#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব -১০
-‘ আমার সামনে এভাবে ঠোঁট কামড়াবে না মিসেস আহি। আমি মানুষটা খারাপ তো, হুটহাট উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারি৷ গট ইট?’
আতঙ্কে ঠোঁট কামড়ানো বন্ধ করলাম আমি। নিঃশ্বাস ফেলছি ঘনঘন। আনভীর যে আমার এই স্বভাবটি নিয়ে এমন এক মন্তব্য করে বসবেন আমার সেটা ছিলো একেবারেই কল্পনার বাহিরে। আমি আতঙ্কেই মাথা নাড়ালাম এবার। আনভীর সেটা দেখে দরজার পাশে থাকা হ্যাঙ্কার থেকে একটা সাদা তোয়ালে হাতিয়ে নিলেন। কিন্ত দৃষ্টি সরাননি আমার থেকে। আমি তাই আনমনে মাথা নিচু করলাম।
তাৎক্ষণিক ভাবেই আনভীর হাত টেনে কাউচের সামনে নিয়ে আসলেন আময়। নিজে আরামসে কাউচে বসে আমার হাতে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠলেন,
-‘ কপাল মুছে দাও। ‘
অপ্রতিভ হলাম আমি। মানুষটার জড়ানো কন্ঠ আমার সারা শরীর আবিষ্ট করে ফেলেছে। তাই পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,
-‘ আমি?’
-‘ এখানে তুমি ছাড়া আর কোন বউ আছে আমার?’
এই ‘বউ’ শব্দটিই আমায় স্তব্ধ করতে যথেষ্ট। হৃদয়ের গহীনে জেগে ওঠছে অবিশ্রান্ত কিছু সুক্ষ্ম অনুভূতি। আমি হালকা হাতে উনার হাত থেকে তোয়ালে কেড়ে নিলাম। মুছে দিলাম উনার কপালে, চুলে, গলায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম। আনভীর নির্বিকার। উনি এমন এক ধরনের ভাব করছেন যে এসব উনার কাছে স্বাভাবিক। কিন্ত আমার কাছে মোটেও স্বাভাবিক না এগুলো। আমি এবার তোয়ালে টা উনার কাছে দিয়ে চলে যেতে নিলেই উনি বলে ওঠলেন,
-‘ আজকে হসপিটালে যাবে?’
আমি মাথা ওপর নিচ করলাম। বললাম,
-‘ হ্যাঁ, আজকে ফার্স্ট ডে আমার।’
-‘ তাহলে নাহিদকে পাঠিয়ে দেবো তোমার সাথে। ভুলেও একা যাওয়ার প্ল্যানিং করবে না।’
-‘ আপনার……..আপনার না আজ একটা সং রেকর্ড করার কথা?’
বিস্মিত হলেন আনভীর৷ প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
-‘ হাউ ডু ইউ নো?’
-‘ আ…আপনিই তো বলেছিলেন গতকালে নাহিদ ভাইয়াকে। তাহলে উনি যেহেতু আপনার সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছে তাহলে আপনার উনাকে প্রয়োজন পড়বে না? খামোখা আমার পেছনে উনার সময় ব্যয় করে আপনার কাজের ক্ষতি করবেন কেনো?’
ঠোঁট চেপে সরু দৃষ্টিতে তাকালেন আনভীর। বলে ওঠলেন,
– ‘ আমার কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি তুমি। আর নাহিদকে ছাড়া এতটাই আমি অচল হয়ে পড়বো না যে আমার কাজ হবেনা। তোমায় নাহিদই নিয়ে যাবে আর ও-ই দেখভাল করবে তোমার। বুঝেছো?’
-‘ হুম।’
-‘ আর হ্যাঁ……’
বলে উঠে দাঁড়ালেন কাউচ থেকে। ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে বললেন,
-‘ ওয়ান্স এগেইন আই রিপিট কেউ যেন জানতে না পারে আমাদের ব্যাপারে। এটা জানা মানে মিডিয়াতে ফাঁস হওয়া। যা আমি চাই না।’
কেন জানি কথাটি শুনে প্রচন্ড খারাপ লাগলো আমার। কি এমন হবে আমার কথা সবাইকে জানালে? এখন তো আমাদের দেখে কেউ আর লিভ টুগেদারের ট্যাগ লাগাতে পারবে না। তাহলে?এর মানে কি এটাই দাড়াঁয় যে উনি আমার প্রতি দুর্বল হলেও বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাননি? আমার মুখ এমন মলিন দেখে হয়তো কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছেন আনভীর৷ বললেন,
-‘ যদি আমাদের সত্যটা সবাই জেনে যায় জানো কি হবে? অপূর্ব ঠিকানা পেয়ে যাবে তোমার। আমি ওর মতো কোনো illegal কাজের সাথে জড়িত না যে চাইলেই ওকে প্রতিহত করতে পারবো এসব ব্ল্যাক পাওয়ার দিয়ে।’
আমি মৌনতা বজায় রাখলাম। উনি বললেন,
-‘ ওকে ইউ মে গো নাও। ভাবিকে বলে দিও আমি ব্রেকফাস্ট পরে করে৷ নিবো।’
উনার কথা অনুযায়ী তারপর চলে গেলাম আমি। একপ্রকার দৌড়েই আমি কিচেনে গেলাম। আজরান ভাইয়া আর নাহিদ ভাইয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আলাপচারিতা করছিলেন তখন। আমায় দেখে আজরান ভাইয়া বলে ওঠলেন,
-‘ হোয়াট হ্যাপেন্ড আহি? এভাবে দৌঁড় দিলে যে! পেছনে কিছু ধাওয়া করেছে নাকি!’
আমি মিনমিনিয়ে বললাম,
– কিছু না ভাইয়া!
নাহিদ এদিকে মিটমিটিয়ে হাসলেন। বললেন,
-‘ ওহহোওওও! আজরান ভাই বুঝেন না যে কে ধাওয়া করতে পারে?’
করুন চোখে তাকালাম আমি সবার দিকে। মনে হচ্ছে যে আজ সবাই ঘুম থেকে উঠেছে শুধুমাত্র আমায় লজ্জা দেওয়ার জন্য। সবগুলাই একরকম, যেমন ছোট ভাই,অমনই বড় ভাই!
_____________
হসপিটালে প্রথম ওয়ার্ক ডে আজ। সেই হিসেবে দিনটা ভালোই গিয়েছে। বলা বাহুল্য এই হসপিটালটি দেশের অন্যতম কিছু ব্যয়বহুল হসপিটালের মধ্যে একটি। সবার বিশেষ করে আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের এখানে খুব একটা ব্যয় বহন করার অবস্থা নেই। তাই বড় বড় নেতা-মন্ত্রী বা অধিক অর্থবান মানুষ বা পাবলিক ফিগার টাইপ মানুষদের আসা যাওয়াটাই এখানে বেশি। সেই সুবাদে এখানকার ডক্টরদের হতে হয় অনেকটাই বেশি অভিজ্ঞ। প্রথমে ইন্টার্নিশিপ, তারপর ট্রেনিং এর সাথে এসিস্ট্যান্ট ডক্টর হিসেবে জয়েন করার পর যদি নিজের নিপুণতা ভালোভাবে প্রদর্শন করতে পারে তবেই আমার এখানে পার্মানেন্ট ডক্টর হিসেবে কাজ ফাইনাল। আর এই জায়গায় সুযোগ পাওয়ার জন্য রাত দিন পরিশ্রম করেছি আমি।
গাড়ি থেকে নামতেই আমার অন্যরকম এক অনুভূতি হলো। আমার এক হাতে এপ্রোন আর ব্যাগের ভেতর স্টেথোস্কোপ সহ আরও প্রয়োজনীয় কিছু যা এখন থেকে হসপিটালের লকারেই থাকাবে। নাহিদ ভাইয়া পাশ থেকে নামলেন এবার। ইশারায় বললেন,
-বেস্ট অফ লাক ফর ইউর ফাস্ট ডে!
আমি মুচকি হেসে চলে গেলাম হসপিটালের ভেতরে। তারপর ডক্টর ধ্রুবের সাথে একে একে ওয়ার্ড চেক, তারপর হসপিটাল অথরিটির সাথে মিটিং এটেন্ড সহ কাজ করতে করতে বেলা পেরিয়ে যায়। কাজ শেষে আমি বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলাম হসপিটাল থেকে। নাহিদ ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন,
-‘ দিন কেমন গেলো আপনার?’
-‘ টু মাচ গুড!’
হুট করে মনে পড়লো আনভীরের কথা। ভেবে দেখলাম একবার কল দিবো নাকি! অনেক ভেবেচিন্তেই কল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি। জিজ্ঞেস করলাম,
– ভাইয়া, আনভীরের নাম্বারটা দিবেন?
নাহিদ ভাইয়া হাসলেন। পকেটের দিকে ইশারা করে বললেন,
-ড্রাইভে আছি তো। পকেট থেকে নিয়ে নাও মোবাইলটা।
আমি মোবাইলটা নিয়ে নাম্বার আমার মোবাইল তুলে কল দিলাম আনভীরকে। বুক দ্রিমদ্রিম করছে উত্তেজনায়। কয়েকবার রিং হওয়া মাত্রই অপরপাশ থেকে ভেসে আসলো এক মেয়ের মিষ্টি কন্ঠ,
-‘ হ্যালো!’
অবাক হলাম আমি। উনার মোবাইলে এটা আবার কে রিসিভ করলো? আমি বললাম,
-‘ হ্যালো, কে আপনি?’
-‘ আগে বলুন আপনি কে?’
মেয়েটার কথা শুনে রাগে শিরশির করে ওঠলো আমার শরীর। কোনোমতে নিজেকে শান্ত করে বললাম,
-‘ এআরকে কে দিন, বলুন আহি কল দিয়েছে। তারপর উনাকেই জিজ্ঞেস করবেন যে আমি কে! ‘
মেয়েটা সাথে সাথেই বললো,
-‘ মি. নাহিদের জায়গায় আমি এআরকের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছি মিস অর মিসেস। উনি এখন ব্যস্ত আছেন মিউজিক ডিরেক্টরের সাথে। এখন কথা বলতে পারবেন না, সরি।’
বলেই টুট করে কল কেটে দিলো মেয়েটা। এমন ব্যাবহারে তাজ্জব হয়ে রইলাম আমি। কল কেটে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলাম। ওপর পাশ থেকে সবই শুনছিলেন নাহিদ ভাইয়া। বলে ওঠলেন,
-‘ আজ এআরকে’র খবর আছে!’
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ
আজকে পার্টটা ছোট দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। লিখার সময় হয়ে ওঠেনি। নেক্সট পার্ট বড় করে দিবো ইনশাআল্লাহ।