এক শহর ভালোবাসা’ পর্ব-১৩

0
1789

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১৩
#সুরাইয়া_নাজিফা

শান দেখার আগে আমি দ্রুত আমার চোখের পানি মুছে ফেললাম। শান আমার কাঁধে ওনার কাঁধ ঠেকিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,

“কি ব্যাপার আজকে হঠাৎ আমার অফিসে? কি মনে করে? মিস করছিলে নাকি?”

শানের কথায় আমার ঘোর কাঁটে। আমি শানের থেকে কিছুটা দূরে সরে ভাব নিয়ে বললাম,
“জ্বী না মহাশয়।মা আপনার জন্য নিজের হাতে রান্না করে লাঞ্চ পাঠিয়েছে। আপনি নাকি বাহিরের খাবার খেয়ে দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাই এসেছি। ”

শান আমার দিকে কটমট করে তাকালো। শানের তাকানোতে আমি কিছুটা উশখুশ করে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম। তারপর শান আবার মিষ্টি হেসেই বললো,
“যার কথাতেই এসেছো কারণটা তো আমিই তাই না । ”

আমি শানের দিকে তাকালাম। তখনই তিমির খুক খুক করে হালকা কেসে বললো,
“বলছি কি আমি এখনো আছি। তবে এখন যাবো। কাবাবে হাড্ডি আর না হই। ”

বলেই যেতে নিয়েই আবার দাঁড়িয়ে গেল,
“আর ভাবী এতক্ষন আমি শুধু আপনার সাথে মজা করছিলাম।এইজন্য দুঃখিত। মনে কিছু নিবেন না। তবে আপনার সম্পর্কে যা বলেছি একটাও ভুল না। আপনি আসলেই সুন্দরী। ”

তিমির ভাইয়ার কথা শুনে আমি সৌজন্যতাবসত হাসলাম। তারপর বললাম,
“না ভাইয়া আমি কিছু মনে করিনি। ”
“আচ্ছা তাহলে আসি। ”
“এখনই কেন চলে যাবেন। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে খেয়ে যান। ”
তিমির মুচকি হেসে বললো,
“শুকরিয়া ভাবী। তবে এখন খাবো না কখনো আপনাদের বাসায় গিয়ে আপনার হাতের রান্না খেয়ে আসবো তখন না করতে পারবেন না। ”
আমি হেসে বললাম,
“অবশ্যই আপনার যখন ইচ্ছা আসবেন তবে ভাবীকেও সাথে করে নিয়ে আসবেন।”
তিমির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“সেই সৌভাগ্য এখনও হয়নি। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আপনি এখনো বিয়ে করেনি। ”
“নাহ।কি করে করবো বলেন আমরা তো আর শানের মতো এতো হ্যান্ডসাম নই যে মেয়েরা আমাদেরকে অনায়াসে পছন্দ করবে। ”

শান এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথোপকথন শুনছিল।শান চাইছিল সোহার সাথে কিছুটা সময় কাঁটাবে বাট এই তিমির যে বকবক শুরু করেছে তাতে কি আর শানের মনের ইচ্ছা পূরণ হওয়ার জো আছে।যদিও শান চুপ ছিল কিন্তু তিমিরের কথায় আর চুপ থাকতে পারল না।

শান তেতে গিয়ে বললো,
“তোর ননসেন্স কথাগুলো বন্ধ কর আর বেরিয়ে যা ভাই এখান থেকে কালকে কথা হচ্ছে। ”
তিমির মুখভার করে বললো,
“জোর বের করে দিচ্ছিস? ”
“যা খুশি ভাবতে পারিস।”
তিমির টোন কেটেই বললো,
“হুম এখন তো বের করে দিবাই। আমি থাকলে তো তোমাদের এই চোখে চোখে প্রেম করাটা প্রবলেম হয়ে যাচ্ছে। আমি কি বুঝি না ভেবেছো। যাইহোক চালিয়ে যাও তোমরা। আমি আসছি। ”

তিমিরের কথা শুনে আমার চোখ মুখ লজ্জায় শক্ত হয়ে গেল। উফ মানুষ গুলাও অদ্ভুত কোনো কথা তাদের মুখে আটকায় না। আর এই শান,আমি বুঝিনা ওনার এতো কিসের তাড়া তিমির ভাইয়াকে তাড়ানোর।ওনার জন্যই এখন এই কথাগুলো শুনতে হচ্ছে। তিমির ভাইয়া চলে গেল। তিমির ভাইয়া যেতেই শান অনেকটা শব্দ করে দরজাটা আটকে দিলো। দরজা আটকানোর শব্দে আমি আমার ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলাম। শান আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি কাঁপাকঁপা কন্ঠে বললাম,

“দরজাটা আটকিয়েছেন কেন? ”
“আমার কেবিনের দরজা আমি আটকাবো না খোলা রাখব সেটা আমার ব্যাপার তোমাকে বলব কেন? ”
আমি একটু একটু করে পিছনে যেতে থাকলাম আর শান এগোতে থাকলো। আমি বললাম,
“এভাবে দরজা আটকালে মানুষ কি বলবে? ”
শান আমার আরেকটু কাছে এসে বললো,
“কি বলবে আমার বউয়ের সাথে আমি দরজা আটকে থাকতেই পারি। ”

আমি পিছাতে পিছাতে হঠাৎ খেয়াল করলাম পিছনে আর যাওয়ার জায়গা নেই আমি টেবিলের সাথে লেগে গেছি আর শান আমার অনেকটা কাছে দাঁড়িয়ে। তাই এক নিঃশ্বাসে তাড়াতাড়ি করে বললাম,

“আচ্ছা আপনি খেয়ে নিন আমি যাব আমার একটা কাজ আছে। ”

কথাটা বলেই লাঞ্চের বক্সটা টেবিলে রেখে আমি শানের পাশ কেটে বেরোতে যাব তখনই শান আমার দিকে না তাকিয়ে আমার হাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরল। আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তখনই শান আমার হাত ধরে হেচকা টানে একদম উনার কাছে নিয়ে গেল। শাড়ির নিচ থেকে আমার কোমড়ে হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল। এই প্রথম কোনো পুরুষ আমাকে এভাবে এতো ডিপলি স্পর্শ করলো।আমার পুরো শরীর থরথর করে কাপতে লাগল।হৃদপিন্ডটা এতো জোরে লাফাচ্ছে যেন এখনি সুইসাইড করবে। এসির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও আমি ভয়ে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছিলাম।শানের ঠান্ডা হাত আমার পেট স্পর্শ করতেই আমি কেঁপে উঠলাম। শান বললো,

“তিমিরের সামনে সিনক্রিয়েট করাটা কি খুব জরুরী ছিল? ”
উনার দিকে তাকিয়ে কথা বলার ক্ষমতা নেই তাই মাথা নিচু করেই নিচু স্বরে বললাম,
“যেটা সত্যি সেটা বলেছি।”
“যেটা মায়ের চোখে পড়ল সেটা তোমার চোখে কেন পড়েনি? আমি কি এতটাই খারাপ যে নিজের মন থেকে আমার জন্য কিছু করতে মন চায় না তোমার ”

শানের কন্ঠে কেমন একটা আকুলতা ছিল।যেটা আমাকে ভিতর থেকে আরো নাড়িয়ে দিচ্ছিলো। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“আমি সেটা বলিনি। ”
শান আমার কানের কাছে ঠোট ঠেকিয়ে স্লো ভয়েসে বললো,
“তাহলে কি বলছো আমাকেও বলো আমিও শুনি। ”
আমি এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলাম,
“আমাকে ছাড়ুন। ”
শান আমার কথায় পুরো হতভম্ভ হয়ে গেল,
“মানে? ”
আমি উনার হাত আমার পেট থেকে সরানোর চেষ্টা করে বললাম,
“মানে হলো আমাকে ছাড়ুন। এভাবে ধরেছেন কেন? ”
শান স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“তো কি হয়েছে আমার বউকে আমি যেভাবে খুশি ধরতেই পারি তুমি বলার কে? ”
আমি অস্থির ভঙ্গিতে বললাম,
“না পারেন না। কারণ শরীরটা আমার। ”
“ওহ তাহলে আপনার অনুমতি পেতে গেলে আমাকে কি করতে হবে। ”
আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“কিছু না। আপাতত আমাকে ছাড়ুন লাঞ্চের সময় চলে যাচ্ছে আমার অনেক খুদা লাগছে এখন এসব ভালো লাগছে না। ”
শান নিজের মাথার সাথে আমার মাথা ঠেকিয়ে বললো,
“সবসময় এতো পালাই পালাই করো কেন? ”
আমি এভার কান্না মাখা কন্ঠেই বললাম,
“পালাচ্ছি না। এখানেই আছি। ছাড়ুন আমাকে প্লিজ। ”
“হুম ছাড়ব তো অবশ্যই তবে এতো ইজিলি না।”
আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম,
“তবে?”

শান কোনো কথা না বলে আমার ঘাড় থেকে চুল গুলো একপাশে সরিয়ে গভীর ভাবে কিস করল।এতক্ষনে যা ছিল এখন আমার মনে হচ্ছে আমার প্রাণশক্তিটাই হারিয়ে ফেলছি। নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলছি। একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এটা কি হলো?কেমন অনুভুতি ছিল বুঝতেই পারলাম না। শুধু মনে হলো শরীরে একটা বিদ্যুত খেলে গেল। শান আমার থেকে দূরে সরে সোফায় গুয়ে বসল। আমি এখনও ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছি।শান চিৎকার করে বললো,

“কি হলো ওভাবে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? খাবার সার্ভ করে দেও লেইট হচ্ছে। ”

শানের কথায় আমার ঘোর কাটল। কিন্তু তখনের ঘটনাটায় যেন আমি এখনো আটকে আছি। আমার এখন সার্ভ করতে ইচ্ছা করছে না। আমি এখন একটু দূরে থাকতে চাই ওনার থেকে। না জানি আবার ওনার কাছে কাছে থাকলে কি করে বসে। আমি অন্যদিকে ফিরে বললাম,

“আমার একটু কাজ আছে আমি যাবো। আপনি নিজেরটা নিজে নিয়ে খেয়ে নিন। ”
“সবকাজ পরে হবে।এখানে এসে বসো। আগে খেয়ে নেও। ”
“আমি খেয়ে এসেছি আপনি খান। ”
শান রেগে বললো,
“মানে এইমাত্র না তুমি বললে তোমার খুদা লাগছে তাহলে?”
উনার কথা শুনে আমি নিজের মাথায় হাত দিলাম,
“ওহ সিট এই কথা আবার কখন বললাম। ”
শান স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“বুঝেছি কোনো অযুহাত চলবে না। আমার পাশে এসে বসো আমরা আজ একসাথে খাবো। তোমাকে দেখলেই মনে হয় তুমি কিছু খাওনি। ”

আসলে সত্যিই আমি খাইনি। মা আমাদের দুজনের খাবার একসাথে পাঠিয়ে ছিল। ভেবেছিলাম এখানে খেয়ে তারপর শপিংয়ে যাবো। বাট যা হলো এরপর আমার গলা দিয়েই খাবার নামবে না।

শান চিৎকার করে বললো,
“কি হলো ওখানে এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? এখন কি কোলে করে নিয়ে আসতে হবে নাকি।”

ওনার কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলাম,
“নাআআআআআআ।”
শান চোখ বড় বড় করে বললো,
“অদ্ভুত এজন্য চিল্লানোর কি আছে? ”
“কিছু না আসছি আমি। ”

তারপর তাড়াতাড়ি করে ওনার পাশে গিয়ে বসলাম। উনার প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিয়ে নিজের জন্য নিতে যাবো তখনই উনি বলে উঠল,
“তোমার জন্য বাড়ার দরকার নেই। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কেন?আমি খাব না? ”
শান মুচকি হেসে বললো,
“খাবে তবে আলাদা নয় আমরা দুজন একসাথে এক প্লেটে খাবো। ”
“একসাথে একপ্লেটে কিভাবে। ”
“এইভাবে। ”

শান আমার মুখের সামনে এক লোকমা তুলে ধরলো। আমি উনাকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।কেন করছেন উনি এসব?উনার সাথে আমার সম্পর্ক তো কখনো এতো ভালো ছিল না তাহলে কেন এখন আমার এতো কেয়ার করছে। আমি তো এসবের যোগ্য নই।

“উফ কি ভাবছ তুমি হা করো না কখন থেকে ধরে আছি। ”
আমি কিছুটা ইতস্তত করে বললাম,
“আপনি খান না আমি খেয়ে নেবো। ”
“কেন আমার হাতে খেতে কি লজ্জা লাগে? ”
ওনার কথা শুনে আমি শুধু মুখে বিষম খেয়ে গেলাম। উনি কত অনায়াসেই সব কথা গুলো বলে দেয়।

শান আবার বললো,
“লজ্জা লাগলেও এখন থেকে আমার হাতেই খেতে হবে।এটা আমার ইচ্ছা আমার বউকে সবসময় আমি খাইয়ে দিবো। তাই হা করো। ”

উনার মুখে যতবার বউ ডাকটা শুনি ততোবার মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু পরক্ষনেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সব ভালো লাগা তো আর সবার জন্য প্রযোয্য নয়। আমি আর কোনো বাক্যব্যয় না করে হা করলাম। উনি আমার মুখে খাবার তুলে দিলেন। তারপর নিজেও খেলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে ওনাকেই দেখতে লাগলাম। কে বলবে আমরা একসময় একজন আরেকজনকে সহ্যই করতে পারতাম না। আমার চোখ ভিজে আসছিলো। খাওয়া শেষে আমি সব গুছিয়ে নিতে থাকলাম। গুছানো শেষে আমি বললাম,

“আচ্ছা আমি আসি এখন। ”
শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“কি তখন থেকে যাই যাই করছ। বসো এখানে আমার পাশে। ”
“আমি এখানে বসে কি করব। আপনি আপনার কাজ করবেন। আমি কি মশা মারব অদ্ভুত? ”
শান মিটিমিটি হেসে বললো,
” এমনি বসে থাকো আর এমনি না হলে তুৃমি চাইলে আমরা অন্যকিছু করতে পারি।একে অপরের…..। ”

উনার এমন কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে গেলাম।উনার ভাব ভঙ্গি আমার মোটেও ভালো লাগছে না তাই আমি আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উনাকে বললাম,

“না লাগবে না অন্যকিছু । আমি এমনিতেই বসব। ”

“কি হয়েছে তুমি এতো অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছো কেন? পুরো কথাটাতো শেষ করতে দেও। আমি তো বললাম এমনি না বসলে আমরা একে-অপরের সাথে গল্প করতে পারি।”

উনার কথা শুনে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আর একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“ওহ। আমি ভেবেছিলাম…..। ”
আমার কথা শুনে শান চোখ বড় বড় করে বললো,
“কি ভেবেছিলে।”
শান কিছু একটা ভেবে চোখ বড় বড় করে বললো,
“ওহ মাই গড এইসব ঘোরে তোমার মাথার ভিতর। ডার্টি মাইন্ড। ”

উনার কথা শুনে লজ্জায় আমি নুয়ে যাচ্ছিলাম। তারপরেও আমি নিজের ডিফেন্সে বললাম,
“একদম না। আপনি কথাটা বলেছেন এমন ডাবল মিনিংয়ে। আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও এভাবেই ভাবত। ”
শান ভ্রু উঁচুয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো,
“কি ভাবত। ”
“ধ্যাত কিছুই না। ”

শান হাসতে হাসতে আমার পাশ কেটে চলে গেল। গিয়ে আবার উনার কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। উনার হাসি দেখে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। বাজে লোক নিজের দোষটা এখন আস্তে আমার ঘাড়ে চাঁপিয়ে দিল। আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম।



তিমির শানের কেবিন থেকে বেরিয়ে ঐশীর কেবিন পাস করে যাওয়ার সময় হঠাৎ কারো ফুফিয়ে কান্নার আওয়াজে থমকে দাঁড়ালো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই ঝাপসা দেখতে পেলো ঐশী কাঁদছে। ঐশীকে কাঁদতে দেখে হঠাৎ তিমিরের মনটা কেমন আনচান করে উঠল। তিমির দরজায় একহাত রাখল।

“মেয়েটাকে যখনই দেখি তখনই কাঁদতে থাকে। কি সমস্যা মেয়েটার। ”

তিমির দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ভাবছে যাবে কি যাবে না। যে মুখরা মেয়ে আবার না ঝগড়া শুরু করে দেয়। ধ্যাত কাদুক না জাহান্নামে যাক আমার কি। তিমির আবার ঘুরল যাওয়ার জন্য কিন্তু যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াতেই মনের মধ্যে একটা টান অনুভব করছিল। তিমির ঘুরে এক লম্বা নিঃশ্বাস নিলো।

“ধ্যাত যা বলার বলবে। কিন্তু কিছু না বলে গেলে আমারই খারাপ লাগবে কারণ আমি তো আর ওর মতো মুখরা নয়।”

ঐশী শানের একটা ছবি বুকে জড়িয়ে বসেছিল। এই একটা ছবিই ঐশী লুকিয়ে তুলেছিল শানের। কারণ শান কখনো ছবি তুলতেই চাইতো না। কিন্তু ঐশীর তো মন মানে না যতক্ষন অফিসে থাকে ততক্ষন দেখতে পারে বাসায় গেলে প্রতিটা ক্ষন অনেক কষ্টে কাটে। তাই এই ছবি বছর খানিক আগে শানের অজান্তে তুলেছিল শানের স্মৃতি হিসেবে। এখন আর সেটা ওর কোনো কাজের না। কি দরকার অন্যের স্বামীর ছবি নিজের কাছে গচ্ছিত রাখার। যাকে সব থেকে বেশী আপন ভেবেছিল। সেই আজকে সব থেকে বেশী পর হয়ে গেল। কথাটা ভাবতেই ঐশীর কান্নাগুলো বাধই মানছে না। ঐশী ছবিটার দিকে একবার হাত বুলিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল। ছবিটা ফেলতেই হঠাৎ “আহ “করে একটা শব্দ হলো।

ঐশী শব্দটা শুনে তাকাতেই দেখল তিমির মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। ঐশী দ্রুত নিজের চোখের পানি মুছে তিমিরের দিকে এগিয়ে গেল।

“আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? ওহ মাই গড কতখানি কেটে গেছে। ”
তিমির হতাশ হয়ে বললো,
“জানি না আপনার সাথেই দেখা হলে কেন আমার উপর সব বিপদ আপদ গুলো দৌড়ে চলে আসে। ”
“স্যরি আসলেই আমি আপনাকে দেখিনি। ”
“আমি জানি সেটা। কিন্তু আপনি হুট করে যে ফ্রেমটা এভাবে ছুড়ে মারবেন বুঝতে পারিনি। আমারই নক করে আসা উচিত ছিল। ”

তিমির ফ্রেমের কথাটা বলতেই ঐশীর ছবির কথা মনে পড়ল। ঐশী দেখল শানের ছবিটা উল্টো হয়ে পড়ে আছে। ঐশী একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। তিমিরকে সরানোর জন্য ঐশী বললো,

“দেখি এখানে বসুন। আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি রক্ত বের হচ্ছে। ”
“নো ইটস ওকে প্রবলেম নেই। ”
ঐশী তিমিরকে একটা ধমক দিয়ে বললো,
“কিসের ওকে একদম চুপচাপ বসে থাকবেন। ”

ঐশীর ধমক শুনে তিমির একদম চুপ হয়ে গেল। ঐশী ওর ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে তিমিরের সামনে গিয়ে বসল।তুলা দিয়ে রক্তটা পরিষ্কার করার সময় তিমির বারবার কুকিয়ে উঠছিল আর ঐশীর হাতটা চেঁপে ধরে রাখল। ঐশীর প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছিল।কিন্তু সেটা পাত্তা না দিয়ে ঐশী তিমিরের ট্রিটমেন্টের দিকে মন দিলো,

“জ্বলছে? ”
“খুব। ”

ঐশী মুছে দিচ্ছিলো আর ফু দিয়ে দিচ্ছিলো। তিমির একদৃষ্টিতে ঐশীকে দেখছিল। ঐশী এখন যেভাবে তিমিরের সেবা করছে তাতে তিমিরের মনেই হচ্ছে না যে সকালে এই মেয়েটাই ওর সাথে এতো বাজে ব্যবহার করেছে। না মেয়েটাকে ও যতটা খারাপ ভেবেছিল ততটাও নয়। মন বলতে কিছু আছে মেয়েটার মধ্যে। নাহলে কখনো যার সাথে এতো শত্রুতা প্রথম দিন থেকে তাকে এতো যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিতো না। তিমির যতবার কুকিয়ে উঠছিল ঐশীর চোখ মুখের অবস্থাও তিমিরের মতো হয়ে যাচ্ছিল যেন কষ্টটা তিমিরের না ওরই হচ্ছে। তিমির খুব কাছ থেকে ঐশীকে পর্যবেক্ষন করছিল।এখন শুধু তিমিরের মনে একটা প্রশ্নই বারবার উদয় হচ্ছিল,

“ঐদিন ঐশী কেন সুইসাইড করতে গেছিল সেটা ওকে জানতেই হবে। ”

হঠাৎ ঐশী বলে উঠল,
“একটু জ্বলবে সহ্য করুন।স্যরি আমি সত্যিই খেয়াল করিনি মাফ করে দিন। ”

তিমির একটু মজা করেই বললো,
“আরে আপনি এতোবার মাফ চাইছেন কেন আপনার তো মনের ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেল। ঐদিন আপনি চেয়েছিলেন আমার মাথা ফাঁটিয়ে দিবেন আজকে তাই করেছেন। ”

ঐশী তিমিরের মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কথাটা বলতেই একটানে খুলে ফেললো। তিমির” উফ” করে চিৎকার করে উঠল।

“আরে অদ্ভুত মেয়েতো আপনি নিজেই ব্যথা দিলেন আবার নিজেই ব্যান্ডেজ করলেন টখন আবার খুলেও নিচ্ছেন দয়া মায়া কিছু আছে কি নাই। ”

ঐশী গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“না নেই। আপনিই তো এই মাত্র বললেন আমার আশা পূরণ হয়েছে তাহলে আমি কেন আবার কষ্ট ব্যান্ডেজ করতে যাব। ”
“আরে আমি তো মজা করে বলেছি কথাটা। ”
ঐশী তিমিরের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“ঠিক তো? ”
“একদম ঠিক। ”
“আচ্ছা এদিকে আসুন ব্যান্ডেজটা লাগিয়ে দিচ্ছি। ”

ঐশী আবার তিমিরের মাথায় বান্ডেজটা লাগিয়ে দিলো। তিমির হাফ ছেঁড়ে বাঁচল।তিমির বিরবির করে বললো,
“ডেন্জারাস মেয়ে এর সাথে এরপর থেকে বুঝে শুনেই কথা বলতে হবে। ”

ঐশী তিমিটের বিরবির করতে শুনে বললো,
“কিছু কি বলেছেন?”
তিমির ঐশীর দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললো,
“হুম বলছিলাম আপনি এমনিতে মুখে যাই বলুন না কেন আপনার মনটা ঠিক আপনার মতোই সুন্দর। মায়া, মমতা, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। ”

এই প্রথম তিমির আর ঐশী এক জায়গায় বসে শান্ত ভাবে কথা বললো। ঐশী তিমিরের ব্যান্ডেজ করে দূরে সরে এলো। তিমিটের কথায় এই প্রথম ঐশীর মুখে রাগের পরিবর্তে হাসির রেখা ফুঁটে উঠল।



আমি অনেকক্ষন ধরে একা একা বসে আছি। শান নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে। কাজের মাঝে এমন ভাবেই ডুবে গেছে যে এরমধ্যে আমার দিকে একবারও তাকানোর সময় হয়নি। আমি উনার কেবিনের ভিতরই ঘুরাঘুরি করছিলাম। বাহিরে গেলে কে কি বলে তাই আর যাইনি। তবে উনার কেবিনটা অনেক সুন্দর। অনেক বড় একটা জানালা আছে। সাত তলার উপর থেকে জানালা দিয়ে নিচে তাকালেই কেমন ভয় লাগে। মনে হয় যেন এখনই পড়ে যাবো।তাই সরে এলাম। একপাশে একটা বুক শেলফ আছে। আসলে নাম বুক শেলফ হলেও সেখানে বইয়ের জায়গায় ঠাই পেয়েছে পুরোনো অনেক ফাইল। উপরে যদিও কয়েকটা বই আছে। করার মতো কোনো কাজ পাচ্ছি না বলে বই খুঁজতে লাগলাম যদি একটাও ভালো বই পড়ার মতো পাওয়া যায়। হঠাৎ খুঁজতে খুঁজতে একটা ম্যাগাজিনের উপর আমার চোখ আটকে গেল। দেখে মনে হচ্ছে এটা এই অফিসেরই ম্যাগাজিন। ভাবলাম এটাই দেখা যাক। ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে সোফায় বসব তখনই শান বলে উঠল,

“ওখানে বসার দরকার নেই আমার পাশে এসে বসো। ”

উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
“ওখানে বসে কি করব আপনি তো কাজ করছেন। ”
“কাজ প্রায় শেষ তাই এখানে এসো। ”

আমিও আর কি করব। উনার কথা না শুনেও কোনো উপায় নেই কারণ উনি বলেছেন মানে সেটা আমাকে দিয়ে করাবেই। আমি গিয়ে উনার বিপরীতে চেয়ার টেনে বসলাম।শান আমার সাথে কিছু কথা বলে আবারও কাজে মন দিলো। আমি চেয়ারে বসতেই হঠাৎ উনার টেবিলের একপাশে আমার চোখ আটকে গেল। এতক্ষন উনার কেবিনে থাকলেও আমি উনার টেবিলের দিকেই ভালো ভাবে তাকাই নি। কারণ আমি চাই নি যে উনার আশেপাশে আমি যাই। দুপুরে যে কাহিনী করল সেটা আমি এখনও ভুলতে পারছি না। একটা ছবির ফ্রেম আছে যেটা অন্যদিকে ফেরানো। আমি ছবির ফ্রেমটা হাতে তুলে নিলাম কৌতুহল বসত আর ছবিটা দেখেই আমার চোখ কপালে উটার উপক্রম। শান আর আমার ছবি। যেই ছবিটা আমরা সি-বিচ গিয়ে তু্লেছিলাম। শান আমাকে একহাতে জড়িয়ে আছে আর আমার একহাত ওনার কাঁধে দুজন দুজনার দিকে চেয়ে আছি। কিন্তু সেটা উনি এংানে কেন রেখেছে? আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়েই বললাম,

“এই ছবিটা এখানে কেন?”
শান কাজ করতে করতেই বললো,
“কেন আমার ছবি আমি রাখতে পারিনা। ”
“পারেন বাট সাথে তো আমিও আছি। ”
“স্যরি সেটা তুমি কে বললো ওটা আমার বউ। ”

উনার কথা শুনে আমি হা করে আছি। এরপর কি বলবো বুঝতেছি না।উনি এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলছেন যেন ছবির মানুষটা সত্যিই আমি না। আমার কেন জানি একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা হলো। তাই বললাম,

“আপনার গার্লফ্রেন্ড যদি জিজ্ঞেস করে তখনো কি একই কথা বলবেন? ”

আমার কথা শুনে উনি কাজ বন্ধ করে আমার দিকে লাল চোখে তাকিয়ে রইলেন। উনার তাকানো দেখে আমি ঘাবড়ে একটু ঘাবড়ে গেলাম ভুল কিছু বলিনি তো? উনি চেয়ার থেকে উঠে আমার চেয়ারের পিছনে এসে ঝুঁকে দাঁড়ালেন।আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তখনের মতো কিছু করে বসবেন না তো। আমি একটু ঘুটিশুটি মেরে বসলাম।উনি ফিসফিসে বললেন,

“সেটা তোমার এই মোটা মাথায় ঢুকবে না টিউব লাইট। তারচেয়ে বরং তোমার না কি কাজ আছে দেরী হয়ে যাচ্ছে চলো। ”

কথাটা বলেই উনি আমার কাছ থেকে সরে গেলেন। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বাপরে যেভাবে তাকিয়ে ছিল মনে তো হয়েছে আমাকে কাঁচাই খেয়ে ফেলবে।কিন্তু উনার কথা শুনে অনেক রাগ হলো। ওনার ব্যবহার উনার মুড কখন কেমন থাকে সেটা আজও আমি বুঝতে পারলাম না। এই এতো ভালো করে কথা বলে আবার এই এমন ভাবে কথা বলে যেন আমি কেউই না। কনফিউজিং ক্যারেক্টার। আবার আমাকে বলে টিউব লাইট।মনে মনে উনাকে আচ্ছা মতো বকা দিয়ে আমি তাড়াতাড়ি করে চেয়ার থেকে উঠে বললাম,

“হুম চলুন। একটু শপিংমলে যাবো। ”
“চলো। ”
“আচ্ছা এই ম্যাগাজিনটা কি আমি নিতে পারি আসলে দেখা হয়নি তাই। ”
শান নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো গুছিয়ে নিতে নিতে বললো,
“নিতে পারো জিজ্ঞেস করার কি আছে। ”

উনার পারমিশন পেয়ে আমি ম্যাগাজিনটাও নিয়ে নিলাম আমার সাথে তারপর রেডি হয়ে আমরা দুজনেই বেরিয়ে গেলাম।

অনেকক্ষণ ধরে শপিং মলে চক্কোর কাটছি কিন্তু আমার কিছু পছন্দই হচ্ছে না। আসলে পছন্দ হচ্ছে না সেটা না পছন্দ হচ্ছে বাট সেই পছন্দ নিয়েই কনফিউশনে আছি। আমি এমনই শপিংয়ে আসলে নিজের পছন্দ মতো কখনো কোনো জিনিসই নিয়ে যেতে পারিনা।যতক্ষন না কেউ বলবে ভালো হয়েছে। এসেছিলাম একটা শোপিচ নিতে। বাট কেমন জানি ডিসাইড করতে পারছি না কোনটা নিবো।তাই গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম। তখনই আমার পাশ থেকে কারো কর্কশ কন্ঠো শুনতে পেলাম।

শান প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বললো,
“কি সমস্যা তোমার শপিং মলে কি ঘুরতে এসেছো। তখন থেকে দেখছি শুধু ঘুরেই যাচ্ছো। কিছু নিলে নেও নাহলে বাড়ি চলো। ”

আমি উনার দিকে তাকিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম,
“একদম মেজাজ দেখাবেন না। আমি কি বলেছি আমার সাথে আসার জন্য। আসছেন কেন? একেই নিজের পছন্দ মতো কিছু খুজে পাচ্ছি না আপনি আছেন আপনার রাগ নিয়ে। ”

শান অবাক হয়ে বললো,
“এতো বড় একটা মলের মধ্যে তোমার পছন্দের কোনো জিনসই পাচ্ছো না। কোন গ্রহের এলিয়েন তুমি?সত্যি করে বলোতো পছন্দের জিনিস পাচ্ছো না নাকি পছন্দ নিয়ে কনফিউশনে আছো কোনটা?”

আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম,
“আসলে আমি একটু কনফিউশনে আছি। পছন্দ হচ্ছে বাট কোনটা নিবো বুঝতেছি না। ”

শান চোখ বন্ধ করে নিজের কপালে হাত দিলো। একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বললো,

“তুমি এতো বড় স্টুপিড কেন বলবে?আমাকে জিজ্ঞেস করলে কি আমি তোমাকে হেল্প করতাম না। ”

আমি মাথানিচু করে বললাম,
“আপনি যদি রাগ করেন তাই বলিনি। ”
“ওহ গড। কি নিতে এসেছো?”
“একটা শো-পিচ।”
“এসো আমার সাথে।”

এরপর শান আমাকে কিছু না বলেই হাটা দিলো। আমিও শানের পিছন পিছন গেলাম। আমরা ওই শপিং মল থেকে বেরিয়ে অন্য একটা শপিং মলে ঢুকলাম। বেশ বড় দোকান। ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিস এখানে আছে। সব ধরনের। শান বললো,

“দেখো এখানে পেয়ে যাবে তোমার পছন্দের জিনিস। ”

কথাটা বলেই শান ক্যাশে যেই লোকটা বসে ছিল তারসাথে কথা বলছিল। হয়তো দোকানটা শানের পরিচিত। আমি সব জিনিস গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম ঠিক তখনই আমার পিছনে কেউ হাত রাখতেই আমি চমকে উঠলাম।

“সৃজন তুই এখানে? ”
“আমারও তো একই প্রশ্ন তুই এখানে কি করিস।”
“আমি তো তানিশার জন্য উপহার নিতে আসলাম। ”
“আরে আমিও তো সেই কারণেই এসেছি। ”

কথাটা বলেই আমরা দুজনেই একসাথে হেসে দিলাম। সৃজন বললো,
“ভালোই হলো জানেমান তোর সাথে দেখা হয়ে গেল। চল আমাকে কিছু চয়েজ করে দে। আমি কি নিবো মেয়েদের পছন্দের ব্যপারে কিছুই বুঝি না। ”

“ধ্যাত তোকে কি বলবো আমি নিজেরই কিছু চয়েজ হচ্ছে না। ”

দূর থেকে শান সোহাকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে রেগে ফায়ার হয়ে গেল। কি হাসি অন্য ছেলের সাথে এতো হেসে কথা বলছে বাট আমার সাথে কথা বলতে গেলে তো মুখ থেকে কথা বেরই হয় না। শান আট দেখতে পারল না। রেগে সোহার পাশে এসে দাঁড়ালো,

“তোমার শপিং শেষ তাহলে চলো। ”
শানকে দেখে সৃজন বললো,
“এটা কে জানেমান। ”

সৃজনের মুখে জানেমান কথাটা শুনে শানের রাগ আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল। যেন পারলে এখনই সৃজনকে এখানেই পুতে দেয়। সোহা কিছু বলবে তার আগে শান বললো,

“আমি কে সেটা ভাবতেই পারবেন না মিস্টার। যাইহোক নিজের গার্লফ্রেন্ডকে সময় দেন আসছি আমি। ”

শানের কথাটা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম,
“গার্লফ্রেন্ড মানে? তাহলে কি শান সৃজনকে আমার বয়ফ্রেন্ড ভাবছে? ”

শান আমাকে ফেলে অনেকটা চলে গেল।আমি এখনো দাঁড়িয়ে রইলাম। সৃজন আমাকে বললো,
“কি হয়েছে? কে উনি? ”
“আমার হাজবেন্ড। ”

কথাটা বলেই আমি সৃজনের আর কোনো কথা শুনলাম না। ও হয়তো আরো কিছু বলছিল বাট আমার এখন শানের সাথে কথা বলাটা বেশী জরুরী। আমি দৌড়ে গেলাম শানের পিছু। অনেকবার পিছনে ডাকলামও বাট আমার একটা কথাও শুনলো না। নিজের মতোই চলে গেল।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ প্রথমেই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কালকে গল্প দিতে পারিনি বলে। আসলে কালকে আমি প্রচন্ড বিজি ছিলাম।আমাদের বাসায় মেহমান আসছিলো। যার কারণে এক মিনিটের জন্যেও মোবাইলটা হাতে নিতে পারিনি। কারণ সবার সামনে মোবাইল টিপতে দেখলে মানুষ অন্য কিছু ভাবে।তাই ওদেরকেই সময় দিয়েছিলাম। যার কারণে লিখতে পারিনি। কালকে দিতে পারিনি তাই আজকে অনেক বড় করে দিয়ে দিলাম। আশা করি আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। আর সম্ভবত কালকেও আমি গল্প দিতে পারবো না।কারণ কালকে আমার কাজিনের বিয়ে তাই সময় নাও পেতে পারি। যদি সম্ভব হয় তাহলে ছোট করে দিয়ে দিবো আর নাহলে দুঃখিত। আশা করি আপনারা আমার সমস্যটা বুঝবেন। রিচেক দেওয়া হয়নি। বানাম ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ, আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here