“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-১৭

0
4456

“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-17

অতীত
“দিনটি ছিলো শুক্রবার।ঢাকার বিলাশবহুল হোটেল ওয়েস্টিনে একটা বিজনেস পার্টির ইনভাইটেশন পেয়েছিলো দিনেশ।দিনেশের পি এ হবার সুবাধে তিতিরকেও সেই পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হবে।আর দিনেশ তা আগেই তিতিরকে জানিয়ে দিয়েছিলো। ”

–তিতিরকে রেডি হয়ে দিনেশের জন্য অপেক্ষা করতে বললো।কারণ রাত আটটায় তিতিরের বাসার সামনে থেকে দিনেশ নিজেই পিক করে নিবে বলে।প্রথমে তিতির রাজি হয়নি।ও একাই যেতে পাড়বে বললো।
কিন্তু দিনেশের যুক্তির কাছে লাস্ট মুহুর্তে হারতে হলো তিতিরকে।
“কারণ তিতির হোটেলের লোকেশনটা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগতো নয়,এটা তিতিরের জন্য সম্পূর্ণ নতুন।আর তিতিরের বাড়ী হোটেল থেকেও অনেকটা দূরে তাই তিতিরের জন্য রাতের বেলা একলা ওখানে যাওয়া অনেকটা রিস্কের ব্যাপার।উপায় না পেয়ে দিনেশের সাথেই যেতে রাজি হলো তিতির।”

–দিনেশ গাড়ীর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তিতিরের জন্য অপেক্ষা করছিলো।হঠাৎ দিনেশের চোখ আটকে গেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীর উপর।মনে হয় তখনই একটা হার্ট বিট মিস করলো দিনেশ।

“ব্লাক শাড়ীতে নিজেকে জড়িয়ে রেখে,মুখে হালকা মেকআপের টাচআপ।ব্যাশ! এতেই মনে হয় এই নারী আজ খুন করার উদ্দেশ্যে রাতের আধারে নেমেছে।তিতিরের গোলাপি ঠোঁটে আজ লাল আভা পড়েছে যা তিতিরকে ব্লাকের মাঝে একদম ইউনিক লুক এনে দিয়েছে।হাতে বরাবরের মতো দুটো চুড়ি।নাকে স্টোনের একটা নাক ফুল তারার মতো জ্বলমল করছে।”

–দিনেশের মুখ দিয়ে অজান্তেই বের হয়ে গেলো,ওয়াও!ব্লাক এন্জেল।
আর এতেই বুকের কোনও একপাশে লেগেছে,খুব করে।একটা অসহ্য যন্ত্রনা করছে, যার অনুভূতিগুলো দিনেশের খুব ভালো লাগছে।দিনেশ মুহুর্তেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
‘মনের প্রজাপতি গুলো উড়ো উড়ো করছে,বাগানের ফুলগুলো হাওয়াতে দুলছে,আর তার সাথে তাল মিলিয়ে দিনেশের ভেতরটাও তোলপাড় করছে।’
জীবনে কতো নারীর সস্পর্শে এসেছে দিনেশ।কিন্তু কখনো কোনও নারীকে দেখে দিনেশ এতোটা মুগ্ধ হয়নি।কিন্তু কেনো জানি প্রতিবার তিতিরকে দেখলে দিনেশ চোখ সরাতে পারেনা।দিনেশ বুঝতে পাড়ছে না।এটা কি তার চক্ষু সমস্যা নাকি অন্যকিছু।খুব শীঘ্রই যে তার ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন পড়বে,এই বিষয় নিশ্চিত সে। তাও আবার মনের ডাক্তার।
……………
“পার্টিতে সবাই সবার মতো ব্যস্ত।পরিচিত কেউ নেই বলে তিতিরও এক সাইডে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।”

–দিনেশ তার কিছু ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছিলো আর আড় চোখে তিতিরকে বারবার দেখছিলো।
তখনই সেখানে এন্ট্রি করেন দেশের গণ্যমান্য আরেক ব্যবসায়ী ফারওয়াদ খান।মাঝ বয়সই ভদ্রলোকটি এসেই দিনেশের সাথে হাত মিলিয়ে কুশলবিনিময় করেন।এরপর ব্যবসা সংক্রান্ত কথা বলার সময় দিনেশের চোখের দৃষ্টি বরাবর তাকায় ফারওয়াদ খান।”

–ফারওয়াদের লোভী দৃষ্টি পড়ে যায় তিতিরের উপর।তাই দিনেশকে জিঙ্গেস করেই ফেলে।
‘হু ইজ দিস প্রিটি লেডি।’

“পি এ আমার।দিনেশ বিনা সংকোচে মুচকি হেসে কথাটি বলে।”

–তাই নাকি!ইন্টেরেসটিং!ফারওয়াদ কিছুক্ষন ভেবে দিনেশকে একটা অফার করে।মিস্টার দিনেশ এখন থেকে আমার কোম্পানির সব প্রজেক্ট আপনার কোম্পানিই পাবে।
“তাই নাকি,এটা তো খুব ভালো খবর।শুনে খুশী হলাম।”
–তবে একটা শর্ত আছে আমার।
“দিনেশ ভ্রুটা কিঞ্চিত কুচকিয়ে কি?”
–ফারওয়াদ চোখের ইশারায় তিতিরকে দেখালো।ওকে আমার চাই।
আসলে ফারওয়াদ একটা মেয়েবাজ।মেয়েদের নেশায় থাকতে বেশি পছন্দ করে।তাইতো যেখানেই কোনও সুন্দর মেয়ে দেখবে সেখানেই তার লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।আর আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।ওর নোংরা দৃষ্টি পড়লো আজ তিতিরের উপর।

“দিনেশ প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না,তাই নিঃসংকোচ জিঙ্গেস করলো,মানে!”
–উফ!দিনেশ তুমিও না।এতোটা বোকা কেনো।দেখো আমার সব কোন্ট্রাক্ট তুমিই পাবে এখন থেকে, বিনিময় তোমার পি এ কে আমার বিছানায় যেতে হবে।আই হোপ তুমি বুঝতে পাড়ছো বাকিটা।”

–মুহুর্তেই দিনেশের মাথা গরম হয়ে গেলো।মাথার ফুলা রগগুলোকে দুআঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলো।চোয়াল শক্ত করে দিনেশ ফারওয়াদকে ঠান্ডা মেঝাঝে বললো,
বয়স তো কম হয়নি আপনার তবুও ভিমরিতি যাচ্ছে না।এই বয়সে এতো উত্তেজনা কিন্তু শরীরের জন্য ভালো না তা কি জানেন।কখন কি হয়ে যাবে বুঝতেও পারবেন না।

“দিনেশ মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ।আর তোমার সমস্যা কি? বিজনেসে এসব তো চলেই।তুমিতো নতুন না এই জগতে।তাছাড়া আমি তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে বেড শেয়ার করার কথা বলিনি।She’s just your p.A।”

–দিনেশ মুখ দিয়ে কিছু বললো না,জাস্ট বাকা হাসলো।

“আর এই হাসির রহস্য ফারওয়াদ ধরতে পারলো না।
পরিচিত কারো ডাকে ফারওয়াদ চলে যায় ওখানে। আর দিনেশকে ভাবতে বলে ব্যাপারটা নিয়ে।”

–ফারওয়াদ চলে যাওয়ার পরই দিনেশ ফোন করে আয়নকে।
‘নাম ফারওয়াদ খান।আমি এই কোম্পানির সব ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে চাই।আর আজকের পর থেকে এই কোম্পানির সাথে আমাদের সকল পার্টনারশিপও বাতিল।
“-ফোনের ওপর পাশ থেকে আয়ন,কি করেছে।”
–আমার একটা মূল্যবান জিনিসে নিজের কুদৃষ্টি দিয়েছে।যা আমার একদম পছন্দ হয়নি দোস্ত।
“কতোদূর নিয়ে যেতে চাস বিষয়টি।”
–আমি ফারওয়াদকে ভিখারিতে পরিণত হতে দেখতে চাই।
“হয়ে যাবে।জাস্ট রিলেক্স। এন্ড এন্জয় ইউর পার্টি।”

–আয়নের সাথে কথা বলেই দিনেশ তিতিরের দিকে তাকলো।কিন্তু তিতির ওর জায়গায় ছিলো না তখন।তা দেখে দিনেশ একটু চিন্তিত হয়ে খুঁজতে লাগলো তিতিরকে।
তিতিরের সাথে এতোক্ষন ধরে কথা বলছিলো যে মেয়েটি তাকে জিঙ্গেস করে জানতে পারে তিতিরের নাকি হঠাৎ করে শরীর খারাপ লাগছে তাই ও একটু ওয়াসরুমের দিকে গিয়েছে।

“দিনেশও কিছু না ভেবে লেডিস ওয়াশরুমের দিকে ছুটে গেলো।হঠাৎ কি হলো তিতিরের এসব ভাবতে ভাবতে।”

–তিতির সিনের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত ভাবে।
“দিনেশ তিতিরের সামনে দাঁড়িয়ে,আর ইউ ওকে তিতির।তুমি ঠিক আছো তো।”

–দিনেশকে দেখেই তিতির কাঁদতে লাগলো।
“দিনেশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো।কি হলো কাঁদছো কেনো।”
“-আপনি এতো সুন্দর কেনো স্যার।ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই জানেন না।এতে করে মেয়েদের অসভ্যের পদবী পেতে হয়।”
–ওয়াট!কিসব বলছো তুমি।আর এভাবে কথা…মুখ থেকে বিশ্রি ঘ্রাণ আসছে দেখে দিনেশ চুপ হয়ে যায়।তুমি ড্রিংক করেছো তিতির।

“তিতির মুখ দিয়ে হা,মাথা নেড়ে না বলছে।দিনেশ যা বুঝার বুঝে গিয়েছে।তিতিরকে ওয়াসরুম থেকে বের করতে নিলে,তিতির না বলে দাঁড়িয়ে যায়।আমি যাবো না।”
–কেনো?
“আগে প্রমেজ করুন কাল থেকে বোরকা পড়ে অফিসে আসবেন।”
–দিনেশ হেসে বলে,কেনো?
“কারণ অফিসের সব মেয়েরা আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে।আর তা দেখে আমার একদমই ভালোলাগে না।আপনার কাছে যাওয়ার বাহানা খুঁজে মেয়েগুলো।ইচ্ছা করে আপনাকে টাচ করে।আপনার কারনে অফিসের সব মেয়েগুলো দিনদিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।
ওরা কেনো এই যে আমাকে দেখুন আমিও তো আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি।আপনার কারণে আমার মনটাও বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমি জানি এসব একদম ঠিক না।তবুও আপনাকে একপলক চোখের দেখা দেখতে নিজেকে আটকাতে পারিনা।”

–দিনেশ অবাক হচ্ছে তিতিরের কথা শুনে।কি বলছে মেয়েটি।কিন্তু নেশায় পড়ে যে সব সত্য বলছে এটা খুব করে বুঝতে পাড়ছে দিনেশ।
‘তিতিরের একদম সামনে গিয়ে,কেনো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখো আমায়।’
–জানি না,মনে হয় প্রেমে পড়ে গিয়েছি আপনার।ভালোবেসে ফেলেছি।
“মিথ্যে বলছো।”
–একদম সত্যি।
“ওকে প্রমাণ করে দেখাও।তারপর বিশ্বাস করবো।তা না হলে মনে করবো তুমিও বাকিসব মেয়েদের মতো একটা মিথ্যেবাদী।”

–হঠাৎ তিতিরের কি হলো কে জানে,এটা কি দিনেশের নেশায়,নাকি মদের নেশায় তিতির দিনেশের ঠোঁটদুটো নিজের ঠোঁটের সাথে চেপে ধরলো।কিছুক্ষন পর সরে যেতে নিলে,দিনেশ তিতিরের কোমড় ধরে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে ফেলে,ডিপলি কিস করতে থাকে।তিতির মদের নেশায় থাকলেও দিনেশের এখন তিতিরের নেশা ধরে গিয়েছে।আর ও এটাকে খুব পছন্দ করেছে।তিতির নামের এই মেয়েটি আজ থেকে ওর শুধুই ওর।সেই রাত তিতির বাসায় যাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলো না।তাই দিনেশ হোটেলের একটা রুম বুক করে।আর তিতির ও দিনেশ সারারাত এক রুমেই ছিলো।কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু হয়েছিলো কিনা তা শুধু দিনেশই জানে।তিতির সে সম্পর্কে মোটেও ভালোভাবে অবগতো নয়।

বর্তমান…..
“তাইতো দিনেশ টোপ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে সেই রাতটিকে তিতির নামের জলপরীটিকে তার জালে ধরতে।ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে হলে যা যা করার সবই করবে ও।দেখা যাক কতোদিন মনের সাথে লড়তে পারে এই জলপরী।”
____________

“ফোনে কথা বলতে বলতে আয়নের চোখ পড়লো প্রিয়ুর উপর।বালকানিতে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে মেয়েটি,হয়তো কিছু ভাবছে।”
‘-আয়নের মনটাও উদাসীন হয়ে পড়ে।আয়ন চায়, মন থেকে চায় সব ঠিক হয়ে যাক।প্রিয়ুর মুখের হাসিটি আবার যেনো ফিরে আসে।কিন্তু বার বার ব্যর্থ হতে হয়।কেনো যে সব ঠিক করতে গিয়ে আবার প্রিয়ুকেই কষ্ট দিয়ে ফেলে আয়ন নিজেও জানে না।কি করবে আয়ন বুঝতে পারছেনা।
–ওরও মন চায় সাধারণ কাপেলদের মতো চলতে।হাসিখুশি বাকি জীবনটা পার করতে প্রিয়ুর সাথে কিন্তু সুখ যেনো তার চির শত্রু ধরা দিতে গিয়েও ধরা পড়ে না।আয়ন এসব ভাবতে ভাবতেই প্রিয়ুর দিকে এগিয়ে গেলো।প্রিুর দৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের দৃষ্টিও সামনে নিক্ষেপ করলো।”

–দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে সামনের ঝিলে কিছু নতুন কপতকপতি একে অপরের হাত ধরে নৌকায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।আয়ন বুঝতে পাড়ছে প্রিয়ুর হয়তো ওদের দেখে কিছুটা মন খারাপ লাগছে।প্রিয়ুর মন অন্যদিকে ঘুড়াবার জন্য,
জানিস এই ঝিলে অনেক মাছও আছে।আর অনেকে নাকি এখানে শুধু মাছ ধরতেই আসে।
“প্রিয়ু তখনো চুপ।”
–আয়ন আবারও বলে,এখানেই কি দাঁড়িয়ে থাকবি।বাহিরে চল।পুরো রিসোর্টটা আরো সুন্দর। দেখলেই মন ভরে যাবে।চল,আয়ন প্রিয়ুর হাতটা ধরে।

“আমার ভালো লাগছে না আয়নদা।তুমিই যাও।আমাকে একটু একা ছেড়ে দেও।প্রিয়ু আয়নের কাছ থেকে নিজের হাতটি ছুটিয়ে বললো। ”

–আয়নের এখন রাগ উঠছে,ভীষণ রাগ।এই মেয়েটির কি আমার প্রতি কোনও মায়া হয়না।সব কাজকর্ম ফেলে ওকে নিয়ে এখানে এসে পড়েছি অথচ এর কোনও মূল্যই নেই ওর কাছে।আয়ন কিছু বলতে নিবে ঠিক সে সময় দরজায় কেউ টোকা দেয়।আয়ন প্রিয়ুর দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়,দরজা খুলতে।
“দরজা খুলার সাথে সাথে তিয়াশ,অনিক,দিশা হুমড়ি খেয়ে পড়ে আয়নের গায়ে উপর।”

–কি হলো তোদের।দরজায় কেউ এভাবে দাঁড়ায়।আয়ন কিছুটা রেগে।

“আরে ভাই,আমরা তো ভাবলাম তোমরা হয়তো হানিমুনে এসেছো।তাহলে তোমাদের হানিমুনে আমাদের কি কাজ।তোমরা আবার ব্যস্ত কিনা তা চেক করতেই দরজায় একটু কান পেতেছিলাম।আর ওমনেই তুমি দরজা খুলে দিলে।”
–আয়ন রাগান্বিত চোখে ভাইদের দিকে তাকায়।কারণ আয়ন আর প্রিয়ুর সম্পর্ক যে বর্তমানে দা কুমড়ার মতো তা খুব ভালো করেই জানে তিয়াশ, অনিক।তবুও এ ধরনের ফাইজলামির কোনও মানে হয়।
অনিক ও তিয়াশ ভাইয়ের এই রাগকে পাত্তা না দিয়ে একটা কেবলামার্কা হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে যায়।

“পরিচিত কন্ঠ শুনে প্রিয়ু বালকানি থেকে আস্তে আস্তে রুমে এসে, দরজার সামনে দিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই চমকে যায়।আর দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে দিশাকে।কতোদিন পর দেখা বেস্টুর সাথে।তাই প্রিয়ু সামলাতে পারলো না নিজের আনন্দটাকে লুকাতে।”

–আয়ন জানতো এমনি হবে।তাই আয়নই তিয়াশ,অনিকে দিশাকে সাথে করে এখানে নিয়ে আসতে বলেছিলো।প্রিয়ুর মুখে হাসি কেবল এরাই এখন আনতে পাড়বে।

“কিরে বেঈমান, আমাদের কি চোখে দেখিস না।তিয়াশ প্রিয়ুকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বললো।”
–দেখছো আয়নদা আমরা তোমার বউয়ের জন্য সব কাজ কর্ম ফেলে চলে আসলাম এখানে ওকে এন্টার্টাইন করতে।আর ও আমাদের ননভেলু করছে।
অনিক ভাই আমার, বলতো বাইচা আছি কোন শালার লাইগা।আমার আরো আগে মরণ হলো না কেনো।একটু একটিং করে,উফ! এই যন্ত্রনা আর সইতে পারছি না।আমাকে একটু বিষ এনে দেও,বিষ।যা আমি খাইয়া মইরা যামু।
শোন অনিক আমি হা করি তুই ঢাইলা দিস।কৃপটামি কিন্তু একটুও করিস না ভাই আমার।
তিয়াশের কথা শুনে প্রিয়ু অট্টহাসিতে হাসতে লাগলো।আর আয়ন মুগ্ধ হয়ে প্রিয়ুর সেই হাসি দেখতে লাগলো।আজ অনেকদিন পর প্রিয়ুকে এভাবে হাসতে দেখেছে আয়ন।
_____________
“পূর্নিমা রাত,চারদিকে ঘন অন্ধকার।রিসোর্ট এর সব লাইটগুলো অফ করে রাখা হয়েছে,শুধুমাত্র রাতের পূর্ণিমাকে উপভোগ করার জন্য।মিটিমিটি করে আলো জ্বালিয়ে জোনাকিরাও বের হয়ে গিয়েছে নিজেদের সঙ্গী খুঁজতে।”

–মাথার উপরে একটা মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে।ঘাসের উপর শুয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই চাঁদটির সৌন্দর্য উপভোগ করছে আয়ন আর প্রিয়ু।আজ সারাদিন প্রিয়ু অনেক আনন্দ করেছে।তাই কিছুটা ক্লান্ত।

“তিয়াশ,অনিক কে সাথে নিয়ে মাছও ধরেছে।চারজনে মিলে ব্যাডমিন্টনও খেলেছে।তবে খেলায় প্রিয়ুবার বার হারার কারনে মন খারাপ করে বসে পড়েছিলো।কারণ প্রিয়ুর বিপক্ষ দল ছিলো তিয়াশ আর দিশা।ওরা দুজনই ব্যাডমিন্টনের মাস্টার বলতে গেলে।প্রিয়ুও ভালো খেলে,কিন্তু এই খেলায় অনিক কাচা।তাইতো প্রিয়ুর এই অবস্থা। রাগে গজগজিয়ে প্রিয়ু অনিকের দিকে তাকায়।”

–ভাই,তোমার কারনে আমাকে হারতে হচ্ছে বারবার।তুমি কেমন ছেলে সামান্য ব্যাডমিন্টন খেলা খেলতে পারোনা।তোমার থেকে ওয়ান-টুর বাচ্চারাও ভালো খেলে।

“উফ প্রিয়ু,জানিসই তো আমার ফেবেরেট খেলা ক্রিকেট। অন্য কিছুতেই আমার মন ভরে না।তুই ওদের ক্রিকেট খেলার চেলেন্জ কর।তারপর দেখ,এই অনিকের খেল।একেক টাকে ছক্কা মাইরা উড়াইয়া দিমু।”

–কই উড়াইয়া ফালাইবা,তোমার শ্বাসুর বাড়ী।হাদারাম কোথাকার।সবগুলো অপদার্থ ভাই পাইছি আমি।কোনও কাজের না একটাও।

“অনিক কিছুটা হতাশ হলো,প্রিয়ু ওর টেলেন্টটা বুঝতে পাড়লোনা বলে।কিন্তু প্রিয়ুকে তো জিতাতে হবে,তাই একটু ভেবে।শোন প্রিয়ু!

–প্রিয়ু অনিকের দিকে তাকিয়ে কি?

“আয়নদাকে রাজি করা।আয়নদা মাস্টারের মাস্টার এই খেলায়।তোকে দাদা একাই জিতিয়ে দিতে পারবে।আর তিয়াশেরও বারোটা বাজিয়ে দেবে।”

–কি হলো প্রিয়ু,হাওয়া ফুস।নাকি আরো খেলবি।আমার কিন্তু তোকে হারাতে বেশ ভালো লাগছে।কি বলো দিশা।

“দিশাও হেসে হা জবাব দেয়।”

–প্রিয়ুতো রেগে আগুন। অনিকের দিকে তাকিয়ে,তোমার ওই রোবটমার্কা ভাই কি খেলবে আমার সাথে।দেখনা,ছুটিতে এসেও লেপটপে বসেবসে কাজ করছে।

“তুই বললে,অবশ্যই করবে।কিন্তু একটু ভালোবেসে বলিস।তুই ভালোবেসে বললে তো ফাঁশিতে ঝুলতেও রাজি,আর এটা তো জাস্ট একটা বেডম্যান্টন খেলা।”

–প্রিয়ু কিছুক্ষন অনিকের দিকে তাকিয়ে,আয়নের দিকে তাকালো।ভালোবেসে তাও আবার আয়নদাকে।এই ব্যক্তি ভালোবাসার কি বুঝে।শুধু জানে মন ভাঙ্গতে।কিন্তু এখন জিতাটাই হচ্ছে ফরয কাজ।তাই বলতে তো হবেই এই খবিশটাকে।আর কোনও উপায় নেই প্রিয়ু তোর।বিপদে পড়লে গাধাকে বন্ধু বানাতে হয় এটাই নিয়ম।
………….
“প্রিয়ু গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আয়নের সামনে প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে।কিন্তু কাজ পাগল আয়নের সেদিকে কোনও খবর নেই।তাই প্রিয়ু নিজের উপস্থিতি জানান দিতে খুকখুক করে কাশি দিলো।”
–আয়ন প্রিয়ুর দিকে না তাকিয়ে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো।
“প্রিয়ুর মেঝাজ বিগরে গেলো,আমার পানি লাগবে না আয়নদা।আমার তো এখন একটু তোমাকে লাগবে,প্রিয়ু একদম কাছে এসে আয়নের হাতটি পরম যত্নে নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে কথাটি মিষ্টি করে বললো।ঠিক যেনো আগের প্রিয়ু, যেভাবে আবদার করতো আয়নের কাছে।”

–আয়ন চোখের সানগ্লাসটা খুলে এবার প্রিয়ুর দিকে তাকালো।একটু মুচকি হেসে একহাত প্রিয়ুর গালে রেখে বললো,আমিতো পুরোটাই তোর তাহলে একটু কেনো,নিবি যখন পুরোটাই নে।আমি মাইন্ড করবো না।আর আমি তোর মতো নির্দয়ও না।
“আয়নদা,মজা করো না।সত্যিই বলেছি।”
–আয়ন নিজের হাসিটা আরো একটু প্রশস্ত করে বললো,আমিও মজা করছি না সোনা,আমিও সত্যিই বলছি।
“আয়নের ইশারা বুঝতে পেড়ে প্রিয়ু একটি লজ্জা পেলো।আর ইতস্থিত হয়ে আয়নের হাতটি ছেড়ে দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,হয়তো প্রিয়ুর মাঝেও অল্প হলেও অনুভূতির হওয়া বইছে।”
–আর আয়ন সে তো মনে হয় তার প্রিয়ুসীর সকল অনুভূতিগুলো যেনো চোখ দিয়েই শুষে নিচ্ছে।একদৃষ্টিতে আয়ন প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হয় কি যেনো শান্তি খুঁজে পায় এই মুখটির মাঝে।আয়ন জানে না কেনো,শুধু জানে ওর খুব ভালো লেগেছে এই মুহুর্তে।যদি সময়কে বন্দি করা যেতো তাহলে হয়তো আয়ন বন্দি করে ফেলতো এই মুহুর্ত কে,এই সময়কে আর এই লজ্জাবতী প্রিয়ুকে।
………..
“অবশেষে প্রিয়ু আয়নকে ব্যাডমিন্টন খেলতে মানিয়ে নিয়েছিলো।তবে এতে করে আয়নেরও একটা শর্ত ছিলো।জিতলে আয়ন যা চাইবে প্রিয়ুকে তাই দিতে হবে।
‘প্রথমে প্রিয়ু ভয় পেয়েছিলো আয়নের শর্তে,পরে আয়ন আশ্বাস দিলো,ও লিমিট ক্রস করবে এমন কিছুই চাইবে না।তাই প্রিয়ুও রাজি হয়ে যায়।”

–তিয়াশ ও দিশাকে নাকের পানিতে ডুবিয়ে ছাড়ছে আয়ন আর প্রিয়ু আজ।লাস্ট মুহুর্তে তিয়াশ নিরাশ হয়ে খেলাই ছেড়ে দিলো। আর প্রিয়ু জিতে গেলো।ও এতো খুশি ছিলো যে আয়নকে আচানক জড়িয়ে ধরলো।
আয়ন এসব এই সময় মোটেও আসা করেনি, তাও আবার প্রিয়ুর থেকে।আয়নের ঘেমে যাওয়া শরীরটি প্রিয়ুর ঘার্মান্ত শরীরের সাথে একদম লেপ্টে গেলো। আয়নকে দিশেহারা করতে প্রিয়ুর শরীরের একটু স্পর্শই যথেস্ট ছিলো।আর সেখানে প্রিয়ুর সমস্ত ভার এখন আয়নের উপর।আয়ন সত্যিই বুঝতে পারছে না কি করবে।

” আসলে প্রিয়ু নিজেও বুঝতে পারেনি ও কি করছে।ঘটনাটা আচানকই হয়।ও নিজের এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখতে পারছিলো না।”

–এদিক দিয়ে তিয়াশ আর অনিক একে অপরকে চোখ টিপ মারলো।তার মানে তাদের প্লান সাকসেসফুল হয়েছে।প্রিয়ু স্বাভাবিক হচ্ছে।প্রিয়ু যতোটা স্বাভাবিক হবে আয়নের প্রিয়ুকে পেতে ততোই সহয হবে।যেমন আজ হলো।ভাইয়ের মুখের তৃপ্তিময় হাসিই বলে দিচ্ছে,ভাইয়ের মনের কথা।আর ভাইয়ের এই হাসির জন্য সবকিছু করতে রাজি ওরা।
……….
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি

সুর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি
সুর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি
এখন তো চান্দের চিনে না
আমারে সুর্যও চিনে না
চিনবো কেমনে যে চিনাইব সেও তো চিনে না
এখন তো চান্দের চিনে না

আমারে সুর্যও চিনে না

চিনবো কেমনে যে চিনাইব সেও তো চিনে না
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি
সুর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি

“ঝিলের পাশের ছাউনি দিয়ে ঘেরা বৈঠকখানাতে বসে কয়েকজন ছেলেমেয়েদের গানের আসর চলছে।আয়ন নিজেও তাদের গান খুব উপভোগ করছে এই নিস্তদ্ব রাতে।মুখ ঘুড়িয়ে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে দেখে,ওর প্রিয়ুসী ওর এক হাতের উপর শুয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আয়ন হেসে দিলো।চাঁদের আলোয় প্রিয়ুর সারামুখে পড়ে আরো বেশি সিগ্ধ লাগছে।মনে হয় এই মাত্র জ্যোৎস্না স্নান করে এই নারী ধরণীতে নিজের পদার্পণ করেছে।”
–রাত আস্তে আস্তে গভীর হচ্ছে,তাই আয়নও প্রিয়ুকে কোলে তুলে নিয়ে নিজেদের কোটেজের দিকে পা বাড়ালো।দূর থেকে আয়ন আর প্রিয়ুকে এভাবে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করলো ছেলেমেয়েগুলো।পার্ফেক্ট জুটি।
“আয়ন হেসে দিলো।মনের ভেতর অনেক বাসনা তো জাগ্রত হচ্ছে এই পূর্ণিমা রাতে।কিন্তু আয়ন জানে প্রিয়ু এখনো রেডি না,মন থেকে আয়নকে সব সপে দিতে।তাই আয়নকেই নিজের অনুভূতিগুলো সামলাতে হবে।যতোদিন না প্রিয়ুকেও এই অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে।”

–তিয়াশ, অনিক আর দিশা চলে গেছে বিকেল হতেই।কিন্তু আয়ন প্রিয়ুকে নিয়েই রয়ে গেলো রিসোর্টে।কাল সকালে চলে আসবে বাড়ীতে সবাইকে বলে দিতে বললো।

চলবে…..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here