#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_4
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
পরেই মিতু ভাবী সাগর ভাইয়াকে ভিডিও কল দিল,,
প্রথম বারে উনি ফোন ধরলো না।আর্মি মানুষ হয়তো ব্যাস্ত আছে।তাই আবার মিতু ভাবী ফোন দিলো এই বার সাগর ভাইয়া ফোন ধরলো আর ধরতেই
জান।তোর সয়ছে না!উড়ে আসবো নাকি?(সাগর ভাইয়া জানে না পাশে আমরাও আছি।উনি ভিডিও অন করে প্রথমে মিতু ভাবীকে দেখেই প্রেমালাপ করতে শুরু করলো)
মিতু ভাবী তো লজ্জায় শেষ।আর আমরা মিট মিট করে হাসছি।তখনই বাবা কাশি দিলো।উনার কাশি শুনে সাগর ভাইয়া অবাক হয়ে বললো
বাবা তোমার পাশে?
মিতু আপু লজ্জায় মাথা নাড়ালো।
তুমি আগে বলবে তো?(সাগরও লজ্জা পেয়ে)
বৌমাকে তুই কিছু বলতে দিলে তো?(আয়শা)
মা!তুমিও আছো?(সাগর ভাইয়া আরেক দফা অবাক হয়ে)
ভাই আমরাও আছি।(সোনালী মিতুর কাছ থেকে ফোন নিয়ে hi দেখিয়ে)
শেষ আমার ইজ্জতের নিলাম হয়ে গেলো!(সাগর মাথায় হাত দিয়ে)
ফুপি আমিও বড়ো আব্বুর সাথে কথা বলবো!আমাকে দাও।(আলো আদো আদো গলায়)
দ্বারা আলো।আমি কথা বলে নেই।
বলেই সোনালী আর আলো ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে লাগলো)
অনেক হয়েছে।(আরমান)
সবাই চুপ হয়ে গেলো।
এখন সবাই ফোন সামনে রেখে একসাথে বসে কথা বলার জন্য বসলো।
সাগর ভাইয়া সমুদ্রকে দেখে চমকে গেলো।
সমুদ্র তুই?(সাগর)
হুম।ভাই আমিই।(সমুদ্র মুচকি হেসে)
বড়ো আব্বু বড়ো আব্বু দেখো আমার আব্বু এসেছে।আলোর আব্বু এসেছে।(আলো সমুদ্রের কোলে উঠে)
হুম মা।দেখেছি।এখন তো নিশ্চয়ই আমার আলো মা অনেক খুশি?(সাগর)
না।আমার বড়ো আব্বু আসলে আমি আরো খুশি হবো।আমি বড়ো আব্বু আর আব্বুর সাথে খেলবো,ঘুরবো অনেক মজা করবো।(আলো)
হুম।বড়ো আব্বু আসবে তো। আলোমনী বলেছে আর আমি আসবো না।(সাগর)
আসার কথা শুনে মনে পড়লো কবে আসবি তুই সাগর?(আয়শা)
মা আমি একদম পেত্নীর বিয়েতে আসবো।এখন ছুটি নিলে পরে আর আসতে পারবো না।(সাগর)
ভাই তুই আবার আমাকে পেত্নী বললি?(সোনালী রেগে)
তো পেত্নীকে পেত্নী বলবে না তো কি পরী বলবে!(সমুদ্র তালে তাল মিলিয়ে)
মা কিছু বলো তোমার ছেলেদের।(সোনালী নেকা কান্না করে)
সাগর শুধু সমুদ্রকে দেখছে আর ভাবছে
আমার ভাই কবে এতো পরিবর্তন হয়ে গেলো।যে কখনও পরিবারের সাথে বসে এক সেকেন্ড কথা বলার প্রয়োজন মনে করতো না আজ সে পরিবারের সাথে বসে সময় কাটাচ্ছে,,মজা করছে,,ফাজলামি করছে।কোথায় হারিয়ে গেলো সেই গম্ভীর সমুদ্র!একটা মানুষ কি এতো পরিবর্তন হতে পারে।কতো স্বাভাবিক লাগছে ওকে।
এইসব ভাবতেই আরমান বলে উঠলো
তাহলে তুই বিয়েতে ছুটি নিয়েই আয়।আর এখানকার কাজ না হয় সমুদ্র দেখে নেবে।(আরমান)
সমুদ্র?কিন্তু বাবা!(সাগর)
ঠিক আছে বাবা।আমি আছি না এদিক সামলে নিবো।আচ্ছা ভাইয়ের সাথে আমার একটু কথা আছে।তোমরা এদিকে বসো আমি উনার সাথে কথা বলে আসি।
বলেই সমুদ্র ফোন নিয়ে কর্নানে চলে গেলো।
আমি এতক্ষন একটা কথা না বললেও সাগর ভাইয়ার চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছি উনি অনেক অবাক হয়েছে।এইটা অবাক করার বিষয় না কারণ আমিও এই সমুদ্রকে দেখে অনেক অবাক হয়েছি।
সোনালী আপু মিতু ভাবীর সাথে মজা নিচ্ছে।আর আলো বাধা দিচ্ছে।ওর বড়ো আম্মুকে যেনো বিরক্ত না করে।এইসব দেখে আমার ভাবনার অবসান ঘটে।
।
।
ফোনে
কেমন আছো ভাই?(সমুদ্র)
আলহাদুলিল্লাহ।তুই?(সাগর)
আলহাদুলিল্লাহ।(সমুদ্র)
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর
এখনও রেগে আছিস?(সাগর)
না ভাই।এখন আমি কারো উপর রেগে নেই।(সমুদ্র)
শুনে খুশি হলাম।(সাগর)
ভাই!(সমুদ্র)
হুম?(সাগর)
সরি।(সমুদ্র)
কেনো?(সাগর অবাক হয়ে)
তোকে আমি সব সময় বকেছি।তোর দোষ না থাক সত্ত্বেও তোকে দোষী বানিয়েছি।তোর আর আমার সম্পর্ককে আমি কোনো গুরুত্বই দেই নাই।তোর কি,,আমি তো কোনো সম্পর্ককেই গুরুত্ব দেইনি।মা বাবা সোনালী ফুল আলো সবাইকে কষ্ট দিয়েছি।(সমুদ্র)
স্বপ্ন দেখা খারাপ না,, তা পূরণ করার ইচ্ছাটাও খারাপ না।কিন্তু তা পূরণ করতে গিয়ে আশেপাশের সবাইকে কষ্ট দেয়াটাও ঠিক না।(সাগর)
হুম ভাই বুঝতে পেরেছি।তুই সত্যিই বড়ো ভাইয়ের মতো আমাকে বুঝালি।(সমুদ্র)
আমি তখনও তোকে বুঝিয়েছি এখনও বুঝাবো।আর ফুলকে আর কষ্ট দিস না।মেয়েটা এমনি অনেক কষ্ট পেয়েছে।তোর চলে যাওয়ার জন্য ও নিজেকে দায়ী করেছে।যদিও মা বাবা বা আমাদের পরিবারের কেউই ওকে এর জন্য দায়ী করেনি।তবুও তুই ত ওকে চিনিস।ওর খেয়াল রাখিস।ওকে আমি আমার বোন থেকে বেশি ভালোবাসি।(সাগর)
হুম।(সমুদ্র ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।ফুল হাসতে হাসতে আলোকে আর সোনালীকে আটকাচ্ছে।ওরা ঝগড়া লেগেই থাকে।)
আমি তোকে আর কষ্ট পেতে দিবো না ফুল(সমুদ্র মনে মনে)
এখন আমায় সবার কাছে নিয়ে চল।কথা বলি।আবার কখন ব্যাস্ত হয়ে যাবো।(সাগর)
হ্যা।চলো চলো।
বলেই ফোন নিয়ে সমুদ্র সবার সামনে রাখলো।
তা ফুল তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তো ফিরে এসেছে।এখন কবে ট্রিট দিবি বল।((লেখিকা বাস্তবেও ট্রিট ট্রিট করে আর গল্পেও))।কোনো বায়না কিন্তু শুনবো না।(সাগর)
দিবো দিবো।চিন্তা করো না। (আমি)
পরেই আমরা সবাই কথাবার্তা বললাম।
।
।
সারা বিকেল গল্প করতে করতে চলে গেলো।সমুদ্র যার যার জন্য যা যা এনেছে তা সবাইকে দিলো।কিন্তু আলো মুখ ফুলিয়ে বসে আছে কারণ সমুদ্র ওর জন্য কিছু আনে নি।
সরি মা।(সমুদ্র কান ধরে)
যাও কথা বলবো না।তুমি আমার জন্য কিছু আনো নি।(আলো মুখ ফিরিয়ে)
আচ্ছা মা তুমিই বলো আমি যদি জানতাম তুমি আছো আমি কি কিছু কি নিয়ে আসতাম না তোমার জন্য।সব দোষ তোমার মার উনি যদি আলোর কথা বলতো আমি তো আলোর জন্য বারবী ডল কিনে নিয়ে আসতাম।(সমুদ্র)
এখানে আমার দোষ কি?(আমি কোমর ধরে)
সব তোর দোষ।তুই কেনো বললি না?(সমুদ্র)
দেখুন,,
বলেই আরো কিছু বলতে যাবো তার আগেই আলো বলে উঠলো
আম্মু আব্বু তোমরা ঝগড়া করো না।(আলো)
ওকে মামনি তুমিও রাগ করো না।কালকে আমরা শপিংয়ে যাবো গিয়ে তোমার যা ইচ্ছে কিনে নিয়ে আসবো।ঠিক আছে?(সমুদ্র)
ওকে আব্বু।
বলেই আলো সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরলো।
সবাই ওদের বাবা মেয়ের কান্ড কারখানা দেখছে।
।
।
রাতের খাবার খেয়ে আমরা যার যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম।
রুমে আসার পর থেকেই আলো একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে সমুদ্রের সাথে।আর সমুদ্রও খুব মনোযোগ দিয়ে মেয়ের প্রতিটা কথাই শুনছে।যেনো এই সব মুহূর্তই ও মিস করেছে।
আলো অনেক হয়েছে।এখন ঘুমাও।বাবা সারাদিনে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে।উনাকে রেস্ট নিতে দাও।(আমি বিছানা ঠিক করে)
থাক না আমার ভালই লাগছে ওর কথা গুলো শুনতে।(সমুদ্র)
না আব্বু।আম্মু বলে যারা বড়োদের কথা গুলো তারা নাকি ভালো মেয়ে।এই জন্য আমি এখন ঘুমাবো।আমি তো ভালো মেয়ে তাই না?(আলো শুয়ে পড়লো)
তোমার আম্মু বলেছে।
বলেই সমুদ্র ফিক করে হেসে দিলো।
এতে হাসার কি হলো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
তোকে তো জীবনেও ধরে বেধে কোনো কথা শুনানো যেতো না।তারমানে তুই ভালো মেয়ে না!(সমুদ্র)
আপনাকে তো আমি!
বলেই গলা টিপতে যাবো তখনই আলো বলে উঠলো
আব্বু আমি গল্প শুনবো।
ওকে মা।আমি গল্প বলছি।
বলেই আমাকে চোখ টিপ মেরে আলোর পাশে শুয়ে গল্প বলতে শুরু করলো।
আমি মুখ ভেংচে দিয়ে আলমারি খুলে কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।রান্না করতে গিয়ে অনেক ঘেমে গেছি এখন গোসল না করলে ঘুম হবে না।
।
।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছে?(আমি)
হুম।(সমুদ্র)
আমি আর কিছু না বলে আয়নার সামনে বসে বসে চুল মুছতে লাগলাম।
ফুল!(সমুদ্র)
হ্যা?(আমি ওর দিকে তাকিয়ে)
তোর জীবনের ভিলেন আমি তাই না?(সমুদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে)
।
।
চলবে,,,_^_
রমজানের কারণে এক দিন পর পর পর্ব দেবো!🙂