এবং_স্ত্রী পর্ব_১০

এবং_স্ত্রী
পর্ব_১০
#Jannatul_Ferdos(Esporshi Espriha)

হঠাৎ তুমুল বেগে ঝড় উঠলো।এই অসময়ে ঝড় কিসের লক্ষন?নিরুপমা সেটাই ভাবছে।ছাদে উৎস আছে এখনো নামে নি ছাদ থেকে।ঝড়ের মধ্যে ও কি ছাদেই থাকবে সে?নিরুপমা নিজেই আওরাতে থাকল কথা গুলি।

উৎস গত দেড় ঘন্টা যাবত সেই একজায়গায় বসে আছে।নিরুপমার কথা গুলো তাকে খুবই ব্যথিত করেছে। আসলেই তো মেয়েটার এইখানে কোনো দোষ নেই।সৎ মায়ের অত্যাচার এর হাত থেকে মুক্তি পেতে,মা হারা অনাথ বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকিয়ে সে এ বাড়িতে এসেছিল।অথচ আমি তাকে কতোই না কষ্ট দিয়েছি।কতোই না অপমান করেছি।চাইলেই পারতাম একটু ভালো ব্যবহার করতে ভালো না বাসতে পারি অন্তত মেয়েটার পাশে থাকতে পারতাম।কিন্তু আমি এগুলার কিছুই করি নি। আচ্ছা নিরুপমার কথাই কি ঠিক সব সৎ মা ই সৎ মা হয় না। তারা একজন ভালো মা ও হতে পারে?তবে যে অরিত্রার মা আমাকে বলে সৎ সবসময় সৎ ই থাকে কখনো আপন হয় না।কিন্তু আমি তো দেখেছি নিরুপমার চোখে মুসকানের জন্য ভালোবাসা।এমন অনেক সময় হয়েছে ভাত তুলে মুখে দিতে যাওয়ার সময় মুসকান কান্না করে উঠেছে।নিরুপমা সেই ভাত টুকু আর মুখে তুলে নি৷ হাত ধুয়ে দৌড়ে মুসকানের কাছে গিয়েছে।যতক্ষন না মুসকান শান্ত হয়েছে বা ঘুমিয়েছে সে মুসকানকে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেছে।একবারের জন্য ও কাউকে বলে নি মুসকানকে একটু রাখো আমি খেয়ে নেই।সেতো আমার কাছে ভালোবাসা চাইত কিন্তু কখনো তো অধিকার চায় নি।আচ্ছা ওর এই কার্যবিধি গুলো আজই কেন চোখে পড়লো আমার? এতোদিন কেন চোখে পড়ে নি?তবে কি আজ নিরুপমার থাপ্পড়টার জন্য এগুলার আমার চোখে পড়লো?ওর বলা প্রতিটা কথাই কি আমার চোখে বেধে থাকা কালো কাপড়টা সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করলো?
গত দেড় ঘন্টা ধোরে উৎস এগুলা নিজে নিজে ভাবতে থাকে।এইদিকে যে প্রবল বাতাস বইছে সেদিকে তার হুস নেই।সে আকাশে দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে আর আকাশের তারাদের সাথে কথা বলছে-
“ছোট বেলায় জানতাম মরা পর মানুষ নাকি তারা হয়ে যায়। বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝলাম এটা আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু আজ কেন জানি তোমাদের ভিতর যেকোনো একটা তারাকে আমার অরিত্রা লাগছে।আচ্ছা কিছুক্ষনের জন্য আমি আমার তারা রুপি অরিত্রার সাথে কথা বলি?অরি তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?এ তুমি আমাকে কেমন জীবনে রেখে গেলে অরি।না পারছি তোমাকে ভুলতে না পারছি তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে।তোমার সেদিনের বলা কথা কিভাবে ভুলি অরি?যেদিন তুমি রাগ করে চলে যেতে চাইলে আমি দুষ্টামি করে বলেছিলাম তুমি গেলে আমি আরেকটা বিয়ে করব তখন তাকে ভালোবাসব আদর করব।সেদিন আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিলে আর বলেছিলে আমাকে তুমি কারোর সাথে ভাগ করতে পারবে না। তোমার অধিকার অন্য কাউকে দিলে তুমি সহ্য করতে পারবে না।হয়তো মরার পর ও এটা তুমি সহ্য করতে পারবে না।তোমার সেদিনের কান্না সেদিনের অসহ্য ব্যথা যে আমি আজ ও ভুলতে পারি না অরি।আমি কি করে অন্য কাউকে ভালোবাসব?যদি তুমি আমার কাছে মুসকানকে আমানত রেখে না যেতে আমি ও তোমার কাছে চলে যেতাম।এখন তুমিই আমাকে পথ বলে দাও স্বার্থপর মহিলা।তুমি এতোটা স্বার্থপর যে আমাকে দুনিয়ায় এই নির্মম কষ্টে মধ্যে ফেলে চলে গেছো।যেখানে তুমি জানতে তোমাকে ছাড়া একটা মূহুর্ত কাটানো আমার পক্ষে কতটা তীব্র যন্ত্রণার।।
উৎস হাটু গেড়ে বসে প্রবল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।সে অরিত্রাকে পাগলের মতো ভালোবাসত।বৃষ্টির পানির সাথে উৎসের চোখের পানি মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

নিরুপমা ঝড় দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না।যতই রাগ করে থাকুক সে উৎসের প্রতি সে তো তার স্বামী? তার ভালোবাসার মানুষ। ঝড়ের সময় বিপদ আপদের কথা বলা যায় না। তাই রাগকে দমিয়ে রেখে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।আর যাই হোক স্বামীর ক্ষতি হোক এমনটা কখনোই একজন স্ত্রী চাইতে পারে না।ছাদে প্রবেশ করতেই সে দেখতে পায় উৎস আকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আর তারপর সে তারাদের সাথে কথা বলতে শুরু করে। এতোক্ষন উৎসের বলা প্রতিটি কথা নিরুপমা শুনেছে।উৎসের এই আত্মচিৎকার নিরুপমার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত করে তুলেছে।একটা মানুষ এতোটা ভালোবাসতে পারে কিভাবে?কেন জানি নিরুপমার উৎসের উপরে থাকা সব রাগ শেষ হয়ে গেল।
“এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাকে সাক্ষী মেনে আজ আমি প্রতিজ্ঞা করলাম তোমাকে এই অভিশপ্ত কষ্ট থেকে আমি বের করবোই উৎস।তোমার এই কষ্ট আমার জীবনে পাওয়া কষ্টের কাছে কিছুই না কিন্তু তাও কেন তার থেকে ও বেশি ওজন তোমার কষ্ট মনে হচ্ছে।তোমাকে এটা বুঝতে হবে উৎস যে ভালোবাসে সে সবসময় চায় তার ভালোবাসার মানুষ সুখী থাকুক ভালো থাকুক।অরিত্রা মারা গেলে ও হয়তো সে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ও সে এটাই চেয়েছে তুমি ভালো থাকো বাকিটা জীবন।অতীতকে ধোরে রাখা বোকামি। এটা তোমার বুঝতেই হবে উৎস।একদিন তুমি আমাকে মুসকানের সৎ মা থেকে মুসকানের মা হিসেবে এবং তোমার স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দেবে।সেদিন তুমিই বলবে তুমি মুসকানের মা #এবং স্ত্রী আমার।আমি শুধু সেইদিনের অপেক্ষায় থাকব উৎস।
নিরুপমা আর উৎসকে ডাকে না।একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাদ প্রস্থান করে।উৎস আজ কাদুক।ছেলে মানুষ সহজে কাঁদতে পারে না।আজ সে কাঁদছে বুক হালকা হবে কাঁদলে।

বিকেল গরিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। কিন্তু মেঘলা আকাশের জন্য মনে হচ্ছে রাত হয়ে গিয়েছে। এর মেঘের মধ্যেই আকাশে ছোট ছোট তারা দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টি যাচ্ছে আসতেছে।আবহাওয়া খারাপ হওয়াই আর নয়ন রাহমানদের প্রবীর খান আর তনিমা বেগম যেতে দেন না। তারা থেকে যাবে। নিরুপমা ঠিক যতোটা খুশি হয়েছে ঠিক ততোটাই বিরক্তবোধ করছে।পারুল বেগমের আসার কি দরকার ছিল?সে তো প্রথমে আসতে চায় নি।তাহলে হঠাৎ কি মনে করে সে আসল?কোনো বাজে মতলব নিয়ে এসেছে মহিলা। তাছাড়া তার আসার কথা না।তনিমা বেগম না চাইতেই পারুল বেগমের সাথে কথা বলছেন।সৌজন্য রক্ষার্থে।কিন্তু তিনি ও প্রচুর বিরক্ত তার উপরে।
“বলতাছি বিয়াইন নিরুরে একটু কড়া করে ধরে রাইখনে কইলাম।মাইয়া সুবিধার না।একটু যদি ঢিল কাটছেন না দ্যাখবেন মাথায় উপর চাইরা নাচতাছে।তারপর আপনার সংসার থাইকা আপনারেই না বাইর কইরা দেয় মাইয়া তো সুবিধার না।
” ভাবি কিছু মনে করবেন না।আমার সংসার নিয়ে আপনার মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই।আমার সংসার আমি ঠিক ভাবে রাখতে জানি।আর নিরুকে আমার কড়া করে ধোরে রাখা লাগবে না ভাবি।সে কেমন আমি খুব ভালো করি জানি।আমার মনে হয় আপনার নিজের চর্কায় তেল দেওয়া উচিত।অতিথি হয়ে এসেছেন ২ দিন বেড়ান অতিথি হয়ে চলে যান।আমাদের মা মেয়ের সংসারে আপনার নাক না গলাইলে ও চলবে।
তনিমা বেগম বিরক্ত হয়ে কথা গুলো বলে নিজের রুমে চলে আসেন।মহিলা সুবিধার না।এইবার তার কাছে পরিষ্কার কেন সে এসেছে?নিরুপমাকে নিয়ে গালমন্দ করার জন্য।এরকম অভদ্র মহিলা তনিমা বেগম জীবনে দেখেন নি।
পারুল বেগম মুখে যা আসছে তা দিয়ে গালি দিয়ে যাচ্ছে নিরুপমাকে কিন্তু সেটা খুব চাপা গলায়।নিরুপমার প্রতি সবার এমন দরদ তার সহ্য হচ্ছে না।কথায় আছে খারাপ মানুষ কখনো অন্যের সুখ দেখতে পারে না।পারুল বেগম সে খারাপ মানুষের দলের একজন।আবার তাদের লিডার ও হতে পারে।কারন তিনি খুবই স্বার্থপর জঘন্য একজন নিকৃষ্ট বদমহিলা।

চলবে!
অরিত্রার মাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসবে আপনাদের মনে।যথা সময়ে সেই চরিত্র আমি উন্মোচন করবো।তখন আপনাদের মনের সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।গল্পে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here