ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-২৫

0
833

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সন্ধ্যা নেমেছে শহরে। সূর্য চাঁদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে উধাও হয়েছে। আকাশের বুকে বিশাল এক চাঁদ সগৌরবে হাসছে। তবে, চাঁদের হাসি দেখে আভার তুমুল মন খারাপ হলো। কোনো বিষয় নিয়ে তুমুল মন খারাপের অনুভূতি’টা খুবই বিশ্রী! আভা জানালার মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। বারবার চোখের সামনে আহনাফের মলিন মুখখানা ভাসছে। আভা নিজের কল্পনায় আহনাফের সেই মলিন মুখখানা কেটেকুটে একটা অতীব হাস্যোজ্বল মুখ তৈরি করতে চাচ্ছে। তবে, বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ও। আহনাফকে মন খারাপ দেখতে ওর মোটেও ভালো লাগে না। কিন্তু, ও নিজেই তো আহনাফের মন খারাপের কারণ! তবে?
আভার কল্পনার জগৎ থমকে গেলো কলিংবেলের আওয়াজে। টিওশনের ম্যাম আসছেন। আভা বাথরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসলো। তবে, আজকে পড়ায় বিন্দুমাত্র মন বসছে না। বারবার মন চাচ্ছে, কোনো এক ম্যাজিক হোক! আহনাফ নামক মানুষটা সেই ম্যাজিকের কারণে আবার হেসে উঠুক!
_______________________
আজকে আভার অ্যাডমিশন পরীক্ষা। সকাল থেকে পড়ার টেবিলের উপর একপ্রকার মুখিয়ে আছে ও। একবার এ বই খুলছে , তো আরেকবার অন্য বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। অ্যাডমিশন নিয়ে নার্ভাস নিউরন তার মস্তিষ্কে ভোঁতা এক যন্ত্রণা দিচ্ছে। এই মুহূর্তে আভার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
হঠাৎ’ই রুমে আগমন ঘটলো আভার মায়ের। তিনি রুমে এসেই আভার বইটা ঠাস করে বন্ধ করে দিলেন। যার কারণে, আভার এতক্ষণ ধরে পুঁজি করে রাখা মনোযোগ ব্যর্থ হলো। সে বই ছেড়ে মায়ের দিকে তাকালো। তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, মায়ের এ কাজে সে যথেষ্ট বিরক্ত। রেহেনা আভার বই খাতা টেবিলের একপাশে রেখে ধমকের সুরে বললেন,
— ” সারাবছর কি পড়াশোনা করেছিস? এখন, পরীক্ষার দুই ঘন্টা আগে পড়াশোনা করে উল্টাইয়া দিবি? এক্ষুনি উঠ, বলছি !”
আভা ঠোঁট উল্টে মায়ের দিকে তাকালো। কন্ঠ অসহায় থেকে অসহায়তর করে বললো,
— ” আমার মনে হচ্ছে, আমি সব ভুলে যাচ্ছি। কিছু মনে করতে চাইলে, মনে পড়ছে না। ”
— ” অ্যাডমিশনের আগে এসবই মনে হয়। চিন্তা নেই। সব ঠিক হবে। এখন যা, ফ্রেস হয়ে আয়। আহনাফ এসেছে! ওর সাথে বেরুতে হবে তোর। জলদি কর! ”

মায়ের মুখে আহনাফের কথা শুনে আভার হুট করে মনে পড়লো, আহনাফ ওদের বাসায় কি করছে? আভা একবার মায়ের দিকে তাকালো। চোখে বিস্ময় নিয়ে বললো,
— ” আহনাফ? উনি এখানে কি করছেন? উনার না হসপিটাল আছে। আজ যান নি? ”
আভার মা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
— ” আহনাফ ডাক্তার তাই তোর অ্যাডমিশন সম্পর্কে তারই ভালো আইডিয়া থাকবে। আহনাফ নিজেই তো তোর বাবাকে এসব বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে। ও বললো, তোকে বাসায় দিয়েই তারপর হসপিটাল যাবে।এখন সময় নষ্ট না করে, জলদি তৈরি হ! কতক্ষণ ধরে বসে আছে বেচারা। খারাপ লাগবে ওর! জলদি যা! ”
আভা মায়ের এমন আহাজারি শুনে যারপরনাই বিরক্ত হলো। মাঝেমধ্যে আভার মনে হয়, আহনাফ’ই বোধহয় মায়ের আপন ছেলে! নাহলে, নিজের মেয়ে জামাইকে নিয়ে এত আদিক্ষেতা কে করে? এই আহনাফ মানুষটার হাতে কি কোনো জাদু আছে? কেমন করে সবাইকে হাত করে নেয় সে? আভা সেই উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাবে, তার আগেই মায়ের আরো একটা ধমক শুনে চুপচাপ মাথা হেলিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আভা পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়তেই আভার মা অগোছালো পড়ার টেবিল গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে চলে গেলো। মেয়ে জামাই এসেছে! আরো কি খাবার বানানো যায় এবং তা মেয়ে জামাইকে ঠুসেঠুসে খাওয়ানো যায়, আপতত তার চিন্তা এসব’ই। কিন্তু তিনি কি ভুলে গেছেন, আহনাফকে ইতিমধ্যে তার হাতের বানানো চার প্রজাতির নাস্তা জোর করে খাইয়েছেন?
_________________
সোহওয়ার্দি মেডিকেলের সামনে একপাশে আহনাফ গাড়ি থামালো। আহনাফ গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে আভার দিকে তাকালো। এখনো বসে আছে কেনো মেয়েটা? আভা দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। বসে, বসে গভীর কোনো চিন্তা করছে। আহনাফ আভার এই অস্থিরতা দেখে ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। অতঃপর আভার দিকে একটু ঝুঁকে আভার গালে হাত রাখলো। আহনাফের স্পর্শ পেয়ে আভা চকিতে তাকালো আহনাফের দিকে। আহনাফ আভার গালে হাত রেখে আদুরে কণ্ঠে বললো,
— ” ভয় পাচ্ছো? নার্ভাস টাইপ ফিল হচ্ছে? ”
আভা চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানলো। কোনক্রমেই নিজের অন্তঃস্থলে প্রবাহিত নার্ভাসনেস দূর করতে পারছে না ও। আহনাফ আভার অবস্থা দেখে হাসলো। কিন্তু, আচমকা সবচেয়ে অবাক কাজ করে বসলো ও। আভার কপালের ঠিক মধ্যখানে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। খুব সময় নিয়ে, শুদ্ধতম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাস্বরূপ। আহনাফের ঠোঁটের স্পর্শ আভা যখন তার কপালে অনুভব করলো, আভা তাৎক্ষণিক কেঁপে উঠলো। মনে হলো, একটা চিকন বৈদ্যুতিক প্রশান্তি তার কপাল বেয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করলো। এই প্রথম আহনাফের আভাকে স্পর্শ করলো। আহনাফের এই সামান্য স্পর্শ আভার নিউরন অব্দি কাঁপিয়ে তুললো। আহনাফ ধীরে ধীরে সরে এলো আভার থেকে। আভার চোখে চোখ রাখলো সে। কিন্তু, আভা সেই নেশালো চোখে চোখ রাখলো না। সত্যি বলতে, ও সক্ষম হলো না। আহনাফের ছুঁয়ে দেওয়া জায়গাটা যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে। মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু, কেনো এমন হচ্ছে? আহনাফ আভার গালে হাত রেখে নরম গলায় সুধালো,
— ” দেখো আভা, অ্যাডমিশন এক্সাম কোনো ভয়ের বিষয় না। তুমি যদি এটাকে অনেক বড় কিছু ভেবে নিয়ে ভয় পাও, তবে সেই ভয় তোমাকে প্রতিক্ষণ তাড়া করবে। কিন্তু, যদি তুমি একে একটা কুইজ প্রতিযোগিতা হিসেবে ধরো, দ্যান ইউ’ল ইনজয় ইট। প্রতিটা এমসিকিউ তুমি একটা কুইজ হিসেবে ধরো, দেখবে মজা পাবে। তখন ভয়’ই তোমার থেকে পালাবে। গট ইট ? ”
আভা অবাক চোখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর করে আহনাফ আভাকে বুঝালো, আভা ভাবতেই পারলো না। এই মুহূর্তে তার অ্যাডমিশন নিয়ে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করছে। মুহুর্তেই যেনো সব ভয়, সব নার্ভাসনেস কেটে গেলো। আহনাফের মুখের কথায় সত্যিই কি জাদু আছে? অদ্ভুত!
আভা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। আহনাফ আভার পাশ গেসে দাঁড়ালো। চোখের সামনে হাজারো স্বপ্নদেখা শিক্ষার্থী নিজের স্বপ্ন পূরণে এখানে জড়ো হয়েছে। আভা হেঁটে গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। আভা গেটের ভিতর প্রবেশ করবে, তার আগেই সে আহনাফের দিকে আরও একবার তাকালো। আহনাফ আভার এমন করে থেমে যাওয়া দেখে ভ্রু কুচকালো। জিজ্ঞেস করলো,
— ” হোয়াট? দাঁড়িয়ে পড়লে কেনো? যাও ভিতরে। ”
আভা মাথা চুলকে বোকার মত প্রশ্ন করলো,
— ” উম..ঘাসফড়িং যেনো কোন পর্বের প্রাণী? ”
মানে? এতদিন পড়াশোনা করে এই প্রশ্ন? আহনাফ আভার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। আহনাফের এমন রাগ করা চাহনি দেখে আভার মুখখানা ফুটো বেলুনের মতন চুপসে গেলো। মেকি হেসে বললো,
— “সরি, সরি! ওকে, বাই। ”
আভা তরিগরি করে ভিতরে চলে গেলো। আহনাফ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুসময়। হুট করে আভার বলা প্রশ্ন মনে পড়ে হেসে দিলো ও। পাগল একটা! আহনাফ হেঁটে গাড়ির কাছে এলো। গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন চালু করে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এলো। একটা কাজ আছে ওর। সেটা শেষ করে আবার আসতে হবে এখানে। এখন ভালোই-ভালোই পরীক্ষাটা শেষ হলেই হয়!

#চলবে
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/235507681827133/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here