#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৮
ঘুমের মধ্যেই টের পাচ্ছি আমার চোখের ওপর আছড়ে পড়ছে এক ফালি মিষ্টি রৌদ্দুর। রৌদ্দুরের তেজ আবছা থাকলেও সেটা ছিলো আমার ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পিটপিট করে তাই চোখ খুললাম আমি। দেখি সকাল হয়ে গিয়েছে। পাশেই আধশোয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছেন আনভীর। আমি চমকে উঠলাম। হাতে চিমটি কাটলাম কয়েকদফা। ধ্যানটা ভালোমতো আসতেই নিজেকে অবগত করলাম উনার বিশাল রুমটিতে। সেখান থেকে বেলকনির দ্বারা শহরের এক অনন্য সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। হাওয়ার তালে অনবরত উড়ে চলছে উনার ঘরের শুভ্র রঙের পর্দাগুলো।
আমি মাথায় হাত দিয়ে স্মৃতিচারন করতে লাগলাম পূর্বের ঘটনাগুলো। অপূর্ব ভাইয়াকে দেখা, তারপর ভয়ে তটস্থ হয়ে উনার বুকে ঢলে পড়া থেকে শুরু করে সব। কিন্ত তারপর কি হয়েছে খুব একটা আঁচ করতে পারলাম না। তাই ঘাড় বাকিয়ে তাকালাম উনার দিকে। উনি খাটের একপ্রান্তে আধশোয়া অবস্থাতেই ঘুমিয়ে আছেন নির্বিঘ্নে। এই নিয়ে দ্বিতীয় দফা সৌভাগ্য হলো আমার এই ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখার। সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য এটা জানিনা আমি তবে এই মানুষটার জন্য মন অজান্তেই একপ্রকার ভালোলাগা শুরু হয়েছে। শুরুতে আমার প্রতি আচরণটা মোহনীয় না হলেও এখন সেই জিনিসটা দূরে সরিয়ে জমা হয়েছে নতুন কিছু আবেগ। ভালোবাসা কি আমি জানতাম না, যত্ন , প্রিয় মানুষের জন্য চিন্তা সেটাও দেখিনি ছোটবেলা থকে। শুধু মুখোমুখি হয়েছি কতগুলো নির্মম অতীতের। আর আজ সেগুলো থেকে অন্যত্র এসে এভাবে এই মানুষটার মোহে পড়ে যাবো ভাবতেই অবাক লাগে আমার। আমি তো বিশেষ কেউ না, না আনভীরের মতো এমন একজন যার জন্য অজস্র মানুষ কাতর হয়ে পড়ে থাকবে। তবুও এসব কিছু পেরিয়ে উনি যে আমায় এতটা আগলে রাখছেন সেটা কি সত্যিই রাহি আপুকে পাওয়ার জন্য?
আমার ভাবনার সুতো কাটলো দরজায় কড়াঘাতের ফলে। বিস্মিত হলাম আমি। সচরাচর নাহিদ ভাইয়া বা নুড়ি আপা কেউই উনার রুমে এভাবে নক করেন না। আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম দরজা খোলা উচিত কি-না। তাই আনভীরকে ডাকলাম কয়েকবার। কিন্ত উনি সাড়া দিলেন না। পরন্ত অনেকটা বাধ্য হয়েই উঠে রুমের দরজা খুললাম আমি।
কথায় আছে না, ‘অপ্রত্যাশিত জিনিস বড়ই ভয়ঙ্কর!’, আমার সাথেও ঘটেছে এমন কিছু। কেননা দরজা খুলে আমি যেহেতু নাহিদ ভাইয়াকে প্রত্যাশা করেছিলো সেখানে একেবারেই ভিন্ন একজনকে দেখে আমার চমকে যাওয়া স্বাভাবিক। ভিন্ন একজন বললে ভুল হবে, দু’জন। আমি কাপাঁকাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
-‘আ….আপনারা কারা?’
-‘আগে বলো তুমি কে? আর আমার ভাইয়ের রুমে কি করছো?’
এই দুটো কথা আমায় স্তব্ধ করার জন্য ছিলো যথেষ্ট। কেননা আমার বুঝতে বাকি নেই যে ইনিই আনভীরের বড় ভাই আজরান ভাইয়া আর তার পাশের জন নিশ্চিত আনভীরের ভাবি। আমার কন্ঠসবর রুদ্ধ হয়ে এলো। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবো তার আগেই দু’জন ভেতরে এসে পড়লেন। আনভীরকে এভাবে আধশোয়া অবস্থায় দেখে যেন চোখজোড়া বড় বড় করে ফেললেন। আমি এবার কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে ওঠলাম,
-‘ আ….আনভীর?’
………
-‘ আনভীর উঠছেন না কেনো?’
শেষের কথাটি কিছুটা জোরে বলে উঠতেই আনভীর একপ্রকার হতদন্ত হয়ে উঠলেন। বললেন,
-‘ আর ইউ ফাইন আহি! এভাবে…….’
আর বলতে পারলেন না আনভীর। চোখের সামনে নিজের ভাই-ভাবিকে দেখে যেনো পাথর হয়ে গেলেন। আজরান ভাইয়ার চোখে মুখে স্পষ্ট সন্দেহের আভাস। বলে ওঠলেন,
-‘ আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। এই ছেলে যে কেনো বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলো না এবার প্রমাণ পেয়েছো শিউলি? খুব তো বলছিলে তোমার দেবরজী একেবারে ভোলাভালা। কোনো মেয়ে কেলোঙ্কারি মহাশয় করবে না। এবার দেখে নাও।’
আমি পেছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। আনভীর থমথমে গলায় বললেন,
-‘ তুমি যা ভাবছো এমন কিছুই না ভাই।’
-‘ তাহলে কি এসব? এই মেয়েটা এখানে কি করছে তোমার বেডরুমে?…….ফ্রেস হয়ে দুজনেই নিচে নামবে। বাবা-মা দুজনেই এসেছে।’
শুনেই চমকে উঠলাম আমি। হচ্ছেটা কি এসব? উনারা তো আমায় উল্টাপাল্টা ভাবছেন। আনভীরের ভাই ভাবি চলে যেতেই আমি বলে ওঠলাম,
-‘এ….এবার কি হবে আনভীর? তখন তো আ…আমি ভয়ে আপনার শর্তে রাজি হয়েছিলাম। বাট ট্রাস্ট মি, আমার দ্বারা এসব কিছুই সম্ভব না আনভীর। আমি এসব অভিনয় ক..কখনোই করতে পারবো না। আমার ক্যারেক্টারে একটা জঘণ্যতম দাগ লেগে যাবে এসব করলে?’
আমায় এতটা উত্তেজিত হতে দেখে আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে ঠোঁটে আঙ্গুল স্পর্শ করে থামিয়ে দিলেন আমায়। আমি চুপ হয়ে গেলাম। উনি বললেন,
-‘ডোন্ট বি প্যানিক আহি। আমি সামলে নেবো সবটা। আমি থাকতে আর যাই হোক কখনোই তোমার চরিত্রে দাগ পড়বে না।’
উনার ভরাট গম্ভীর কন্ঠে মিহিয়ে গেলাম আমি। তারপর দুজনেই আমরা ড্রইংরুমে নামলাম। সেখানেই প্রথম দেখলাম আনভীরের বাবা আর মা কে। নাহিদ ভাইয়ের কথার মতো আনভীরের মায়ের শারীরিক অবস্থা আসলেই খুব একটা ভালো না। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম আনভীরের পিছনে। আনভীর থমথমে গলায় উনার বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন,
-‘কেনো এসেছো এখানে?’
-‘ না আসলে কি তোমার এই মহানকীর্তি দেখতে পারতাম?’
উনার তাচ্ছিল্যেভর কন্ঠ। বলে ওঠলেন,
-‘ কে এই মেয়েটা?’
-‘ইকবাল আঙ্কেলের ছোটো মেয়ে।’
আনভীরের এ কথা শুনে আমার একটু খটকা লাগলো। কেননা উনি এমনভাবে বলেছেন যে আমার বাবাকে খুব ভালোমতই চিনেন উনি। আর আমার ধারনাটাই ছিলো সত্যি। উনাদের কথোপকথনের মাধ্যমে প্রমাণ পেয়ে গেলাম যে কেন উনি আমার পাস্ট লাইফ সম্পর্কে এতকিছু জানেন। আনভীরের বাবা আর আমার বাবা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খুব ভালো বন্ধু। সময়ক্রমে আমি এসবকিছুই ভুলে গিয়েছিলাম কিন্ত উনাদের কথাবার্তায় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম আমি। উনার বাবা এবার জিঙ্গেস করলেন,
-‘বিয়ে করতে চাওনি তাহলে ওর কারনেই?’
-‘ এ-ই সেই মেয়ে যার জন্য আমি তোমার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইনি।’
উনার বাবা থমকে গেলেন। মৌনতা কাটিয়ে বলে ওঠলেন,
-‘ ভালোবাসো ওকে?’
কিছুক্ষণ মৌনতা কাটালেন আনভীর। বুঝতে পারলেন না যে এখন কি বলা উচিত।
-‘কি হলো বলো?’
আনভীর খানিকবাদে বলে ওঠলেন,
-‘ হ্যাঁ, ভালোবাসি। পেয়েছো তোমার উত্তর?’
হঠাৎ পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো নিস্তব্ধতা। আমি…..আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো? নাকি এই কথাটি উনি শুধুমাত্র বলেছেন পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য? আমি কিছু বলতে যাবো তখনই আনভীর বলে ওঠলেন,
-‘ এ ব্যাপারে আমি কোনোরূপ কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি আহিকে চাই দ্যাটস ইট, ওকে ছাড়া একমুহূর্তও আমার চলবে না। এটাকে যদি আমার জেদ বলো , তবে জেদ। যদি পাগলামি বলো, তবে পাগলামিই। বাট আই নিড হার এট এনি কস্ট।
পরিবেশটা আমার কাছে চাঞ্চল্যকর। কেননা অবশেষে নাহিদ ভাইয়ার কথাটিই সত্যি প্রমাণিত হলো। আনভীর , আনভীর ভালোবাসেন আমাকে। এতটাই ভালোবাসেন যে উনি এক মুহূর্তের জন্য আমায় ছাড়তে পারবেন না। এই প্রথম আমার অনুভূত হলো যে আমি একা নই। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে কোনো মানুষকেই একা পাঠায়না। হয়তো অতীতে আমি একা ছিলাম , কিন্ত এখন একা নই। আমায় এতটা অস্থির হতে দেখে হাত ধরে সান্তনা জানালেন আনভীর। উনার বাবা-মাকে বুঝিয়ে বললেন গতরাতের বিষয়টা। সবসময় যা দেখা যায় সেটা সত্য হয় না। অবশেষে নিজেদের স্থির করলেন উনারা। একপর্যায়ে আনভীরের বাবা বলে ওঠলেন,
-‘একবার ভেবে দেখেছো আনভীর যে এই খবরটা মিডিয়ায় পৌঁছে গেলে কি হতে পারে?’
আনভীর নিশ্চুপ।
-‘ শুনো আনভীর। সাংবাদিকরা সবসময় মুখরোচক কথাবার্তা প্রকাশের অপেক্ষায় থাকে। তুমি যে আহিকে নিয়ে এভাবে থাকছো ভেবে দেখেছো বিষয়টা বাইরে কতটা কটু দৃষ্টিতে দেখবে?’
আনভীর এবারও কথা বললেন না। অবশেষে এবার মুখ খুললেন আনভীরের মা। বলে ওঠলেন,
-‘ তোমায় আজই আহিকে বিয়ে করতে হবে আনভীর। আজ মানে আজ। আমি আমার ছেলেকে কিছুতেই এভাবে থাকতে দেবো না যাতে মানুষ নানারকম কথাবার্তা বলতে পারে।’
বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় বড় করে ফেললাম আমি। কি বলছেন উনারা? বিয়ে, আর আজই? আমি ভীত সতস্ত্র হয়ে তাকালাম আনভীরের দিকে। অপেক্ষা করতে থাকলাম উনার প্রতিউত্তর জানার জন্য। কিন্ত উনার মধ্যে কোনোরূপ কোনো ভাবান্তর নেই। আমার দিকে দৃষ্টি রেখে বলে ওঠলেন,
-তাই হবে তাহলে।
তারপর সবকিছু হয়ে গেলো স্বপ্নের মতো। আনভীরের বাবা চেয়েছিলেন ঘরোয়াভাবে কাজটি সারতে। পরবর্তীতে বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে। উনার মা-ভাই আর ভাবিও সায় দিলেন এতে। আমি আনভীরকে বারবার জিজ্ঞেস করলাম যে উনি হুট করে এই সিদ্ধান্ত নিলেন কেনো? উনি তখন একটা কথাই বললেন,
‘ আমি তোমাকে কোনো দায়বদ্ধতা ছাড়াই নিজের কাছে রাখতে চাই।’
কথাটির মর্ম ছিলো অনেক কঠিন। তবুও উনার চোখে আমি কোনো ঘৃণা দেখিনি, না দেখিনি আমার প্রতি বিক্ষোভ। আমার কাছেও যে আর কোনো উপায় ছিলো না, আনভীরের পুরোটা সত্বা জুড়েই ছিলাম আমি। সেই সাথে উনার বেঁচে থাকার আশ্বাসও। বিকেলেই বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয় আমাদের। কবুল বলার মুহূর্তে আমার গলা কেঁপে উঠলেও আমি দায়বদ্ধ ছিলাম উনাতে। উনার চোখেরগম্ভীর দৃষ্টি নিমিষেই আমায় উনার প্রতি মোহে ফেলে দিয়েছিলো। তিন কবুলের একটা বিশেষ সম্পর্কের মাধ্যমেই আমি টের পাই একটা নতুন বন্ধনকে। টের পাই যে এই মানুষটাকে ছাড়া আমি একমুহূর্তও থাকতে পারবো না। একমুহূর্তও না।
__________________
আজ আনভীরের বাবা-মা এখানেই থাকবেন। এর মধ্যে সবার সাথেই সখ্যতা হয়ে গিয়েছে আমার। বিশেষ করে আনভীরের মা আর শিউলি ভাবির সাথে। কথার এক পর্যায়ে একটা বিশেষ জিনিস জানতে পারলাম আমি। আমার তথাকথিত বাবা আনভীরের বাবার মধ্যস্ত কর্মচারী হয়েই কাজ করতেন পূর্বে। পরবর্তীতে বাবা আর রাহি আপু অন্য জেলায় চলে গেলে অনেকটাই তাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আনভীরের মা জানতেন যে আমার বাবার একটি ছোট মেয়ে আছে যে কিনা চাচা-চাচীর কাছে থাকে, তবে আমি যে এত করুন দশায় সেখানে ছিলাম সে ব্যাপারে জানতেন না তিনি।
রাহি আপু আর বাবাকে নিয়ে সন্দেহটা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকলো আমার। কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমার কাছ থেকে অনেক বড় কিছু লুকোচ্ছেন আনভীর। যেটা আমায় উনার কাছ থেকে জানতেই হবে। হঠাৎ পেছন থেকে নাহিদ ভাইয়া বলে ওঠলো,
-‘ কি হয়েছে মিস আহি! উপপপস, আপনি তো এখন আর মিস নেই, এআরকে’র মিসেস হয়ে গিয়েছেন?’
আমি ছোটো ছোটো চোখ করে তাকালাম নাহিদ ভাইয়ার দিকে। বললাম,
-‘ ঠাট্টা করছেন আমার সাথে মশাই!’
-‘ ওমা! ঠাট্টা করবো কেনো? আপনি কি এআরকে’র ওয়াইফ নন, নাকি উনার রূপধারী অন্য কেউ!’
আমি তপ্তশ্বাস ছেড়ে বললাম,
-‘ আপনি ভালোমতই এটা জানেন নাহিদ ভাইয়া যে উনি পরিস্থিতির চাপে পড়েই বিয়ে করেছেন আমায়।’
-‘ এতকিছু দেখা সত্বেও আপনি একথা বলছেন?’
………
-‘ আপনার সাথে ভাইয়ের কি কথা হয়েছিলো মনে আছে? আপনাকে শুধু ছোট্ট একটা অভিনয় করতে হবে উনার ওয়াইফ হওয়ার। বাট কালক্রমে উনি ডিসিশন পাল্টে খামোখাই কি বিয়ে করতে রাজি হলে আপনাকে? কি মনে হয় আপনার?’
-‘ আমি জানি না।’
-‘ তাহলে আমি বলি? উনি আপনাকে নিয়ে ইনসেকিউর ফীল করছেন। উনি ভয় পাচ্ছেন অপূর্বের হাতে আপনি যেন না পড়েন। যদি আপনাকে একজন সিনিয়র ডক্টরের সাথে দেখেই এতটা জেলাস ফীল করতে পারে সে তাহলে আপনাকে এভাবে নিজের কাছে দায়বদ্ধ রাখাটা এখনও কি পরিস্থিতির শিকার বলছেন?’
আমি কথা বললাম না। নাহিদ ভাইয়া হাসলেন। বলে ওঠলেন,
-‘ আপনাকে কোনো বিষয়ে জোর করবো না আমি। কেননা আপনি নিজেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন এআরকের প্রতি ম্যাম। বাই দ্য হয়ে বেস্ট অফ লাক ফর ইউর ফার্স্ট নাইট।’
বলেই সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলেন উনি। আমি কথা না বাড়িয়ে এবার রুমে চলে গেলাম। শিউলি ভাবি অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছেন আজকে। রুমটাও সাজিয়ে ফেলেছেন সুন্দর করে। আমি চুপচাপ রুমে বসে রইলাম। মনে জেগেছে অজস্র চিন্তা। আচ্ছা, কোনোভাবে অপূর্ব ভাইয়া যদি জানতে পারেন আমার এই সত্যটা তবে কি হবে আমার? আনভীর ভালো হলেও অপূর্ব ভাইয়া ভয়ঙ্কর একজন মানুষ, উনি যদি আনভীরের কোনো ক্ষতি করে ফেলেন? এসব ভাবনার ইতি টানলাম হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে।
পেছনে ফিরে দেখি আনভীর দাঁড়িয়ে আছেন। আমার মনের অস্বস্তিটা আরও বেশি চাড়া দিয়ে উঠলো এবার। আমি তাই দাঁড়িয়ে আছি পাথর হয়ে। আনভীর এবার কিছু একটা ভেবে আমার দিকে এগোতে থাকলেন। চোখে মুখে নির্লিপ্ত হাসি। আমি বলে ওঠলাম,
-‘ এগোচ্ছেন কেনো আপনি?’
-‘ বউকে টাচ করবো…..তাই।’
-‘দেখুন……কথা আছে আপনার সাথে।’
-‘ তো বলো?’
উনি থামলেন না। একপর্যায়ে দেয়ালে মিশে দাঁড়ালাম আমি। উনি দাঁড়িয়ে আছেন আমাতে দুষ্টু হেসে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-‘ দেখুন…’
আমায় বলতে না দিয়ে উনি বলে ওঠলেন,
-‘ হুম….দেখছি তো!’
-‘ আপনি…আপনি আগে বলেননি কেনো যে আপনি আগে থেকেই আমায় চিনেন বা আমার বাবার বন্ধুর ছেলে আপনি?’
-‘ এখন জানো এটা?’
-হ্যাঁ।
– তাহলে আর কি? জেনেছো ভালো কথা। আরও প্রশ্ন আছে?
-হ্যাঁ।
– তো কি প্রশ্ন?
উনি কথাটি বললেন খানিকটা ঝুঁকে এসে। আমি ঢোক গিলে বললাম,
-‘ আপনি….’
-‘ আমি?’
-‘ আপনি কেনো বিয়ে করতে রাজি হলেন আমায়? সত্যটা কেনো বললেন না যে আপনি জোরপূর্বক আমায় তুলে নিয়ে এসেছিলেন?’
ফট করে বলে ফেললাম কথাটি। আনভীর মিহি হাসলেন এতে। বলে ওঠলেন,
-‘কারন তুমি আপাদমস্তক মানুষটাই আমার।’
আমি বোকা বোকা চাহিনী দিলাম এতে। আনভীর এবার ফিসফিসিয়ে বলে ওঠলেন,
-‘ এত কাঁপাকাপিঁ করছো কেনো মিসেস আহি? বিয়ে করা বর আমি তোমার। খুব না বলেছিলে আমি এটা-আমি সেটা , এখন লিগ্যালি তোমার কাছে আসাতেই কাপাঁকাপি স্টার্ট? এখন তোমার কাঁপাকাঁপি বন্ধ করার জন্য কিছু একটা করতে হবে মনে হচ্ছে।
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ
ভুলক্রুটি মার্জনীয়।