এবং_স্ত্রী
পর্ব_৯
#Jannatul_Ferdos(Esporshi Espriha)
উৎস কিংকর্তব্যবিমূঢ় ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে মুখে হাত দিয়ে। সে আসলে বোঝার চেষ্টা করছে ঠিক কি হলো তার সাথে।কিন্তু ঠিক মতো ঠাউর করে উঠতে পারল না।তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কিন্তু রাগে শরীর কাঁপছে।
নিরুপমার খুব কান্না পাচ্ছে।চোখ দিয়ে অঝোর পরিমানে বৃষ্টি বর্ষন হচ্ছে। ঠোঁট উল্টে কাঁদছে নিরুপমা। সে চাই নি উৎসকে থাপ্পড় মারতে কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে।কোনো রকম নিজেকে সামলে সে চোখের পানি মুছে উৎসের উদ্দেশ্যে বলা শুরু করে…
“প্রথমতো আমি আপনার কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি। উহু একদমই ভাব্বেন না আমি থাপ্পড়টা মেরে এখন বুঝতে পারছি কাজটা ঠিক হয়নি সেজন্য ক্ষমা চাচ্ছি।ব্যাপারটা একদমই ভিন্ন।আমি যা করেছি বেশ করেছি।ক্ষমা চেয়েছি এজন্য যে স্বামীর গায়ে হাত তোলা গুনাহ। কিন্তু কি করব বলেন আজকে আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন আপনাকে থাপ্পড় মারতে।একটা মানুষকে আর কতো জ্বালাবেন আপনারা?আর কতো শাস্তি কতো কষ্ট দেবেন?আমার অপরাধটা কি ছিল?এই দুনিয়ায় জন্ম নেওয়া?২ বছর বয়সে মাকে হারানো?আপনার মেয়েকে নিজের মেয়ে মনে করা? আপনাকে ভালোবাসা?এগুলা যদি আমার ভুল হয় তো আল্লাহ কেন আমাকে এই দোযখ থেকে মুক্তি দেয় না।আমি আপনাকে আগে ও বলেছিলাম মুসকান আমার মেয়ে। ওকে আমি কখনোই সৎ নজরে দেখি না।কেন দেখবো?আমার মতো একজন অবহেলিত লাঞ্চিত মেয়ের সৌভাগ্য হয়েছ এতো সুন্দর একটা পরিবারে আসার,এতো সুন্দর একটা সংসারে আসার শুধু মাত্র মুসকানের জন্য।তাকে আমি ফেলে দিব?অন্তত আমি এতোতা অকৃতজ্ঞ না।
এরপর আসি সৎ মায়ের কথাই।সৎ মা কথাটার অর্থ জানেন?এর তাৎপর্য জানেন?একটা মানুষের লাইফে সৎ মা কতোটা ভয়ংকর হয় বা হতে পারে তা শুধু মাত্র আমার মতো নিরুপমারাই বুঝে। যে তার সৎ মায়ের অনাদরে বড় হয়েছে, সৎ মায়ের জুলুমের বড় হয়েছে আমার মনে হয় না সে কখনো একজন সৎ মা হয়ে উঠবে যদি না তার ভিতর মনুষ্যত্ববোধ থাকে।আপনি কি বুঝবেন এগুলার?আপনি তো কখনোই এগুলা ভোগ করেন নাই।আমি জানি একটা মানুষের মনে তার সৎ মা কতোটা নিকৃষ্ট মানুষ হিসাবে গন্য।আমি কখনোই একজন নিকৃষ্ট মানুষ হতে চাইনা।আমি মুসকান এর সৎ মা কখনোই হতে পারব না। কেননা সৎ মা হয়ে ওকে নির্যাতন করার আগে আমার সাথে হওয়া নির্যাতনের কথা আমার মনে পড়বে। এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছি আমি যা কেউ কখনো কল্পনা করতে পারে না।আমি জ্বরে বেহুশ হয়ে ছিলাম, মা সেদিন তার কোনো এক কাজে বাইরে গিয়েছিল আমাকে বলেছি রান্না করে রাখতে।আমি এতোটাই অসুস্থ ছিলাম যে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারি নাই।যার জন্য লতিফ ঝুমুরকে বুঝিয়ে ২ জনে মিলে রান্না করতে যায়।মা এসে যখন দেখে তারা রান্না করছে চুলার থেকে জ্বলন্ত কাঠ এনে আমার পিঠে চেপে ধোরে।”আহ” সেই ব্যথা আমি আজো ভুলি না উৎস।এখনো আমার পিঠে দাগ আছে।এগুলা মনে রেখে কখনোই আমি মুসকানের সৎ মা হয়ে উঠতে পারব না।আজ আপনি অপমান অনাদরের অভদ্রতার চরম সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন।আজ অতিক্রম করেছেন বললে ভুল।অনেক আগেই অতিক্রম করে ফেলে সেই পথেই হাঁটছেন।যেমন ধরুন যখন একজন মানুষ মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে তখন সবাই বলে মৃত্যু তার সন্নিকটে কিন্তু যখন সে মারা যায় তখন কেউ বলে না মৃত্যু তার সন্নিকটে কারন মৃত্যু তাকে ছুঁয়ে ফেলেছে। আর আপনার অবস্থা ও তাই।অভদ্রতা আপনাকে অনেক আগেই ছুঁয়ে ফেলেছে।যার ফলে অনেক আগেই অতিক্রম করে ফেলেছেন সীমা।আমি ও একটা মানুষ আমার ও মন আছে।আমার ও ইচ্ছা করে সুন্দর একটা সংসার হবে।যদি মেনেই না নিবেন বিয়ে কেন করেছিলেন?কেন আমার জীবনটা নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেললেন?
হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিরুপমা এবার জোর গলায় বলল…
এতোদিন এই নিরুপমা আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আপনার পিছু পিছু ঘুরেছে ঠিক আপনি ও একদিন আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমার পিছু পিছু ঘুরবেন।আর কখনো দাবী নিয়ে আসব না আমি।আপনার মতো চিপ মেন্টালিটির মানুষ আমি দুনিয়ায় দুটো দেখি নাই।
নিরুপমা এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে ছাদ থেকে নেমে আসে।উৎসকে কিছু বলার সুযোগই দিল না।আজ তার খুব কষ্ট হচ্ছে।তার লাইফই কেন এমন হয়ে গেলো?কেন সবার কাছে সে অবহেলিত, লাঞ্চিত?
উৎস এখনো দাঁড়িয়ে আছে আগের ন্যায়।কথা গুলো দলাপাকিয়ে মাথা দিয়ে ঘুরছে।সে কি আজ সত্যিই নিরুপমাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে?সে কি একটু ভালো ব্যবহার করতে পারত না তার সাথে?ভালো নাই বাসতে পারল অন্তত তার ভালোবাসাকে সম্মান জানাতে পারত।উৎসের বিবেক ও উৎসকে এখন গালি দিচ্ছে।সে অরিত্রার প্রেমে এতোটাই পাগল হয়ে গিয়েছে যে সে হিতাহিত জ্ঞানটাই ভুলে গেছে।আসলেই তো যখন তাকে ভালোবাসতে পারবে না, মর্যাদা দিতে পারবে না বিয়ে কেন করেছিল সে?উৎস দেওয়াল ঘেঁষে বসে পড়ে।আজ অরিত্রাকে বড্ড বেশি মনে পড়ছে তার।
চলবে!..
সব পর্বে চারপাশের সবকিছু দেখানো সম্ভব হয় না।আশা করছি আপনাদের থেকে গঠনমূলক মন্তব্য পাবো।গল্পে নিচে নাইস নেক্সট দিতে বারন করার পর ও একদল মানুষ নাইস নেক্সট ছাড়া কিছু লিখতে পারে না।এরা কি আমার কষ্ট বুঝবে না?