এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️পর্ব-২৮

এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️পর্ব-২৮
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️

সূর্য উঠে যাচ্ছে প্রায়।একটু আধটু আলোকিত হয়ে আসছে চারিপাশ।ফোন বের করে সময় দেখলো তিহান।সকাল ছয়টা।ফোনটা পুনরায় পকেটে ঢুকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।রাস্তা নির্জন।লোক সমাগম এখনো শুরু হয়নি।এখান থেকে আরো একঘন্টার পথ অতিক্রম করলেই তাদের নানুর বাড়ি।সাইফ বেচারা সারারাত ড্রাইভ করেছে এখন তাকে আবারো ডেকে গাড়ি চালাতে বলাটা একেবারেই বেমানান।ছোট্ট করে একটা হাঁফ ছাড়লো তিহান।হাতের মুঠোয় থাকা ওড়নার অংশবিশেষ তোহার গায়ে ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে একহাত বারিয়ে সাইফের কাঁধে মৃদুভাবে ধাক্কা দিলো সে।প্রথমবার সাড়াশব্দ না করলেও দ্বিতীয়বারেরই চোখ মেলে তাকালো সাইফ।আচ্ছন্নের মতো লাল লাল চোখগুলো কঁচলে বললো,
—“আসলে চোখটা লেগে এসেছিলো তিহান ভাই,আমি এখনি স্টার্ট…”

মাঝেই তাকে থামিয়ে দিলো তিহান।গলার স্বর নামিয়ে স্নেহের সহিত বললো,
—“তুই পিছে এসে বস।ঘুমা একটু।আমি ড্রাইভ করছি।সমস্যা নেই।”

—“আরে না না,আমি পারবো।”অপ্রস্তুত হয়ে বললো সাইফ।

তিহান নিরুদ্বেগ কন্ঠে একটু গাম্ভীর্য ঢেলে বললো,
—“সাইফ,যা বলেছি তা কর।বের হয়ে,পিছে আয়।”

তিহানের কথার উপর আর কোন কথা বললোনা সাইফ।ধীরগতিতে বের হয়ে পিছে এসে দাড়াতেই তিহান দরজা খুললো।তোহার হেলে পরা মাথাটা বুক থেকে সরিয়ে হাতের তালুর উপর নিয়ে কোনরকমে বের হয়ে সাইফকে ঢুকতে বললো।চেপেচুপে ঢুকে পরলো সাইফ।ঢুকে বসতেই তিহান আলতো করে সাইফের কাঁধে তোহার মাথাটা ঠেকিয়ে দিয়ে খানিকটা আদেশসূচক ভঙ্গিতে বললো,
—“ওর ঘুম যেনো না ভাঙে,দেখিস।”

মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো সাইফ।এই হাসির মানে বুঝে তিহান।প্রত্যুওরে সেও হাল্কা হেসে আরো একবার তোহার ঘুমন্ত মুখখানায় চোখ বুলিয়ে দরজা আটকে দিলো।ঠান্ডা প্রকৃতির নির্মল বাতাসে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
_______________
আভিজাত্য ধরণের একটা প্রাচীরঘেরা দোতলা বাড়ি।পুরনো যুগের হওয়ার পরও কদিন পরপরই রং করা হয় তাই অত বিভিষিকাময় অবস্থা নেই।নানার বহুকষ্টের পরিশ্রমের বাড়ি এটা।

গাড়ি থেমে যেতেই হাল্কা ডাকে সবাইকে উঠিয়ে দিলো তিহান।তবে তোহা তখনো ঘুমাচ্ছে।সাইফ এতক্ষন ঘুমালেও এখন চোখ মেলে তাকিয়ে মূর্তির মতো বসে আছে।বিন্দুমাত্র নড়াচড়া নেই তার মাঝে।সবাই নেমে যেতেই তিহানও নামলো।তাদের গাড়ি থামতে দেখেই ছুটে এসেছে মোসতাক চাচা।এ বাসার যাবতীয় দেখাশোনা কাজকর্ম তিনিই করেন।নানা নানু আর কয়েকজন রান্নাবান্না করার জন্য আছে তাছাড়া এই বিশাল বাড়ি খালিই পরে থাকে।ব্যাগ পত্রগুলো কয়েকজনের হাতে গছিয়ে দিয়ে সাইফের পাশের দরজা খুলে দাড়ালো তিহান।বললো,
—“বের হ,আমি উঠাচ্ছি ওকে।”

সাইফ বের হয়ে যেতেই মাথা হেলে পড়ায় ঘুম ঘুম চোখে তাকালো তোহা।জড়ানো কন্ঠে বললো,
—“সকাল হয়ে গেল কখন?”বলেই আশেপাশে তাকালো সে।কাউকে না পেয়ে চমকিত কন্ঠে বললো,”সবাই কোথায়?”

—“সবাই বের হয়ে গেছে।তুই ই ঘুমাচ্ছিস শুধু।আয় বের হ।”

আড়মোড়া ভেঙে উঠে এলো তোহা।ঘুম ভাঙলে সাধারণত মেজাজ চড়ে থাকলেও আজ তার ব্যতিক্রম হলো।আশেপাশের স্নিগ্ধতায় জর্জরিত সবুজ প্রকৃতি দেখতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো।কি সুন্দর গাছগাছালি।শরতের ছোঁয়ায় সব পাতায় পাতায় পরিপূর্ণ।পাখিদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে।আহা!

শেষবার নানুবাড়ি এসেছিলো প্রায় দুই বছর আগে।বিশেষ একটা আসা হয়না।নানা নানুর সাথে ব্যাবধাণিক দুরত্ব টা বেশি হলেও মনের দূরত্বটা একেবারেই কম।তার দাদা দাদি নেই।তার জন্মের আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।শুধু তিহান ছাড়া আর কেউই তাদের স্নেহের সান্নিধ্য পায় নি।
_____________
বাড়িতে ঢুকতেই গোসল সেরে নিয়েছে সবাই।খালা-খালুরা সবাই তাদের আগেই পৌছে গিয়েছিলো।
দোতলায় একলাইনে সারিবেঁধে অনেকগুলো ঘর।সামনে লম্বা বারান্দার মতোন।সেখানে দাড়ালে নিচের পুরো হলরুম দেখা যায়।বারান্দার সাইডের জায়গাটা গোলাকারে প্রসারিত।ওখানে থেকে পুরো উঠান বাগান একপাশের পুকুর সব দৃশ্যমান।কোণার দিকের বড় ঘরটায় তাদের নানা নানু থাকে।বাকি গুলো তারা আসবে শুনে পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে।
তিহান আর তূর্য এক রুমে।তাদের পাশের রুমে স্বর্ণালী আর তোহা।আর তার পরের টায় সাইফ আর নুহাশ।

গোসল শেষে একটা হাল্কা সবুজ রংয়ের থ্রিপিস পরে বেরিয়েছে তোহা।ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে নিয়ে ফ্যানের নিচে বসে আরাম করে চুলের বাকিটা শুকাচ্ছে।
স্বর্ণালির আগেই শেষ গোসল।দুবার লোক এসে ডেকে গেছে তাদের নিচে নামার জন্য।স্বর্ণালী আবারো তাঁড়া দিতেই আর দেরি করলোনা তোহা।মাথায় ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে গেল নিচের উদ্দেশ্য।নানা নানুর সাথে
দেখা হয়নি এখনো।তারা যখন এসেছে তখন ঘুমিয়ে ছিলেন তারা।

নিচে নামতেই নানাসহ সবাইকে সুবিশাল টেবিলে বসে থাকতে দেখলো তারা।তাদের নানা অর্থ্যাৎ নিজাম রহমান বসে আছে মাঝের চেয়ারটায়।মুখে প্রশস্ত হাসি।এতদিন পর বাড়িটা আবারো ভরা ভরা লাগছে।
মাঝে মধ্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলেও সুস্থ হলেই আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেন তিনি।মনেই হয়না এই লোকটার এত অসুস্থতা হয়।
তোহা আর স্বর্ণালী দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো।নানাকে সালাম দিয়ে দাড়াতেই তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন উনি।হেসে বললেন,
—“এতো বড় হয়ে গেছে নাতনি দুজন?বিয়েশাদির ব্যবস্থা করতে হবে কদিন পর।”

নানার ঠাট্টাটা গায়ে না মাখলেও খানিকটা লজ্জা পেলো দুজনেই।তবে প্রতিউওর না করে ভদ্রতার সহিত চুপচাপ টেবিলে বসলো তারা।
তোহার একপাশে তিহান আর আরেকপাশে আফিয়া।তাদের মাঝখানে বসেছে তোহা।মূলত এই চেয়ারটা তোহার জন্যই খালি রেখে দিয়েছিলো তিহান।
খাওয়ার টেবিলে খাবারের মেলা বসে গেছে।কোন কিছু আর বাদ নেই।
রুটি মাংস আছে আবার ভুনা খিচুড়িও আছে।

—“এই হচ্ছে আমাদের বিলেতি ছেলে,চোখের রং দেখছো মনোয়ারা?পুরা বিলেতিদের মতো।”রুটি দিয়ে মাংস চিবাতে চিবাতে স্ত্রীর উদ্দেশ্য বললো নিজাম রহমান।

অগোছালোভাবে হাসলো তিহান।তোহা আড়চোখে একবার তাকিয়ে নিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
তিহান খিচুড়ি দিয়ে নানারকমের ভর্তা মিশিয়ে খাচ্ছে।তোহা খাচ্ছে আটার রুটি আর মুরগীর মাংসের ঝোল।
খিচুড়ি নেয়নি সে।এই সকাল সকাল অযথা হাত মাখামাখি করে খেতে ইচ্ছে করছেনা তার।

ভর্তা দিয়ে খাওয়া শেষে একটুখানি আমের আচার প্লেটে তুলে নিলো তিহান।খিচুড়ি দিয়ে মাখিয়ে একবার মুখে নিয়ে দ্বিতীয় নলাটা তোহার মুখের সামনে ধরে ধীরকন্ঠে বললো,
—“হা কর,খেয়ে দেখ ভালোলাগবে।”

ছোট করে মুখ খুললো তোহা।তিহান তুলে দিতেই চুপচাপ খেয়ে আবারো হা করলো।হাসলো তিহান।নিজে আর একগালও খেলোনা।একটু পরপরই তোহার মুখে অল্প অল্প করে তুলে দিতে লাগলো।হাসি গল্পে মেতে থাকলেও এরমধ্যও পুরো ব্যাপারটা নজর এড়ালোনা নিজাম রহমানের।তিহানের ঠোঁটের কোণের ক্ষীণ হাসিটাও গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলো সে।অত:পর মাথা ঝুঁকিয়ে মুচকি হেসে চুপচাপ খাওয়ার মনোনিবেশ করলো।

~চলবে~

[ফোনের চার্জ শেষ।আর লিখা সম্ভব হলোনা।সরি।আর যারা যারা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তাদের সকলকে অনেক অনেক বেশি ধন্যবাদ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here