যে একটা মেয়ের ভালোবাসা দেখতে পাইনি আর নিজের ভালোবাসাও লুকিয়ে রাখার জন্য কত অপমান করেছি কত মেরেছি কত কিছু বলেছি। আমি এত খারাপ কি করে হলাম।
ফ্লোরে বসে কাঁদতে থাকে হামিম।
পরেরদিন প্রীতি আগের মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে সংসারের সব কাজ শেষ করে অফিসের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়।
কাল বাড়িতে আসার পর অনেক কটু কথা শোনায় প্রীতির সৎ মা সব কিছুই প্রীতি মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়।
অফিসে এসে আগের মতোই কাজ করছে প্রীতি স্যারের কেবিনে এসে প্রীতি অবাক হয়।
কারণ স্যারের চেয়ারে বসে আছে হামিম.!
হামিম: কাম ইন!
প্রীতি সে দিকে পাত্তা না নিয়ে পিএ পিএর মতো কাজ করছে।
এদিকে হামিম হয়তো ভেবেই নিয়েছে প্রীতিকে কাজ করিয়ে করিয়ে মারবে।
রাত ১১টা অফিসের সবাই চলে গেছে শুধু প্রীতি আর হামিম রয়ে গেছে।
হামিম: আমিও বাড়ি যাবো না আর তোমাকেও যেতে দেবো না আজ মন ভরে তোমাকে দেখবো। (মনে মনে)
প্রীতি: স্যার বাড়ি যাবো সবাই চলে গেছে।
হামিম: অফিসে কাজ করতে আসো নাকি বাড়িতে যাওয়ার জন্য.!
প্রীতি: সবাই তো..!
হামিম: চুপ করে বসে থাকুন এখানে।
প্রীতি চোখে মুখে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বসে আছে।
হামিম ল্যাবটপে কাজ করছে আর আঁড়চোখে প্রীতিকে দেখছে।
কয়েকদিন এভাবেই কেটে দেয় প্রীতির বিরক্ত লাগে হামিমের কাজকর্ম।
একদিন প্রীতি দুই হাতে দুইটা কাগজ নিয়ে আসে।
প্রথম কাগজ প্রীতি হামিমের সামনে রাখে।
হামিম: কি এটা?
প্রীতি: Resignation letter!
হামিম: কেনো? (ভ্রু কুঁচকে তাকালো)
প্রীতি: Resignation letter কেনো দেয়?
হামিম: আর ওটা কি হাতে?
প্রীতি: নিজেই দেখে নিন।
বলেই কাগজটা হামিমের সামনে রাখে হামিম কাগজটা খুলে রাগী লুকে প্রীতির দিকে তাকায় আর বলে।
হামিম: what’s it this!
প্রীতি: ডিভোর্স পেপার আমি সই করে দিয়েছি আপনিও সই করে দিবেন আসি।
বলেই প্রীতি তেড়তেড়িয়ে হেঁটে কেবিন থেকে বের হতে যাবে। তখনই পেছন থেকে হামিম প্রীতির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।
প্রীতি: ছাড়ুন কি করছেন কি আপনি ছাড়ুন বলছি।
হামিম: তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে ডিভোর্স পেপার দেওয়ার সাহস পেলে কোথা থেকে?
প্রীতি: আপনাকে বলার জন্য বাধ্য নই কাগজ গুলোতে সই করে দিবেন আর ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন বলছি।
হামিম: কিছুতেই তোমাকে ছাড়বো না কোনো কিছুর বিনিময়ে তোমাকে যেতেও দেবো না।
প্রীতি: কেনো কিসের জন্য কে হই আমি আপনার?
হামিম: তুমি আমার #এক_রাতের_বউ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া থেকে বুঝেছি তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না তুমিই আমার সব আমার #এক_রাতের_বউ আমার সেদিনের ভুলের জন্য আমাকে মাফ করে দাও প্রীতি প্লিজ আমার কাছে ফিরে আসো পরীর মতো সাজিয়ে রাখবো আমার মনের রাজ্যে…!
প্রীতি হামিমের কথা শুনে কেঁদে দিলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস ও মিস্টার খান তারা চোখ দিয়ে ইশারা করলো হামিমকে মাফ করে দিতে।
প্রীতি হামিমকে উঠিয়ে জরিয়ে ধরতেই সবাই হেঁসে দিলো। সাথে হামিম ও প্রীতি দু’জনেই দু’জনকে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে।
হামিম: আমার #এক_রাতের_বউ বলেই প্রীতির কপালে চুমু দেয়। প্রীতি লজ্জা পেয়ে হামিমের বুকে মুখ লুকায়।
__________সমাপ্ত______