এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা ৪৪.(এক্সট্রা পার্ট)

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪৪.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

জোসনা মাখা চাঁদ সেদিন ও সাক্ষি ছিলো আমাদের ভালবাসার আজ ও সাক্ষী আমাদের ভালবাসার।এইজন্যই বুঝি চাঁদের সাথে আমার এত ভাব।এই সেই দিনটা যেদিন সবার আড়ালে বিহান ভাই এর সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো।এই দিন টা আমার জীবনের সব থেকে দামি একটা দিন।এই দিন টা না এলে বিহান ভাই ভালবাসার পূর্ণতা অনুভব করতে পারতাম নাহ।কেটে গেছে বেশ কিছুক্ষণ সময়।বিহান ভাই কে বললাম আপনার মনে ছিলো আজকের দিনের কথা।

“উনি চোখের পানি হাত দিয়ে মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন আমাকে কি মনে হয় আপনার মিসেস বিহান।আমার ব্রেইন কি এতটায় খারাপ।যেদিনে কাগজে কলমে সাক্ষর করে আমি তোমার হয়েছি সেইদিন টা ভুলে গিয়েছি।এই দিন এসছিলো বলে আমার জীবনে এত সফলতা।টেনশন ফ্রি লাইফ লিড করছি।”

“আর আমি ভেবেছি আমাকেই মনে নেই।আর এই দিন টার কথা।”

“একজন হার্টের ডাক্তার মানুষের হার্ট নিয়ে গবেষণা করে তাই বলে কি তাদের হার্ট থাকে না।এই হার্টের ডাক্তারের হার্ট এর দখল অনেক আগে থেকেই অন্য কেউ নিয়ে বসে আছে তাইতো বোঝে না সে বোঝে না।”

“আবার ও গাল ফুলিয়ে রইলাম আমি।”

“বিহান ভাই আমার দুই গালে হাত দিয়ে বললেন পিচ্চি বিয়ে করলে কত মুশকিল।শুধু ভুল বোঝে কথায় কথায় রাগ করে।”

“তা এইবার একটা বুড়ি দেখে বিয়ে করুন।প্রেয়সী আছে না ওই বুড়ি মহিলাকে বিয়ে করুন।আপনার স্টাটাস আর ওর স্টাটাস তো সেইম।দুজনেই নাম করা ডাক্তার।আমার মতো সাধারণ ছাত্রী তো আর আপনার পাশে মানায় না।উনার সাথে আপনাকে ভালোই মানায়।”

“আহ জেলাসি।যাক সিওর হলাম আমার প্রতি ভালবাসা টা আছে।”

উনি আমার হাত ধরে কাশফুলের মাঝে বসিয়ে দিলেন আমার কোলে মাথা রেখে মাঠের মাঝেই সুয়ে পড়লেন।আমার হাত দুটো ধরে উনার মাথায় দিয়ে বললেন একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।তোমার এই নরম হাতের ম্যাসাজ পেলে ক্লান্তি দূর হবে।

“আমি অবাক হয়ে বললাম বিহান ভাই আপনি এইখানে এইভাবে সুয়ে পড়লেন ভাবা যায় ব্যাপার টা।”

“বিহান এখন সব পারে বিহান বউ এর জন্য কাশবনে ও আসতে পারে।এই বিহান কে প্রেমের অস্ত্রোপচার করেছে শ্বশুরের একমাত্র মেয়ে।”

“আসলেই অবাক হচ্ছি এতটা চেঞ্জ।”

“জ্বী ম্যাডাম। এখন বলোতো দিয়া তোমার মনে এই বাজে আর জঘন্য চিন্তা ভাবনা টা কে ঢুকিয়েছে তুমি ডাক্তার না হলে আমার পাশে বেমানান।বিহানের পাশে একমাত্র দিয়াকেই মানায়।দিয়া যে পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেনো?বিহান ভালবেসেছিলো সেই মেয়েকে যে পিচ্চি মেয়েটা ছোট বেলা বিহানের সামনে এসে বলতো বিহান ভাইয়া আপনি না অনেক সুন্দর আপনাকে অনেক ভাল লাগে আমার কাছে।আমি না বর বউ খেলছি কিন্তু বর পাচ্ছি না আপনি আমার বর হবেন।যদিও তখন আমিও ছোট প্রেম ভালবাসা বুঝতাম না।ওই বউ বউ খেলার বয়সে দিয়া আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিলো।দিয়াটা বেশ গুলুমুলু আর মায়াবী ছিলো ছোট বেলা থেকেই।সারাক্ষাণ নূপূর পায়ে দিয়ে পায়ে আলতা পরে নেচে বেড়াতো।খুব হাসতো হেসে গড়াগড়ি যেতো যেকোনো কারণে।এসে আমাকে বলতো বিহান ভাইয়া আমাকে একটু কোলে নিন হেঁটে পায়ে ব্যাথা করছে।সেই পিচ্চি বয়সে বলতো আমার মাথায় পেইন করছে বই পড়তে গিয়ে।আমার কোমরে পেইন করছে বই পড়বো না।আমি মেরে মেরে বই পড়াতে বসাতাম।পেত্নির মতো ছোট বেলা থেকে আমার সামনে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে মন কেড়ে নিয়েছে।আমার মনে সেই দিয়ার বসবাস।কোনো ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, কোনো মন্ত্রি, মিনিষ্টার দেখে আমি ভালবাসিনি।দিয়া যেমন তেমন ই পারফেক্ট আমার কাছে।আমি কি ছোট বেলায় জানতাম দিয়া বড় হয়ে দেখতে কেমন হবে ওর হাইট কেমন হবে ও স্টুডেন্ট কেমন হবে এগুলার কিছুই জানতাম না ও যেভাবে বড় হয়েছে সেভাবেই ভাললাগার মাত্রা বেড়েছে।”

“এই যে ও ও করছেন ও টা কে?”

“ও টা আমার একমাত্র বউ মানে তুমি।তুমি আমার ভালবাসা কে অপমান করেছো আর আমাকে ছোট করেছো।এমন তো হতে পারতো আমি ডাক্তার হতে পারলাম না তাহলে কি আমায় ছেড়ে যেতে, আমি জানি যেতে না।কারণ আমি জানি আমার দিয়ে আমায় কতটা ভালবাসে।আয়রা ফোন নিয়ে গেলে আমি তোমার ছটফট করা যন্ত্রণা দেখেছি আমি বুঝেছিলাম এই কাঁন্নার কারণ এক মাত্র আমি।তখন ই ব্যাগ গুছিয়ে চলে এসছি সারারাস্তা চোখ দিয়ে পানি পড়েছে আমার।দিয়া ডাক্তার হলেই যে তুমি পারফেক্ট এটা ভুল ধারণা।একটা রাস্তা বন্ধ তো হাজার টা রাস্তা খোলা।আমার জন্য তোমার ভালো কিছু করতেই হবে এমন টা না দিয়া।তুমি যেমন এভাবেই তোমাকে নিয়ে হ্যাপি আমি।কিন্তু তোমাকে তোমার জন্য সামনে এগোতে হবে।তোমাকে এই পরিচয়ে বাঁচতে হবে না তুমি বিহানের ওয়াইফ আমি চাই তুমি তোমার পরিচয় বাঁচো।আমি যেনো বলতে পারি দিয়া আমার ওয়াইফ।আমি তোমার পরিচয় এ গর্ববোধ করতে চাই।দিয়া এই ডাক্তারি তে চান্স না পাওয়ার জন্য অনেক কেঁদেছো তুমি।তোমার চোখের অনেক পানি ঝরেছে এই চান্স না পাওয়ার জন্য।আমি তোমাকে গাইড করতাম বলে ভেবেছো আমি ডাক্তার ই লাইক করি।না দিয়া আমি চেয়েছি ফুপ্পির স্বপ্ন পূরক হোক তুমি অনেক বড় হও।এর সাথে আমার পাশে তোমাকে মানানো না মানানোর কোনো সম্পর্ক নেই।তুমি আমার মানে শুধু আমার ই।কেনো নিজেকে এতটা সস্তা করবে তুমি আমার সামনে।আমি কেনো পৃথিবীর কারো কাছে সস্তা হবে না তুমি।তোমার মুড টা যদি এমন হতো বিহান ডাক্তার হয়েছে তাতে কি আমি কি কম কিছুতে ও ডাক্তার হয়েছে বলে আমি ওর পাশে বেমানান কিভাবে হলাম।ভালবাসার সাথে মানামানির কি কানেকশন। এই পিচ্চি এর পরেও কি মুখ গোমড়া করে থাকবে।আমি কি বোঝাতে পেরেছি। ”

“আপনি নিজেই তো বলেছেন আপনি আপনার থেকে বড় ডাক্তার বিয়ে করবেন।”

“ঠিক ই বলেছি কারণ দিয়া একদিন ডাক্তার হবে।আমি নিজ হাতে দিয়াকে মেডিকেল এ ভর্তি করাবো।আমি জানি দিয়ার মাঝে ট্যালেন্ট আছে।মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে দিয়া।ব্রেইন বলে কিছু নেই সব ই চেষ্টা।”

বিহান ভাই আমার দিকে চোখ উলটে তাকিয়ে বললেন মুখ এখনো গোমড়া কেনো।

বিহান ভাই কে আবার ও কেঁদে দিয়ে বললাম সরি বিহান ভাই। আমি ভুল বুঝেছি আপনাকে।আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আপনার ওই প্রেয়সি আমাকে কাল কল দিয়ে বলেছে আপনার আর উনার বিয়ে।আপনার পাশে আমাকে যায় না।আমাকে অনেক অপমান করেছে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।প্রেয়সীর বলা সব কথা খুলে বললাম বিহান ভাইকে।

বিহান ভাই পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন দিলেন প্রেয়সীকে।ফোন টা লাউডে দিলেন।প্রেয়সী ফোনটা রিসিভ করলে বিহান ভাই বললেন তোকে কিছু বলতে হবে না আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোন।তোর মতো বাজে মাইন্ডের মেয়ে দিয়া না তাই তোকে তোর যোগ্য জবাব দিতে পারে নি।মানুষ কুকুর কে কামড় দিলেও কুকুর মানুষ কে কামড় দেয় না।দিয়া ডাক্তারিতে চান্স পাবে প্রেয়সী সেদিন তোকে বাকি জবাব দিবো । আর শোন ভুলেও যেনো আমাকে তোর সাথে জড়িয়ে কিছু বলিসনা আমার একটা সম্মান আছে মাইন্ড ইট।

কল টা কেটে দিয়ে বললেন,ঢাকায় যায় প্রেয়সীর বাকি ব্যাবস্থা করতেছি।উফফ আমার অজান্তে কত কি হয়ে যায় আর আমি কিছুই জানিনা।

বিহান ভাই কে বললাম আমাকে এইখানে কিডন্যাপ করে এনেছেন ক্যানো?কারা ছিলো তারা।

বিহান ভাই হেসে দিয়ে বললেন,রিয়া,মেহু আর বিভোর ছিলো।

আমি অবাক হয়ে গেলাম ওরা এত মুখোশ পরে আমাকে এখনে নিয়ে এসছে আর আমি বুঝতেই পারলাম না।

বিহান ভাই বললেন তুমি না ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলে তোমার সাথে কাশফুল দেখা হলো না।সেদিন ই ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিবো।সারপ্রাইজ টা কিডন্যাপ করে হলে মন্দ কি শ্বশুরের মেয়ে।

আমি জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম উনি কি ম্যাজিক জানেন আমার মন ভাল করার।বিহান ভাই এবার সোয়া থেকে উঠলেন আর আমাকেও উঠালেন।পকেট থেকে কিছু একটা বের করলেন চিক চিক করছে সাদা পাথরের কিছু একটা।আমার নাকে একটা চুমু দিয়ে উনার হাতে থাকা সাদা পাথরের নাকফুল টা পরিয়ে দিলেন।আমি জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম।উনি আমার জন্য ভেবে কিনেছেন।নাকফুল টা পরিয়ে দিয়ে বললেন এবার বউ বউ লাগছে।

এই স্নিগ্ধ চাঁদের আলোতে উনার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি সাদা কাশবনে।আচ্ছা এই উনি টা এত সুন্দর হতে গেলো ক্যানো?আর এতটা ম্যাজিশিয়ান ক্যানো?

বিহান ভাই কয়েক টা কাশফুল ছিড়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন আমার সামনে।ফুল গুলো আমার সামনে ধরে বললেন দিয়া আরো কয়েক টা যুগ এমন ভালবাসা নিয়েই এই দিন টা তোমার সাথে কাটাতে চাই।তোমাকে আমি ভালবাসি শ্যামাপাখি।আমাকে কি এইভাবেই আগলে রাখবে সারাজীবন।ফুল গুলো উনার হাত থেকে নিয়ে উনার কপালে একটা চুমু দিলাম আমি।প্রকৃতি মৃদু হাওয়া দিচ্ছিলো মাঝে মাঝে দুই একটা পাখির কিচির মিচির আর চাঁদ ও হেসে বললো হ্যাপি এনিভার্সারী বিহান দিয়া।

চলবে,,

(লেখার ইচ্ছা ছিলো আরো বাট হাত ব্যাথা লাগে)

1 COMMENT

  1. এটা কেমন প্রবাদ ‘মানুষ কুকুরকে কামড় দিলেও কুকুর 🐶 মানুষকে কামড় দেই না 🤔🤔🤣🤣 এই প্রথম শুনলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here