#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
পর্ব ০৭
#সিলিভিয়া_ফারাশ
(১৪)
শহরের বড় বড় হসপিটাল গুলোতে কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শাহরিন আর সামির সিটি হসপিটালের পাইচারি করছে। ঘড়িতে সময় এখন রাত ৩ টা ৩ মিনিট। পঞ্চম দিনের প্রথম প্রহর শুরু হয়ে গেছে। শাহরিন এখন পর্যন্ত ৩০১ নাম্বার কেসের ব্যপারে কোনো ক্লু পায়নি। উপর মহলে সবকিছু জানানোর পরও ৩০১ নাম্বার কেস রিওপেন করার অনুমতি দেয়া হয়নি তাকে। কি এমন আছে ঐ কেইসে? কেনই বা রিওপেনের অনুমতি দেওয়া হলো না। এই কেসের তদন্তের অজুহাতে ৩০১ নাম্বার কেসের ফাইলটা চেয়েছিল সে কিন্তু ফাইলটাও তাকে দেওয়া হয়নি। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ঐ কেসের সাথে এই কেসের কোনো যোগসূত্র নেই। আরও বলা হয়েছে ঐ কেসে নিজেকে না জড়িয়ে এই কেসে কনসেনট্রেট করতে। লুকিয়ে ফাইল নেওয়ার পরিকল্পনা করেও ব্যর্থ হয়েছে শাহরিন। কারণ ৩০১ নাম্বার কেসের ফাইলটা স্টোর রুমে নেই। কোথাও নেই। ম্যাজাজ গরম ভাব নিয়েই হাঁটছে সে।
সকাল ৯ টা ২৫ মিনিট।
সকাল হওয়ার সাথে সাথে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হসপিটালেই সন্দেহ জনক কিছু দেখা যায়নি। কোনো প্রমান ছাড়া শুধু মাত্র একটা ম্যাসেজের ভিত্তিতে পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসা বোকামো হয়েছে। খুনি যদি অন্যান্য জায়গা গুলো খালি পেয়ে ওখানে তান্ডব চালায়?
শাহরিনের ভাবনায় ছেদ পরে মেয়েলী চিৎকার শুনে। শব্দ অনুসরণ করে ছুটে আসে সে। মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে। শাহরিন কাছে যাওয়ার আগেই একটা ছেলে দৌড়ে আসলো মেয়েটার দিকে। শাহরিন উল্টে পথে হাঁটা দিলো। ছেলেটার মুখে রক্তজবা ডাক শুনে আবার দাঁড়িয়ে গেল।
” কি হয়েছে রক্তজবা? ভয় পেয়েছেন কোনো কারণে? এভাবে কাঁপছেন কেন?”
শাহরিন এগিয়ে এলো। তুর হাত দিয়ে উপরে ইশারা করলো। ওদিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল সায়ন। শাহরিন ঝুলন্ত লাশটাকে দেখে রুফ টপের পুলিশদের কল করল। নিজেও ছুটে যেতে লাগল সেদিকে। তুর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। কি বিভৎস লাশ। এতো দিন এই খুন গুলোর ব্যপারে অনেক শুনেছে তুর কিন্তু সামনাসামনি যে এতটা ভয়ঙ্কর ভাবতে পারেনি। তুর সাহস নিয়ে চোখ তুলে আরেকবার তাকালা। মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার। সায়নের শার্ট খামচে ধরল। সায়ন নিজেও দুহাত দিয়ে আগলে নিল তুরকে। তুর ওয়াক করে বমি করে সায়নের শার্ট নোংরা করে দিল। দুচোখে অন্ধকার দেখছে সে। সায়নের গায়ে বমি করা সত্ত্বেও তাকে দূরে ঠেলে দেয়নি দেখে অবাক হলো তুর। সায়নের চিন্তিত মুখটার দেখতে দেখতেই জ্ঞান হারালো সে।
সায়ন তুরকে পাঁজাকোলা করে হসপিটালের ভেতরে ছুটল। অসাবধানতাবশত হাত কে/টে যাওয়ায় হসপিটালে এসেছিল সে কিন্তু এখানে এসে এমন কিছুর সম্মুখীন হবে চিন্তায় ছিল না সায়নের। তুরের চুপসে যাওয়া ফ্যাকাশে মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। শুকিয়ে যাওয়া রক্তজবা পছন্দ নয় তার। তার তো পছন্দ তাজা রক্তজবা।
অতিরিক্ত ভয়ের কারণে জ্ঞান হারিয়েছে তুর। জুবান তুরের হাত ধরে পাশে বসে আছে। ফেবুতে একটা ভাইরাল ভিডিও দেখে এখানে ছুটে এসেছে জুবান। ভিডিওটায় লাশের সাথে সাথে তুর আর সায়নকেও দেখা গেছে।
সায়ন ড্রেস চেঞ্জ করতে বাইরে গিয়েছিল। ক্যাবিনে ফিরে জুবানকে তুরের হাত ধরে বসে থাকতে দেখে কিছু একটা হলো তার এগিয়ে এলো সে। ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করল,
” কে আপনি? উনার হাত ধরে বসে রয়েছেন কেন?”
জুবান সায়নের সাথে কুশল বিনিময় করে বলল,
” আমার ভালোবাসাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ সায়ন।”
সায়ন থমকালো। কোথাও একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে তার।
” উনিও আপনাকে ভালোবাসে?”
জুবান মুচকি হাসলো। হাসতে হাসতেই বলল,
” হ্যাঁ রসগোল্লাও আমাকে ভালোবাসে। আপনি এখন আসতে পারেন আমি ওর সাথে আছি।”
সায়ন হাত মুষ্টিবদ্ধ করল। রক্তজবা অন্য কাউকে ভালোবাসে স্বাভাবিক। কিন্তু এমন একটা স্বাভাবিক বিষয়ে রাগ ওঠা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক নয়। সায়ন চলে যেতে উদ্যত হতেই তুর ডেকে উঠল,
” সায়ন দাঁড়ান আমিও আপনার সাথে যাব।”
তুরের কথা শুনে জুবানের দিকে তাকিয়ে রাজ্য জয়ের হাসি দিল সায়ন। তুরের হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় হাত টেনে ধরলো জুবান।
” রসগোল্লা তুমি আমার সাথে যাবে। আপনি চলে যান সায়ন।”
” আপনি শুনতে পাননি উনি বলেছেন আমার সাথে যাবেন। রক্তজবা আপনি কার সাথে যাবেন?”
দুজনেই জবাবের আশায় তুরের দিকে তাকালো। মনের অজান্তেই কখন একে অপরকে প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করেছে এটা হয়তো ওরা নিজেরাও জানে না।
” আমি সায়নের সাথেই যাব জুবান।”
জুবান তুরের জবাবে হতাশ হলো। হতাশ চোখে দুজনের দিকে তাকালো একবার। হুট করেই একটা ভয়ঙ্কর কাজ করে বসল জুবান। তুরকে হেঁচকা টান দিয়ে কোলে তুলে নিল। ফিসফিস করে বলল,
” তুমি আমার রসগোল্লা। না চাইতেও এই জুবান ইমজাতের প্রোপাটি হয়ে গেছো। আর আমার সম্পদ আমি রক্ষা করতে জানি রসগোল্লা।”
নামার জন্য ছটফট করতে লাগলো তুর। বাহিরে আসার পর মানুষজন অদ্ভুত ভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তুর সিনক্রিয়েট করতে চায় না বিধায় ছুড়াছুড়ি অফ করে চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। সায়ন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল তার রক্তজবা তার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে অনেক দূরে।
(১৫)
শাহরিন সবার চোখের আড়ালে লাশের গলার রশি থেকে কাগজটা নিয়ে নিল। আড়ালে গিয়ে কাগজটা খুলল সে। কম্পিউটারে টাইপ করা তিন লাইনের লেখা। শাহরিন পড়তে শুরু করে,
” শাহ্ থানায় খুঁজে ৩০১ নাম্বার কেসের ফাইল পাবে না। কারণ অপরাধী তোমাদের পুলিশ প্রশাসনকে টাকা খাইয়ে থানায় কেস ওঠার আগেই কেস ধামা চাপা দিয়ে দিয়েছে। উপর মহলে কথা বলেও লাভ হবে না। তারা সবাই এক জোট। আজ রাতে ৩০১ নাম্বার কেসের সব ডিটেলস তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে।”
এতো করা সিকিউরিটির মধ্যেও খুনি কীকরে লাশ রেখে গেলো বুঝতে পারছে না শাহরিন। খুনি যে অনেক বড় খেলোয়াড় ইতিমধ্যে প্রমাণ পেয়েছে সে। আজ তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাড়িতে এসে পড়েছে শাহরিন। তার সাথে সামিরও আছে। দুজনেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তেজনায় কাঁপছে সামির। কি এমন আছে ঐ ফাইলে?”
কলিং বেলের শব্দে দৌড়ে দরজা খুলে দেয় সামির। বাইরে একটা পার্সেল পরে আছে। সামির আশেপাশে খুঁজতে বাইরে গেল। কিন্তু কাউকে পেলো না। ফিরে এসে দেখল শাহরিন পার্সেল খুলেছে। পার্সেলে কোনো ফাইল নেই। আছে ৩ বছর আগের কয়েকটা খবরের কাগজের কাটিং। বেশ কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামের একই খবরের পেপার কাটিং। যার মধ্যে একটি শিরোনাম হলো,
“ব্রিজে ঝুলন্ত অবস্থায় উলঙ্গ যুবতীর লাশ।”
চলবে…..
(ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কালকে গল্প দিতে না পারায় আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। )