এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা ২৬.

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৬.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই কে দেখে রিতীমতো ভড়কে গেলাম আমি।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি রিয়া,তোহা আপু আর মেহু কেউ নেই।কোথায় ওরা?এক সাথেই তো নাচ গান করছিলাম।আমাকে এই রাক্ষস মানব এর সামনে রেখে কোথায় বেপাত্তা হয়ে গেলো ডায়নির দল।নিশ্চয়ই আগে থেকে ওরা বিহান ভাই কে দেখে পালিয়েছে।

বিহান ভাই এর পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখি,, কালো জিন্স পরা,কফি কালার এর শার্ট বরাবর যেমন থাকে উনার শার্টের হাতা গোটানো।উনার পায়ের নখ গুলো এত সুন্দর, ধবধবে সাদা, হাতের নখ গুলো ও যেনো বিধাতা নিজ হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে উনাকে তৈরি করেছেন।উনার এই বিক্ষিপ্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে দেখা দেখে মারাত্মক লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।চোখ বড় বড় করে আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কোথাও কিছু নেই।না মানে আমার ওড়না খুজছিলাম।সেটা কোথায় রেখেছি তাই ই জানিনা আমি।বাসার মধ্য খুব একটা ওড়নার খোজ খবর রাখা হয় না আমার।তবে বাইরে গেলে ভদ্র ভাবে শিষ্টতার সাথেই যায়।এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও ওড়না খুজে পেলাম না আমি।ভাইয়ার রুম দ্রুত গিয়ে ভাইয়ার টাওয়াল আলনা থেকে নিয়ে কোনো রকম গায়ে পেচিয়ে বললাম,কি ব্যাপার কি বিহান ভাই?এভাবে হুট হাট মেয়েদের রুমে প্রবেশ করেন একটা কাশি দিয়ে আসবেন না।

“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বলেন,এটা কি মহিলাদের রুম।আমি তো জানি এটা শুভর রুম।এখানে আসতে গেলেও কাশি দিয়ে আসতে হবে।আর কাশি দিয়ে আসবো কেনো?চৌদ্দ গুষ্টির মতো ধান্দাবাজ হয়েছিস তাইনা?”

ব্যাস এই যে আবার শুরু হয়েছে তার গুষ্টিসহ উদ্ধার করা।

“কেনো বিহান ভাই ধান্দবাজির কি হলো।”

“আমাকে কাশি দিতে বলছিস যাতে সবাই কে বলতে পারিস আমি যক্ষা রুগি।তোর চাচাতো বোন মালিহা সহজ সরল ছেলেটা আমির এর সাথে যে ধান্দাবাজি টাই না করলো তোদের নামে তো মামলা দেওয়া উচিত। ”

এমন সময় সুর সুর করতে করতে মেহু,তোহা আপু আর রিয়ার আগমন ঘটলো।আমি ওদের দিকে ক্ষীপ্ত নয়নে তাকিয়ে বললাম,তোমরা কোথায় গিয়েছিলে।

“তোহা আপু বললো,ওয়াশ রুম ওয়াশ রুম গেছিলাম।”

“তিন জনে এক সাথে।”

“মেহু আপু বললো,হ্যাঁ এক সাথেই?”

রাগে আর ওদের কিছু বললাম না।মনে মনে বললাম পরে দেখে নিবো।

বিহান ভাই কে আবার প্রশ্ন করলাম,’বিহান ভাই কিসের মামলা দেওয়া উচিত শুনি।’

‘তোর বোন মালিহা তো বিশ্ব সেলিব্রিটিদের মাঝে একজন।সব খবর ই আমার কানে পৌছায়।আমির কে ভোলাভালা পেয়ে নিজে প্রপোজ দিয়ে রিলেশন করেছে।আর তোরা গুষ্টি সহ রেগুলার রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়েছিস।বংশেও খান খাওয়া ছাড়া কিছুই বুঝিস না।শুধু মাত্র খাওয়ার জন্য সাদাসিধা ছেলেদের সাথে ভোলায়ে ভালায়ে প্রেম করিস।ব্রেকাপের সময়ে মালিহা বলেছে আমির নাকি মৃগে রুগি।সিরিয়াসলি এটা কোনো কারণ হলো ব্রেকাপের।’

‘এর জন্য আপনি মামলা দিতে বলবেন?’

‘অবশ্যই তুই এখন ধন্দাবাজি করছিস আমাকে কাশি দিতে বলে।ব্রেকাপের বাহানা যক্ষা রুগি প্রমান করে তাইনা ধান্দাবাজ ভয়ংকর মহিলা।’

‘আপনি যেভাবে আমাকে ভয়ংকর ভয়ংকর করছেন মনে হচ্ছে আমার মুখ দেখতে পেত্নিদের মতো।’

‘যাক ফাইনালি একটা সত্য কথা বললি।’

মেহু আপু বললো,’ইয়ে বিহান ভাই দিয়া কি আপনার গফ যে যক্ষা রুগি প্রমান করে ব্রকাপ করবে।’

‘ওই মানে একই কথা আমার শ্বশুরের মেয়ের কথা বলছি আরকি?দেখা গেলো এই ধান্দাবাজি শ্বশুরের মেয়ে ও করলো।’

‘করলে কি করবেন তখন?’

‘দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে,এক পায়ে চার দিন দাঁড়িয়ে রেখে তারপর বিয়ে করবো।বিয়ে করে রোজ পা টেপাবো।’

‘বাহ বিহান ভাই এমন একটা জামাই দিয়ার জন্য খুজেন।দিয়া খুব ভাল পা টিপতে পারে।’

হেসে দিয়ে বললাম,’বিহান ভাই তোহা আপু আপনার পা টিপতে রাজি আছে।আপনি বরং তোহা আপুকেই দায়িত্ব টা দিন।’

‘ছিঃতোহা আমার সিনিয়র হয় হিসাব মেলাতে গেলে।তোহা কে আমার সম্মান করা উচিত।”

উনার কথার এই কঠিন মানে এরা তো কেউ বুঝবেই না।যা বুঝার আমি একাই বুঝছি।বিহান ভাই কে বললাম,সুর সুর করতে করতে রুমে প্রবেশ করেছেন কিছু দেখেন নি তো।

“বিহান ভাই মেহু আপু আর রিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন।উনার মনে হয় মারাত্মক প্রেজটিজে লেগেছে ব্যাপার টা।”

“দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,আমাকে কি চরিত্রহীন ভাবিস।বেয়াদব মহিলা একটা।”

এর ই মাঝে রিয়া বললো,”বিহান ভাই আপনার পায়ে কার স্যান্ডেল।”

তাকিয়ে দেখি আমার অন লাইন থেকে অর্ডার করা শখের স্যান্ডেল উনার পায়ে।ক্ষিপ্ত হয়ে বললাম,”আপনি আমার ঘরে পরা স্যান্ডেল পরেছেন।”

“কি করবো দেখে ভাল লাগলো,স্যান্ডেলে পুতুল টুতুল দেওয়া বাচ্চাদের খেলনা ভেবে পায়ে পরেছি।”

“খুলুন বলছি এক্ষুণি খুলুন।আমার পায়ে বড় হয়ে যাবে।”

“কেনো?এটা আয়রার খেলনা না।”

“খুলুন আগে।”

এটা তো খুলবোই না, ‘তোরা আসলে কি করছিলি? এই রুমে।’

‘পার্টি। ফিউচারে উনার সাথে এইভাবে ডান্স করতে চাই।তার ই প্রাকটিস চলছে’

“বাহ!নাইস তো।তা জিন্স পরে।এইজন্য প্যান্টের দাম এত বেড়েছে।প্যান্টের দাম তো এত হওয়ার কথা নয়।তোরা মেয়েরা জিন্স কিনে কিনে জিন্সের দাম বাড়াইয়া ফেলছিস।পায়ে কালো সুতা গায়ে টি শার্ট।এখন জিন্স পরতেই লজ্জা লাগে মেয়েদের জন্য।”

“দেখুন এগুলা লেডিস জিন্স,টি-শার্ট ও লেডিস।সো এগুলা মেয়েদের ড্রেস।”

“পুরুষ জাতীয় প্লাজু,গাউন,লেগিন্স এগুলা তো আজ ও দেখলাম নাহ।সব জায়গা নারীরা সুবিধা পাচ্ছে বেশী করে।”

ভাইয়ার ড্রেসিন টেবিলের উপরে রাখা ডায়রির মাঝে একটা চিঠি খুজে পেলো বিহান ভাই।

প্রিয় শুভ ভাইয়া,
জান,পরাণ,বাবু,বেবি টা চিঠিটা পড়া শুনেই বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে পড়লাম আমরা।বিহান ভাই এতটুকু পড়েই থেমে গিয়ে বললেন,হাতের লেখা টা চেনা চেনা লাগছে। মেহু দেখো তো চিনো কিনা?রিয়া বললো দেখি বিহান ভাই কে চিঠি লিখেছে বাকিটা পড়ি।মেহু আপু রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,শুভ ভাইয়ের চিঠি আমাদের না দেখায় ঠিক হবে তাইনা বিহান ভাই।বিহান ভাই মেহু আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,শুভ কে দেখি প্রায় কার ছাতার নিচ দিয়ে যেনো যায়।প্রুভ আছে আমার কাছে।মেহু আপু বললো,বিহান ভাই শুভ ভাই কি তাহলে অশুভ হয়ে গিয়েছে।আজকাল এগুলা করছে।বিহান ভাই খুব ই সন্দিহান ভাবে বললো,আসলেই মেহু তুমি তো এগুলা জানো না তাইনা?..তোহা আপু আড়মোড়া ভেঙে বললো একজন ডাক্তারের সাথে প্রেম করার ইচ্ছা আজ ও পূরণ হলো না আমার।এদিকে সবাই প্রেম করে আমি শুধু দেখি।বিহান ভাই তোহা আপুকে বললেন,টিকটক থেকে একজন নায়ক কে খুজে নাও তোহা।ডাক্তার এর থেকে ওরাই বেটার হবে টিকটক করতে করতে পাগল হয়ে গেলে তখন ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট নিও।তোহা আপুর মুখ টা চুপসে গেলো কারণ তার ক্রাশ বয় বিহান ভাই।

বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,আমার যে গেঞ্জি গুলা পুড়িয়ে ফেলছিস ওগুলার টাকা দিবি কবে।হয় টাকা দিবি নইলে দশ মিনিট পা টিপে দিবি।

ওহ মাই গড!উনি গেঞ্জির সেই পোড়া গুলা কখন দেখলেন।বিরক্ত হয়ে বললাম আপনি এখন যান পা একদিন টিপে দিবো।

বিহান ভাই যাওয়ার সময় একটা মেসেজ করলেন।ফোনে মেসেজের সাইন্ড হতেই ফোনের দিকে দেখি উনার মেসেজ,,

Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii RaaTh

Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii.

পিচ্চি তোমার সাথে একদিন এভাবেই সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটাতে চাই।তোমার এই লুকে তোমাকে এতটাই সুন্দর লাগতে হলো কেনো?আমি জাস্ট চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।এইজন্য ইনিয়ে বিনিয়ে তোমাকে দেখার বাহানায় কত কথা বললাম দেখলে।এই আমি এখানে মন তোমার ওখানে।কেউ জিন্স পরলেও এত সুন্দর লাগে বুঝি।আমাকে সর্বনাশের দিকে নেওয়ার বাহানা সব তাইনা।

মেসেজ টা পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে উনার কথায় ভাবতে শুরু করলাম আমি।

_________________________

পরের দিন আমাদের শহর থেকে দূরে একটু গ্রাম্য এলাকায় বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছি আমরা। কাজিন রা সবাই মিলে একটা টেবিলে বসেছি গোল হয়ে।খাবার সার্ফ করার সময় একটা ছেলে বার বার আমার সাথেই ভাব নিচ্ছিলো।ব্যাপার টা বিহান ভাই এর ভাল লাগছিলো না।ইচ্ছাকৃত অনেক মাংশ দিচ্ছিলো আমার প্লেটে।বিহান ভাই বিভোর ভাই তিয়াস ভাই শুভ মিলে কি প্লান করলো তা জানিনা।হুট করেই প্রচুর খাওয়া শুরু করলো তারা।এত পরিমান খাচ্ছিলো দিয়েই পারছিলো না।বিহান ভাই এক পিস মাংশের বেশী খায় না।সেখানে এত খাচ্ছেন।খেতে খেতে এক সময় সার্ফ করা ছেলেটি ক্লান্ত।মানুষ এত খায় কেমনে।জীবনে কি এদের আর দাওয়াত দিবে।

হাত ধোয়ার জন্য টিউবয়েল এ গেলাম।ভীড় দেখে অন্য রাস্তা দেখলাম।পাশেই একটা পুকুর দেখে পুকুরে হাত ধুতে গেলাম
হাত ধুতে গেলেই পানিতে পড়ে গেলাম।

বিহান ভাই আমার দিকে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন।এর মানে তুই পুকুরে এসছিস কেনো?চারদিকের মানুষ কি বিশ্রি ভাবে তাকিয়ে হাসছিলো।ইজ্জত যা ছিলো সব শেষ।

চলবে,,

(বাকিটা কাল দিবো গাইস।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here