#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#বোনাস_পার্ট
-‘ আমায় জড়িয়ে লাফালাফি করার আগে এটা তোমার ভাবা উচিত ছিলো বেবিগার্ল। নিজে তো ডার্টি মাইন্ডেড সাথে আমার মতো পিওর ছেলেকেও তোমার মতো ডার্টিমাইন্ডেড বানিয়ে দিলে।’
কথাটি বলেই আমায় ছেড়ে দিলেন আনভীর। আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালাম। নাহিদ ভাইয়া আর নুড়ী আপা তখনও হেসে চলছে মিটমিটিয়ে। আনভীর জিজ্ঞেস করলেন,
-‘ ডিনার করেছো?’
-‘ না।’
-‘ তাহলে করে নাও। আমি খেয়ে এসেছি বাহির থেকে।’
আনি মৌনতা বজায় রাখলাম এতে। আনভীর এবার বললেন,
-‘ আর একটি কথা ছিলো।’
-‘ কি কথা?’
-‘ তোমার ইন্টার্নশিপ কমপ্লিট এটা বলেছিলে না?’
-‘ হুম।’
-‘ তো কোন হসপিটালে এসিস্ট্যান্ট ডক্টর হিসেবে জয়েন হতে যাচ্ছো তুমি?’
-‘ (………) হসপিটাল।’
-‘ ওহ্ , ওকে। CV জমা দিয়েছিলে?’
-‘না।’
-‘ তাহলে রেডি করে নাও। আগামীকাল নাহিদ জমা দিয়ে আসবে।’
বলেই চলে যাচ্ছিলেন আনভীর। আমি তৎক্ষণাৎ বলে ওঠলাম,
-‘ আপনি……….আপনি সত্যিই যেতে দিবেন আমায় আনভীর?’
পা থামালেন উনি। চোখজোড়া মিহি করে পেছনে তাকালেন। অতঃপর বলে ওঠলেন,
-‘ আমি তোমার অপূর্ব ভাই নই। যে নিজ স্বার্থে ইউজ করে যাবে তোমায়। না তোমার বোন রাহি। আর না তোমার ওই জল্লাদ বাপ ইকবাল সাহেব। আমি আনভীর রেজওয়ান খান। নিজেকে নিয়ে যতটা প্রোটেকটিভ, নিজের দায়িত্ব নিয়ে এর থেকেও প্রোটেকটিভ হতে পারি।’
বলেই চলে গেলেন উনি। আমার মনে রাজ্যের প্রশ্ন জেকেঁ বসলো এবার। এই মাত্র কি বললেন উনি? আমি উনার দায়িত্ব? কেমন দায়িত্ব? কেনই বা দায়িত্ব? গত দুদিনের ব্যাবহারে এতটুকু সিউর হলাম আমি যে এই মানুষটার অতীতের সাথে কিছু একটা সম্পর্ক আছে আমার। যেটা যেকোনো ক্রমেই হোক, আমায় বের করতে হবে।
———————
নাইট ক্লাব হওয়ার দরুন মুখোরিত আশপাশ। অপূর্বের একহাতে ড্রিংকসের গ্লাস আর অন্য হাত গুঁজে রেখেছে পকেটে। পরপর এতগুলো গ্লাস সাবার করার পর ওর নেশা যেনো কিছুতেই উঠছেনা। উঠবেই বা কি করে, এই নেশা যে আহি কেড়ে নিয়েছে ওর থেকে? বিগত এক সপ্তাহ ধরে কোনো যোগাযোগ নেই ওর মেয়েটার সাথে। ওসব ব্ল্যাক মানির ঠিকানা করতে ও এতটাই মশগুল হয়ে পড়েছিলো যে আহির দিকে নজর রাখার কথা মনেই ছিলো না ওর। আজ চাচার কথায় একটু মনে হলো আহি কোথায় সেটা জানার।ওর ভাবনার মধ্যেই একজন এসে পড়লো ওর কাছে। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো,
-‘স….স্যার!’
-‘ আহির বাসায় গিয়েছিস?’
শুকনো ঢোক গিললো লোকটা। এতটা বিব্রত দেখে অপূর্ব থম মারা চাউনি দিলো তার দিকে। বললো,
-‘ এত কাঁপছিস কেনো? আহির আপডেট বল?’
-‘ স্যার ভাবি, ফ্ল্যাটে নেই।’
চোখের অর্ধ নেশা নিমিষেই উড়ে গেলো অপূর্বের। বলে ওঠলো,
-‘ হোয়াট?’
-‘ জ…জ্বি স্যার। আমি অনেকক্ষণ নক করছিলাম ফ্ল্যাটে। দাঁড়িয়ে ছিলাম কয়েকঘন্টা। ভাবিও আসেনা , কেউ দরজাও খুলেনা। সিসিটিভিতেও ভাবির লাস্ট ফুটেজ পায়নি স্যার। ভাবি…..ভাবি মনে হয় আবার পালায় গেসে।’
এই শেষ কথাটাই ছিলো অপূর্বকে হিংস্র করে তোলার জন্য যথেষ্ট। হাতে থাকা গ্লাসটা জোরে চাপ দিতেই তা দুমড়ে-মুচড়ে ওর হাতের প্রতিটা অংশ কেটে দিলো। রক্তাক্ত হয়ে ওঠলো ওর হাত। কপালে নিজের আঙুল চালিয়ে বলে ওঠলো,
-‘ টাকা দিয়ে গর্দেভগুলারে পালছি আমি। একটা জলজ্যান্ত মেয়ে হুট করে গুম হয়ে যাবে কিভাবে? সিসিটিভি ফুটেজেই বা উঠবেনা কেনো কিছু? আহির মাথায় এই সৃন্স নেই যে ও নিজ থেকে পালাবে সব ক্লু কিয়ার করে। আই এম ড্যাম শিউর কেউ না কেউ তো হেল্প করেছে ওকে।’
অপূর্বকে এতটা রেগে যেতে দেখে কেপেঁ উঠলো লোকটা। বললো,
-‘ স……..স্যার, আপনার হাত!’
-‘ গো টু ইউর হেল।’
অপূর্ব একথাটা বলতেই চলে গেলো লোকটি। রাগে মুখমন্ডল লাল হয়ে গিয়েছে ওর। হাতের আংটির দিকে নিষ্পলক ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। বলে ওঠলো,
-‘ এর আগের শাস্তিটা তোর জন্য প্রোপারলি হয়নি রে আহি! তাই এবারও পালাবার দুঃসাহস করেছিস। ট্রাস্ট মি! এবার যদি হাতের নাগালে পাই না, ভেঙে গুড়িয়ে দেবো তোর পা। তুই আমার ভালোবাসা না হতে পারলেও জেদ থেকে কম কিছু না। আমিও দেখবো তুই কতদিন গুম হয়ে থাকতে পারিস!’
————————–
রাত হয়েছে অনেক। এ বাড়ির প্রায় সবাই হয়তো গভীর ঘুমে মগ্ন। আমি পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরোলাম। হাতে মোবাইল। কিন্ত সাইলেন্ট করতে ভুলিনি। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আস্তে আস্তে আমি চলে গেলাম ওই রুমটিতে। যা ভেবেছিলাম তাই। রুমটা ছিলো লক করা। কিন্ত হার মানিনি আমি। রাহি আপু সিক্রেট এজেন্ট হওয়ার দরুন একজন উডবি ডক্টর হলেও একটা জিনিস শিখতে পেরেছি আমি। আর সেটা হলো দরজার লক কিভাবে খুলতে হয়। আমি চুলের থেকে বিউটি ক্লিপ খুলে নিলাম। তারপর কৌশলে তা প্রয়োগ করতেই ব্যাস! খুলে গেলো লকটি।
রুমটা নিতান্তই অন্ধকার। চাঁদের ম্লান আলোটাই রুমটাকে জাস্ট আলোকিত করে রেখেছিলো। পর্দা উড়ে চলছে অসমান্তরালভাবে। আমি লাইট জ্বালালাম না। মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে যা বুঝলাম আনভীরের মিউজিক রুম এটি। কারন এখানে কিবোর্ড, গিটার, ভায়োলিন, হারমোনিকা , মাইকসহ আরও অনেক কিছুই ছিলো। একপাশে সুসজ্জিতভাবে রাখা ছিলো উনার সব মিউজিক আওয়ার্ড। এমনকি ছোটবেলা যেসকল প্রাইজ পেয়েছিলেন সেগুলোও। আমি এবার একে একে করে রুমের ড্রয়ার, বুকশেলফ, টেবিল সবগুলো ঘাটতে থাকলাম ভালোমতো। বেশিরভাগ ড্রয়ার লক করা ছিলো বলে পাইনি বিশেষ কিছু। একরাশ হতাশা নিয়ে আমি যখন ফিরে যাচ্ছিলাম তখনই এককোণে চোখ পড়লো আমার। আমি এগিয়ে গেলাম সেখানে। বেশ কয়েকটা ফাইল একসাথে। ঘেটে দেখলাম মেডিক্যাল রিপোর্ট। মেডিক্যালে পড়েছি বলে এসব রিপোর্ট বুঝতে অসুবিধে হয়নি আমার। সেখানে যা দেখলাম কয়েকসেকেন্ড থম মেরে রইলাম আমি। মনে হলো যে ভুল দেখছি নাতো? নাকি এখনও স্বপ্নে ভাসছি আমি?
রিপোর্টে পেশেন্টের নাম স্পষ্ট করে লিখা আছে ‘আনভীর রেজওয়ান খান’ আর উনার মেন্টাল কন্ডিশন অন্য চার-পাঁচজন স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়। হি ইজ এ ভিক্টিম অফ ‘প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’! এতবড় সত্য নিজের স্বচক্ষে দেখে অবাক হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো আমার জন্য। তার মানে উনার আমার প্রতি এই ব্যবহারগুলো কি সত্যিই ডিসঅর্ডারের কারন? আর ভাবতে পারলা না আমি। কেননা হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে পেলাম,
-‘ এখানে কি করছো তুমি?’
.
.
.
~চলবে……ইনশাআল্লাহ
বোনাস পার্টের জন্য বাচ্চাটাকে থ্যাংক ইউ বলো গাইস!