এক সমুদ্র ফুল পর্ব-২

0
5595

#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_2
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


সকাল সকাল রান্না ঘরে খাবার বানানোর ধুম পড়েছে।কারণ আজ এই বাড়ির ছোটো ছেলে ছোটো রাজকুমার সমুদ্র শিকদার আসবে।ওর ফ্লাইট সকাল দশটায় ল্যান্ড হবে।সব ফর্মালিটিস শেষ করে আসতে আসতে প্রায় বারোটা বাজবে।সোনালী আপু আর বাবা গেছে উনাকে আনতে।উনারা ছাড়া আর কেউই নেই যাওয়ার।এই বাড়িতে আমি,,মা,,বাবা,,সোনালী,,আর মিতু ভাবী ছাড়া কেউ থাকে না।অন্যদিকে আমার শাশুড়ি মা তার আদুরে ছেলের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করতে ব্যাস্ত।আর তার সাথে আছে মিতু ভাবী।আর এইদিকে যার স্বামী আসবে তার,,, মানে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।আমি রান্না ঘরের দরজায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে মিতু ভাবীর সালাদের শশা খাচ্ছি।আর দেখছি উনারা কি কি আইটেম রান্না করছে!মাঝে মাঝে গিয়ে টেস্টও করছি।

ফুল।(আয়শা — আমার শাশুড়ি মা কিছুটা রেগে)

হুম মা?(আমি তাড়াতাড়ি শশা গিলে)

তুই এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামসা দেখছিস?(আয়শা)

না।তোমাদের রান্না দেখছি।(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

খুন্তি দিয়ে মারবো এখন।(আয়শা)

কেনো?আমি কি করেছি?আমি তো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।তোমাদের বিরক্তও করছি না।(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

আমরা কাজ করে মরছি আর তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস?(আয়শা)

সত্যিই বলতে তোমাদের কাজ করতে দেখে কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু ওই লোকের জন্য কাজ করার ইচ্ছেই আমার নেই।(আমি মনে মনে)

কী হলো?কি ভাবছিস?(আয়শা)

কিছু না।বলো কি করতে হবে?(আমি রান্না ঘরের ভিতরে ঢুকে ওড়না কাছা দিয়ে)

সুজির হালুয়া বানা।(আয়শা)

সুজির কি?(আমি অবাক হয়ে)

হালুয়া।সুজির হালুয়া।(আয়শা চিৎকার দিয়ে)

কিন্তু তোমার ছেলে আমার সুজির হালুয়া পছন্দ করবে না!উনি তোমার হাতেরটাই পছন্দ করে।(আমি)

এখন তুই বানাবি!তোর হাতেরটা খেয়েও তো ওর অভ্যাস করতে হবে।(আয়শা)

আমি আর কথা বাড়ালাম না।মা আমার হাত দিয়ে হালুয়া না বানিয়ে দম নিবে না।তাই চুপ করে উনার কথাই মেনে নেই।কিছু হলে উনার দোষ।(আমি মনে)

ঠিক আছে!বানাচ্ছি।
বলেই আমি সুজির প্যাকেট খুলে ওটাকে পাতিলে ঢাললাম। এরইমধ্যে আলো রান্নাঘরে আসলো।

দাদীমা।সুজির হালুয়া বানানো হচ্ছে?(আলো আদো আদো গলায়)

হুম।দাদুমনি।তোমার বাবার অনেক পছন্দের।(আয়শা আলোকে কোলে নিয়ে)

ওয়াও।আব্বুরও আমার পছন্দের খাবার খেতে ভালো লাগে।(আলো খুশি হয়ে)

হুম।তোমরা যে বাবা মেয়ে তাই।(আয়শা)

আমি আর মিতু ভাবী আলো আর মার কথা শুনে হাসছি।

জানো দাদীমা।আমি না ফুপির উপর এতো রেগে আছি।(আলো হাত দিয়ে দেখিয়ে)

কেনো?(আয়শা)

ফুপি আর দাদু কেনো আমাকে নিয়ে গেলো না।আমিও দেখবো আব্বু কি করে বিমান থেকে নামে!(আলো মুখ ফুলিয়ে)

এই কথা শুনেই মা আর নিতু ভাবী আমার দিকে তাকালো।আর আমি সুজি নাড়ানো থেকে হাত বন্ধ করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
আবার একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কাজে মনোযোগ দিলাম।মিতু ভাবীও উনার কাজে মনোযোগ দিলো।আর মা আলোকে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করছে।

তখন তো তুমি ঘুমিয়েছিলে।কি করে নিয়ে যেতো?(আয়শা)

আমাকে ডাক দিলেই তো উঠে যেতাম!(আলো মুখ ফুলিয়ে)

ঠিকই তো।এইটা তো কারো খেয়াল ছিলনা।আচ্ছা থাক ফুপি আর দাদু আসলে আচ্ছা করে বকে দিবো।আর এখন চলো আমরা দুজন মিলে তোমার বাবাকে স্বাগতম জানানোর জন্য কিছু করি।(আয়শা)

ওকে।দাদীমা।চলো।(আলো খুশি হয়ে)

পরেই মা আলোকে গিয়ে চলে গেলো।


রান্নাঘরে
কতো সহজে বাচ্চাদের বুঝ দেয়া যায়।(মিতু)

হুম।(আমি)

তুই আলোকে যেতে দিলেই পারতি ফুল।(মিতু ফুলের কাধে হাত রেখে)

আমি চাইনা এয়ারপোর্ট এ কোনো কিছু হোক।বাসায় আসলে পরে যা হওয়ার হোক।(আমি)

ফুল,,(মিতু কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো)

ভাবী আমি চাইনা ও আলোকে কিছু বলুক। ও আমাকে যা কথা শুনানোর শুনাক।কিন্তু আমার বাচ্চা মেয়েটাকে যেনো কিছু না বলে।তুমি দেখলে তো ওর চোখে বাবা আসার জন্য কতো খুশি।আমি চাইনা আমার মেয়েটার মনটা ভেঙ্গে যাক।আর সেখানে(এয়ার পোর্ট) ও একা যেতো যদি সমুদ্র ওকে কিছু বলতো আমি ওকে সামলানোর জন্য সেখানে থাকতাম না।এখানে তো তবু আমি থাকবো যেই পরিস্থিতিই হোক না কেনো আমি মেয়েটাকে সামলাতে পারবো।(আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে)

তুই তো ভয়ে কাঁপতে শুরু করলে ফুল!তুই চিন্তা করিস না।আমি যদিও সমুদ্র ভাইয়াকে কখনও দেখি নি উনার কথাও শুনি নি।আমাদের বিয়েতে উনি আসেননি।তবুও আমি এইটা বলবো যে উনি নিজের মেয়ের ক্ষতি হোক এমন কিছু করবে না।(মিতু)

কিন্তু ভাবী উনি তো এটাও জানে না উনি একটা মেয়ের বাবা।না জানি এমন ধাক্কা উনি কিভাবে নিবে!(আমি)

মিতু চুপ করে রইলো।আসলে ফুল আর সমুদ্রের সম্পর্কটাই এমন।অনেক রহস্যময়।কেউই জানে না ওদের মধ্যে কি চলছে!সত্যিই বলতে ওরা নিজেরাই জানে না।ওরা কি করছে একে অপরের সাথে!


ফ্লাইট থেকে নেমে
এয়ার পোর্ট এ বসে আছে সমুদ্র।কিছুক্ষণ পরেই বাহিরে যাবে। ও জানে বাবা আর সোনালী এসেছে ওকে নিতে।কিন্তু ও আরেকজনের আশা করছিলো কিন্তু সমুদ্র ভালো করেই জানে যে ও যার আশা করছে সে সব সময় ওর থেকে দূরে সরিয়ে রাখে নিজেকে।নিজের ওয়েলট বের করে সেখানে ফুলের ছবি দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

ফুল।এখনও কি নিজের মনের কথা লুকাবি?কি চাস তুই এখন কি তা মুখ খুলে বলতে পারবি? এখনও কি নিজেকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখবি!তার চেয়ে বড় কথা আমাকে ক্ষমা করতে পারবি! তোকে না চাইতেও কষ্ট দিয়েছি বলে।আমি আসছি ফুল শুধু তোর জন্য।নিজের করা সব ভুল গুলোকে সংশোধন করে নিবো।আর তোকেও আমাকে ভালবাসতে বাধ্য করবো।
বলেই ফুলের ছবিতে একটা চুমু দিয়ে হাতে সুট কেস নিয়ে বেরিয়ে পড়লো এয়ার পোর্ট থেকে বাহিরে।সেখানে আগে থেকেই সোনালী আর আরমান অপেক্ষা করছিলো।

ভাই ভাই তোকে কতো মিস করছি তুই জানিস?(সোনালী গিয়ে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরলো)

কেমন আছিস পেত্নী?(সমুদ্র সোনালীর নাক টেনে ধরে)

((সমুদ্র সোনালীর চার বছরের বড়।তাই ওরা একে অপরকে তুই বলেই ডাকে))

আমি এখন কিন্তু মোটেও পেত্নী না!এখন আমি কিন্তু যতেষ্ট সুন্দরী হয়ে গেছি।এই দেখ।(সোনালী ঘুরে নিজেকে দেখাচ্ছে)

যতই হোক।তুই আমার কাছে পেত্নী ছিলি তুই পেত্নীই থাকবি।(সমুদ্র সোনালীর মাথায় হালকা করে থাপ্পড় দিয়ে)

এইটা ঠিক না।(সোনালী মুখ ফুলিয়ে)

সমুদ্র বাবার কাছে গিয়ে
আসসালমুআলাইকুম বাবা কেমন আছো?

অলাইকুম আসসালাম বাবা। আলহাদুলিল্লাহ।তুই বল তুই কেমন আছিস?(আরমান)

আলহাদুলিল্লাহ বাবা।(সমুদ্র আরমানকে জড়িয়ে ধরে)

রাগ করে নেই তো তুই?(আরমানও নিজের ছেলেকে এতো বছর জড়িয়ে ধরে নিজের বুকটাকে শান্ত করলো)

না বাবা।এখন আর রাগ নেই কারো উপর।(সমুদ্র)

শুনে ভালো লাগলো।চল এখন বাড়ি যাওয়া যাক সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।(আরমান)

চল।
বলেই সবাই গাড়ি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।


ফুল।এই ফুল?(আয়শা হতদন্ত হয়ে রান্নাঘরে ঢুকে)

কী মা?তোমার মত সুজি রান্না করা হয়েছে।আমি আর মিতু ভাবী মিলে রান্না ঘরের সব কাজ করে ফেলেছি।এখন আর কোনো কাজ নেই।(আমি)

ওইসব ছাড়।তোর বাবা ফোন করেছে উনারা সমুদ্রকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।এখন তুই আর আলো মিলে রেডি হয়ে নে।আর মিতু তুমিও গিয়ে গোসল করে নাও। বাকিটা আমি আর সার্ভেন্টরা দেখে নিবো!(আয়শা)

আচ্ছা মা।
বলেই মিতু নিজের রুমে চলে গেলো।

অবশেষে এসেই পড়েছেন সমুদ্র শিকদার।(আমি মনে মনে)

কী হয়েছে?তুই দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি ভাবছিস?যা গিয়ে রেডি হো।(আয়শা)

হুম।হচ্ছি।আলো কোথায়?(আমি)

রুমেই আছে।খেলেছে।(আয়শা)

আচ্ছা।তাহলে আমি যাই।
বলেই আমি উপরে আমার রুমে চলে এলাম।


রুমে
আলো মা।উঠো।তোমার বাবা খুব শীগ্রই এসে পড়বে।তোমাকে তৈরি করতে হবে তো!(আমি আলোকে কোলে নিয়ে)

আম্মু।আমি নতুন জামা পড়বো।(আলো)

ওকে আমার আলো যাই বলে তাই ঠিক।আচ্ছা তা কোনটা পড়বে?
বলেই আমি আলোকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।

বারবি ড্রেস পড়বো।যেটা বড়ো মা(মিতু) কিনে দিয়েছে!(আলো)

ঠিক আছে পরো।
বলেই আমি ওকে গোসল করাতে লাগলাম।

আম্মু,, আব্বু আমাকে দেখলে খুব খুশি হবে তাই না?(আলো পানি ঝাপটিয়ে)

খুশি হবে?জানি না আমি কিছুই জানি না!কিছুই বুঝতে পারছিনা।সমুদ্র আলোকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে?শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া যাতে খারাপ কিছু না হয়।(আমি মনে মনে)

আমার হুশ ফিরল আলোর পানির ঝাপটা চোখে পড়ায়

এই মেয়ে এমনি দেরি হয়ে গেছে তার উপর তোমার এই দুষ্টামি।আরো দেরি করলে দাদীমা আমাদের মা মেয়েকে ইচ্ছা মত মারবে।তাড়াতাড়ি গোসল করে নাও।
বলেই আলোকে গোসল করিয়ে ওকে বাহিরে নিয়ে গেলে নতুন কাপড় পরিয়ে দিলাম।তারপর একটা খেলনা দিয়ে বসিয়ে নিজে গোসল করতে গেলাম।


গোসল শেষ করে
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগলাম।তখনই মা রুমে আসলো উনি আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো

ফুল!কি পড়েছিস তুই?(আয়শা রেগে)

কেনো?কি হয়েছে?আমি তো সব সময় গোল জামাই পরি।আজও তাই পড়েছি।দেখো এই বেগুনি রঙের জামায় আমাকে মানিয়েছে না?(আমি জামা দেখিয়ে)

আলো এখানে আছে বলে।না হলে একটা থাপ্পড় মেরে দাত গুলো ফেলিয়ে দিতাম।(আয়শা ঘরে ঢুকে)

কেনো?আমি আবার কি করলাম?আজ তো কোনো গন্ডগোলও করি নি।সময়মত তৈরিও হয়ে গেছি।তাহলে আমাকে তো তোমার পুরুস্কার দেয়া উচিত কিন্তু তুমি বলছো আমাকে থাপ্পড় দেবে।এইটা ঠিক না মা।(আমি মুখ ফুলিয়ে)

হয়েছে আর আলোর মত মুখ ফুলাতে হবে না।আমি জানতাম তুই এমন কিছু পরবি তাই আমি তোর জন্যে এই শাড়ি এনেছি।তুই তো শাড়ি পড়িস না তাই শাড়ি কিনিসও না।(আয়শা)

তুমি তো জানো আমার অপচয় ভালো লাগে না।আমি শাড়ি পরি না শুধু শুধু রেখে কি লাভ?(আমি)

হুম।বুঝেছে আপনি অনেক মহান।কিন্তু আজ পড়তে হবে।এই নে।
বলেই আমাকে শাড়ি এগিয়ে দিয়ে উনি চলে যেতে লাগলো।পরেই কিছু একটা ভেবে পিছনে ফিরলো আর দেখলো আমি কিউট ফেস করে তাকিয়ে আছি।মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো

শাড়ি পরতে পারিস না।

আমি হ্যা বোধক মাথা নাড়ালাম।

হায় আল্লাহ।
বলেই আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগলো।শাড়ি পরি না বলে আমার ব্লাউজও নেই।তাই মা মিতু ভাবীর কাছ থেকে এনে দিয়েছে।উনার আর আমার সাইজ একই।এমন শাশুড়ি খুব ভাগ্যের গুনে পাওয়া যায়।
এইটা ভেবেই আমি হাসতে লাগলাম

কী হলো?পাগলের মত হাসছিস কেনো?(আয়শা ফুলের কুচি ঠিক করতে করতে)

সব সময় একটা মেয়েকে তার মা শাড়ি পড়িয়ে দেয়,,তারপর বন্ধু বা কোনো আত্মীয়,বিয়ের পর স্বামী।এই প্রথম আমি দেখলাম শ্বাশুড়ির বউকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে।এইভেবে হাসছি।(আমি মুচকি হেসে)

দূর পাগলী।তোকে ছোটো বেলা তো নিজের হাতেই মানুষ করেছি।আর তুই মিতু সোনালী তোরা তিনজনই আমার মেয়ে।বুঝি না সবাই শাশুড়িকে ভিলেন ভাবে কেনো?হাতের পাঁচটা আঙ্গুল যেমন এক হয় না তেমন সব শাশুড়িও এক হয় না।আর তোদের মত বৌমা পেলে তো একদমই না।
মা আমার কপালে চুমু দিয়ে কথা গুলো বললো।

আর তোমার মত শাশুড়ির তুলনা হয় না।(আমি মাকে জড়িয়ে ধরে)

ওকে হয়েছে ইমোশনাল কথা এখন নিচে চল।(আয়শা চোখ মুছে)

হুম।চলো।আলো মা তুমি রুমে খেলো আর না হয় মোটু পাতলু দেখো।আমি আসছি।(আমি)

ওকে।আম্মু।(আলো)


নিচে নেমেই
আমি,,মা আর মিতু ভাবী মিলে বসে বসে গল্প করছি।আর উনাদের অপেক্ষা করছি।মিতু ভাবী সার্ভেন্টদের দিয়ে সব কিছু করিয়ে ফেলেছে আর রান্না করাও শেষ এখন উনারা আসলেই ফ্রেশ হয়ে খাবার খাবে।আমরা হাসাহাসি করে গল্প করছি তখনই বাহিরে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম।শেষ আমার হাসিমুখ নিমিষেই চলে গেলো।
মা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো।মিতু ভাবী একটু এগিয়ে গেলো।আর যেখানে আমার সবার আগে থাকার কথা সেখানে আমি পিছুতে পিছুতে সিড়ির পাশে চলে আসলাম সিড়ি আর দরজা একে অপরের সামনাসামনি।

দরজায় সুমদ্র পা রাখতেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো,বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো।এখন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
সমুদ্র ঢুকতেই আমার উপর প্রথমে ওর চোখ পড়লো।আর ঘটনা ক্রমে আমারও চোখ ওর চোখে পড়লো।দুজনের চোখের চোখ পরলো এইটা অন্যর কাছে শুনতে যতটা রোমান্টিক আমার কাছে ততটাই ভয়ংকর।তবে বলতে হবে জামাই আমার আগের থেকে অনেক সুন্দর আর হ্যান্ডসাম লাগছে।কালো শার্ট আর কালো পান্ট পড়ছে যা ফর্সা শরীরে একদম ফুটে উঠেছে।আগে দাড়ি রাখতো না কিন্তু এখন মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।তবে আগে তাল গাছ ছিল এখনও তাল গাছই আছে।
না ফুল না উনার রূপে গলে যাস না।
বলেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।

সমুদ্র ফুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে
এখনও তুই সেই আগের মতই রয়ে গেলি ফুল।সব সময় নিজের ফিলিংস গুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার অভ্যাস তোর গেলো না।যাই হোক এখন আমি যে করেই হোক তোর মন থেকে তোর ফিলিংস গুলো মুখে এনেই দম নিবো।
তবে যাই হোক আমার বন্য ফুলকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।একদম পরিপূর্ন নারী।যখন দেখে গেছি তখন একটা 16 বছরের বাচ্চা মেয়ে ছিলো।দুরন্ত দুষ্টু মিষ্টি একটা বন্য ফুল আজ সবুজ শাড়িতে নিজেকে যেনো অন্যভাবে সাজিয়েছে।ওর ছাড়া চুলের মধ্যে ঢুবে যেতে ইচ্ছে করছে।এখনই মনে হয় চোখে কাজল দেয়া হয়ে উঠলো না।তবুও ওর কাজল বিহীন চোখ অনেক মনোমুগ্ধকর।

সমুদ্রের হুশ ফিরল আয়শার কথা শুনে
বাবা তুই কেমন আছিস?(আয়শা সমুদ্রের গাল আলতো করে ছুঁয়ে)

আলহাদুলিল্লাহ মা।তুমি?(সমুদ্র আয়শাকে জড়িয়ে ধরে)

পরেই দুজনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজেদের মধ্যকার ইমোশনাল কথা বার্তা বলছিলো।মা কাদঁছে আর সমুদ্র তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

মা ছেলের এমন মিলাপ দেখে সবারই চোখ ছল ছল করছিলো এরইমধ্যে কোথা থেকে যেনো দৌড়ে এসে আলো লাফ দিয়ে সমুদ্রের কোলে উঠে গেলো।উঠলো তো উঠলো ওর কোলে একদম লেপ্টে গেল।এদিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।আজ যেনো আমার মেয়েটার মনটা শান্তি পেলো ওর বাবাকে কাছে পেয়ে।এইটা ভেবেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।

তুমি কে মামনি?(সমুদ্র আলোর গাল ধরে ওকে কোলে নিয়েই)

আমি তোমার মেয়ে আলো আব্বু।(আলো একগাল হেসে)

সমুদ্র বাবার দিকে তাকালো।বাবা নিচের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো।আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কারণ এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র আমিই ঠিক মতো দিতে পারবো।তবে কি করে শুরু করবো সেটাই আমার অজানা।

একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বলতে শুরু করলাম


চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here