ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-১৬

0
1073

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সন্ধ্যা নেমেছে শহর জুড়ে। সেই সাথে নেমেছে রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টির ফোঁটা কাঁচের জানালার গড়িয়ে পড়তেই শব্দ হচ্ছে” টিপটপ। ” আভা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলো। টেবিল জুড়ে বই খাতার ছড়াছড়ি। আভার কানে বৃষ্টির শব্দ যেতেই আভা উঠে জানালার কাছে গেলো। মুখে মুচকি হাঁসি তার। পৃথিবীতে বৃষ্টির মতো পবিত্র কিছু নেই। বৃষ্টি জিনিসটা বরাবরই আভার খুব প্রিয়। তার থেকে বেশি প্রিয় বৃষ্টির শব্দ। মন ছুঁয়ে যায় শুনলে।
আভা জানালায় মাথা ঠেকিয়ে নিচে তাকালো। আভাদের বিল্ডিংটা একদম চৌরাস্তার মাথায় হওয়ায় নিচ থেকে গাড়ি-ঘোড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ আভার চোখ নিচে একটা বাইকের দিকে যায়। মিনহাজ ভাই এসেছেন। আজকে তো তার খবর আছে। আভা জলদি ওড়না গায়ে দিয়ে সদর দরজার দিকে এগুলো।

মিনহাজ কলিং বেল বাজানোর সাথেসাথে আভা দরজা খুলে দিলো। বোনের এমন তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে দেখে মিনহাজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো আভার দিকে। আভা দাত কেলিয়ে মিনহাজের উদ্দেশ্যে বললো,
— ” ভিতরে আসো না, ভাইয়া। ”

মিনহাজ মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে আভাকে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো। মিনহাজ নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে ডাক দিলো,
— ” মা, মা। আমাকে এক কাপ চা দিও। ঠাণ্ডা লাগছে অনেক। ”

মিনহাজ রুমে প্রবেশ করেই কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিতে শুরু করলো। বৃষ্টিতে ভিজে খুব ঠাণ্ডা লাগছে। গোসল করে ঝটপট কম্বলের নিচে ঢুকে যেতে হবে। কাথায় ঠান্ডা মানবে না মনে হচ্ছে। এখন জ্বর না আসলেই ভালো। আভা মিনহাজের পিছু পিছু রুমে আসলো। আভা মিনহাজের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে হাসিহাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
— ” ভাইয়া, আমি চা করে দিবো? ”

মিনহাজ কানে কথাটা যেতেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। এ তো ভূতের মুকুর রাম নাম। মিনহাজ কাপড় হাতে ঝুঁলিয়ে কাবার্ডের দরজা লাগিয়ে ফেললো। আভার মুখোমুখি হয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ” তুই চা করে দিবি? ”
— “হ্যাঁ।আজ ভাবলাম ভাইয়ের একটু সেবা করি। আফটার অল ভাই আমার কত কাজ করে এসেছে। খুব টায়ার্ড হয়ে গেছে। ”

মিনহাজ আভার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে কাপড় হাতে চেয়ারে এসে বসলো। পা থেকে মোজাজোড়া খুলতে খুলতে বললো,
— ” যা। বানিয়ে আন। কিন্তু যদি চা-টা খেতে খারাপ হয় তাহলে আমি তোকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো। ”

মিনহাজের কথা শোনে আভার কোনো হেলদুল হলো না। গুটিগুটি পায়ে মিনহাজের পাশে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিছু জিজ্ঞেস করবে করবে বলেও করা হচ্ছে না। বাক্যটা কেমন করে সাজাবে তাই ভেবে উঠতে পারছে না। মিনহাজ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আভার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
— ” কিছু বলার হলে বল, না হলে ফুট এখান থেকে। ”

আভা একটু হাসলো। ভাইয়াকে আজ জব্বর পঁচানো যাবে। আভা তাই ঠোঁট চেপে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
— ” ভাই, মেয়েটা কে ছিলো? ”

মিনহাজ কিছুক্ষণ থমকে দাড়িয়ে গেলো। শার্টের বোতামে থাকা হাত দুটো থেমে আভার দিকে তাকালো। চোখে প্রশ্ন তার, “এ কি করে জানলো? “আভা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
— ” বলো,বলো। মেয়েটা কে ছিলো? আমি কিন্তু কাউকে বলবো না। মাকেও না। ”

মিনহাজ হাসলো। শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে ভিজে ছিপছিপে শার্টটা শরীর থেকে ছাড়িয়ে আভার মুখের দিকে ছুঁড়ে ফেললো। আভা সঙ্গেসঙ্গে নাক কুঁচকে শার্ট এক ছিটকে বিছানার উপর ফেলে দিলো। ছিঃ! ভিজে শার্ট তার মুখের উপর ফেলে দিলো। জঘন্য! মিনহাজ বাথরুমে যেতে যেতে বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোর ভাবি ছিলো।”

আভার কানে কথাটা যতক্ষণে গেলো ততক্ষণে মিনহাজ বাথরুমের দরজা আটকে দিয়েছে। আভা ভ্রু কুঁচকে বাথরুমের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি নির্লিপ্ত উত্তর..! কোনো লুকোচুরি নেই। মাকে তবে বলতে হচ্ছে, কুমার ভাইয়ের বিয়ের লাড্ডু জলদি বানিয়ে ফেলা উচিৎ। আভা মিনহাজের ভিজে শার্ট নিয়ে ওয়াশিং মেশিনে রেখে দিলো। তারপর নিজের চুলগুলো নেড়েচেড়ে মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। খুশির খবর দিতে দেরি কিসের ?

_____________________
মায়ের রুমে দরজার সামনে যেতেই ভিতর থেকে মা বাবার গম্ভীর কথাবার্তা ভেসে আসলো। হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা চলছে। আভা একনজর রুমে উকি দিলো। বাবা চেয়ারে ফোন হাতে বসে আছেন। মা পালঙে বসে বাবার দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন। আভা সেখানে আর দাড়ালো না। রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। বিয়ের ব্যাপারটি পরেও বলা যাবে। এখন সেই বিশেষ মুহূর্ত আসেনি।

মিনহাজ ভাইকে চা দিয়ে আভা রুমে বসে পড়ছিলো। একটু পর দরজা খোলার শব্দ পিছন ফিরলো আভা। মা এসেছেন। চোখ মুখ গম্ভীর তার। আভার মা এসে বিছানায় বসলেন। ফ্যানের নিচে বসে মাথার উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে চুলগুলো খুলে দিলেন। ভিজে চুল এতক্ষণ খোঁপা করে রেখেছিলেন।
মায়েদের নিজের দিকে তাকানোর সময় কই? সংসারের যত্ন নিতে গিয়ে তারা নিজেদের কথাই ভুলে যায়। অযত্নের কারণে চোখের নিচে এক ইঞ্চি জুড়ে কালি লেপ্টে যায়, বার্ধক্যের দাগ পড়ে মুখের আনাচে কানাচে। তবুও মায়েরা সুন্দর। অতুলনীয় সুন্দর সকল মায়েরা।

আভা চেয়ার ছেড়ে মায়ের পাশে এসে বসলো। কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে অতঃপর আলতো গলায় ডাক দিলো,
— ” মা..? ”

আভার মা আভার দিকে তাকালেন। কতক্ষণ শান্ত থেকে তারপর বললেন,
— ” তোর দাদুমনি অসুস্থ। ”

দাদুমনি অসুস্থ কথাটা কান গহ্বরে প্রবেশ করতেই আভা চমকে গেলো। তার ছোট্ট জগতের শ্রেষ্ঠ এক মানুষকে হারানোর ভয় গ্রাস করলো মনের সর্বত্রই। আভা কাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— “কখন? কালই ত কল দিলাম। ভালো আছেন বললেন। ”
— ” আজ সকাল থেকে প্রেসার নিল হয়ে, ডায়বেটিস বেড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেছিলেন। হাত মচকে গেছে। হাঁটুর অসুখ টাও বেড়েছে বললেন। কতবার বললাম এখানে চলে এসো। একসাথে থাকবো। অসুস্থও কম হবে। শুনলে তো আমার কথা। সেই এক কথা মরার ঘর ফেলে কোথায় আসবো আমি। ”

আভা মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। বিয়ের পর থেকে শাশুড়ির প্রতি তার দায়িত্ববোধ বেশি ছিলো। এক ছেলের বউ তিনি। সেই কারণে শাশুড়ির বড্ড মায়ার ছিলেন। আভার মা হঠাৎ বললেন,
— ” তোর দাদুমনি আহনাফকে দেখতে চাইছেন। এখন তো তোদের বিয়ে সম্ভব না। তাই নাত জামাইকে সচক্ষে দেখেই মরতে চান। কি করি বলতো এখন? গাড়ি করে ঢাকা শহরে উনাকে আনাও মুশকিল। হাঁটুর ব্যাথা যা বেড়েছে। এখন তো আহনাফকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ”

— ” উনাকে বলে দেখো একবার। রাজি হলেও হতে পারেন।”
— ” কোন মুখে বলবো? ও ডাক্তারি রেখে যাবে কি করে ওতো দুর? তোর বাবা এই নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন।”

আভা মায়ের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। ব্যাপারটা সত্যিই অনেক জটিল। আভা মায়ের কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দিলো সব ঠিক হয়ে যাওয়ার। মেয়ে সন্তানই মায়ের সবথেকে কাছের।মেয়েরাই মায়ের কষ্ট সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারে। আভাও ঠিক তদ্রুপ।

#চলবে
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/226781516033083/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here