ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-১৪

0
1038

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

অন্ধকার রুমটার এক কোণে খানিক আলো দেখা যাচ্ছে। উত্তরমুখী জানালা থেকে এক ছটাক আলো এসে জড়িয়ে যাচ্ছে আহনাফের গা জুড়ে। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে। আহনাফের ঠোঁটের কোণে বিজয়ের হাসি। বেশ খানিকটা নীরবতার পর একসময় আহনাফ বাঁকা হেসে বললো,
— ” সো..দ্যা গেম ইজ অভার।”

ছেলেটা হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে ঠোঁটের কোণে রক্তটা মুছে ফেললো। একটু আগেই দুপক্ষের বেদরম মারামারি হয়েছে। তবে এখন সবটাই শান্ত। ছেলেটা বাঁকা হেসে পাশে থাকা পুরনো এক কাঠের আলমারিতে হেলান দিলো। রুমটাতে ফ্যান থাকলে হয়তো ভালো হতো। বড্ড গরম লাগছে। এই মুহূর্তে গরমটা তার সইছে না। শরীরের গরমের কারণে মাথাটাও টগবগ করছে। ছেলেটা নাকের উপর জমে থাকা ঘাম মুছে নিয়ে বললো,
— ” তুই এই গেমের হাফ জিতেছিস। পুরোটা না। অ্যান্ড মাইন্ড ইট শেষ হাসিটা আমিই হাসবো। ”

আহনাফের রাগ লাগলো। এত কিছু হওয়ার পরও এই কথা বলছে। কতটা নির্লজ্জ এই ছেলে। আহনাফ এবার তেড়ে আসলো সেই ছেলের দিকে। রাগে মুখ থেকে ফুস ফুস আওয়াজ তুলে ছেলেটার কলার চেপে ধরলো। বললো,
— ” ব্লাডি রাস্কেল। এতকিছু হওয়ার পরও এখনো জেতার স্বপ্ন দেখছিস তুই? হ্যাঁ? ”

ছেলেটার মুখে মুচকি হাসি। আজকে অযথাই হাসি পাচ্ছে তার। এই হাসি হেরে যাওয়ার হাসি নাকি বাকিটা খেলা জেতার পূর্বাভাস। ছেলেটার মুখে হাসি দেখে আহনাফের রাগ তরতর করে বেড়ে গেলো। হাত দিয়ে মুচড়ে ধরলো ছেলের শার্টের কলার। বললো,
— ” হাসি ফুটছে মুখে? মুখ ভেঙে দেবো তোর। ”

এবার ছেলেটার মুখে রাগের আভাস দেখা গেলো। খুবই শীতল গলায় বললো সে,
— ” কলার ছাড়, আহনাফ। ”

আহনাফ একনজর নিজের হাতের দিকে তাকালো। পরমুহুর্তেই দ্বিগুণ জোরে কলার চেপে ধরে বললো,
— ” ছাড়ার মুড নেই। পারলে ছাড়িয়ে নে। ”

ছেলেটা এবার হাত উঁচু করে আহনাফের নাক বরাবর এক ঘুষি মারলো। আকস্মিক আঘাতে আহনাফ কলার ছেড়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো। মাথা নিচু করে নাকে হাত দিলো আহনাফ। নাক থেকে তরল কিছুর অস্তিত্ব পেতেই ভেজা হাতটা চোখের সামনে আনলো। রক্ত…! আহনাফ চোখ গরম করে ছেলেটার দিকে তাকালো। ” ইউ ব্লাডি ইডিয়েট। ” বলে দ্বিগুণ তেজ নিয়ে তেড়ে গেলো ছেলেটার দিকে।
দুপক্ষে খানিক হাতাহাতি করে একসময় দুজনই ক্লান্ত হয়ে বসে গেল মাটিতে। আহনাফ মাটিতে হাঁটু গেরে বসে মাথা ডানে হেলিয়ে দিলো। শরীরটা খানিক নেতিয়ে গেছে ওর। পাশে বসা ছেলেটাও ক্লান্তিতে বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলছে। একসময় আহনাফ শীতল গলায় বললো,
— ” ভুলে যা ওকে। ”

ছেলেটা হাত দুটো মাটিতে ঠেসে রাখলো। পিঠসহ মাথাটা পিছন দিকে হেলিয়ে বললো,
— ” সম্ভব না। ”
— ” এই প্রথম কোনো বাজি নিয়ে আমি ভয় পাচ্ছি। ওকে ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। ”
— ” তুই ছেড়ে দিতে না পারলে আমি কি করে ছেড়ে দেই? তোর মধ্যে যে অনুভূতি আছে, সেই একই অনুভূতি আমার মাঝেও। ”

আহনাফ উত্তরে কিছুই বললো না। শুধু কতগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আহনাফ দাড়িয়ে গেলো। রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে আরো একবার পিছন ফিরে বললো,
— ” ও তোর কখনোই হবে না। কারণ সেই রাস্তা অলরেডী আমি বন্ধ করে ফেলেছি। ও তোর জেদ। কিন্তু আমার কাছে? ও আমার প্রাণ, আমার নিঃশ্বাস। মনে রাখিস কথাটা। ”

আহনাফ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। রুমের দরজা এখনো হালকা নড়চড় করছে। আহনাফের প্রস্থান করার বাতাসটা রুমের সর্বত্রই। মাটিতে বসে থাকা ছেলেটা চোখ রাঙিয়ে আহনাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” আমি আমার জেদ সবসময় পূরণ করে থাকি। আমি কখনোই হেরে যাইনা, আহনাফ। কখনোই না। ”

______________________
আহনাফের হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আভা। বাহুতে ঝুলানো সাইড ব্যাগ। হঠাৎ হসপিটালে আসার মূল কারণ হলো আহনাফ। প্রায় ঘন্টা খানেক আগে আহনাফ আভাকে ফোন করে এখানে আসতে বলেছে। তবে আভা একটা জিনিষ বুঝতে পারছে না, হঠাৎ আহনাফের হলো টা কি? আকস্মিক ফোন কল? আভা হসপিটালের গেট পাড় হয়ে লিফটে উঠলো। পাঁচ তলায় যাবে ও।

লিফট নির্দিষ্ট তলায় এসে ” পিপ” করে আওয়াজ তুললো। লিফট খুলে গেলো। আভা পাঁচ তলায় এসে চারপাশে চোখ বুলালো। আহনাফের কেবিন কোনটা?

— ” এক্সকিউজ মি, ম্যাম। ”

পুরুষালি কণ্ঠ শুনে আভা পিছন ফিরে তাকালো। তরুণ শ্যামবর্ণের এক ছেলে। শরীরের গঠনটা বেশ সিমসাম। তবে একে সুস্বাস্থ্য বলা যায়না। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করলে হয়তো সুস্বাস্থের অধিকারী হতে পারতো। ছেলেটা আভার দিকেই তাকিয়ে আছে। আভা বললো,
— “জ্বি, বলুন। ”
— ” আপনি আহনাফ স্যারকে খুজছেন? ”

আভা খানিক অবাক হলো। এই ছেলে কি করে জানলো? তবে কি একে আহনাফ পাঠিয়েছেন? আভা বললো,
— ” হ্যাঁ। ”
— ” স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনি আসুন আমার সাথে। ”

আভা সাতপাঁচ ভেবে ছেলেটার পিছন পিছন এলো।
কেবিনের সামনে বড়করে লেখা, ” আহনাফ শাহরিয়ার। ” কেবিনের সামনে অনেকজন রোগী বসে আছে। সবার মুখেই প্রিয়জন বা নিজজন এর দুশ্চিন্তা।
ছেলেটা কেবিনের দরজা খুলে কারো উদ্দেশ্যে বললো,
— ” স্যার, ম্যাম এসেছেন। ”

ভিতর থেকে সায় পাওয়ার পরই আভা ভিতরে প্রবেশ করলো। আহনাফ লেদারের এক চেয়ারে বসে আছে। দুহাত টেবিলে ভর করে কপালে ঠেকানো। আহনাফের ওমন অবস্থা দেখেই আভা ধরেই নিয়েছে আহনাফ কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে। আভা এগিয়ে গেলো আহনাফের দিকে।

আভা এগিয়ে গিয়ে আহনাফের পাশে দাঁড়ালো। মিহি সুরে বললো,
— ” আপনি ঠিক আছেন? ”

আহনাফ উত্তর করলো না। বরং এর চেয়েও ভয়ানক কাজ করে বসলো ও। আচানক আভার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আভাকে ওর কোলে বসিয়ে দিলো। আকস্মিক আচরনে আভা রীতিমত হতভম্ব হয়ে গেলো। কাধে আহনাফের থুতনির অস্তিত্ব পেতেই সারাঙ্গে আড়ষ্টভাব ঘিরে ধরলো তাকে। আভা আহনাফের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
— ” কি করছেন? এটা হসপিটাল। ছাড়ুন। ”

আহনাফ আভার কাধে থুতনি রেখে চোখ বুজলো। লম্বা কয়েক নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। তবে এতে লাভ বিশেষ হলো না। আহনাফ শীতল গলায় বললো,
— ” আই অ্যাম টায়ার্ড, বউফ্রেন্ড। নিড অ্যা রেস্ট নাও। ”

আভা জড়তা নিয়ে বললো,
— ” আমাকে ছাড়ুন আর বাসায় চলুন। কয়েক ঘন্টা ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।”

আহনাফ আভাকে ছেড়ে দিলো না। বরং নিজের দুহাত আভার কোমর জড়িয়ে পেটে রাখলো। বললো,
— ” বাসায় তো আর তুমি নেই। শান্তি কোথা থেকে আসবে?”

আভা মুচড়ামুচরি থামালো না। বরং আহনাফের কোল থেকে উঠার জন্যে ছটফট করলো। কিন্তু আহনাফের হাত থেকে ছাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বললো,
— ” বাসায় শান্তি দিতে আপনার মা আছেন। ”
— ” তুমি মায়ের মতোই ভালো, বউফ্রেন্ড। ”

আহনাফ আভার কাধে থুতনি রেখে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো সেই কথাটা। কথাটা শুনে আভার শরীর বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। এত কেনো ভালো লাগলো কথাটা? সাধারণত ছেলেরা মায়ের কাছে ভালো সাজতে বউকে গাল মন্দ করে। অন্যের কাছে নিজের সহধর্মিণীকে ছোট করে। যেটা একধরণের অন্যায়। মায়ের মমতা একদিকে আর স্ত্রীর ভালোবাসা অন্যদিকে। দুজনকে কখনোই দু পাল্লায় মাপতে নেই। যেই পুরুষ তার জীবনের এই দুই নারীকে এক পাল্লায় মাপতে পারে সেই মহাপুরুষ।

আভার কানের কাছে নূপুরের ন্যায় বাজলো সেই বাক্যটা। মনটা ভরে গেলো তার। আভার ছটফটানি কমে গেলো। স্থির হয়ে বসে রইলো সে। চোখের মনিতে মনিতে মুগ্ধতা ছড়ালো তার।আহনাফ নামক মানুষটা এতটা ভালো কেনো? এতটা মারাত্মক কেনো? এতটা ভয়ানক প্রেমিক কেনো?

#চলবে
বাসায় মিস্ত্রির কাজ চলছে। ব্যস্ত থাকায় লেখার সময় পাইনি। পর্ব ছোট হওয়ার কারণে দুঃখিত।

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/224359292941972/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here