ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-১৯

0
1286

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

দুপুরের ত্যাছরা আলো গ্রাম্য উঠোনে ঝড়ে পড়ছে। আভা মাত্রই গোসল করে বের হলো। মাথায় খোঁপার মত করে গামছা পেঁচানো। ভেজা জামা-কাপড় একটা ছোট্ট বালতিতে করে নিয়ে এসে উঠোনে দাঁড়ালো ও। রোদের জন্যে চোঁখ খুলে থাকা যাচ্ছে না। রোদের অদৃশ্য ভারে দু’চোঁখ আপনা-আপনি বুজে আসছে। আভা ভেজা জামা-কাপড় থেকে ভালো করে পানি ঝড়িয়ে দড়িতে মেলে দিলো। এরই মধ্যে আহনাফ আর মিনহাজ বাইরে থেকে এসে উঠোনে দাঁড়ালো। সেই সকালে দুজন নাস্তা খেয়ে গ্রাম দেখতে বেরিয়েছে। মাত্রই ফিরলো। আভা একনজর আহনাফের দিকে তাঁকালো। আহনাফের জিন্স টাকনুর উপরে বটে রাখা। পা’জোড়া তার কাদায় মাখামাখি। পায়ে থাকা সাদা রঙের জুতোও কাদা লেগে কালো হয়ে গেছে। সর্বোপরি ভীষণ বিদ্ধস্ত অবস্থা। আভা আহনাফের এমন করুন অবস্থা দেখে ফিক করে হেঁসে ফেললো। আভার হাসির শব্দ কানে যেতেই আহনাফ আভার দিকে তাঁকালো। আভাকে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে, চোঁখের দৃষ্টি যেনো এমন। আহনাফের কড়া দৃষ্টি দেখে আভা ফট করে চুপ হয়ে গেলো। মিনহাজ কপালের ঘাম আঙ্গুল দিয়ে মুছে আভার উদ্দেশ্যে বললো,
— ” চান্দের রাইত, যা তো। চুলোয় গরম পানি বসা। গোসল করতে হবে। ”

আভা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে কাপড়বিহীন শূন্য বালতি নিয়ে ঘরে চলে গেলো।
আহনাফের মুখের অভিব্যাক্তি অসহায়। জন্ম থেকে শহরে থাকায় গ্রামের কাদামাখা পরিবেশের সাথে সে খুব বেশি পরিচিত নয়। তার উপর পায়ে কাদা লেগে যাচ্ছেতাই অবস্থা। চুলকাচ্ছে খুব! জুতোটাও গেছে। তবে এত খারাপের মধ্যে একটা দিক খুব ভালো ছিলো। সেটা হলো,
‘ এই গ্রাম ‘। গ্রামটা অদ্ভুত সুন্দর ছিলো। গ্রামের মানুষজন ওকে দেখে খুব খুশিমনে কথা বলছিলো। বলাবাহুল্য, আভার বাবা গ্রামের খুব গণমান্য ব্যাক্তি ছিলেন।
আহনাফের ভাবনার ফাঁকে মিনহাজ তাড়া দিলো,
— ” আহনাফ, গরম পানি হয়ে গেছে। তুমি বড় বাথরুমে চলে যাও। আমি ছোটটায় গোসল সেরে নিবো। ”

আহনাফ মিনহাজের কথায় সায় দিয়ে পা থেকে কাদাযুক্ত জুতো খুলে ফেললো। জুতো থেকে কাদার বিশ্রী গন্ধ আসছে। আহনাফ জুতো ঘরের বাইরে একপাশে রেখে খালি পায়ে তার জন্যে বরাদ্দ করা রুমের দিকে চলে গেলো।

আহনাফ তার ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় বের করছে, ঠিক তখন দরজায় টোকা পড়লো। বাইরে থেকে মেয়েলী নরম আওয়াজ আসলো,
— ” আসবো? ”

আভার কণ্ঠ শুনে আহনাফ মুঁচকি হাসলো। ব্যাগ থেকে একটা নেভি ব্লু টিশার্ট আর জিন্স বের করে বিছানায় রাখলো। তারপর দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করে উচুঁ স্বরে বললো,
— ” না। ”

আহনাফের ‘ না ‘ শব্দ শুনে আভা খানিক অবাক হলো। ভিতরে কি করছেন? আসতে বারণ করলেন কেনো? হয়তো কাপড় বদলাচ্ছেন। কিন্তু এখনো তো গোসল করেন নি। তবে? অন্য কাজ করছেন? আভা দাঁড়িয়ে রইলো দরজার বাইরে। বেশ কিছুসময় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আভা একটা পর্যায়ে বিরক্ত হলো। ইতস্তত বোধ করে আবারও দরজায় টোকা দিতে উদ্যত হলে হঠাৎ করেই রুমের দরজা খুলে যায়। আভা এতে একটু ভয় পেয়ে দরজা থেকে পিঁছিয়ে যায়। আহনাফ দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কাধে টিশার্ট আর জিন্স ঝুলানো। আভা আহনাফের দিকে চোঁখ উচুঁ করে তাকালো। আহনাফের দৃষ্টি স্বাভাবিক। আভা আপাদমস্তক আহনাফের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো। কোনো বদল নেই। আগে যেমন ছিলেন তেমনই আছেন। আভা কণ্ঠ খানিক সন্দেহের করে বললো,
— “জুতো দিতে এসেছিলাম। এতক্ষণ রুমে কি করছিলেন?”

আহনাফ ভ্রু বাঁকা করে হেসে বললো,
— ” প্রেম করছিলাম।”

আভা আহনাফের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আহনাফের পাশ থেকে পা উঁচু করে সম্পূর্ণ রুমটায় একবার চোঁখ বোলালো। কিন্তু প্রেম করার মতো রুমে কেউ নেই। আহনাফের বলা তথাকথিত প্রেম নামক রহস্যের সমাধান করতে না পেরে আভা তেতে উঠে বললো,
— ” মজা করছেন? ”

আহনাফ উত্তর দিলো না। বরং আভার হাত থেকে স্যান্ডেল নিয়ে পায়ে লাগালো। অতঃপর আভাকে একহাত দিয়ে তার পাশে সরিয়ে বাথরুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। আহনাফের ওমন গা ছাড়া ভাব দেখে আভার পিত্তি জ্বলে উঠলো। কি ভাব! গা জ্বলে যায় দেখলে! আভা মনে মনে আহনাফকে শখানেক গালি দিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।

___________________
আর একটু পরই আহনাফ চলে যাবে। আস্ত একটাদিন আহনাফকে সচক্ষে দেখতে পেরে দাদুমনি এখন অনেকটাই সন্তুষ্ট। মহাভারত উদ্ধার করে ফেলেছেন, ভাবখানা এমন যেনো। আহনাফ যাওয়ার সময় দাদুমনি আহনাফের মাথায় হাত দিয়ে কতশত দোয়া পড়েছেন। এজীবনে নাত জামাইকে যেনো কোনো অশুভ শক্তি না ছোঁয়। আহনাফের কাধে ট্রাভেল ব্যাগ। ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে, যাবে ভাব। তবুও পা চলছে না তার। কারণটা, স্বয়ং আভা। বিদায় বেলায় এই মেয়েটা কোথায় গেলো কে জানে? তার সামনে এসে সামান্য বিদায়টুকু জানাতে পারছে না। আশ্চর্য!
আহনাফকে অস্থির দেখে মিনহাজ এসে আহনাফের পাশে দাঁড়ালো। উত্তর জানতে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
— ” কিছু হয়েছে, আহনাফ? অস্থির দেখাচ্ছে তোমাকে। ”

আহনাফ ঘাড় হালকা কাত করে মিনহাজের দিকে তাঁকালো। সহসা হেঁসে বললো,
— ” না, তেমন কিছু না। আচ্ছা, আসছি এখন। অলরেডী অনেক দেরি হয়ে গেছে। ”

মিনহাজ মাথা নেড়ে সায় দিলেও আহনাফের চোঁখ মুখ তার ঠিক মনে হচ্ছে না। ভিতরে ভিতরে এক ফোলা ফোলা ভাব। কার উপর রেগে আছে? আব.. আভার উপর? আরে, আহনাফ চলে যাচ্ছে, আভা কই? মিনহাজ চকিতে চারপাশে চোঁখ বুলালো। তবে আহনাফের ত্রিসীমানার মধ্যে আভাকে দেখতে না পেয়ে মিনহাজ আহনাফকে বললো,
— ” তুমি এগোও। আমি একটু আসছি। ”

মিনহাজ আহনাফকে রেখে রান্নাঘরের দিকে এগুলো। এই চান্দের রাইত যে কবে ঠিক হবে, খোদা জানে।
রান্নাঘরের একপাশে দাঁড়িয়ে চাচীদের কথা শুনছে আভা। তবে বারবার চোঁখ ঘুড়িয়ে দরজার দিকে তাকাচ্ছে ও। মিনহাজ তা দেখে হাসলো। বোনটা যে তার খুব একটা বোকা না, সেটা সে বুঝে গেছে। সবার সামনে আহনাফকে বিদায় দেওয়া একটু কঠিনই বটে। মিনহাজ এগিয়ে গেলো আভার দিকে।
মিনহাজ আভার পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় এক থাপ্পর দিলো। সঙ্গেসঙ্গে আভা ধ্যান থেকে বেরিয়ে কটমট চোঁখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। এমন সময়ে কেউ থাপ্পড় দেয়? ভিতরে ভিতরে ও আহনাফের ভয়ে ক্ষয়। না জানি, আহনাফ ওর কি হাল করে বসে! আভা ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিনহাজ মাংসের হাড়ির ঢাকনা খুলতে খুলতে বললো,
— ” আহনাফ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পিছন গেট দিয়ে চলে যা। আমি এদিকটা দেখছি।”

একটু আগে যা বলার জন্যে মুখ খুলতে যাচ্ছিল, মিনহাজের কথা শুনে আভা সেসব কঠিন কঠিন কথা গলাধঃকরণ করে ফেললো।
মিনহাজের কথা কানে যেতেই আভার গা গুলিয়ে এলো। ছিঃ! বড় ভাইয়ের সামনে আহনাফের সাথে দেখা করতে যাবে? মিনহাজের দিকে একঝলক তাকিয়ে মুখ লোকানোর চেষ্টা করলো। তবে এতে লাভ না হলেও ক্ষতি খুব একটা হলো না। মিনহাজ ধাম করে ঢাকনা লাগিয়ে মাংস খেতে খেতে আভাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। তার এভাবে চলে যাওয়ার কারণ, হয়তো বোনকে একটু স্বস্তি দেওয়ার ক্ষুদ্র চেষ্টা।
মিনহাজ চলে যেতেই আভা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। চাচীদের দিকে একপলক তাঁকিয়ে আস্তে আস্তে পিছন গেট দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। আজ কপালে নিশ্চয়ই শনি নাচছে। হায় আল্লাহ! রক্ষা করো।

দূরে আহনাফের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। আহনাফ কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে গাড়ির পানেই এগিয়ে যাচ্ছে। আভা আহনাফের পিছন পিছন দ্রুত হাঁটা ধরলো। তবে আহনাফের ওমন লম্বা লম্বা পা ফেলার কারণে আভা কিছুতেই আহনাফের নাগাল পেলো না। আহনাফ ইতিমধ্যে গাড়িতে উঠে বসেছে। আভা এবার দৌঁড় লাগালো। আহনাফ গাড়ি চালু করবে তার আগেই আভা আহনাফের ড্রাইভিং সিটের পাশে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বললো,
— “সরি, সরি। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। ”

#চলবে
আশা করি, গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। এখন থেকে আমি সবার কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/229860442391857/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here