এক সমুদ্র ফুল পর্ব-৫

0
3293

#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_5
Writer::Shaanj Nahar Sanjida


তোর জীবনে ভিলেন আমি তাই না?(সমুদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে)

আমি উনার প্রশ্নটা শুনে খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম।উনি কি উনার করা কাজের উপর লজ্জিত।
বাহ!উনি কবে থেকে নিজের কাজের উপর লজ্জা পেতে শুরু করলো।সব সময় স্বার্থ পরের মতো নিজের সিদ্বান্ত নেয়া সমুদ্র কবে থেকে এতো পরিবর্তন হয়ে গেলো।তবে যাই হোক এইবার একটু মজা করা যাক।যা ভাবা তাই কাজ।

আপনি আমার লাইফে ভিলেন না!আপনি আমার জীবনের সব সমস্যার মূল।আপনার কারণেই আজ আমার জীবনে এত উথাল পাথাল।(আমি)

আমার কথা শুনে সমুদ্রের মুখটা একটু হয়ে গেছে।হয়তো উনি অনেক অনুতপ্ত।আমি উনার সামনে হাঁটু মুড়ে বসলাম।নিজের হাতটা উনার গালে রেখে মাথাটা উচুঁ করে নিজের কপালে ঠেকালাম
আপনি আমার জীবনের ভিলেন না।আমাদের দুজনেরই জীবনে ভিলেন ছিলো পরিস্থিতির।আপনি তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা পুরুষ্কার।জানি না কি পূণ্য করেছি বলে আপনাকে আমার জীবনে পেয়েছি।আপনার মত বন্ধু কতো জনের হয় বলুন!(আমি)

বন্ধু?(সমুদ্র আমার কপালে মাথা ঠেকিয়েই)

হুম।বন্ধু।(আমি চোখ বন্ধ করে)

ফুল এখনও আমি তোর বন্ধুই থেকে যাবো?তুই কি স্বামী হিসেবে আমাকে দেখতে পারবি না কোনোদিন!আমি যে তোকে ভালোবাসি আর সেই ভালোবাসা কোনো বন্ধুত্বের না। সেই ভালোবাসা স্বামী স্ত্রীর।ফুল আমি বন্ধু হয়ে থাকতে চাই না আমি তোর স্বামী হতে চাই।আর তা আমি হয়েই ছাড়বো।(সমুদ্র মনে মনে)

কিছুক্ষণ কপালে কপাল ঠেকানোর পর সমুদ্র উঠে গেলো।

কি হলো?(আমি অবাক হয়ে)

আমি ঘুমাবো!(সমুদ্র)

ও হ্যা!আপনি তো ক্লান্ত।তাহলে আপনি ঘুমান।
বলেই আমি বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফাতে রাখলাম।

এই বালিশ দিয়ে কি করবি?(সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে)

বিছানা দুজনের জন্য।তিনজন ঘুমালে কষ্ট হবে আপনার।তার চেয়ে বরং আপনি আর আলো বিছানায় ঘুমান।আমি না হয় সোফায় ঘুমাই।(আমি)

হুহ!🤨
বলেই সমুদ্র আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

আরে কি করছেন?(আমি অবাক হয়ে)

দেখ এতো নড়াচড়া করিস না।মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে যাবে।(সমুদ্র)

তাহলে আপনি আমাকে ছাড়ুন।(আমি আস্তে আস্তে ছুটার চেষ্টা করে)

দেখ ফুল আমি অনেক ক্লান্ত।প্লিজ আমাকে ঘুমাতে দে।
বলেই আমার ঘাড়ে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়লো,,না ঘুমিয়ে পড়ার ভান ধরলো বুঝতে পারলাম না।

আমি সমুদ্র আর আলোর মাঝখানে শুয়ে আছি।সমুদ্র এতো শক্ত করে চেপে ধরে আছে যে ওর কাছ থেকে ছুটা তো দূরে থাক নড়াচড়াও করতে পারছি না।
প্রায় অনেকক্ষন পর
ফুল,,!ঘুমিয়ে গেছিস?(সমুদ্র)

এতো জোরে কেউ চেপে ধরলে কেউ ঘুমাবে?(আমি মনে মনে)

ফুল?(সমুদ্র)

না।ঘুমাই নি কিছু বলবেন?(আমি)

হুম।তুই আমাকে আপনি করে বলছিস কেনো?তুই তো সব সময় আমাকে তুমি করে বলতি।(সমুদ্র)

তখনকার আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য অনেক।(আমি)

কোনো পার্থক্য নেই তুই আমাকে তুমি করে বলবি!(সমুদ্র জেদ ধরে)

দেখুন জেদ ধরে কোনো লাভ নাই।(আমি)

ওকে জেদ ধরবো না।
বলেই সমুদ্র আমার ঘাড়ে চুমু দিতে লাগল।

এমনি হচ্ছে আমার সারা শরীরে সুড়সুড়ি।তার উপর আবার উনি।

কি হচ্ছে?(আমি রেগে)

তুই তো বললি জেদ করতে না।তাই এই উপায় অবলম্বন করছি।এখন যতক্ষণ না পর্যন্ত তুই আমাকে তুমি বলে ডাকবি ততক্ষণ আমি আমি তোকে এইভাবেই বিরক্ত করবো।
বলেই সমুদ্র আবার আমার ঘাড়ে কামড় বসালো।

জেদ করতে না বলেছি বলে এখন অসভ্যতামি করছেন।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আমার বন্য ফুল,, একে অসভ্যতামি বলে না!একে বলে রোমান্স।
বলেই আবার কিস করলো।

হয়েছে হয়েছে অনেক।তুমি করে বলবো।এইবার থামো।(আমি)

দূর।আরেকটু রোমাঞ্চ করতে দিতি।তুইও না আনরোমান্টিক।
বলেই সমুদ্র আমাকে আরো চেপে ধরলো।

আমি আনরোমান্টিক!(আমি😩)


সকালে
ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।ঘুম ঘুমেই চারপাশে হাত বুলিয়ে দেখলাম কিন্তু কাউকে পেলাম না।

সমুদ্র আর আলো কোথায়?আলো এতো সকালে উঠলো কি করে?(আমি মনে মনে)

আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে।বিছানা গুছিয়ে।বেলকনিতে হাওয়া খেতে গেলাম।সেখানে গিয়ে নিচে তাকাতেই দেখি আলো আর সমুদ্র।

সমুদ্র পুস আপ করছে আর আলো ওর পিঠের উপর বসে বসে কবিতা শুনাচ্ছে।বাবা মেয়ের এই কান্ড দেখে আজ দিনটাই ভালো হয়ে গেলো আমার।আমি মনে হয় আলোকে খুব কমই এতো খুশি হতে দেখেছি।আমি উপর থেকে ওদের বাবা মেয়ের কান্ড দেখছি

আম্মু এইবার একটা ইংরেজী কবিতা শুনাও তো!(সমুদ্র পুস আপ করতে করতে)

ওকে আব্বু।
বলেই আলো কবিতা বলতে শুরু করলো।

Twinkle twinkle little star
How I wonder what you are
Up above the all so high
Like a diamond in the sky

আলোর মুখে উচ্চারণ গুলো একটু অন্যরকম শুনায়।

আলো অনেক সুন্দর হয়েছে।তবে আরো স্পষ্ট করে বলতে হবে।(সমুদ্র)

ওকে আব্বু।(আলো)

এইটা তোমাকে কে শিখিয়েছে?আম্মু?(সমুদ্র)

হুম।সব কবিতাই আমাকে আম্মু শিখিয়েছে।(আলো)

সমুদ্র মুচকি হাসি দিলো।আমি উপর থেকে ওদেরকে দেখে হাসছি।পরেই আমি ভিতরে চলে গেলাম।


আমি রুম গুছাচ্ছি তখনই আলো আর সমুদ্র রুমে ঢুকলো।

ফুল,, আমি আর আলো ফ্রেশ হয়ে আসছি।(সমুদ্র)

হুম।(আমি)

পরেই সমুদ্র আলোকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

কিছুক্ষণ পর মা আসলো
ফুল?(আয়শা)

জ্বি মা?(আমি)

আজকের সকালের নাস্তা তুই আর মিতু বানিয়ে ফেল।আজ আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।(আয়শা)

আচ্ছা সমস্যা নেই।কালকে এমনি অনেক রান্নাবান্না করে নিজের শরীর খারাপ করে ফেলেছো।তুমি বরং রেস্ট নাও।কি রান্না করবো বলে দাও।(আমি)

তুই পরোটা বানা।আর মিতুকে আমি বলে দিয়েছি আলু ভাজি,,ডিম,,আর ফ্রিজে সুজির হালুয়া আছে।যে যেটা খাবে ও তৈরি করে দিবে!(আয়শা)

আচ্ছা।(আমি)


রান্নাঘরে
আমি আর মিতু ভাবী রান্না করছি।
বাহিরে সোফায় মা,,বাবা,,সমুদ্র,,আলো আর সোনালী আপু বসে আছে।

সোনালী এসে পরোটা নিয়ে যাও।(মিতু)

আসছি ভাবী।
বলেই সোনালী রান্নাঘর থেকে পরোটা নিয়ে আসলো।

বাবা মা তোমরা খাবে না।(সমুদ্র)

আমার ভালো লাগছে না।আমি কিছুক্ষন পরে খাবো।(আয়শা)

আমার ডায়াবেটিস।ইনজেকশন নিয়ে তারপর খাবো।তুই খেয়ে নে।আমাদের দেরি হবে।(আরমান)

আর তুই খাবি না পেত্নী?(সমুদ্র)

আমি ডায়েট এ আছি।তেল যুক্ত খাবার খেতে পারবো না।(সোনালী ভাব নিয়ে)

সারাদিন বসে থাকলে মুটি তো হবেই।(সমুদ্র)

দেখ ভাই।কিছু দিন পরেই আমার বিয়ে একটু স্লিম হওয়ার দরকার তো নাকি?(সোনালী ভাব নিয়ে)

হাঁ পড়ে বলবে আমরা মেয়েকে কিছু খাওয়াই নি।(সমুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

তোর এত চিন্তা করতে হবে না।তুই তোর খাবার খা।নে তোর পরোটা।
বলেই সোনালী সমুদ্রের সামনে পরোটার ঝুড়িটা রাখলো।
সমুদ্র পরোটার দিকে তাকিয়ে বললো
এটা ফুল বানিয়েছে না?

ওয়াও।ভাই!কি রোমান্টিক!দেখেই বলে দিলি কে বানিয়েছে!(সোনালী অবাক হয়ে)

আমি আর মিতু ভাবী দুজনেই এতক্ষন রান্নাঘরে কাজ করতে করতে ওদের কথা শুনছিলাম।সমুদ্রের এই কথা বলতেই মিতু ভাবী আমার সাথে মজা করতে শুরু করলো।

দেখলি কেমন ভালোবাসে তোকে ফুল!(মিতু টিটকারি মেরে)

তুমিও না ভাবী!(আমি খানিকটা অবাক হয়ে।উনি আমার প্রশংসা করছে)

তোর ভাই তো খেয়েও বলতে পারবে না আমি রান্না করছি।আর সমুদ্র দেখেই বলে দিলো।(মিতু আফসোস করতে করতে)

আমি কিছুটা খুশি হলাম।
আমি আর মিতু ভাবী আবার ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম তখনই আবার বাহিরে থেকে সমুদ্রের আর সোনালী আপুর কথা শুনতে পেলাম।


বাহিরে
আরে পেত্নী রোমান্টিক এর কিছুই না এখানে!(সমুদ্র)

তাহলে তুই চিনলি কি করে ভাই?(সোনালী অবাক হয়ে)

পরোটার উপর মানচিত্র আঁকার কারুকাজ এই বাড়িতে একজনই করতে পাড়ে আর সে হচ্ছে ফুল।(সমুদ্র)

সোনালী,,মা বাবা সবাই ফিক করে হেসে দিলো।সাথে রান্না ঘরে থেকে মিতু ভাবীও অন্যদিকে নিজের অপমান শুনে আমি রেগে বোম হয়ে গেলাম।

ভাই কি বলছিস তুই?(সোনালী হাসতে হাসতে)

এই দেখ।মানুষ পরোটা গোল বানায় আর ও না জানি কোন দেশের মানচিত্র এঁকে দিলো।(সমুদ্র পরোটা উঠিয়ে)

বাবা ওইটা আফ্রিকার মানচিত্র।(মাঝখান থেকে আলো বলে উঠলো)

আলোর কথা শুনে বাড়ির সবাই যেনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো।এদিকে বাবা মেয়েকে আমার বেলুন দিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে।

আর এইটা কোন দেশের মানচিত্র মা?(সমুদ্র আরেকটা পরোটা উঠিয়ে)

এইটা উগান্ডার।(আলো)

ওয়াও।এইভাবে বাচ্চাদের পড়ানো এই প্রথম দেখলাম।আর এইটা ফুলের দ্বারাই সম্ভব।(সমুদ্র মাথায় হাত দিয়ে)

সবাই আজ যেনো সমুদ্রের কথায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আচ্ছা আলো এইটা কোন দেশের?(সোনালী)

এইটা নতুন।আগে দেখি নি তাই বলতে পারবো না।সরি ফুপি।(আলো মুখে আঙ্গুল দিয়ে)

আমি বলছি এইটা কিসের মানচিত্র?এইটা সাহারা মরুভূমির মানচিত্র।আরেকটা কথা বললে সব কয়টাকে এই যে দেখছো বেলুন।এইটা দিয়ে পরোটা বানানোর বদলে তোমাদের ওই মুরুভূমিতে পাঠাবো।(আমি কিচেনের দরজায় দাড়িয়ে বেলুন দেখিয়ে)

সমুদ্র হাসছে।সোনালী আপু চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।মা বাবাও মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।অন্যদিকে আলো কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না।আমি সবাইকে সতর্ক বার্তা দিয়ে আবার কিচেনে গেলাম।

রেগে আছিস কেনো ফুল?সমুদ্র মজা করছে তোর সাথে!(মিতু)

আমি আর কিছু না বলে পরোটাতে মনোযোগ দিলাম।এইবার যে করে হোক পরোটা গোল করেই ছাড়বো।


এই পেত্নী। কি দিয়ে খাবো কিছু নিয়ে আয়?(সমুদ্র)

কি দিয়ে খাবি?আলু ভাজি ডিম নাকি সুজির হালুয়া!(সোনালী)

সুজির হালুয়া কে বানিয়েছে?(সমুদ্র)

ফুল বানিয়েছে কিন্তু দেয়া হয় নি তোকে কালকে।(সোনালী)

আচ্ছা নিয়ে আয়।(সমুদ্র)

আচ্ছা।
বলেই সোনালী ফ্রিজ থেকে হালুয়া এনে সমুদ্রকে দিলো।

হালুয়া খাওয়ার পর
ইস!এতো মিষ্টি কি খাওয়া যায় নাকি?আমি কি মিষ্টি ফ্যাক্টরি চালু করেছি নাকি?এতো মিষ্টি তো মিষ্টি ফ্যাক্টরির মালিকও খায় না(সমুদ্র জোরে জোরে বলে ফুলকে রাগানোর চেষ্টা করছে)

অন্যদিকে আমি কিচেনে
ফুল।be cool,, রাগবি না।(মনে মনে বলছি আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি)

কিন্তু সমুদ্র তো থামার পাত্র না।আজ ও ঠিক করে নিয়েছে ফুলকে খেপাবে।তো খেপাবেই!

মা কি শিখেছো ওকে?ভালো হয়েছে ওর বিয়ে আমার সাথে হয়েছে অন্য কারো সাথে হলে আগের দিন নিয়ে যেত পরের দিন পরোটার সাইজ দেখে দিয়ে যেতো!ভাগ্য ভালো ফুল তোর আমার মত ধৈ্য্যশীলদের স্বামী পেয়েছিস(সমুদ্র চিৎকার দিয়ে)

আহা সমুদ্র অনেক হয়েছে।সকাল সকাল কেনো মেয়েটাকে জ্বালাছিস। ও যথেষ্ট চেষ্টা করছে।(আয়শা)

আমি পরোটা গোল করার চেষ্টা করছি আর ঠোঁট ফুলিয়ে কাদছি
থ্যাঙ্ক ইউ মা আমার সাইড নেয়ার জন্য!আল্লাহ শাশুড়ি রূপে আমাকে মা দিয়েছে কিন্তু কে জানতো স্বামী রূপে শাশুড়ি দেবে!কি কপাল?আর এই পরোটার কি হয়! আমার কাছে আসলেই ওর মানচিত্র হতে হবে। দূর ভাল্লাগে না।


চলবে,,,
অনেকেই বলেন ভিলেন ছাড়া কি কোনো গল্প লেখা যায় না?

তৃতীয় ব্যাক্তি কি গল্পে রাখতেই হয়?

এই দুটো কথা মাথায় রেখে আমার এই গল্প লেখা!এতে না কোনো ভিলেন আছে আর না কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি।শুধু একটা লাভ স্টোরি।কিছু ফ্যামিলি মুহূর্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here