ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-১৮

0
1120

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আভা আর তার সঙ্গপাঙ্গ পুকুরপাড়ে এসে থামলো। বাড়ির পুকুরের পানি এই মুহুর্তে অনেকখানি স্বচ্ছ। কদিন আগেই পানি পরিষ্কার করা হয়েছে। পুকুরপাড়ের পাশ ঘিরে আছে লম্বা সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা দুটো বেঞ্চ। আভা আর বাকিসব একে একে বসে পড়লো বেঞ্চটায়।
সাথীর হাতে আভার ফোন। ইতিমধ্যে সেই ফোনের নাড়িভুঁড়ি সব বের করে ফেলেছে ও। তবুও একটা ছবিও পায়নি সাথী। সাথীকে ব্যর্থ হতে দেখে বাকি সবাই একে একে ফোন চেক করলো। তবে সবাই নিরাশ হলো। তাহমিদা আভার উদ্দেশ্যে বললো,
— ” আভাপু, দুলাভাইর একটাও ছবি নাই? এ কেমন কথা?”

তাহমিদার কণ্ঠে আশ্চর্যভাবের ছোঁয়া। তার আভাপু এতটা অকর্মা সেটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। আজকাল কোন মেয়ে নিজের হবু বরের ছবি মোবাইলে রাখে না? আভা নিজের ফোনটা বর্ষার হাত থেকে ছুঁ মেরে নিয়ে ফেললো। বেঞ্চে আরামকরে বসে রয়ে সয়ে বললো,
— ” ছবি তোলার সুযোগ থাকলে তো তুলবো। মহাশয়ের সাথে যখনই দেখা হয় সবসময় এমনভাবে আমার দিকে নজর রাখে, ফোন বের করে ছবি তোলা তখন জাস্ট ইম্পসিবল। যখন উনি কারো সাথে কথা বলেন তখনও কেমনে কেমনে যেনো আমি কিছু করলেই বুঝে ফেলে। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় উনার চোখ চার, পাঁচটা। একই সময়ে এত কিছু কেমনে লক্ষ্য করেন। স্ট্রেঞ্জ! ”

সবাই আভার দিকে হাঁ করে তাঁকিয়ে আছে। আভা এদের তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাদের দিকে তাকালে বর্ষা বলে উঠে,
— ” আভা, এসব শুনে তোর বরকে এখন আরো বেশি দেখতে মন চাইছে। কেমন রে দেখতে?”

আভা হেসে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রাত নেমেছে। রাতের বেলা চুল দেখাতে নেই। দাদুমনির কড়া নির্দেশ। তাই আভা ওড়নার অগ্রাংশ দিয়ে মাথা ঢেকে ফেললো। বলা যায়না কখন কোন ভূতে আছর করে। আভা ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
— ” অন্য একদিন দেখাবো নে। এখন চল। ভাত খাবো। মা ডাকছেন। ”

আভার পাশাপশি এসে দাঁড়ালো আরো চার মুখ। আভা ওদের সাথে হেসে হেসে ঘরের দিকে এগুলো। গ্রামের বাড়িতে আসলে ওদের সাথে কথা বললেই যেনো মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। শহরের এতদিনের গুমড়ে ভাব কমে আসে ক্ষণিকের মধ্যেই। সর্বোপরি ভালো লাগে। প্রচন্ড ভালো লাগে।
____________________
সকাল হয়ে এসেছে। জানালার ফাঁক থেকে এক টুকরো আলো এসে লুঁটোপুঁটি খাচ্ছে আভার সম্পূর্ণ মুখ জুড়ে। আভা আলো-আঁধারের এই খেলায় বিরক্ত হয়ে কোলবালিশ দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। গতকাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে ওরা। সারারাত জেগে সমবয়সীদের সাথে গল্পগুজব করায় আলাদা এক শান্তি আছে।
বেশ খানিক পরে আভার ঘুমের মধ্যেই খেয়াল করলো,তার চোঁখে আর আলো গড়াচ্ছে না। আর আভা এতে অবাক হলো। চোঁখ জোড়া কুঁচকে নিয়ে পাশ ফিরলো। তবে ঘুম ভাঙলো না। হঠাৎ আভার কানে একটা নরম পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে আসলো, ‘ বউফ্রেন্ড! ‘
আভা ঘুমের মধ্যেই চমকে উঠলো। আদুরে এই শব্দটা কর্ণগহ্বরে প্রবেশ করতেই মুখখানা ঘুমের মধ্যেই হেঁসে উঠলো ওর। আবারো সেই মিষ্টি স্বপ্ন। ইশ! আজ যেনো ঘুমটা আর না ভাঙ্গে। আভা এই স্বপ্ন দেখতে চায়। মন প্রাণ উজাড় করে দেখা স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যেতে চায়।

এখন কটা বাজে আভার জানা নেই। তবে এই মুহুর্তে ঘড়ি দেখাটা দরকার। তাই ভাবানুসারে, চোঁখ মেলে সামনে তাঁকালো আভা। দশটা পাঁচ। আভা ঘড়ি দেখেই চোঁখ কচলালো। দুই হাঁত উপরে তুলে শরীরকে মুঁচড়ে নিলো। আড়মোড়া ভাঙতেই পাশের ঘর থেকে শব্দ এলো,দাদুমনির। তবে দাদুমনির শব্দের সাথে সাথে আরো একটা ভরাট কণ্ঠস্বর কানে এলো আভার। কণ্ঠটা তার চেনা। আহনাফ! আভা ধড়ফড়িয়ে বসে গেলো। আহনাফ আসলেন কোথা থেকে? আভা জলদি ওড়না গায়ে দিয়ে পাশের রুমের দিকটায় হাঁটা ধরলো। তার সন্দেহ সঠিক হয় কি করে?
আভা পাশের রুমের দরজার আড়াল থেকে চোখ বুলালো। দাদুমনির পাশে হাস্যরত আহনাফকে দেখেই আভার চোঁখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। এ কি করে সম্ভব? আভা দুহাত দিয়ে চোঁখ পরিষ্কার করলো। তারপর আবারও সামনে তাঁকালো। না,আহনাফ-ই।
হঠাৎ আহনাফের চোঁখ পড়লো দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা লাল কামিজ পরিহিত আভার দিকে। সহসা আহনাফ আভার দিকে তাঁকিয়ে তার ডান চোঁখটা টিপে দিলো। ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে আভার দিকে তাঁকালো। এতে আভা চমকে তাড়াহুড়ো করে সরে যায় আড়াল থেকে। কি অসভ্য ছেলে! দেখেই ইভটিজিং করতে শুরু করে দিয়েছেন!
আহনাফ আভার ওমন লুকিয়ে পড়তে দেখে মুঁচকি হেসে আবারও দাদুমনির সাথে গল্প করতে লেগে পড়ে।
আভা গটগট পায়ে রান্নার ঘরের দিকে ছুঁটে। আহনাফের হঠাৎ আসার কারণ মা-ই ভালো বলতে পারবেন।
আভার মা রান্নাঘরে চুলোর কাছে বসে আছেন। চুলোয় পরোটা করা হচ্ছে। হয়তো আহনাফের জন্যে। আভা মায়ের পাশে এসে বসে পড়ে। আভার মা আভাকে দেখে বলে উঠলেন,
— ” আহনাফকে হাঁত ধুতে বল। নাস্তা রেডি হয়ে গেছে। আর শোন, বেসিন দেখিয়ে দিস ওকে। প্রথম এসেছে তো। কিছু চিনবে না। ”

আভা মায়ের আদেশ একপাশে ফেলে রেখে বললো,
— ” উনি কখন এলেন? রাতেও তো কিছু বলো নি আমাকে। আজ সকালে ধুম করে এসে হাজির। উনার আসার খবর তুমি জানতে? ”

আভার মা চুলোয় একটা লাকড়ি ঢুকিয়ে চুলোয় ফুঁ দিলেন। সঙ্গেসঙ্গে চুলোর আগুন দ্বিগুণ বেগে গর্জে উঠলো। বিষয়টা ভারী সুন্দর দেখালো তখন! আভার মা এবার বললেন,
— ” আহনাফের আসার খবর তোর বাবা তো জানতো। সেই তো রাজি করিয়েছে ওকে। তোর বাবার কথায় আর মানা করতে পারেনি। তাই সব কাজ একদিনের জন্যে ফেলে রেখে চলে এসেছে। কালকে ভোর সকালে চলে যাবে আবার। ”

আভা গালে হাঁত দিয়ে বসে রইলো মায়ের পাশে। আজ সকালে আহনাফ এসেছেন তার মানে প্রায় সারারাত ড্রাইভ করতে হয়েছে তাকে। আবার কাল ভোরে চলে যাবেন। তার মানে আবার কালকে লম্বা জার্নি। ওরে বাবারে! শুনেই তো আভার ভয় লাগছে। জার্নি ব্যাপারটা আভার ভালো লাগলেও টানা দুদিন লম্বা জার্নি করা আভার পক্ষে মোটেও সম্ভব না। প্রাণ বেরিয়ে যাবে মনে হয়। আর সেখানে? আহনাফ দুদিন টানা এতবড় জার্নি করবেন। বাপরে! এত ধৈর্য্য!
এসব আকাশ-কুসুম ভাবনার মাঝে আভার মা পুনরায় তাড়া দিলেন আভাকে। তাই আভা না চাইতেও তার ভাবনার সমাপ্তি টেনে এগিয়ে গেলো দাদুমনির ঘরের উদ্দেশ্যে।
দরজা খুলে গুটিগুটি পায়ে দাদুমনির সামনে এসে দাঁড়ালো ও। আভাকে দেখে দাদুমনি আর আহমাফ দুজনেই আভার দিকে চোঁখ তুলে তাকালেন।
আভা আহনাফের দিকে তাঁকিয়ে একদমে বলে ফেললো,
— ” নাস্তা রেডি। মা আপনাকে হাঁত ধুতে বলেছেন। ”

আহনাফ দাদুমনির দিকে একনজর তাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। গায়ে জড়িয়ে থাকা ধূসর রঙের টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে আভার আগেই হাঁটা ধরলো। আভা আহনাফের পিছন পিছন আসতে লাগলো।
আভাদের বেসিন খাবার রুম সংলগ্ন। আভা আহনাফকে বেসিন দেখিয়ে দিলো। আহনাফ বেসিনে ভালো করে হাঁত ধুয়ে চট করে আভার লাল ওড়নায় ভেজা হাঁত মুছে ফেললো। আভা এতে খানিক চমকে উঠে চটজলদি ওড়না আহনাফের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। তবে আহনাফ ছেঁড়ে দিলো না। ধীরে সুস্থে নিজের কাজ শেষ করে তবেই ওড়না ছাড়লো।
আভা আহনাফকে থাকার জন্যে একটা রুম দেখিয়ে দিলো। আহনাফের সবকিছু গুছিয়ে রুম থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে আহনাফ হঠাৎ আভার হাঁত খপ করে ধরে ফেলে। আভা এতে খানিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,
— ” কি হলো?”

আহনাফ আভার হাঁত নিজের হাঁতের মুঠোয় পুড়ে আভার পাশে এসে দাঁড়ালো।আহনাফের ওমন কাছাকছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আভার বুকের ভিতর চিরচেনা সেই ঢেউ খেলে গেলো। আহনাফের গায়ের কড়া পারফিউমের গন্ধ নাকে আসতেই এক ভয়ঙ্কর মাতাল রোগে গ্রাস করতে লাগলো আভার সম্পূর্ণ মন। আহনাফ আভার ওমন কাঁপাকাঁপি দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো। খুব আলতো হাতে আভার শরীরে দুপাশে ঝুঁলে থাকা লাল টকটকে ওড়নার একাংশ আভার মাথায় উঠিয়ে দিলো। সঙ্গেসঙ্গে ওড়নার লাল রঙে ঢেকে গেলো আভার সম্পূর্ণ মাথা। আহনাফ এবার আভার দিকে তাঁকিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,
— ” পারফেক্ট। এখন একদম ‘আমার বউ, আমার বউ’ লাগছে। ”

‘ আমার বউ’ শব্দটা কানে আসতেই এভাবে শিরদাঁড়া দিয়ে এক উত্তাল-পাত্থাল স্রোত বয়ে গেলো। কানের দুপাশের অংশ ঠান্ডায় হিম শীতল হয়ে গেলো। সম্পূর্ণ মুখে ছড়িয়ে গেলো এক মুঠো লাল আবির। লজ্জারা ঘিরে ধরলো তার সমস্ত ইন্দ্রিয়।

#চলবে
গল্প সম্বন্ধে গঠনমূলক কমেন্ট করুন। nice,next এসব বললে গল্প সম্বন্ধে জানা যায়না। গল্প কেমন লাগছে সে সম্পর্কে দুলাইন মন্তব্য করলে আমি খুশি হবো। আর যদি গঠনমূলক কমেন্ট না করেন তবে আহনাফকে মেরে আভাকে বিধবা করে দিবো। গ্রেট হবে, তাইনা?😅
(আমি সবগুলো কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/228617269182841/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here