#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৪৫ [বোনাস পার্ট]
‘ ব্রেকিং নিউজ! ডক্টর তায়্যিরাত উম্মে আহির গভীর সম্পর্ক রয়েছে দ্য গ্রেট ভোকালস্টার এআরকে’র সাথে। গত দুদিন আগে এক ক্যাফেতে এআরকে এবং তায়্যিরাত উম্মে আহিকে একসাথে দেখা গিয়েছে যেখানে তারা ঘনিষ্ঠভাবেই বসে ছিলো। এর মানে কি এটাই বের হলো যে অন্যান্য তথাকথিত মানুষদের ন্যায় এআরকেও তার প্রেমিকার সাথে ‘লিভ টুগেদার’ এ আছেন?’
হসপিটালের রিসিপশনে ছিলাম আমি। আচমকা সেখানে থাকা টিভি স্ক্রিনে বড় বড় অক্ষরে এমন ব্রেকিং নিউজ দেখে মুখ বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে আমার। হসপিটালের সকলের উৎসুক দৃষ্টি এবার আমার দিকে। গত দুদিন আগে হয়তো ক্যাফেরই কেউ গোপনে আমার আর আনভীরের এমন ছবি তুলে যে মিডিয়ায় পাঠিয়েছেন এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। টিভিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুটো ছবি যেখানে আনভীর আমার দিকে ঝুঁকে আছেন আর আরেকটাতে হাত টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন দৃশ্য এটাই স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় যে কতটা অধিকারবোধ আছে এতে। আমি কথা বলতে ভুলে গেলাম।
সবার এমন দৃষ্টি বিভ্রান্তে ফেলে দিতে থাকলো আমায়। একদল আমার নেমপ্লেট দেখছে তো আবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না আমিই আনভীরের সেই তথাকথিত প্রেমিকা। কোনোমতে নিজেকে আড়াল করে সরে আসলাম আমি। তবে আমার কলিগ ধারা আর তিশাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না। বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
‘ টিভিতে যা দেখাচ্ছে এগুলো কি সত্যি আহি!’
আমি নিশ্চুপ।
ধারা এবার বললো,
‘ কথা বলছিস না কেনো? তুই জানিস যে হসপিটালের প্রতিটা ফ্লোরে তোকে নিয়ে কথা বলছে? ডক্টর, নার্স, প্রোফেসর, পিয়ন, ওয়ার্ডবয় ইভেন পেশেন্টও এমন মুখরোচক সমালোচনা থেকে সরে আসেনি। এই ঘটনা তুই জানিস?’
নিজেকে অন্যরকম লাগছে এখন। গতরাত পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো, আমি ছিলাম একজন সাদামাটা আহি। কিন্ত ভাগ্যের কি পরিহাস! দু রাতের ব্যাবধানেই সমালোচনার মুখ্যবস্তু হয়ে উঠলাম আমি। জরিয়ে পড়লাম রকস্টার এআরকের সাথে।
আমার মৌনতা দেখে ওদের বুঝতে বাকি রইলো না যে সত্যটা কি। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ এতদিন তাহলে কোথায় থাকছিলি তুই?’
শুকনো ঢোক গিললাম ক্রমশ। এদের এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই বলে ফেললাম,
‘ এআরকের বাড়িতেই।’
ধারার মুখের রং পাল্টে গেলো। বলে উঠলো,
‘ আর এত বড় সত্যটি আজ বলছিস তুই আমার কাছে? এর মানে সত্যিই তুই লিভ টুগে…….’
‘ ধারা প্লিজ! তুই ভালোমতোই জানিস যে আমি এসব নোংরামিপনা পছন্দ করিনা। তুই ভাবলি কি করে এই বিশ্রি কাজ আমি করবো? পুরো দুনিয়া নোংরা খেতাবি দিচ্ছে আমায়। হয়তো ছিঃ ছিঃ করছে। এটলিস্ট তোরা তো বিশ্বাস কর?’
চোখ অশ্রুতে টুইটুম্বুর হয়ে উঠলো আমার। এমন সময় হঠাৎ এক
ওয়ার্ডবয় আমার কাছে এসে বললো,
‘ আপনাকে ম্যানেজম্যান্ট অফিসে ডাকছে ডক্টর আহি?’
আমি বাকরুদ্ধ। সচরাচর অফিশিয়াল কাজ ছাড়া এই পর্যন্ত ডাক পড়েনি আমার হসপিটালের ম্যানেজমেন্ট রুমে। তো ডাকলো কেনো? এর কারনে কি মিডিয়ার সেই অপ্রত্যাশিত খবরই ধরে নিবো? ধীর পায়ে লিফ্টের থার্ড ফ্লোরের ম্যানেজমেন্ট অফিসে গেলাম আমি। আপাতত এখানকার চেয়্যারম্যান ইশতিয়াক মনির স্যার। আমি বোডিং রুমে গেলাম। সেখানে আরও অনেক লোক আছে। এমনকি ডক্টর সিনথি এবং ডক্টর ধ্রুবও।
মনির স্যার শান্ত হয়ে বসে ছিলেন ইজি চেয়ারে। আমি তাকে দেখে সালাম দিয়ে বললাম,
‘ ডেকেছেন স্যার?’
‘ হ্যাঁ। কারনটাই অবশ্যই তোমার জানা।’
আমি নিশ্চুপ। উনি একটা রিপোর্ট ছুড়লেন আমার দিকে। এক নিউজ পোর্টাল থেকে হয়তো ফ্যাক্সের মাধ্যমে এসেছে। আমার আর আনভীরের সেই ক্যাফের দুটো ছবি। উনি প্রশ্ন ছুড়লেন,
‘ রকস্টার এআরকে’র সাথে সত্যিই কি তোমার কোনো সম্পর্ক আছে ডক্টর আহি? যতটুকু জানি তুমি অবিবাহিত আর উনিও অবিবাহিত। তাহলে এর মানে কি দাঁড়াচ্ছে এখন?’
এই কথায় এমন একটা কথা বলার দুঃসাহস করলাম যেটা মনে হয়না এত বছর গুলোতে আমি এভাবে বলেছি। শীতল কন্ঠে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনার মনে হয় না ব্যাপারটা আমার ব্যাক্তিগত দিকে চলে যাচ্ছে?’
মনির স্যার মাথা নাড়লেন। সম্মতি জানিয়ে বললেন,
‘ অবশ্যই যাচ্ছে। তবে একটা ব্যাপার কি জানো ডক্টর আহি, ব্যাপারটা যদি প্রফেশনে প্রভাব ফেলে তাহলে সেটা আর পার্সোনাল থাকে না। তুমি স্বেচ্ছায় হয়তো এমন এক মানুষের সাথে জড়িয়েছো যার পার্সোনাল খবর মিডিয়া পার্সোনাল থাকতে দিবে না। এইযে দেখো, এখন এটা তোমার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলছে। ইভেন আমাকেও জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে।’
ভ্রু কুচকে তাকালাম আমি। বললাম,
‘ মানে?’
‘মানেটা ইজি আহি। এই পর্যন্ত বড় বড় সাত সাতটা নিউজ কোম্পানি থেকে কল এসেছে আমার কাছে তোমার নম্বর নেওয়ার জন্য। কারনটাও হয়তো তোমার জানা।’
আমি কথা বললাম না আসলে দ্বিধায় আছি যে আমার ওয়ার্কপ্লেসের কথা ওরা কিভাবে জানলো। আমার কথা হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছিলেন ডক্টর সিনথি। তাই অকপটে বললেন,
‘ মিডিয়াস অল অফ দেম আর ডেন্জেরাস। এরা পাতাল থেকেও খবর কুড়িয়ে আনতে পারে। লাস্ট মান্থের সেমিনারে এআরকে হিন্ট দিয়েছিলো না ওর অ্যাফেয়ার এর ব্যাপারে তখন থেকেই ওরা হয়তো ফলো করছিলো তাকে। তারপর এই হসপিটালেই এসে একজনকে অমানুষিকভাবে মারা, এটা কি স্বাভাবিক? তোমাদের সম্পর্কের অনেকগুলো হিন্ট আছে আহি। আর যাই হোক, এবার ওসব জার্নালিস্টদের কাছ থেকে হয়তো নিস্তার পাবে না।’
‘ সেটাই আহি। হয়তো আগামী এক সপ্তাহ তুমি আর এআরকে ট্রেন্ডিংয়ে থাকবে। দ্যাটস হোয়াই আগামী ওয়ান উইকের জন্য সাসপেন্ড করা হলো তোমায়।’
‘ কিন্তু স্যার…….’
‘ আই নো আহি, ব্যাপারটা হয়তো বাড়াবাড়িই হয়েছে কিন্তু হসপিটালের একটা ব্যাপার আছে। তুমি জানো বাইরে কত মানুষ এখন? প্রায় তিন চারটা প্রেস মিডিয়ার গাড়ি ভীড় করেছে এখানে শুধু এটা জেনে যে এআরকে’র গার্ল এখন এখানেই আছে। ‘
কথাটা যেন আমার মুখ বন্ধ করে দিলো। স্যার তাই এবার নরম হলেন। বললেন,
‘ এটা একটা প্রাইভেট হসপিটাল এন্ড এখানে পেশেন্ট থাকে আহি। এসব হৈ চৈ যদি এখানে চলে তাহলে কে কৈফিয়ত দিবে উপরমহলের কাছে? তাই ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যাট৷ আই হোপ বুঝবে।’
স্যারের সাথে আজকের মতো এই কথপোকথনই ছিলো আমার শেষ কথা। আপাতত আমি এখন হচ্ছি হসপিটালের সকলের কাছে মঙ্গলগ্রহের কোনো বস্তুবিশেষ। বড় বড় প্রফেসররাও এখন আড়চোখে দেখছে আমায়৷ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। মনে হচ্ছিলো মানুষের এসব তাচ্ছিল্যের চাউনি দেখে মরেই যাবো। না, আর না! এর একটা বিহিত করতেই হবে। আমি তাই দুর্বল হাতে ডায়াল করলাম নাহিদ ভাইয়ার নাম্বারে।
হয়তো উনি এই অপেক্ষাতেই ছিলেন। দ্রুত কল রিসিভ করা মাত্রই বললেন,
‘ কোথায় আপনি?’
‘ হসপিটালোই আছি। বের হতে পারছি না জার্নালিস্টদের জন্য। এত মানুষ দেখে আমি রীতিমতো ঘাবড়ে যাচ্ছি আমি ভাইয়া। প্লিজ আপনি আসুন নতুবা কোনো গার্ডকে পাঠিয়ে দিন।’
‘ ডোন্ট ওয়ারি। আমি ম্যানেজ করছি সব!’
আমি নিঃশব্দে কল কেটে সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। ভাবতেও পারিনি হয়তো এর জন্য হসপিটাল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করে দিবে আমায়। সময়টা কখন পার হয়ে গেলো টের পাইনি। নাহিদ ভাইয়ার মেসেজ আসা মাত্রই আমি বেরিয়ে গেলাম। যা ভেবেছি সেটার ধারনা থেকেও ভীড় এখানে।
আমি এক্সিট গেটে দাঁড়ানো মাত্রই জার্নালিস্টের এক বিশাল সমাগম দেখা গেলো আমার চোখের সামনে। সবার মুখ্যকেন্দ্র আমি। আমায় ঘিরে তারা করে যাচ্ছেন হাজারো প্রশ্ন। কথাবার্তাগুলো এমন ছিলো যে,
‘ মিস আহি! এটা কি সত্যি যে আপনি এআরকে’র সাথে লিভ টুগেদারে আছেন৷ নাকি এমন কোনো সম্পর্ক আছে যেটা সমাজ বহির্ভূত! ‘
আমি নির্বাক। হাজারো মানুষের প্রশ্নের সম্মুখীন এই প্রথম হয়েছি আমি। আর আমার একটি সমস্যা হলো আমি কখনোই এত বড় পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ভালোমতো কথা গুছিয়ে বলতে পারিনা। চিৎকার করে একবার বলতে ইচ্ছে করেছিলো যে এমন কিছুই না। যাকে আপনারা এআরকে’র আশ্রিতা ভাবছে, সে এআরকে’র স্ত্রী।
আরকেজন বলে উঠলো,
‘ আপনাদের কতদিন ধরে চলছে এমন গোপনীয় সম্পর্ক? এক সূত্রে জানা গিয়েছে আপনি বিগত ছয় মাস ধরে আছেন এআরকে’র বাংলোতে। এআরকে তাহলে লুকালো কেন এ কথা? তাহলে কি আপনি শুধু উনার আশ্রিতা হিসেবে আছেন?’
‘ আশ্রিতা’, কত সহজ না এই শব্দটি? তথাকথিত সাংবাদিকরা অকপটে শব্দটি উচ্চারণ করলো। কিন্তু তারা কিন জানে যে এই শব্দটা একজন মেয়ের ওপর কত প্রভাব ফেলে? ফেসবুকে কয়েটা নিউজ পোর্টালের পোস্টে কমেন্ট দেখছি আমি। কিন্তু সাধারন মানুষের এই মন্তব্য যে আমার মতো মেয়েদের জন্য দেশ রসাতলে যাচ্ছে। এমন ক্যারেক্টারলেস মেয়েরা টাকার জন্য যে কারও সাথে শুতে পারে। আর সে যদি রকস্টার হয়, তবে তো কথাই নেই।
তখনই তিন চারজন সুঠাম দেহী কালো পোশাকধারী গার্ড ঘিরে ধরলো আমি। এদের চিনি আমি৷ আনভীরের বডিগার্ড। এর মধ্যে আসিফ বলে উঠলো,
‘ আপনারা কাইন্ডলি সাইড দিন। আমাদের যেতে হবে!’
তারপর কোনোমতে এখান থেকে সরে রোডের অপজিটে নাহিদ ভাইয়ার গাড়িতে উঠলাম আমি। নাহিদ ভাইয়া নির্বাক ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি বসে রইলাম পাথর হয়ে। আমি জানতাম যদি এই সত্যটা একদিন বেরিয়েই যাবে। কান্না করতে ইচ্ছে করছে আমার। কে বিশ্বাস করবে আমার কথা?
সন্ধ্যার গড়িয়েছে। আজ সেন্ট্রাল পয়েন্টে একটা কনসার্ট ছিলো আনভীরের। লাস্ট মান্থে যে গান রিলিজ করেছে ওটার ওপর বেইজ করেই। আর তাই হয়তো সাংবাদিকরা এ দিনটাই নিউজ প্রমোটের মুখ্য দিন হিসেবে ধরেছে। আমি এবার ডাকলাম,
‘ নাহিদ ভাইয়া?’
‘ জ্বী?’
‘ আমায় আনভীরের কাছে নিয়ে যান।’
নাহিদ ভাইয়া বিস্ময়ে তাকালেন আমার দিকে। বললেন,
‘ এখন রাইটা টাইম না ভাবি। আপনার থেকেও উনার ওপর মিডিয়ার দ্বিগুন প্রেশার।’
আমি ধাতস্থ করতে পারলাম না নিজেকে। দ্বিরুক্তি নিয়ে বললাম,
‘ প্লিজ ভাইয়া। বাসায় এভাবে অপবাদ নিয়ে ফিরে গেলে মরে যাবো আমি।’
নাহিদ ভাইয়া মানলেন এবার। গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে গেলেন সেন্ট্রাল পয়েন্টের দিকে।
আকাশে নিকষ আধার। তবে কনসার্ট এরিয়া বলে এখানে আলো নেহাত কম নয়। মানুষের সমাগোর অস্থির করে তুলেছে সবকিছু্। একদিকে ফ্যানদের সমাগম অন্যদিকে জার্নালিস্ট এর আক্রমন। আমি ধাতস্থ করে ছুটলাম অডিটোরিয়াম এর দিকে।
আমার শরীর দুর্বল। কানে ভাসছে সেই প্রশ্নগুলো। তীরের মতো বুকে বেঁধেছিলো সেগুলো। চোখের পানি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি কোনোমতে। আনভীর ইতিমধ্যে কার্যক্রম শেষ করে বের হচ্ছেন অডিটোরিয়াম থেকে। হোয়াইট টিশার্টের ওপর ব্ল্যাক ডেনিম, ক্যামেরার লাইটের রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য সানগ্লাস জানান দিচ্ছে মোহময়ী সৌন্দর্যের। উনার আশাপাশে জার্নালিস্টের উপচে পড়া ভিড়েরও সেই একই প্রশ্ন। না, নিজের পরিচিত মানুষেটাকে পেয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারিনি আমি। সাইড দিয়ে হাজারো, হাজরো মানুষের ভীড়ের মধ্যমনি হয়ে দৌঁড়ে জাপ্টে জরিয়ে ধরলাম আনভীরকে।
হঠাৎ সকল শোরগোল বন্ধ হয়ে গেলো। বুঝে উঠতে সময় নিলো যে হলোটা কি। অতঃপর বুঝতে পারতেই আবার শুরু হলো শাটারের সাউন্ড। এই বুকে থেকে মাথা সরানোর সাধ্য আমার ছিলো না। তাই এটাও জানিনা আনভীরের এতে প্রতিক্রিয়া কি। অবস্থা বেগতিক দেখে স্টার হিট এর কো-সিইও ইশারায় গার্ডকে বললেন আমায় আনভীরের কাছ থেকে সরাতে। আনভীর তা দেখে শীতল কন্ঠে বললেন,
‘ ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মাই গার্ল!’
.
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ
বোনাস পার্ট দিলাম। এবার খুশি তো?