এক_শ্রাবণ_হাওয়ায় পর্ব – ২৮+২৯

এক_শ্রাবণ_হাওয়ায় পর্ব – ২৮+২৯
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন

মামুদের বাড়ির বারান্দায় সোফায় শান্ত হয়ে বসে আছে অপূর্ব ভাইয়া। আমার চাচ্চুর ছেলে। যার সংলাপটা আমার জীবনে খুব কমই টেনে আনা হয়। আসলে আমি তার অস্তিত্বটাকে আমার থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার জীবনের একসময়ে সে এমনভাবে আমার মস্তিষ্কে জায়গা করে নিয়েছিলো যেটার কথা ভাবতেই আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। তাই আমি তাকে দেখে আরও গুটিশুটি হয়ে তার বিপরীতমুখী সোফায় বসলাম। আমায় এতটা ভয় পেতে দেখে মিহি হাসলো অপূর্ব ভাইয়া। বললেন,

-‘তোর ভয়টা আর কমাতে পারলাম না আমি।’

আমি চুপ হয়ে বসে রইলাম।তবে একটা জিনিস টের পেয়েছি, ভাইয়া পরিবর্তন হয়েছে আগের থেকে। তার কথাবার্তা , আচার-আচরণ , ব্যাক্তিত্ব সবকিছুতেই একটা অভাবনীয় পরিবর্তন দেখে আমার অন্যরকম লাগলো। এডমিশন টেস্টের কিছুদিন আগেও চাচীর সাথে কথা হয়েছিলো আমার। তখন উনি ভাইয়ার যা পাগলামির কথাগুলো বললেন সেগুলোর সাথে উনার এখন আকাশ-পাতাল তফাৎ। তবুও আমার ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো সুযোগ পেলেই হয়তো আবার অতীতের মতো আমায় আঘাত করে বসবে। তারওপর মামা-মামী, ছোটমামা কেউই বাড়িতে নেই। নীলু বললো যে ওর নানুবাড়িতে কার জানি সন্তান হয়েছে সেই উপলক্ষে সকালেই সবাই সেখানে গিয়েছে। আমায় গতরাতে মামী বলেছিলো কিন্ত আমি ভুলে গিয়ছিলাম ব্যাপারটি। আমি নিজেকে শক্ত রাখলাম। কেননা ভয়ই অন্য একজনের মধ্যে পশুত্ব এনে দেয়। আমি থমথমে গলায় বললাম,

-‘কেন এসেছো এখানে তুমি?’

-‘আমি তো ভেবেছিলাম যে তুই আগে জিজ্ঞেস করবি যে তোর ঠিকানা কোথায় পেলাম?’

ভাইয়ার সরু কন্ঠ। কিছুক্ষণ নীরবতা কাটানোর পর নিজ থেকেই বললো,

-‘আনভীর কল দিয়েছিলো তোর বাবার কাছে। জানতে পারলাম তুই নাকি মামু বাড়িতে আছিস। আর আমিতো এ বাড়ির ঠিকানা আগে থেকেই জানতাম। তাই এসে পড়েছি তোর সাথে কথা বলার জন্য।’

-‘আমার প্রশ্ন এটা ছিলো না ভাইয়া। আমি জিজ্ঞেস করেছি যে কেনো এসেছো এখানে?’

ভাইয়া বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। বলে ওঠলো,

-‘তুই আর আগের মতো নেই রে আহি ! বিয়ের পর এত পরিবর্তন?’

-‘সেটা নিয়ে তোমায় এত ভাবতে হবে না।’

অপূর্ব ভাইয়া কি একটা ভেবে আমার হাত ধরে টেনে পা চালিয়ে আমার বেডরুমে নিয়ে গেলো এবার। আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে যে রুম থেকে বেরিয়েছি ওটা দেখেই সে আন্দাজ করে নিলো যে এই রুমটিতেই হয়তো আমি থাকি। আমার চোখ-মুখ ফ্যাকাশে হয়ে এলো ভাইয়ার এমন কাজে। নীলুও আশেপাশে নেই যে ওকে ডাকবো। অগত্যা আমি হাত মোচড়া মোচড়ি করতে করতে বললাম,

-‘এভাবে হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলে কেনো?’

-‘এমন ভাব করছিস যে আজই তোর হাত ধরেছি।’

ভাইয়ার কথা শুনে তৎক্ষণাৎ নিজের হাত জোরপূর্বক আমি ছাড়িয়ে নিলাম। গহীন কন্ঠে বললাম,

-‘আগে কেনো ধরেছিলে তা আমার মনে নেই, তুমি এরকমটা ভাবলে কি করে? শুনে রাখো , উইদআউট মাই পার্মিশন নেক্সট টাইম কখনোই আমায় স্পর্শ করতে আসবে না।’

অপূর্ব ভাইয়া আমায় এতটা রেগে যেতে দেখে অবাকের চরম সীমানায় চলে গিয়েছে। আমার এই ব্যবহার তার কাছে নতুন। এমনকি আমি নিজেও অবাক হয়েছি নিজের এমন বিক্ষোভে। আসলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চাপে সবমিলিয়ে আমি এতটাই পাথর মনের হয়ে গিয়েছি যে আজকাল কারও জন্যই তেমন কোনো অনুভূতি কাজ করেনা। নিজেকে এতটা স্ট্রং থাকার পেছনে কি আমার উচিত আনভীরকে ক্রেডিট দেওয়া? অপূর্ব ভাইয়া এবার ইশারায় জানালার পাশে থাকা কাঠের চেয়ারটিতে বসতে বললো। আমি বসমাত্র সে আমার বরাবর বসে পড়লো চেয়ারে। জানালা খোলা থাকায় শীতল হিমের হাওয়ার উপস্থিতি আমার গায়ে অন্যরকম ভালোলাগা এনে দিয়েছে। অল্পবিস্তর মেঘের আমেজে নীল আকাশটি সুন্দর।
অপূর্ব ভাইয়া মৌনতা কাটালো কিছুক্ষণ। ঠোঁট চেপে গম্ভীর ভঙ্গি নিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকলো। তার উজ্জল মুখে সেই ভাবটা স্পষ্টতই নজরে পড়ছে আমার। অতঃপর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলো,

-‘আহি আমি জানি আমার জন্য তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিলি। কিন্ত তুই তার থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছিস আমার চলে যাওয়ার পর। আমার মা তোকে দিয়ে অমানুষিক কাজ করিয়েছে, তাই না রে? বিশ্বাস কর , আমি থাকলে মা কখনোই এমনটা করার সাহস পেতো না। কারন সে জানে তোকে কতটা ভালোবাসি আমি।’

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম এবার। বলে ওঠলাম,

-‘আমার কপাল ভালোবাসার সাক্ষাত কখনও ঘটবে না ভাইয়া। আর তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো ওটা তোমার পাগলামি। তুমি শুধু জোর করে আমায় নিজের কাছে বন্দী রাখতে চেয়েছিলে। তোমার কোন জিনিসটাকে ভালোবাসা বলে দাবি করবো আমি? আমি তোমার জন্য কোনো ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে পারতাম না , আমায় কোথাও যাওয়ার অনুমতি ছিলো না, আমি অপরিচিত বা পরিচিত কারও সামনে গেলে তুমি হুংকার দিয়ে বাড়িঘর তুলে ফেলতে। একবার কি করলে? আমার কলেজের এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে শাড়ি পড়ে গিয়েছিলাম আমি। তুমি তা জানতে পেরেই টেনে হিচড়ে বাড়িতে নিয়ে এলে আমায়। তোমার অনুমতি নিয়ে যাইনি বলে আমার হাতের মধ্যে গরম খুন্তি চেপে ধরেছিলে। আলমারি থেকে আমার সব শাড়ি বের করে পুড়িয়ে দিয়েছিলে। একটা কথাই বলে যাচ্ছিলে তুমি ছাড়া কেউ আমায় দেখতে পারবে না। এককথায় আমার ছোটোখাটো জীবনটাকে জাহান্নামে পরিপূর্ণ করার জন্য তুমিই যথেষ্ট ছিলে অপূর্ব ভাইয়া!’

আমি থেমে গেলাম এবার।তাকালাম ভাইয়ার দিকে। তার মধ্যে কোনোরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পেলাম না আমি। তাই আবার বললাম,

-‘একবার তুমি কি যেন বলেছিলে? তুমি আমায় ভালোবাসো বা এসব কথাগুলো আনভীরকে বলে দিবে তাইতো? তাহলে বলে দিও। আমার কাছে এখন কারও অনুভূতিই কোনোরূপ কোনো ম্যাটার করে না।’

অপূর্ব ভাইয়া এবার হাটুগেড়ে বসে পুনরায় হাত ধরলেন আমার বারণ করা সত্বেও। বলে ওঠলেন,

-‘দেখ আহি, তোর এই কষ্টের জন্য হয়তো আমিও অনেকাংশে দায়ী কিন্ত সত্যি বলছি , আমি আমার ভুলটুকু বুঝতে পেরেছি। তাইতো ফিরে এলাম বাবার বারণ করা সত্বেও। তোর হঠাৎ বিয়েতে আমি প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলাম। কিন্ত পরে যাচাই করে দেখলাম যে আনভীরের সাথে এক্সিডেন্টলি তোর বিয়েটা হয়ে গিয়েছে। যদি আমি তখন থাকতাম তাহলে কখনোই তোদের বিয়ে আমি হতে দিতাম না। আমার চোখের অগোচরে মা তোর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তবে আনভীর আর তোর মধ্যে যে সম্পর্ক অন্য চার-পাঁচজনের মতো না তা আমি জানি।তোকে শুধু নামেমাত্র এই বোঝাটা টানতে হয়েছে পরিস্থিতির শিকারে।
আহি ! তোকে আমি বড্ড ভালোবাসি রে। আগের মতোই ভালোবাসি। আই প্রমিস , তোর সাথে কখনোই আগের মতো ওভার প্রোটেকটিভ আমি হবো না। মানুষ তো মাত্রই ভুল করে তাই না? এখন আমায় দিয়েও একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। এখন,,,,,,,’

-‘তুমি কি চাও সরাসরি বলো ।’

-‘আমি তোকে চাই। আমি চাই তুই ওই নামে মাত্র বিয়ে থেকে সরে আয়। ‘

আমি এবার বললাম,

-‘আমার বিয়ের দিন কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। সবাই শুধু বলেছিলো যে আমি নাকি বিয়ের আগে আনভীরের সাথে এক ঘরে,,,,,,(এতটুকু বলে থামলাম),,,,,,,তুমি কেন আমা বিশ্বাস করছো?’

-‘তোকে আমার ভালোমতো জানা আছে আহি। চাচিমা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের পরিবারেই তুই বড় হয়েছিস। তুই আর যাই কর্ , একজন ছেলের সাথে কখনোই বিয়ের আগে এসব করতে পারবি না।’

আমি নিশ্চুপ।

-তুই এত কি ভাবছিস আহি? আমি তোর মুখ দেখেই আন্দাজ করতে পেরেছি যে তুই ওই ছেলেটার সাথে সুখে নেই। আমি চাই তুই সুখটা ডিজার্ভ কর যা তুই কখনোই আনভীরের সাথে পাবি না। ইভেন আনভীর নিজে বলেছে যে তোর যদি ইচ্ছে হয় তবে তুই ওকে ছেড়ে দিতে পারবি। আনভীর বা ওর ফ্যামিলি তোকে কোনো বাধা দিবে না।’

আমি খপ করে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। ‘আনভীরের’ নামে কথাগুলো শোনার পর মাথা কেমন যেনো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-‘মানে? উনার সাথে কথা হয়েছে তোমার?’

-‘হুম। গতকাল তার সাথে তার ভার্সিটিতে দেখা করেছিলাম।’

আমি শুকনো ঢোক গিললাম। জিজ্ঞেস করলাম,

-‘তাহলে তুমি যে উনাকে সব বলে দিয়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই আমার।,,,,,,,,,,,,,,,কি বলেছেন উনি?’

-‘কি আর বলবে সে? আমি স্পষ্টত সব বলেছি তোর কথা। আমি তোর সাথে কি অন্যায় করেছিলাম সেটাও বলেছি। ফার্স্ট এ আনভীর রিয়্যাক্ট করলেও যখন বললাম যে আহি কি সত্যিই ভালো আছে এ বিয়েতে,হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো সে। আনভীর চক্ষুলজ্জার জন্য কিছু বলতে পারছে না আহি। ও শুধু এতটুকুই বলেছে তোর যদি ইচ্ছে হয় তাহলে ও নিজ দায়িত্বে তোর আর আমার মাঝ থেকে সরে যাবে।’

শেষ কথাটি বুকে তোলপাড় শুরুকরে দিলো আমার। আমার মস্তিষ্ক যেন নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। অপূর্ব ভাইয়া আরও অনেক কথাই বলেছিলেন কিন্ত মূর্তির মতো বসে রইলাম আমি। আনভীর শেষ পর্যন্ত ছাড়াছাড়ির প্রসঙ্গটাও বলে দিলেন?
অপূর্ব ভাইয়া আমার হাত আরও জোড়ালোভাবে আকড়ে ধরার চেষ্টা করতেই আমি দাঁড়িয়ে সজোরে চড় বসিয়ে দিলাম তার গালে। জীবনের এই প্রথমবার ; এই প্রথমবার এতটা রেগে গিয়েছি আমি যে যাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই তার গায়ে হাত তুলতেও ভাবলাম না দুইবার। সে স্তব্ধ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম ,

-‘আমি কি কখনও বলেছি যে তোমায় ভালোবাসি আমি?তাহলে কি দরকার ছিলো উনাকে এসব বলার?’

-‘আহি ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি আমরা। তুই ভালোমতই জানিস ওই আনভীর থেকে তোকে আমি যথেষ্ট ভালো রাখতে পারবো যেখানে তোদের বিয়েটা জাস্ট একটা নাটক মাত্র। আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও একটা বন্ধন ছিলো তা তুই জানিস?’

-‘না ! আমি জানতে চাই না , জানার চেষ্টাও করবো না। তোমার পাগলামি একতরফা ভাইয়া!……এখন প্লিজ আমায় একা ছেড়ে দাও। চলে যাও এখান থেকে।’

-‘আহি!’

-‘আমি যেতে বলেছি তোমায়।’

আমায় এতটা অস্থির হতে দেখে চলে গেলেন অপূর্ব ভাইয়া। আমি পা ভেঙে নিচে বসে পড়লাম। আনভীরের ওপর জমানো রাগটাই আমি ভাইয়ার ওপর ঢেলে দিয়েছি এভাবে। আমি মানছি সেদিন রাগবশত অনেক কথা বলে ফেলেছি আমি তাই উনি কিভাবে বলতে পারলেন ছাড়াছাড়ির কথা? আমি তো উনার প্রয়োজন না প্রিয়জন হতে চেয়েছিলাম। আর শেষমেষ এতটা জঘণ্য পরিণতি নেমে এলো।

আমি দুর্বলভাবে বেশ কিছুক্ষণ রুমে বসে থাকি এভাবে। সকাল ঢলে দুপুর এলো, নীলু খাবারের জন্য ডাকতে এসেছিলো , আমি যাইনি। তারপর বিকেলের দিকে কোনোমতে ছাদে গেলাম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বাতাস হুহু করে উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটে চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। সিক্ত হয়ে ওঠলো সারা মধুগন্জ। বৃষ্টির বেগতিক ধারায় আমারও চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেনো এ কথাটি শুনে? শুরুতে তো আমিই বলেছিলাম উনাকে ছেড়ে চলে যাবো। তাহলে এ শূণ্যতার কি নাম দেবো আমি?

হঠাৎ নিচে গাড়ির আওয়াজ পেতেই বুঝলাম মামা-মামী এসে পড়েছে। আমি তখনও মূর্তির মতো বসে রইলাম সেখানে। পায়ের ক্ষত স্থানটিতে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে হতাশার বশে নিজেকে আঘাত দেওয়ার ফলে। পায়ের অল্পবিস্তর রক্ত বৃষ্টির পানির সঙ্গে ধুয়ে যাচ্ছে বারবার। তখনই দরজা ঠেলে ছাদে আসলেন মামী। আমায় এভাবে পাথরের মতো বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে ভিজেই আমার কাছে আসলেন। আমার গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

-‘আহি ! জলদি উঠ এখান থেকে। ঠান্ডা লাগবে তোর।’

আমি নির্বিকার। চোখের পলক ফেলতে যেন ভুলে গিয়েছি।আমি আবছা আবছা শুনতে লাগলাম মামীর কথা। কারন ধীরে ধীরে আমার পৃথিবীটা শূণ্য হয়ে আসছে। মামী আমার পায়ের ক্ষত দেখে আৎকে উঠলেন। বললেন,

-‘ইয়া আল্লাহ ! পা দেখি রক্তে মেখে যাচ্ছে। জলদি উঠ। কষ্ট হচ্ছে তোর?’

আমি দুর্বল কন্ঠে বললাম,

-‘হুম মামী ! খুব কষ্ট হচ্ছে।’

তারপর আর কিছু মনে রইলো না আমার। ঢলে পড়লাম ছাদের সিক্ত মেঝেতে।

________________________________________

গহীন রাত। অদূরে ঝিঝি পোকারডাক কানে শুনতে পাচ্ছি আমি। তবে আমার শরীর দুর্বল। নড়াচড়া করার মতো ক্ষমতা নেই। আমি দুর্বল কন্ঠে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বললাম,

-‘মা !’

হঠাৎ একজোড়া উষ্ণ হাত আমার হাত আবদ্ধ করে নিলো। এই স্পর্শে কেপে উঠলাম আমি। কেননা স্পর্শটি আমার চেনা। আমি দুর্বলভাবে চোখ খুললাম। নিভু নিভু চোখের পাপড়ির আবছা অবয়বে যা দেখলাম তা আমার কোনোক্রমেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। আনভীর ঝুকে আছেন আমার দিকে। চুলগুলো অগোছালো। চোখজোড়া রক্তিম লাল। কেমন যেন অস্থির লাগছে উনাকে। আমার হ্যালুসিনেট হচ্ছে নাতো? আমি দুর্বলভাবে উনার গাল স্পর্শ করলাম। জিজ্ঞেস করলাম,

-‘আপনি কি আবার ফিরে যাওয়ার জন্য এসেছেন?’

-‘না আহি ! আমি এসেছি তোমায় আমার সাথে ফিরিয়ে নিতে। এখন এসব কথা বাদ দাও, ঘুমানোর চেষ্টা করো। আমি তোমার পাশে আছি।’

উনি তাহলে সত্যি সত্যিই আছেন এখানে। আমার দুর্বল ঠোঁটজোড়ায় নিমিষেই এক ভালোলাগা ছড়িয়ে পড়লো। জানিনা কেনো। তবে আমার জন্য উনার অস্থিরতাটি আমার ভালোলাগে। এককথায় প্রচন্ড রকমের ভালোলাগে।
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ

ভুল সংশোধন: গতপর্বে লাস্টের একটা অংশে বলেছিলাম যে আহির সাথে আনভীরের কথা কাটাকাটির পর আনভীর চারদিন ওর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। এখানে চারদিনের জায়গায় দুইদিন হবে। গল্পটি পাবলিক গ্রুপ আর একটি পাবলিক পেজে যাচ্ছে বলে এডিট করা সম্ভব ছিলোনা আমার জন্য। বিষয়টি তাই এই পর্বে জানিয়ে দিলাম। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here