এক_কাপ_চা পর্ব-৪১

এক_কাপ_চা পর্ব-৪১
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(২০১)

সীমাকে পড়ে যেতে দেখে তাজবিদ দ্রুত দৌড়ে এলো।সে কাছাকাছি ছিল কিন্তু তবুও সীমার আঘাত বেশ লেগেছে।কপাল,কনুইয়ের দিকটায় বেশ ছিলে গেছে। সাগরিকা বোকার মতোন দাঁড়িয়ে রইল সিড়ির উপরে। যা হয়েছে নিছক দূর্ঘটনা মাত্র।কিন্তু তাজবিদের মা ভীষণ ক্ষেপে গেলেন।তিনি এসে সাগরিকাকে ধমকে বললেন,

“এমন ব্যবহার তোকে ছোটো থেকে শেখানো হয়েছে?”

“আমি ইচ্ছে করে দেইনি।”

“তবে বাতাসে পড়ে গেল ও?”

“আমার হাতেই ধাক্কা লেগেছে তাই বলে ইচ্ছে করে দিবো এটার মানে কী?আর তুমি একটা কথ বলো তো বড় মা? ইদানীং আমি কেন তোমার চোখে বিষ হচ্ছি?তুমি স্বাভাবিক কথা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছো না কেন?”

“কোনটা স্বাভাবিক কোন টা না তুই শিখাবি?”

“আমারটা আমি বলবোই।”

“আমি তোর আগে দুনিয়াতে এসেছি,এই বাড়িতেও আগে এসেছি।তুই আমাকে ভুল বলছিস?”

“তা নয় তো কী?তোমাকে কে অধিকার দিয়েছে আমার এবং আমার স্বামীর মাঝে কথা বলার?কিন্তু তুমি তো বলেছো।আমি।তার সাথে যা ইচ্ছা করবো। এটা আমাদের ব্যক্তিগত না?”

“তোর স্বামী আমার ছেলে।”

“কেমন ছেলে? সিজনাল? তাই মনে হচ্ছে। যখন ইচ্ছে আমার ছেলে আর যখন ইচ্ছে তাজবিদ আমার একমাত্র ছেলে?”

“তুই বড্ড বেশি কথা বলিস।”

“আমি বেশিই বলি আর বলবো।তোমাদের সমস্যা হলে তোমরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও। আমাকে কেন এসব বলছো?আমার বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো।যা ইচ্ছে করবো।”

সাগরিকা এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে রুমে ফিরে আসে। সকালের রোদে পুরো ঘর টইটম্বুর। ফ্লোরে পড়ে থাকা তার একটা নুপুর তুলল সে। তুলল না তোলার বাহানায় ফ্লোরে বসে রইল।এত ক্ষণ নিচের ঝামেলার খবর কিছুই জানে না।তাশদীদ ফ্রেশ হয়ে সাগরিকাকে বলল,

“চা করে দে তো।বড্ড মাথা ধরেছে।”

নিজের হাজার মন খারাপ হলেও সাগরিকা ঢোক গিলে সব হজম করে ফেলল।এরপর তাশদীদের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপনি কী জানেন? অনেকে বলে চা গরীব মানুষ খায়?আর কফি খায় ধনী লোকেরা।”

“তোকে এসব ফালতু কথা কে বলেছে?”

“ফেসবুক।”

“চালানো বাদ দে। আর যা চা করে নিয়ে আয় বাপ আমার মাথায় ব্যথা করছে।”

তাশদীদের কথাতে সাগরিকার নিজের কন্ঠ গম্ভীর করে বলল,

“আমি আপনার বাপ না।কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল।”

“বল।”

“চা যদি গরীবের খাবার হয়, কফি ধনীদের হলে গ্রীণটি কী বিল গেটসদের লেভেলের খাবার?”

সাগরিকার প্রশ্নে তাশদীদ চায়ের আশা ছেড়ে দিলো।ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করে সে নিজের কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করছিল।কিন্তু সাগরিকা এগিয়ে এসে বলল,

“আপনি কোন কাতারে পড়লেন?আপনার তো সব চাই। এতো ভীষণ চিন্তার বিষয়।”

সাগরিকার হাত থেকে তাশদীদ ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,

“আজ থেকে ফেসবুক বন্ধ।আর যা না তোর ঘন্টু সোনাকে জিজ্ঞেস কর।আমার মাথা কেন খাচ্ছিস?”

সাগরিকা মাথা নিচু করে মিনমিনে স্বরে বলল,

“তাকেই তো বললাম।”

(২০২)

দুপুরে খাবার টেবিলে বসতেই সবার কাছে নালিশ করলো তাজবিদের মা।গো ধরে বসে রইলেন ভদ্রমহিলা। সে কিছুতেই খাবার খাবে না। তাশদীদ অনুনয় করলেও সে প্লেটে খাবার তুলে নিলেন না। সাগরিকা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে তার বাবা শুধু দুটো ধমক দিয়েছে বড় দের সাথে বেয়াদবি করার জন্য।
তাশদীদ সীমার কথা জিজ্ঞেস করল।তাজবিদ জানালো এখন ঠিক আছে।খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।

একটা সময় থাকে যখন সন্তান না খেয়ে থাকলে মা খাবার খাইয়ে সন্তানের রাগ ভাঙায়।যে অবধি সন্তান না খায় তার গলা দিয়ে খাবার নামে না।জীবনের আরো একটা সময় হচ্ছে যখন মা রাগ করে তখন সন্তান তার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে।
তাশদীদ নিজের পাশে মা কে বসিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও সে খেলো না।অথচ কিছু সময় পর তাজবিদ এসে তার পাশে বসে প্লেটে ভাত বেড়ে দিতেই ভদ্রমহিলা খাওয়া শুরু করলো।সে যেন আরো একটা বার চোখে আংগুল দিয়ে উদাহরণ দিচ্ছিলো তাশদীদ তার ছেলে নয়। শুধু দায়িত্ব আর দায়িত্ব অবধিই সীমাবদ্ধ। প্লেটের খাবার স্পর্শ না করেই জরুরী ফোন কলের বাহানায় বেরিয়ে গেল তাশদীদ। সাগরিকা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো তার মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে।

সাগরিকা এমনটা দেখে তার বাবাকে বলল,

“আমরা আলাদা থাকতে চাই বাবা।তোমরা কী আমাদের সাথে থাকবে?”

“আলাদা থাকতে চাই মানে?”

“এক টেবিলে বসে আর খেতে মন চাইছে না।হাড়ি আলাদা হোক।নইলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”

তাশদীদের বাবা এত সময় চুপ ছিলেন, এবার তিনি সাগরিকাকে ধমকে উঠে বললেন,

“বেশি বুঝিস। তুই বড্ড বেশি বুঝিস।”

“আমি আমার স্বামীর ভালোটা চাইছি আপনি দেখেন না?আপনার স্ত্রী প্রতিনিয়ত উদাহরণ দিচ্ছে সে তাশদীদের মা নয়। আর তাশদীদ?তার মনের খবর আপনারা কেউ রাখেন? এই যে সে গত কাল থেকে না কষ্ট পাচ্ছে আপনাদের অনুভব হয় না?”

“তাশদীদ সহজে ভেঙ্গে পড়ে না।”

“সেও মানুষ বাবা, রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। তার ক্লান্তি আছে, রোগ আছে,শোক আছে যেমনটা আমাদের আছে। অথচ……….

(২০৩)

রুমে ফিরে সাগরিকা তাড়া দিলো বাইরে যাবে বলে।তাশদীদ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। বেরিয়ে যাবার সময় তারা বড় মায়ের মুখোমুখি হলেও তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।সীমার জন্য বাদাম দুধ নিয়ে যাচ্ছিলেন।সাগরিকা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। একজন মানুষ কীভাবে বদলে যেতে পারে?
সাগরিকার হঠাৎ মনে হলো তাদের মধ্যে বৌ-শাশুড়ির যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাশদীদের বাম হাত আঁকড়ে ধরলো।
তাশদীদ তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু-কুঁচকে বলল,

” কোথায় যাচ্ছি বল তো?”

“ওই যে বিষে বিষ কাটে না?আমরা যাচ্ছি পৃথিবীর সব থেকে বিষধর জিহ্বা ওয়ালা মানুষকে ফিরিয়ে আনতে।”

“কী সব বলছিস।”

“দাদীকে আজ ছুটি দিচ্ছে।জুলি আন্টি আর দাদীকে বাসায় আনতে যাচ্ছি।কারণ শাশুড়িকে তার শাশুড়িই শায়েস্তা করতে পারবে।চলেন চলেন বুড়িরে আল্লাহ্ নেক হায়াত দান করুক।”

অথচ সাগরিকা জানেও না অল্প কিছু সময়ের মাঝে তাদের জীবনের সাথে ঘটতে চলেছে একটা মর্মান্তিক ঘটনা।বদলে দিবে সকলের জীবন।তাশদীদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতেই বাড়ির কেয়ারটেকার জুলিকে কল দিয়ে বলল,

“তারা বেরিয়েছে এবং কথা মতোন গাড়ির ফুয়েল পাম্পেও ফোঁটা করা হয়েছে।”

#চলবে (আজ একটু ছোটো হলো।শরীর ভালো লাগছে না।আপনারা কী জানেন? আমার নতুন বই আসতে চলেছে?)

#ছবিয়ালঃপারত্রিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here