এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়_২ #লেখিকা – কায়ানাত আফরিন #পর্ব – ৭ (বোনাস)

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়_২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৭ (বোনাস)
আনভীর গাড়ি চালাচ্ছেন তুমুলগতিতে। চোখে-মুখে এখনও সীমাহীন রাগ। আমি এখন অবগত হতে পারলাম না তখন ধ্রুবের সাথে সামান্য হ্যান্ডশেক করাতে এত রাগের মতো কি আছে? আমি তপ্তশ্বাস ছাড়লাম। কোনোমতে ভয়টা চেপে বলে ওঠলাম,

-‘ গা..গাড়িটা আস্তে চালান আনভীর। আ…আমার ভয় হচ্ছে।’

-‘ যখন ওই ছেলেটার হাত ধরেছিলে তখন ভয় হয়নি যে আমি কি করবো?’

-‘ আজব তো? আমি ভয় পাবো কেনো, আর আপনিই বা এমন করছেন কেনো বলুন তো? কোনোভাবে আপনি জেলাস নয়তো?’

ফট করে কথাটি বলে ফেললাম আমি। আনভীর গাড়ি থামালেন এবার।বিস্ময় নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। যেন ভাবতে পারেননি আমি এমন কিছু বলবো। আসলে আমিও ভাবিনি বিষয়টা। কেননা নাহিদ ভাইয়ার কথাগুলো মাথায় এমনভাবে গেঁথে গিয়েছে যে বারবার মনে হচ্ছে নাহিদ ভাইয়ার কথাগুলোই আসলে সত্যি। আনভীর এগিয়ে এলেন আমার দিকে। আমি অবাকমিশ্রিত চাহিনী দিয়ে ধীরে ধীরে পেছনে সরে যেতেই উনি শীতল কন্ঠে বলে ওঠলেন,

-‘ ইয়েস আমি জেলাস! অবিয়াসলি জেলাস হবো। আমার কখনোই ভালো লাগেনা যখন আমার জিনিসগুলোতে কেউ নজর দেয়। স্পেশিয়ালি ওই মানুষটাকে তো নাই-ই।….(কিছুটা থেমে বললেন)…আমার ছোটবেলার ক্লাসমেট ছিলো ধ্রুব। পরে আমি লন্ডন চলে যাওয়ার পর ও নিজেই আমার সাথে অনলাইনে যোগাযোগ রাখে।বাট ওর বিহেভ কোনোকালেই পছন্দ ছিলো না আমার। সবচেয়ে বড় কারন আমার জিনিসগুলার প্রতি ওর নজর একটুই বেশি। আর ভাগ্য কতটাও আজব তাই না? দুনিয়ায় এত ডক্টর থাকতে তোমারই ওর সাথে পড়তে হলো। আজব! যদি আমি অপূর্বের সাথে তোমাকে সহ্য করতে না পারি তবে ওই মানুষটার সাথে এত মিষ্টি মিষ্টি কথা কিভাবে সহ্য করবো আমি?’

বলেই উনি সিটে শরীর ছেড়ে দিলেন। ক্যাপটা খুলে রেখে দিলেন সিটের এক সাইডে। কয়েকদফা স্তব্ধ হয়ে রইলাম আমি। উনার আমার প্রতি এই ব্যবহার যেনো বিষয়টা আরও রহস্যময় করে তুললো। আমার ভাবনাতে এতটাই ব্যতিব্যস্ত ছিলাম যে উনি কখন গাড়ি স্টার্ট করলেন আর গন্তব্যে এসেও পড়লেন তা টেরই পায়নি আমি। উনার আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজাতেই আমার ধ্যান ভাঙলো। উনি বললেন,

-‘ কি ভাবছো তুমি?’

-‘ ক….কিছু না।’

বলেই মাথা ঘুরিয়ে বাইরে তাকালাম আমি। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে উনি গাড়ি থামিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম

-‘এখানে কেনো আমরা?’

-‘ তোমার লাঞ্চ+ডিনার এখানেই হবে তাই।’

-‘ আমি আ..আপনার সাথে? কেউ দেখে ফেললে আপনারই সমস্যা হবে তো?’

উনি মাথা ঘামালেন না বিষয়টা নিয়ে। বলে ওঠলেন,

-‘রিল্যাক্স। আমি তো আর খাবো না। আমার খাওয়া আগেই কমপ্লিট। আর আমি মাক্স-ক্যাপ সব পড়ে থাকবো যাতে কেউ আমায় চিনতে না পারে। প্রশ্ন করা শেষ? নাও কাম উইথ মি।’

বলেই উনি বের হলেন গাড়ি থেকে।সেই সাথে আমিও। বলা বাহুল্য লোকালয় থেকে রেস্টুরেন্টটা একটু দূরে বলে মানুষজনের পরিমাণও অনেক কম। আনভীর খাবার অর্ডার করলেন আমার জন্য। আমি তাই কথা বাড়াইনি। অর্ডার দেওয়ার পর উনি জিজ্ঞেস করলেন,

-‘ তো কেমন গেলো তোমার দিন আজকে?’

-‘ আপনি যেহেতু ছিলেন না, স্বাভাবিক ,ভালোই গিয়েছে।’

কথাটি বললাম উনাকে জাস্ট একটু ইরিটেড করার জন্য। তবে মনে হয়না উনি বিরক্ত হয়েছেন এতে। চশমার আড়ালে থাকা সেই প্রগাঢ় চোখের হাসি বুঝতে আমার খুব একটা অসুবিধে হলো না। উনি বললেন,

-‘ ভালোলাগে আমায় ইরিটেড করতে?’

-‘ একটু বেশিই ভালোলাগে। এতদিন তো আমায় কম জ্বালাননি মশাই, আমার সেফটি যেহেতু আপনি বহন করছেন তাই আমার বাকি সবটাও নাহয় বহন করতে শিখুন।’

এভাবেই খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম আমি। তারপর বিল পে করে দুজনেই বেরিয়ে গেলাম বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এই প্রথম এতটা ফ্রিডম নিয়ে কারও সাথে ঘুরতে পারছ আমি। কেননা অপূর্ব ভাইয়া বা চাচু-চাচি চখনই আমায় এতটা স্বাধীনতা দেয়নি, এখানে যেওনা-ওখানে যেওনা-এই কাজ করো-ওই কাজ করো-এটা করোনা ওটা করো আরও অনেককিছু। ভাইয়ার কাছে আমি ছিলাম একটা কাঠের পুতুলের মতো। উনার রাগ হলে সব রাগ আমার ওপরই ঝাড়তেন উনি। অমানুষিক ভাবে আমায় দিয়ে কষ্ট দিতেন। এমনি একবার স্কুল লাইফে আমাদের বন্ধুমহলের একজন ট্রিট দিয়েছিলো রেস্টুরেন্টে। সেটা দেখে কি-ই না রাগ করলো ভাইয়া। আমায় জঘণ্য জঘণ্য কথা শোনাতে লাগলো। কথার মর্ম হলো এমন আমার মা নেই-বাবা ফেলে রেখে চলে গিয়েছে, বাবার কাছেআমি জীবিত থেকেও ছিলাম মৃত। সবশেষে তাই আমায় অপূর্ব ভাইয়ের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। এই মানুষটা আমায় মেডিক্যালে পড়তে দিয়েছিলেন এটাই আমার জন্য অনেককিছু ছিলো। তারপর কালক্রমে হুট করেই আমার জীবনে এসে পড়লেন আনভীর। এমন একজন মানুষ , যাকে আমি একজন সিঙ্গার বা আইডল ছাড়া আর কিছু হিসেবে চিনি না। বাট উনি সবকিছু জানেন আমার। আমার ছোটবেলা থেকে শুরু করে অপূর্ব ভাইয়া পর্যন্ত সব।
উনি মুখে বলেন আমায় ব্যবহার করছেন রাহি আপুকে পাওয়ার জন্য আর কাজে প্রকাশ করছেন অন্যকিছু। উনার সবকিছুর মর্ম এটাই হয়ে দাঁড়ায় উনি আমায় ওই নরপিশাচগুলোর কাছে ফিরিয়ে দিবেন না। ছিনিয়ে যেহেতু নিয়েই এসেছেন, আগলে রাখবেন আমায়। আচ্ছা , উনার ডিসঅর্ডারের একটা লক্ষণের মধ্যে তো এটাও আছে যে এই পেশেন্টরা নিজেদের জিনিস নিয়ে অনেকটা বেশিই ওভারপ্রোটেকটিভ হয়। আমার প্রতি উনার এই ব্যবহারটার দ্বারা কি এটাই ভাববো যে আমি উনার নিজের জিনিস? যেটা একান্তই নিজের?

হঠাৎ হাতের মধ্যে টান পড়তেই চমকে উঠলাম আমি। আনভীর পার্কিং সাইডে হঠাৎ নিজের গাড়ির কাছে না যেয়ে আমায় নিয়ে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেলেন যাতে কেউ আমায় দেখতে না পায়। আমি ভয় পেয়ে বলে ওঠলাম,

-‘ক…কি করছেন আ….?’

আমায় বলতে না দিয়েই আমার মুখ চেপে ধরলেন উনি। নিবিঢ় কন্ঠে বলে ওঠলেন,

-‘হুসসসস, কথা বলো না। নাহলে অপূর্ব দেখে ফেলবে তোমায়।’

অপূর্ব নামটি আমার কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকালাম পেছনে। আসলেই অপূর্ব ভাইয়া এসেছেন এখানে , উনার সাথে বাকি সাঙ্গপাঙ্গরাও। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম যে উনি আমার ছবি দেখিয়ে একজনকে জিঙ্জ্ঞেস করছেন আমি এখানে ছিলাম কি-না। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম এতে। ভাইয়া কিভাবে জানলো যে আমি এখানে আছি? আনভীর ফিসফিসিয়ে বললেন,

-‘হোয়ার ইজ ইউর ফোন আহি?’

-‘ব…ব্যাগে।’

উনি তৎক্ষণাৎ ব্যাগ থেকে ফোন হাতিয়ে লোকেশন অফ করে দিলেন। আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে এখানে ভাইয়া আসলো কিভাবে। আসলে ভয় পাচ্ছি আমি। কপাল দিয়ে অনবরত ঘাম ঝরছে, শরীর কাপঁছে অল্প অল্প। আমায় এতটা ভয় পেতে দেখে আনভীর বলে ওঠলেন,

-‘ভয় পেও না আহি। আমি আছি তো!’

উনার গরম নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়তে এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলে ওঠলো মনে। এই প্রথম মনে হলো যে না, কেউ না কেউ তো আছে যে চিন্তা করে আমার। যে আমায় অতীত থেকে নিয়ে আসবে এক সুন্দর দিনের দিকে। হঠাৎ সামনের দৃষ্টি ঘোলাটে হতে থাকলো আমার। উনার শরীরে হঠাৎ নিজের ভর ছেড়ে দিয়েই আঁকড়ে ধরলাম উনার শার্ট যাতে কিছুতেই উনি আমায় ছেড়ে যেতে না পারেন।
.
.
.
মাঝরাতে একপর্যায়ে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। আমি আবছা ভাবে দেখেছিলাম যে আমি আনভীরের রুমে আর উনি উবু হয়ে আমার কপালে জলপট্টি করতে ব্যস্ত আছেন। সেই রাশাভরি চোখজোড়ায় বিদ্যমান উদ্বিগ্নতার ছাপ। সেটাও কি আমার জন্য? আমি উনার গালে আলতো ভাবে হাত দিয়ে অপূর্ব ভাইয়ার নাম উচ্চারণ করতেই উনি বলে ওঠলেন,

-‘ ভয় নেই আহি। আনভীরের কাছ থেকে কোনো অপূর্বই আহিকে কেড়ে নিতে পারবে না।’

আর কিছু শুনতে পারলাম না আমি। ধীরে ধীরে তলিয়ে গেলাম ঘুমে রাজত্বে।
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ!

ওয়েট গাইস, ওয়েট! লাস্ট পার্টে ডিসঅর্ডার নিয়ে একটা ছোট্ট হিন্ট দেওয়ার পর সবাই দেখি রীতিমতো গুগল ঘাটাঘাটি শুরু করে দিয়েছো। ইন্টেরেস্টিং তো! কিন্ত এবার ইমাজিনেশন থামাও গাইস, জাস্ট একটা ছোট্ট হিন্ট দিলাম, ‘আনভীর যেমন, সে ওমনই থাকবে।’, দুনিয়ায় উল্টে গেলেও ওর মধ্যে কোনো চেইন্জ আসবে না। নাও হ্যাপি! ওরে এমনিতেও সবাই সিজন১ এ পাগল বলে উপাধি দিয়েছিলো, এবার আমি ওর পাগলের সার্টিফিকেট দিয়ে দিলাম। এটাই জাস্ট, এই বাচ্চাটাকে এবার মাইর দিও না প্লিজ! আহির জন্য ওভারপজেসিভ টাইপই একজন পার্ফেক্ট, আনভীর পাগলার মতো🙃
আমি আবার অনুরোধ ফেলে দিতে পারিনা। তাই বোনাস পার্ট দিয়ে দিলাম। চলবে তো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here