ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-১৩

0
2565

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#সিলিভিয়া_ফারাশ
#পর্ব_১৩

(২৭)

সাইরাহর ভার্সিটিতে এসে প্রথমেই তুরের সাথে দেখা হয়ে গেলো শাহরিনের। শাহরিন মজা করেই বলল,

” কী ব্যপার বলুন তো? যেখানেই যাচ্ছি সব জায়গায় আপনাকেই পাচ্ছি। আমাকে ফলো টলো করছেন নাকি মিস?”

তুরের কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে উঠেছে। নিত্যনতুন ঝামেলার কারণে বেশ কয়েকদিন ভার্সিটি আসা হয়নি তার। আজ এতো দিন পরে এসেও কিছুই ঠিক লাগছে না। জুবানের সাথে রিলেশনে না থাকলেও সবাই ভাবছে সে আর জুবান গভীর রিলেশনে আছে। ভাবলে ভাবুক এতে তার কোনো কিছু যায় আসে না। কারো ভাবনা চিন্তা ঠিক করার দায় তার নয়। পুরো দমে সবাইকে অগ্রাহ্য করে ক্লাস করে গেছে সে। টিচাররাও নানান কথা বলছে। কেউ ভালো কেউ মন্দ। মেয়েরা তো পারছে না ওর গলা টিপে ধরছে। চাইলেই মুখের উপর জবাব দিতে পারে সে। কিন্তু তুরের জবাবে তারা যতটা না কষ্ট পাবে তারচেয়েও কয়েকগুণ বেশি এখন জ্বলছে। জ্বলতে থাকুক। বাসায় ফিরে যাওয়ার সময় ভার্সিটি গেটে শাহরিনের সাথে দেখা হলো। তুই পুলিশ পুলিশের মতো থাক। কেসের তদন্ত কর। তা না করে মেয়েদের সাথে ফ্লাট করছিস কেন? বিরক্তি টা চেপে গিয়ে নাকমুখ কুঁচকে বলল,

” ফালতু কথা বন্ধ করুন অফিসার। এখানে যে কাজে এসেছেন তাতে মনোযোগ দিন। এমনিতেও এতদিনেও সাইরাহ হ/ত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পরেননি। তাই নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়াটাই আপনার জন্য ব্যাটার হবে।”

তুরের কথায় শাহরিনের ঠোঁটের হাসি চওড়া হলো। বলল,

” সে জন্যই এসেছি সায়নের রসগোল্লা আর জুবানের রক্তজবা।”

শাহরিনের খোঁচা স্পষ্ট টের পেলো তুর। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকানোর সাথে সাথে শাহরিন আবার হাসলো। বলল,

” উপস্ সরি সায়নের রক্তজবা আর জুবানের রসগোল্লা। এবার ঠিক আছে তো? যাই হোক শুনুন এবার আসল খুনিকে বের করেই ছাড়ব আমি। আর চিন্তা করবেন না কেসের সমাধানও খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলব। এই শাহরিন কোনো দিনও মাঝ পথে কেস ছেড়ে দেয় না। যে কেসে হাত দেয় সেটা সমাধান করেই তবে দম নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”

জুবান মাফির সাথে ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছে। মাফি এই ক’দিন তার ছোটো খালার বাসা চায়নাতে বেড়াতে গিয়েছিল। ওখানে বসেও সব শুনেছে সে। তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। এই ফিরে আসাটাই হয়তো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। জুবান একটা চিজ। কত সহযে তুরের মতো স্ট্রং পার্সোনালিটির মেয়েকেও বশ করে ফেলল। সহাস্যে জুবানের কাঁদে হাত রাখলো সে। বলল,

” মাম্মা এমন দেমাকে ঠাসা মেয়েকেও কত সহজেই পটিয়ে ফেললি। তুই একটা চিজ মাম্মা। তুই হলি মধুর মতো আর মেয়েরা হলো মৌমাছি। তোকে দেখলেই কেমন নিজেদের সামলাতে পারে না ছুটে চলে আসে। তুই চালটা কিন্তু সেই দিয়েছিস। এক রাতের জন্য বিছানায় নেওয়ার জন্য কতো নিখুঁত অভিনয় করছিস। তোর তো এওয়ার্ড পাওয়া উচিৎ।”

জুবান মাফির হাতটা কাঁধ থেকে সরিয়ে সভাব সুলভ হাসলো। বলল,

” এমন কিছুই না মাফি। আমি মেয়েটাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে জড়িয়ে কোনো বাজে কথা বলবি না। কয়েকদিন পর ভাবি হবে তোর।”

” হ এক রাতের ভাবি। শোনো মাম্মা আমার সামনে এক্টিং করতে হবে না। মেয়েকে তো তুই সত্যিকার অর্থে বিয়েই করছিস না। তোদের বিয়েতে সবকিছুই হবে। কবুল বলা হবে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইনও হবে কিন্তু সবটাই লোক দেখানো। মেয়েটা মনে করবে তুই ওর বর কিন্তু আসলে তো তা নয়। তোর উদ্দেশ্য ঠিকই পূরণ হবে। আর কাজ শেষে ছুরে ফেলে দিবি ওকে। তোকে আমার চেনা আছে আর তোর সত্যিকার ভালোবাসাকেও।”

” কোন সত্যিকারের ভালোবাসার কথা বলছেন মি. জুবান?”

শাহরিনের কথায় দুজনেই চমকে উঠলো। পেছনে তাকিয়ে দেখল শাহরিনের দাঁড়িয়ে। তার চেহারা স্বাভাবিকের চেয়েও গম্ভীর। কিছু শুনে ফেলেনি তো? জুবানকে চিন্তা মুক্ত করতেই শাহরিন বলে উঠলো,

” সাইরাহরকে চেনেন?”

সাইরাহর নাম শুনে দ্বিতীয়বারের মতো চমকে উঠলো মাফি। তার চেহারায় স্পষ্ট ভয় ফুটে উঠেছে। শাহরিন ব্যপারটা খেয়াল করলো। জুবান খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

” কোন সাইরাহর কথা বলছেন? সাইরাহ্ তো অনেকেই আছে।”

” আমি সেই সাইরাহর কথা বলছি যার সাথে ৬ বছর আগে আপনার প্রেমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল।”

এবার মাফির ছটফটানি বাড়লো। “তোরা কথা বল। আমার একটা কাজ আছে তাই আসছি এখন।” এটা বলেই পরিমরি করে এক প্রকার পালিয়ে বাঁচল সে। জুবান টেবিলে বসে শাহরিনকেও বসার ইশারা করলো। দুই কাপ কোল্ড কফি অর্ডার দিয়ে আবার কথা বলতে শুরু করল সে,

” তো কি যেন বলছিলে শাহরিন?”

শাহরিন বসতে বসতেই জবাব দিল,

“সাইরাহর কথা বলছিলাম। মেয়েটার সাথে কি সম্পর্ক ছিল আপনার?”

জুবান চুলে আঙুল চালিয়ে চমৎকার একটি হাসি উপহার দিলো শাহরিনকে। তারপর বলল,

“খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমাকে নিয়ে এমন গুঞ্জন প্রায়শই দেখা যায়। তাই বলে কি সবার সাথেই কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে আমার? তেমনি সাইরাহর ব্যপারটাও কেবলি গুঞ্জন। আর কিছুই নয়। ওর সাথে আমার একটাই সম্পর্ক ছিল। সেটা হলো সিনিয়র জুনিয়রের সম্পর্ক।”

” যা রটে তার কিছুটা হলেও ঘটে। যাই হোক মেয়েটি কেমন ছিল? তার সম্পর্কে কি কি জানেন।'”

” কিছুই জানি না।”

জুবানের স্পষ্ট জবাব। আর কিছুক্ষণ সাইরাহর ব্যপারে খোঁজ নিয়ে হাসি মুখে ফিরে গেল শাহরিন। তার হাতে কিছু চমকপ্রদ তথ্য লেগেছে। যার মাধ্যমে কেস অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।

(২৮)

তুর অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করলো জুবানকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। খারাপ কি ভালো হতে পারে না? জুবান যেহেতু নিজের অতিত ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে তখন তুরেরও উচিত জুবানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তুর জুবানের মোবাইলে কল দিল। সরাসরি কথাটা জানিয়ে জুবানের জবাবের অপেক্ষা না করে কল কেটে দিল সে। জুবান সাথে সাথে কল ব্যাক করল। তুর রিসিভ করে কানে ধরল,

” রসগোল্লা আমি কি ঠিক শুনলাম? উফ খুশিতে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।”

জুবানের কথায় অকৃত্রিম আনন্দ ফুটে উঠেছে। তুর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,

” আপনি মরে যান জুবান।”

“এতো তাড়াতাড়ি আমি মরছি না রসগোল্লা। আমার আর তর সইছে না। ইচ্ছে করছে এখনি বিয়ে করে তোমাকে ঘরে নিয়ে আসি।”

” আপনি সবকিছুর আয়োজন খুব দ্রুতই সারুন জুবান। সবকিছু খুব গোপনীয়তার সাথে করবেন। কাল আমাদের এংগ্যাজমেন্ট এর ব্যবস্থা করুন আর অবশ্যই এই অনুষ্ঠান আপনার বাড়িতে হবে। আপনার বাবা মা ছাড়া আর কেউই এখানে উপস্থিত থাকবে না।”

তুরের কথায় খুশিতে লাফিয়ে উঠলো জুবান। এ তো মেঘ না চাইতেই জল। সে এক পায়ে রাজি হয়ে গেল। কল কেটে বিছানায় শায়িত নগ্ন নারীরিটির দিকে এগিয়ে গেলো সে। মেয়েটার কোমল ঠোঁটে গভীর একটা চুমু খেয়ে মনে মনে বলল,

” পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য নেশা হচ্ছে নারী নেশা। যে একবার এ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে তার ফিরে আসার কোনো রাস্তা নেই। বহু নারীতে আসক্ত পুরুষ কখনোই এক নারীতে আসক্ত হতে পারে না। এখানে সে যতই তার প্রেয়সীকে ভালোবাসুক না কেনো।”

উত্তেজনায় ঘুমুতে পারছে না শাহরিন। আর মাত্র একদিন। আর একদিন পড়েই তার কাছে সব রহস্য আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। মাফির দুতলা বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ির দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করবে কি করবেনা এটা ভেবেই দাঁড়িয়ে আছে সে। কাঁধে গরম তরল জাতীয় কিছু একটা পরেছে। শাহরিন হাত দিয়ে ধরে বুঝতে পারল পিছলা জাতীয় কিছু। হাত সামনে এনেই চমকে উঠলো সে। তাজা রক্ত। উপরে তাকিয়ে আরেক দফা চমকালো শাহরিন। মাফির উলঙ্গ লাশ ঝুলছে ছাদের রেলিংয়ের। আগের মতোই খুন করা বিভৎস লাশ। সায়ন তো এখানে নেই। তাহলে কি সে এখনও এই দেশেই আছে? আর সে না থাকলে মাফিকে কে খু/ন করল? সাইরাহ্ কেসের সাথে মাফির যোগ সূত্র আছে এটা বুঝতে পেরেছিল শাহরিন। মাফির জীবনের ঝুঁকি আছে এটাও বুঝতে পেরেছিল। তাই তো এতো রাতে ছুটে এসেছে এখানে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না।

চলবে….

( আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন আমার এক্সাম চলছে। এক্সামের চাপে সময় বের করতে পারিনি। কালকে গল্প না দিতে পারায় আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। গল্পটা প্রায় শেষের দিকে। আর মাত্র দুটো পর্ব আছে। আপনারা কেউ কি গেস করতে পারছেন খুনি কে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here