এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা ৩১.

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩১.
#WriterঃMousumi_Akter

মানুষের জীবনে সমস্যা কখনো বলে আসে না আজ নিজের জীবন দিয়ে সেটা বুঝতে পারছি।কখনো ভাবতেই পারি নি আমার জীবনে এমন বাজে কোনো সিসুয়েশন আসবে।বিভোর ভাই কে সবাই বাজে ভাবে কথা শুনিয়ে চলেছে।বিভোর ভাই কিছুতেই আমার সাথে বিয়ে কল্পনাও করতে পারেন না।আমাকে নিজের মায়ের পেটের বোনের বিকল্প কিছুই ভাবেন না উনি।বিভোর ভাই ফোন হাতে নিতেই ফোন টা কেড়ে নিলেন একজন ভদ্রলোক।আস্তে আস্তে লোকজনে ভরপুর হয়ে গেলো।চারদিকে অনেক গুলা মানুষ আমাদের জড়করে রেখেছে।তাদের ধারণা আমরা প্রেমিকা প্রেমিকা।বিভোর ভাই সোজা বলে দিলেন, তাকে মেরে ফেললেও সে বিয়ে করতে রাজি নাহ।

একজন ভদ্রলোক বললেন বিয়ে করবা না ফুফাতো বোন নিয়ে ফ্রিতে ঘুরতে এসেছো তাইনা।এসব বোন টোন সবাই বলে আসল বেলা অন্য কিছু পাওয়া যায় খুজতে গেলে।আমাদের এই বোন টোন বুঝাতে এসো না বুঝলে।

চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে আমার।বিভোর ভাই উনাদের বললেন আমাদের বাসায় ফোন দিন প্রয়োজনে।আমাদের গারজিয়ান কে জানান যা করার তারা করবে আমাদের ছেড়ে দিন।একজন মহিলা বলে উঠলেন, তোমাদের বাসায় জানালে কি হবে তাদের যা বুঝাবা তাই ই বুঝবে।তারা তো আর জানেনা এখানে কি করছো তোমরা।

এমন সময় টুপি মাথায় হাতে খাতা পত্র দাঁড়িওয়ালা একজন কে দেখলাম।উনাকে দেখে মাথা ফাঁকা হয়ে এলো আমার।মানে ইনি কাজি সাহেব।সত্যি সত্যি কি আমার জীবনে এত বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে এখন।কি এমন পাপ করেছিলাম আমি।কি ভুল করেছিলাম যার জন্য এত বড় শাস্তি পাবো আমি।এখন ই বিয়ে পড়ানো হবে আমাদের।

বিভোর ভাই এর সাথে ঝামেলা চলছে এখান কার মানুষ জনের।বিভোর ভাই এর গায়ে ও হাত তুলেছে কয়েকজনে।অচেনা জায়গা নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করেও লাভ নেই।হিতে বিপরিত ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।

আকাশ পানে তাকিয়ে চোখ দিয়ে দু’ফোটা হৃদয় ফাটা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললাম আল্লাহ তুমি তো জানো আমার মনে কি আছে।প্লিজ বাঁচাও আমাকে এমন বাজে কোনো জীবন আমি চাই না।এমন জীবন আমাকে দিও না।তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না।প্লিজ কাউকে পাঠাও যে আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।

রাস্তার সাইডে অনেক গুলা দিঘী কাটা।দিঘীর পাড় দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট ঘর।হয়তো এসব ঘরে থেকে মাছ পাহারা দেই এখান কার দিঘীর মালিক রা।কোনো উপায় না পেয়ে বিভোর ভাই বললেন আমাদের একটু আলাদা কথা বলতে দিন প্লিজ।আপনাদের সব কথা আমরা মেনে নিচ্ছি জাস্ট এটুকু করেন প্লিজ।তারা ভেবে চিন্তে অনুমতি দিলেন।দিঘীর পাড়ে অবস্হিত একটা ঘরে আমরা প্রবেশ করলাম। ঘরে প্রবেশ করে হাউমাউ করে আমি কেঁদে দিলাম।বিভোর ভাই প্লিজ কিছু করেন।এমন কিছু হলে আমি বাঁচবো না।বিভোর ভাই আমাকে বলেন বোন তুই চিন্তা করিস না।আমরা দুজনেই বাজে একটা জায়গা আটকে গিয়েছি।এখন আমি চাইলেই এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবো বাট তোকে এদের মাঝে কিভাবে রেখে যাবো।এরা তোর সাথে যা কিছু করতে পারে।আমি কেঁদেই যাচ্ছি একভাবে।বিভোর ভাই আমাকে বলেন,কাঁদিস না দিয়া।বিহান কে মেসেজ করেছিলাম আদেও কি মেসেজ টা পেয়েছে জানিনা।বিহান এখানে আসলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।

“এমন কিছু হলে আমি বিহান ভাই এর সামনে মুখ দেখাতে পারবো না বিভোর ভাই।কারণ আমি বিহান ভাই কে ভালবাসি বিভোর ভাই।আমার রক্ত, শিরা, উপশিরায় ছড়িয়ে আছে বিহান ভাই।আমার মন প্রাণ আত্মা জুড়ে উনার বসবাস বিভোর ভাই।আমার জীবনের সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছে বিহান ভাই।ওই হৃদয়হীন নিষ্টুর মানুষ টার মনে আমি ভালবাসার বসন্ত ছড়িয়েছিলাম বিভোর ভাই।”

“বোন তুই এইগুলা কি বলছিস বিহান কে তুই……..”

“হ্যাঁ বিহান ভাই। উনাকেই আমি ভালবাসি। ”

“বিহান এটা জানে দিয়া।”

“সব জানেন। উনিও আমাকে ভালবাসেন বিভোর ভাই।এমন কিছু হলে উনি এটা সহ্য করতে পারবেন না।”

“সত্যি বিহান ও তোকে ভালবাসে দিয়া।ও নিজে মুখে বলেছে তোকে কখনো।”

“আমি কোনো কথা না বলে হুহু করে কেঁদে উঠলাম।”

এমন সময় দুজন লোক এসে আমাদের বললো দ্রুত উঠে এসো।বাকি গল্প বিয়ের পর করো।

এই বিয়ে কথাটা যেনো পৃথিবীর সব থেকে বিশ্রি কথা আমার কাছে।বিয়ে মানে একটা অভিশাপের নাম।বিয়ের থেকে বাজে কোনো অভিশাপ পৃথিবীতে আর কোনো কিছুতে হতে পারে না।মৌলভী বিয়ে পড়াচ্ছেন।বুকের মাঝে অশান্তির তুফানে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে আমার।এক্ষুনি মরে যেতে চাই আমি।এর চেয়ে মৃত্যু ভালো আমার।জীবন টা এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে আমার।চারদিক থেকে সবাই প্রেসার দিচ্ছে কবুল বলার জন্য।বিভোর ভাই চুপ হয়ে নিচু দিকে তাকিয়ে আছেন।নিজের বোন কে কি কেউ কবুল বলতে পারে।উনার কাছে আমি উনার বোন ই।পনেরো বিষ বার বিভোর ভাই কে প্রেসার দেওয়া হয়ে গিয়েছে কবুল বলার জন্য।কিন্তু উনি চুপ হয়েই আছেন।

এমন সময় ভীড়ের পেছন থেকে কেউ একজন কবুল বলে উঠলো।সবার দৃষ্টি পেছনে যেতেই অবাক হয়ে গেলো সবাই।হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এসে অন্যর বিয়ের আসরে কবুল বলছে।চিরচেনা কন্ঠস্বর টা শুনে আমি আর বিভোর ভাই দুজন দুজনের দিকে তাকালাম।এখানে অত লম্বা কোনো ছেলেই নেই।সবার উপর থেকে উনার মাথাটা দেখা যাচ্ছে।উনাকে দেখে যেনো আরো ভীষণ কাঁন্না পেয়ে গেলো।মানুষ ভীড়ের পেছনে উনাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।বিভোর ভাই দ্রুত উঠে গিয়ে বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরলো।বিহান ভাই বিভোর ভাই কে বললেন চিন্তা করিস না আমি আছি তো।

“একজন ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন,,আপনি কে?আর কবুল বললেন যে।”

“আপনারা যাকে বিয়ে দিচ্ছেন আমি তার হাজবেন্ড।”

“কথাটা শুনে সবাই চমকে গেলো।তাহলে উনি কে?বিভোর ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললেন।”

“আমার শালা বাবু উনি?আমার বউ এর মামাতো ভাই।”

“উনি আপনার বউ সত্যি।”

“বউ না হলে কি আরেকজনের বউ কে বউ দাবি করছি। তাই মনে হয় আপনাদের।”

“কেউ একজন বলে উঠলো আপনি উনার হজবেন্ড তার প্রমাণ কি?এমন তো হতে পারে এখনকার পরিস্হিতি দেখে সুযোগ নিতে চাইছেন।আপনি বললেই কি আমরা মেনে নিবো।”

“আপনারা মেনে না নিলেও এটাই সত্যি।রাস্তাঘাটে ছেলে মেয়ে দেখলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এভাবে বিয়ে দিয়ে দেন আপনারা।এগুলা আইনত অন্যায়।”

“আমাদের এলাকায় এসব ভন্ডামি চলে না।আপনার বউ হলে এখানে আরেক বার বিয়ে করুন দেখি আপনি কেমন সত্য বলছেন।বিয়ে না করলে তিনজন কেই ভিডিও করো এসব ভন্ডামি হতে দিবো না।”

“আমার কাছে এসে আস্তে করে বললেন আমাকে বিয়ে করতে কি আপত্তি আছে।”

“আমি হালকা হেসে সম্মতি জানালাম।”

“বিহান ভাই কাজিসাহেব কে বললেন বিয়ে পড়ান। কাজি সাহেব আমাদের বিয়েটা পড়িয়ে দিলেন।”

হুট করেই এলোমেলো দিকে এগোচ্ছিলো জীবন টা।আর সেখান থেকেই বিহান ভাই এসে আটকে দিলেন।এইভাবে আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি।এইভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতেও পারলাম না।কিছুক্ষণ আগেও অবিবাহিত ছিলাম আমি আর এখন বিবাহিত।ভাবতেই কেমন একটা লাগছে।জীবনে সব থেকে যাকে বেশী ভালবেসেছি আজ আমি তার ই বউ।একজন মহিলা এখানকার দিঘীতেই থাকেন উনার ফ্যামিলি নিয়ে।আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন,এই যে নতুন বউ এদিকে এসো যতই আগে বিয়ে থাকুক আজ আবার ও বিয়ে হয়েছে তোমাদের তাই আজ আবার ও ফুলসজ্জা হবে।বার বার ফুলসজ্জার সুযোগ কজনে পায় শুনি।ফুলসজ্জা কথাটা শুনেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।

“ক্রামশ মানুষ জন কমে গেলো।এই দিঘীর পাড়ে বসে আছি আমরা তিনজন।কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে যে কথা বলেছিলো উনার নাম রমলা। নিজের স্বামিকে ছেড়ে নাকি এখানে পালিয়ে এসছেন অন্য একজন পুরুষের সাথে।এই দিঘী লিজ নিয়ে এখানে মাছ চাষ করে খাচ্ছেন উনারা।”

“বিভোর ভাই বললেন বিহান তুই কিভাবে এলি এখানে।”

“তোর মেসেজ টা দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গেছিলো আমার।আমি যে কি দ্রুত বাইক চালিয়েছি আলাহ জানেন।আমি বাইকে থাকলেও মন এখানে ছিলো।আমার মনে হচ্ছিলো তোদের কোনো ক্ষতি না হয়।”

“এখন কি করবি বিহান।বিয়ের কথা কি সবাই কে জানাবি।”

“এভাবে জানালে আমাদের নিয়ে বাজে কিছু ভাবতে পারে।দিয়ার বাবা ফুপ্পিকে প্রেসার দিতে পারে।ফুপ্পির কোনো অসম্মান হোক সেটা চাই না আমি।১৫ দিন পরেই আমার এক্সাম শুরু এর পর ছয় মাসের ইনটার্ণ করেই সবাই কে জানাবো।দিয়া ও ইন্টার পাশ করুক।এডমিশন নিয়ে নিক আগে তারপর।”

“বিহান অতপরঃবিয়ে উপলক্ষে ট্রিট চাই আমার।”

তোকে আর তোর বোন টা উদ্ধার করেছি আমি।তাই ট্রিট আমার চাই।

রমেলা আন্টিকে বিদায় দিয়ে আমরা চলে আসার কথা ভাবতেই প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়া শুরু হলো।ধুলাবালি চোখে মুখে ভরে গেলো।গাছের ডল ভেঙে পড়ছে।এক্ষুণি ঝড় শুরু হবে। এইভাবে বেরোনো ও সম্ভব নয়।রমেলা আন্টি আমাকে বললেন এইযে নতুন বউ এই ঘর টায় তোমরা থাকো।কুপি ধরিয়ে রেখেছি আমি।বিভোর ভাই কে বললেন আমার সাথে এসো তুমি।ওরা সময় কাটাতে লাগুক।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here