“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-১৫

0
4202

“এখনো_ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-15

“সকালের নাস্তায় চিতই পিঠা,চালের রুটি, গরুর মাংশ আর ডাল ভুনা দেখে প্রিয়ু কিছুটা অবাক হলো।এ তো সবই ওর প্রিয়ু খাবার। কিন্তু তখনই কিছু একটা ভেবে প্রিয়ুর মুখটা চুপছে গেলো।”
–প্রিয়ুর ফ্যাকাশে মুখটা দেখেই আয়ন ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।তাই প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করলো কি হয়েছে সোনা।খাবার পছন্দ হয়নি।
“হুম, খুব!কিন্তু এতো হেবি নাস্তা তো তুমি করো না।তাহলে কি এসব শুধু আমার জন্য।
“আয়ন মুচকি হেসে প্রিয়ুর হাতটা টেনে নিজের পাশে বসালো।একটুখানি রুটি ছিঁড়ে প্রিয়ুর মুখের কাছে নিয়ে বললো,কেনো? তুই একা কেনো খাবি।আমাকে কি চোখে দেখা যাচ্ছে না।”
–তুমিও খাবে এসব।প্রিয়ু কিছুটা বিস্মিত হয়ে।
“হুম,আয়নও খাবার মুখে দিয়ে বললো।একদিন একটু হেবি খাবার খেলে কিছু হবে না।নে হা কর।আজ আমি নিজ হাতে তোকে খাওয়াবো।”
–প্রিয়ুও আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো আয়নের হাতে।প্রিয়ু ভাবছে কিছুক্ষন আগের ঘটনা।একটু আগে কতো কিছুনা হয়ে গেলো অথচ আয়নদাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি।কি আশ্চর্য!

কিছুক্ষন আগের ঘটনা।

“যখন আয়ন প্রিয়ুর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো।আয়নকে দেখে প্রিয়ু চলে যেতে নিলেই আয়ন প্রিয়ুর হাতটা ধরে ফেলে।”
–বারবার আমার থেকে পালাতে চাস কেনো প্রিয়ু।আমরা কি নতুন করে সব কিছু শুরু করতে পারিনা।
আয়ন নিজের কাছে টেনে আনে প্রিয়ুকে,বল সোনা।
আমি আর কি করলে সব কিছু ঠিক হবে।আয়নের একহাত প্রিয়ুর মসৃণ গালটা স্পর্শ করে কথাগুলো বলে।”

–প্রিয়ু কিছুক্ষন নিরব থাকে।এরপর আয়নের হাতটা নিজের গাল থেকে সরিয়ে ফেলে।নতুন কিছু শুরু করার আগে পুরানো ঘা টা আগে শুকাতে হবে আয়নদা।আর আফসোসের কথা কি জানো,তুমিই নিজেই সেই ঘা টাকে শুকানোর আগে তাজা করে ফেলো।তাহলে আগের সব কিছু ভুলবো কি করে।বলো?

“আমি জানি সোনা,আমার রাগ আর জিদের কারনে না বুঝে তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।কিন্তু তখন পরিস্থিতিই এমন ছিলো।আমার মাথা কাজ করছিলো না।এতোকিছু একসাথে আমি নিতে পারেনি।আর তুইও খুব ভালো করে জানিস আমি তোর বেলায় কতোটা পজেসিভ।তাই আমার সহ্য হয় নি তোর সাথে কাউকে দেখে।আমি হিতহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।কিন্তু এসবের আগে কি কখনো এমন হয়েছে বল।”

–না হয়নি আয়নদা,আমি জানি সব।কিন্তু তখন কেনো হলো বলতে পারবে।তুমিতো আমাকে সব থেকে বেশি বুঝতে,জানতে।আমার মা মারা যাবার পর,বাবা যখন থেকেও ছিলো না,তখন এই তুমিই একজন ছিলে আমার পাশে।আমার ছায়া হয়ে,আমাকে সব কষ্ট থেকে,সব বিপদ থেকে দূরে সরিয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে।জীবনে চলার পথে একা কিভাবে চলতে হয় তা কখনো শিখাও নিই তুমি।কষ্ট কি বুঝতে দেওনি।

‘-সবসময় মায়ের মতো আমাকে যত্ন করেছো।বাবার মতো আগলে রেখেছো।ভাইয়ের মতো শাসন করেছো,একজন বন্ধুর মতো সব সময় না বলার আগেই আমার সব কিছু বুঝে নিয়েছো।তাহলে সেই তুমিই কিছু মানুষের কথা শুনে,আর কিছু ছবি আর ভিডিও দেখে কিভাবে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলে।একবারও কি মনে হয়নি তখন, তোমার প্রিয়ু এসব করবে না,করতে পারে না।কই আয়নদা তখন তো তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি।
-সমাজের সব মানুষের আঙ্গুল যখন আমার উপর উঠেছিলো।আর বাবা এসব সইতে না পেরে যখন স্টোক করলো তখন তুমি কোথায় ছিলে আয়নদা বলো কোথায় ছিলে?
“তুমি ছিলেনা তখন আয়নদা, তুমি ছিলে না আমার সাথে, প্রিয়ু অশ্রুভরা চোখে বলে।
আর যখন তুমি এসেছিলে,জানো আমি এক মুহুর্তের জন্য ভেবেছিলাম তুমি সব ঠিক করে দিবে এবার।সবাইকে চিৎকার করে বলবে না আমার প্রিয়ু এসব করতে পারেনা।আমার সাপোর্ট হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আমার আশা স্বপ্ন ভঙ্গ করে সেই তুমিও আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিলে।জেরা করতে লাগলে।ভুল বুঝে চলে গেলে।একবার ভাবলেও না।যে মেয়েটিকে তুমি সারাক্ষণ তোমার চারদেয়ালের মাঝে বন্ধি করে রেখেছিলে,তাকে হঠাৎ করে উড়তে বললে কিভাবে সে উড়বে।”
–প্রিয়ু কান্না করতে করতে নিচে বসে পড়ে,একটা চাপা অভিমান আয়নের প্রতি এতোদিন পুষে ছিলো প্রিয়ুর ছোট মনে তা যেনো আজ সব বের করে দিবে প্রিয়ু।
আয়নও হাটুগেরে নিচে বসে পড়লো,প্রিয়ুকে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।আয়নের বুকের মাঝে লেপ্টে থেকেও প্রিয়ু কান্না করছিলো।

“তুমি ভালো না আয়নদা,তুমি একদম ভালো না।তুমি জানো না এই দুবছর আমাকে কতো কষ্ট করতে হয়েছিলো।কতো রাত না খেয়ে ঘুমাতে হয়েছিলো।এমনকি আমিতো আরভিনকেও ভালোমতো কিছু খেতে দিতে পারিনি।একটা কাজের জন্য কতো জায়গায় ছুটেছি।কেউ দেইনি।কিন্তু তাদের লোভিষ্ঠ নযরটা ঠিকই আমার উপর পড়তো।কোথায় ছিলে তখন তুমি,বলো।কেনো বিশ্বাস করবো আমি তোমায় আয়নদা, কেনো?”

–আই হেট ইউ আয়নদা,তুমি অনেক বাজে, অনেক খারাপ,অ নে ক…..।প্রিয়ু কাঁদতে কাঁদতে একসময় ক্লান্ত হয়ে আয়নের বুকেই লুটিয়ে পড়লো।আয়ন তখনো প্রিয়ুকে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছিলো।আয়ন আজ বুঝতে পাড়ছে প্রিয়ুর অভিমানের পাল্লাটা অনেকটাই ভারী।আর এটাই স্বাভাবিক।বাকি মানুষগুলোর মতো আয়নও তো প্রিয়ুর চরিত্রে আঙ্গুল তুলে ছিলো,কোনও কিছু চিন্তা না করেই।আয়নের এখন অনুশোচন হতে লাগলো,নিজের কাজের জন্য।প্রিয়ুকে দেওয়া কষ্টগুলোর কথা মনে করে।

“কিছুক্ষন পর আয়ন প্রিয়ুকে খুব যত্নে কোলে তুলে নিলো।বিছানায় শুয়ে দিয়ে একটা পাতলা চাদর দিয়ে প্রিয়ুকে ঢেকে দিলো।চোখ বন্ধ করে ঘুমন্ত প্রিয়ুর কপালে একটা চুমো দিয়ে দিলো।আর তখনি গড়িয়ে পড়লো আয়নের চোখ দিয়ে এক ফোটা নোনা জল।”
____________

“আয়ন বালকানিতে এসে একটা সিগেরেট ধরালো।বিছানায় শুয়ে থাকা ঘুমন্ত প্রিয়ুর মুখটির দিকে তাকিয়ে আয়ন ডুব দিলো অতিতের সেই বিষাদময় স্মৃথির পাতায়….

‘ইতালিতে’
সেদিন মিটিংরুমে রবিন এসে আয়নকে প্রিয়ুর বাবার মৃত্যুর কথাটাই জানিয়েছিলো।খবরটা পেয়ে আয়ন অনেক বড় একটা শোকড পেলো।হঠাৎ এমন হবার কারণ আয়ন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলো না।কালও তো সব ঠিক ছিলো। তাহলে!
আয়ন আর একমুহুর্তও দেরি না করে,রবিনকে বলে সব মিটিং ক্যানসালড করেই বিডির জন্য রওনা দিয়েছিলো।পুরো রাস্তায় আয়ন শুধু প্রিয়ুকে নিয়েই টেনশনে ছিলো।এতোদিন মা ছিলো না,তবুও তো বাবা নামের মানুষটি তো ছিলো পাশে।কিন্তু এখনতো তাও নেই।না জানি প্রিয়ু কতোটা কষ্টে আছে এখন।”

–আয়ন যখন প্রিয়ুর বাসায় এসে পৌছায়,ততোক্ষণে প্রিয়ুর বাবার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলো।তাই আপাততো আয়ন সবকিছু ভুলে প্রিয়ুকে সান্তনা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
“আয়নের ভাইয়েরা বার বার কিছু বলতে চাইছিলো আয়নকে।কিন্তু তখন আয়ন প্রিয়ুকে ছাড়া যেনো অন্য কিছু চোখেই দেখছিলো না।তাই কাউকে কিছু বলার সুযোগও দেয়নি।”
–প্রিয়ু অনেকটা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলো।আয়ন একহাতে প্রিয়ু, আরভিনকে সামলানোর সাথে সাথে প্রিয়ুর বাবার চারদিনের খাবার হতে শুরু করে সব সামলাতে লাগলো।এসবের মধ্য আয়ন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো।এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে গিয়েছে।

“একদিন আয়ন প্রিয়ুর সাথে দেখা করে,বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে লেপটপে অফিসের কিছু কাজ নিয়ে বসেছিলো।আর তখনই আয়নের মা আসমা বেগম রুমে প্রবেশ করেই আয়নের উদ্দেশ্যে বলে,
–আয়ন তুমি আজকের পরথেকে আর প্রিয়ুদের বাড়িতে যাবে না।
“হঠাৎ মায়ের মুখে এমন কথায় আয়ন বিরক্তিকর চোখে মায়ের দিকে তাকায়।এসব কি বলছো তুমি মা।এখন প্রিয়ুর আমাদের সাপোর্টের প্রয়োজন,এভাবে কিভাবে বলতে পারলে।একটুও কি মায়া হয়না ওই এতিম মেয়েটার জন্য।”
–না হয় না,ওর মতো চরিত্রহীন মেয়ের জন্য কোনও মায়া হবার কথাও না।
“মা….কিসব বলছো।আর ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড।আয়ন অনেকটা চিৎকার করে কথাটা বলে।”
-‘আয়নের চিৎকারে তিয়াশ,অনিক ও মায়া ছুটে আসে আয়নের রুমের দিকে।
–চিৎকার করে লাভ নেই আয়ন।আমি যা বলছি একদম ষোলো আনা সত্য বলছি।
“কি সত্য??আমিও একটু শুনি।”
–হুম, সত্য!কেনো এখনো প্রিয়ু তোকে বলে নিই।আসমা বেগম একটু বিদ্রুপ হেসে।ও বুঝতে পারছি,নিজের মুখে কি করে বলবে,নিজের কুকর্মের কথা।
“মা…আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না আর।”
–এসব তো সবে মাত্র শুরু আয়ন।এখন যা বলি তা শক্ত করে শোন।প্রিয়ু একটি ছেলের সাথে রিলেশনে জড়িত।তা কি জানিস।
“কিসব বলছো তুমি মা।এটা মোটেও সত্য না।”

-‘তিয়াশ,অনিক,আর মায়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছে,আসলে তাদের কিছু করার নেই এই মুহুর্তে।’

–আসমা বেগম কিছু ছবি আয়নের হাতের সামনে দিয়ে,দেখ ভালো করে চোখ খুলে দেখেনে।এই ছেলের সাথেই প্রিয়ুর গভীর প্রেম চলছে শুনেছি, ছবিগুলো দেখলেই বুঝবি।আশেপাশের প্রতিবেশী হতে শুরু করে সবাই জানে এই ব্যাপারটি।

“আয়ন ছবিগুলোর দিকে একবার তাকালো।আর সাথে সাথে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।একটি ছবিতে প্রিয়ু একটি ছেলের হাত জড়িয়ে বসে আছে।অন্য ছবিতে দুজন দুজনার হাত ধরে তাকিয়ে আছে।এমন বেশ কয়েকটা ছবি যেখানে প্রিয়ু আর ছেলেটি অনেক কাছাকাছি আছে।”
–ছবিগুলো থেকে চোখ সরিয়ে আয়ন ওর ভাইদের দিকে তাকালো।এসব সত্য কিনা জানতে।

“তিয়াশ আর অনিক ভাইয়ের ইশারা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে ফেললো।আয়ন ধপাস করে শোফায় বসে পড়লো।”

–এতোটুকুতেই তোর এই অবস্থা, তাহলে বাকি কথা শুনলো কি করবি।
“আয়ন আবারও ওর মায়ের দিকে তাকালো,আরো কিছু বাকি আছে কি জানতে।”
–আসমা বেগম চোখ পাকিয়ে অনিককে কি যেনো বের করতে ইশারা করলো।অনিক ব্যাচারা মায়ের ভয়ে নিজের ফোনটা আয়নের দিকে এগিয়ে দিলো।ভাইয়ের প্রতি খুব মায়া হচ্ছে কিন্তু এই মুহুর্তে কিছু করার নেই ওর।সব কিছু আয়ত্তের বাহিরে চলে গেছে।

“আয়ন কাপাকাপা হাতে ফোনটা নিয়ে দেখতে লাগে।হাতের থেকে ফোনটা পড়ে যায় সাথে সাথে।প্রিয়ুর একটা ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ কিছু মুহুর্ত ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে।ভিডিওটিতে ছেলের চেহারা স্পষ্ট না দেখা গেলেও,মেয়েটা প্রিয়ুর মতোই।”
–দেখেছিস!আমার কথা তো বিশ্বাস হয় না তোর।আমি হাজারবার বলেছি ওই মেয়ে থেকে দূরে থাক কিন্তু তুই শুনলি না।এবার বুঝ,এতোটুকু একটা মেয়ে এই বয়সেই এতো কিছু করে বেড়ায়।আর বাকি দিনতো পড়ে আছে।আমিতো ভেবেছিলাম শুধু তোকেই ও ফাঁসিয়েছে।এই ভিডিও দেখে আর এই ছবিগুলো দেখে বুঝা যাচ্ছে ওর একটা পুরুষে মন ভরে না।”

“মা,প্লিজ স্টোপ!যাও এখান থেকে।আমি আর কিছুই শুনতে চাই না।প্লিজ।আয়নের গলা ধরে যাচ্ছে কথাটা বলতে।”

–দেখ আয়ন তুই কিছু চিন্তা করিস না,আমি তোর জন্য এই প্রিয়ু থেকেও সুন্দর একটা মেয়ে দেখবো।তুই এই বাজে মেয়ের কথা একদম মাথা থেকে বের করে দে বাবা।
“আয়ন নিজেকে শান্ত করার জন্য হাত দুটো মুঠোতে করে,চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।”

–অনিক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একপ্রকার জোড় করেই আসমা বেগমকে রুম থেকে বাহিরে নিয়ে আসে।
“কি করছিস অনিক,পাগল হয়ে গিয়েছিস।ছাড় আমাকে।”
–মা,পায়ে ধরি,দাদাকে একা ছেড়ে দেও এখন।দাদা এখন ঠিক নেই।
“ঢং!আসমা বেগম মুখ বেঁকিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।”
–আয়ন শোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে,মাথার উপরের ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজেকে কেমন অনুভূতি শুন্য মানব মনে হচ্ছে।প্রিয়ু থেকে এতো বড় ধোকা আয়ন কখনো আশা করেনি।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করেও কেনো জানি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
কিছুক্ষন নিরব থেকে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলো।মামা কি জানতো এসব।
“তিয়াশ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে, হালকা করে হুম বললো।”
–কিভাবে জানলো উনি।
“প্রিয়ুর ছবি আর ভিডিওগুলো কেউ ভাইরাল করে দিয়েছে।এরপরই চারপাশের মানুষের তীক্ষ্ণ কথাবর্তা শুরু হয়ে যায়।আর মামা এসব সহ্য করতে না পেরে স্টোক করে।”
–কে করেছে এসব।
“জানি না দাদা।”
–আয়নের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হলো।এটা কোনও নরমাল শ্বাস না।এটা ছিলো নিজের ভালোবাসার মানুষটি থেকে কষ্ট পাওয়ার বেদনা,স্বপ্নগুলো টাসের ঘরের মতো চূরমার হয়ে ভেঙ্গে যাবার কষ্ট,নিজের সব থেকে কাছের মানুষটি থেকে ধোকা পাওয়ার যন্ত্রনা।

–আয়নকে এভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে,মায়া আয়নের কাছে আসতে নিলে আয়ন হাত উঠিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলে।
___________

“ড্রয়িংরুমের শোফায় মাথাটা নিচু করে বসে আছে আয়ন।আর ওর ঠিক সামনে নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ু।আজ প্রিয়ু কেনো জানি ভয় পাচ্ছে না তার আয়নদাকে।
আয়ন যে সব কিছু যেনে গিয়েছে তা আয়নের গম্ভীর মুখখানি দেখেই প্রিয়ু বুঝে গিয়েছে।তা না হলে আয়ন এতোরাতে কখনো বিনা কারণে এখানে আসার মানুষ না।”
–নিরবতা ভেঙ্গে আয়নই প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করলো,ছেলেটা কে প্রিয়ু।
“এতোক্ষন প্রিয়ু ভয় না পাওয়ার অভিনয় করলেও,আয়নের কর্কশ কন্ঠ প্রিয়ুর সাহসকে যেনো পুরোপুরি দমিয়ে দিলো।
কাপা কন্ঠে বলে উঠলো,ক কোন ছেলে।”
–আয়ন প্রিয়ুর সামনে ছবিগুলো ছুরে ফেলে।

“রোহান আর ওর ছবিগুলো দেখে প্রিয়ু স্মীত চমকে যায়।এসব ছবি আয়নদা কিভাবে পেলো প্রিয়ু তাই বুঝতে পারছে না।কিন্তু ছবিগুলো যে পুরো প্লানিং করে তুলা হয়েছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে প্রিয়ু।”

–কি হলো কথা বলছিস না কেনো।আয়ন ধমকের সাথে প্রিয়ুর দিকে তাকালো।
আর তখনই আয়নের রক্তাত্ত চোখগুলো দেখে প্রিয়ু ভয়ে আতকে উঠে।
“কাপা কন্ঠেই বললো,র রোহান।রোহান নাম তার।”
–কোথায় থাকে?
“আ আমাদের পাশের বা সার নতুন ভাড়াটিয়ে।প্রিয়ু মাথা নিচু করে কথাগুলো বলছে।আয়নের দিকে তাকাবার সাহস আর করতে পারছে না।”

–আয়ন এবার উঠে সরাসরি প্রিয়ুর সামনে দাঁড়ালো।Did you sleep with him…
“আয়নের এমন কথায় প্রিয়ু চমকে আয়নের চোখের দিকে তাকায়।কি বলছো এসব।”
Answer me dam it……আয়ন চিৎকার করে উঠে।

“প্রিয়ুর মনটা ভেঙ্গে চূর্মার হয়ে গেলো মুহুর্তে।প্রিয়ু কখনো আসা করেনি আয়নদার কাছে এমন ব্যবহার।প্রিয়ু জানতো রোহানের কথা জানলে আয়নদা রাগ করবে,হয়তো প্রিয়ুকে অনেক বকবেও।কিন্তু আয়নদা যে মনে এসব ভেবে নিবে তা প্রিয়ু জীবনেও ভাবেনি।প্রিয়ু কেমন তা আয়নদা থেকে বেশি কে জানে,আর আজ সেই আয়নদার মনেও আমাকে নিয়ে সন্দেহ।”

–কি হলো কথা বের হচ্ছে না কেনো মুখ দিয়ে।নাকি নিজের ফুর্তির কথা বলতে এখন লজ্জা লাগে।আয়ন প্রিয়ুর গালটা দুআঙ্গুলে চেপে ধরে,
এতোকিছু করার সময় লজ্জা হয়নি তোর আর এখন বলতে বুঝি লজ্জা করছে।

“আয়ন এভাবে প্রিয়ুর গাল ধরায়,ব্যাথায় প্রিয়ুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কিন্তু আজ আয়নের প্রিয়ুর প্রতি যেনো কোনও মায়াই হচ্ছে না।”

–বল!বলছিস না কেনো।এতোই যদি শরীরের জ্বালা ধরেছিলো,তাহলে আমাকেই বলতি,বাকি সব কিছুর মতো আমি এটাও পূরণ করে দিতাম।কিন্তু তোর মনে হয় জ্বালা সইছিলো না।তাইতো বাজারের মেয়েদের মতো যার তার বিছানায় চলে গিয়েছিলি।তাইনা!

“এতোক্ষন প্রিয়ু সব কিছু চুপচাপ সহ্য করলেও এখন রাগে অপমানে ওর ধৈর্যের বাধ যেনো ছিড়ে গেলো,তৎক্ষনিক আয়নকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।”
‘হে বেড়ে ছিলো,তাতে তোমার কি।নাকি তোমার রক্ষিতাকে তোমার আগে কেউ ভোগ করেছে বলে,কষ্ট হচ্ছে।’
–এটা বলার সাথে সাথে ….আয়ন ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারে প্রিয়ুর গালে।আয়নের ভারী হাতের থাপ্পড়টি প্রিয়ু নিতে না পেড়ে নিচে পড়ে গেলো।”

–কিন্তু আয়নের রাগ কমে নিই এখনো,তাই প্রিয়ুর চুলগুলো মুঠোতে নিয়ে টেনে তুলে,নিজের কাছে আনলো।
রক্ষিতা!দাঁতেদাঁত চেপে কথাটা বললো আয়ন।মানে জানিস এটার, I had sex with you without any relationship.And you’ve made me happy in bed for so long,haven’t you..
বল,কতোদিন, আর কতোবার তোর সাথে আমি মিলিতো হয়েছি।বল?বিছানায় সুখ দিয়েছিস আমায়।
নিজের ফুর্তির বোঝা আমার ঘাড়ে ফেলতে লজ্জা করেনা তোর।
বল?আর কতো জনের সাথে এসব করেছিস,আমার অগোচরে।

“প্রিয়ুর আয়নের প্রতি অভিমানটা অনেক বেড়ে গেলো,কারণ ও জানতো আর কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক আয়নদা ওকে ঠিকই বুঝবে।কিন্তু যার প্রতি এতো বিশ্বাস ছিলো প্রিয়ুর সেই আয়নদাই যেহেতু ওর চরিত্রে আঙ্গুল তুলে ফেললো,তাহলে ও আর কাকে দোষ দিবে।আর কেনোই বা সাফাই দিবে।আর কাউকে বুঝানোর চেষ্টা করবে না প্রিয়ু,যে যা খুশি ভাবুক।আই ডোন্ট কেয়ার।
তাই নিজের জিদটাকে প্রায়োরিটি দিয়ে রাগের মাথায় বলে ফেলে– হে আছে আমার আরো ছেলেদের সাথে সম্পর্ক তাও আবার গভীর ভাবে।তাতে তোমার কি।তুমি কৈফত নেওয়ার কে?

চলবে…।

[আয়ন ও প্রিয়ুর অতীতটা কিছুটা তুলে ধরা হচ্ছে।কেউ কনফিউজড হবেন না।কমেন্ট করে জানাবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here