ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-৮

0
1896

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
পর্ব ০৮
#সিলিভিয়া_ফারাশ

(১৬)

পেপার কাটিং গুলোর সাথে আরেকটা জিনিসও ছিল। একটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।
মেয়েটার নাম সাইরাহ্। সাইরাহ্ এই শহরের স্বনামধন্য একটি বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছে। মৃত্যুর সময় সাইরাহ্ সাত মাসের প্যাগনেন্ট ছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং পেপার কাটিং অনুযায়ী জানা যায় ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সাইরাহ্কে ধ-র্ষণ করে রাস্তায় ফেলে যাওয়া হয় তার কিছু ঘন্টা পর পুনরায় গণধ-র্ষণের শিকার হয় মেয়েটা। সারারাত ধরে পাশবিক নির্যা-তন চলে সাইরাহর উপর। এ পর্যায়ে পাশবিক নির্যা-তন সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি ধ-র্ষণ চলাকালীন মারা যায়। মৃত্যুর পরও সাইরাহর নিথর দেহের উপর চলতে থাকে হায়ে/নাদের অত্যাচার। নরপ/শুগুলো নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সাইরাহ্কে চুরান্ত লাঞ্ছিত করে উলঙ্গ অবস্থায় ব্রিজে ঝুলিয়ে যায়। সাইরাহর সাত মাসের প্রায় পরিণত মৃত শিশুটি তখন সাইরাহর নিম্নাঙ্গে উঁকি দিচ্ছিল।

শাহরিনের কল্পনায় মেয়েটি ভেসে ওঠে। চোখের সামনে ভাসতে থাকে মেয়েটি চিৎকার করে বাঁচার জন্য কাকুতি মিনতি করছে। নিজের সন্তানকে বাঁচাতে কতই না চেষ্টা করেছিল মেয়েটি। কিন্তু তার একটা চিৎকারও কি হায়ে/নাগুলোর কান পর্যন্ত পৌঁছেছিল? অসহায় মেয়েটার অসহায়ত্বের কথা ভেবে দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো শাহরিনের। সে ঠিক করলো অপরাধীদের শাস্তি সে দিবেই। সাইরাহ্কে ন্যায় বিচার পাওয়াবে। আর যে ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড গুলো ঘটাচ্ছে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

সাইরাহর বাবা মেয়ের লাশ নিয়ে এক থানা থেকে আরেক থানায় ছুটোছুটি করেন কিন্তু কোনো থানাই কেস নেয় না। শেষে যে থানায় গিয়েছিলেন ওখানকার দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার সাইরাহর বাবাকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন,

” আপনার মেয়ে তো একটা পতি/তা। বিয়ের আগেই পেট বাঁধিয়েছে। এখন দেখেন টাকা নিয়ে মতের বিরোধ হয়েছে হয়তো এর জন্য আপনার মেয়ের নাগররাই মিলে খে-য়ে ছেড়ে দিছে। আবার পতিতা হিসেবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দিয়েছে। ছেলেগুলো কে তো আমার স্যলুট করতে ইচ্ছে করছে জনাব।”

নিজের মেয়ের ব্যপারে এহেন ঘৃণ্য কথা সহ্য করতে পারলেন না সাইরাহর বাবা তিনি চিৎকার করে উঠলেন।

” চুপ করুন আমার মায়ের ব্যপারে আর একটাও বাজে কথা বলবেন না।”

” আরে আপনি চুপ করুন। একটা পতি-তার বাপ হয়ে গলায় এতো জোর আসে কোত্থেকে?”

সেদিনই সাইরার বাবা মেয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। তিনি বুঝতে পারেন এই দেশে মেয়ে জন্ম দেওয়া পাপ। মেয়ের বাবা হওয়া পাপ। মেয়ের ন্যায়বিচার তিনি কোথাও পাবেন না। সবাই সত্যিটা না জেনেই সাইরাহর চরিত্রে কালি লেপে দেয়। সাইরাহর মা মেয়েকে একাই গোসল দেন আর বাবা একাই জানাজা পড়ে নিজেদের বাড়ির এক কোনে আদরের কলিজাকে দাফন করে দেন। আদরের কণ্যাকে হারিয়ে তারা যখন শোকে পাগল প্রায়। মানসিক ভাবে একেবারেই ভেঙ্গে পরেছেন তখন পারা প্রতিবেশী আর সমাজের লোকেরা পাশে দাঁড়িয়ে শান্তনা দেওয়ার বদলে তাদের বেঁচে থাকাটাই দুঃসাধ্য করে তুলেন। পারা প্রতিবেশী আর সমাজের লোকেরা নিজেদের আসল রূপ প্রকাশ করেন। তাদের কটুক্তি মিথ্যা অপবাদ ভৎসনা আর দেখলেই আঙুল তুলে বলা

” ঐ দেখ রক্ষিতার বাপ মা যায়। আমার মেয়ে এমন কাহিনী ঘটালে কবেই গলায় দড়ি দিতাম। এরা মুখ দেখায় কেমনে? নির্লজ্জ বেহায়া কোথাকার।”

এই ধরনের কথা শুনে আরও ভেঙ্গে পরেন তারা। এসব কিছু থেকে মুক্তি পেতেই হয়তো আত্মহত্যার মতো জঘন্য পাপের পথ বেছে নিয়েছিলেন তারা।

(১৭)

তুর সায়নের ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দরজায় নক করবে কি করবে না ভেবে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে সে। হসপিটালে বমি করে সায়নের শার্ট নষ্ট করে ফেলেছিল তাছাড়া ঐদিন সায়ন না থাকলে যে কি হতো। তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সায়নের জন্য একটা গিফট নিয়ে এসেছে তুর। যদিও গিফটের আইডিয়াটা তোয়ার ছিল। তুর সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে দরজায় নক করল। দরজা চাপানো ছিল স্পর্শ করার সাথে সাথেই ক্যাচ ক্যাচ করে কিছুটা দরজা খুলে গেছে। সায়নকে বেশ কয়েকবার ডেকেও কোনো সারা শব্দ পাওয়া গেল না। তুর এবার আরও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। ভেতরে যাবে নাকি বাসায় ফিরে যাবে? ভাবতে ভাবতেই ভেতরে পা রাখল তুর। সায়নের ফ্লাটটি খুব সুন্দর সাজানো গোছানো। বেশিরভাগ ফার্নিচার বিদেশি। এসব কিছুই সায়নের রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে। সায়নকে খুঁজতে খুঁজতে বেড রুমে চলে এসেছে তুর। এখানেও সায়ন নেই।। তাহলে কোথায় সায়ন? হঠাৎ এক ধরনের খুট খুট শব্দ শুনে সচেতন দৃষ্টিতে চারদিকে চোখ বুলায় তুর। সব্দটা ওয়ারড্রবের ভেতর থেকে আসছে। ওয়ারড্রব এর কাছে এগিয়ে গেলো তুর। আবারও খুট খুট আওয়াজ হলো। কিছু কাটার শব্দ। ওয়ারড্রব এর ড্রয়ার এর পাশে যে বড় থাক থাকে ওটার ভেতর থেকেই আসছে শব্দটা। কৌতুহল বশত এগিয়ে গেলো তুর। থাকটায় হাত দেওয়ার সাথে সাথেই খুলে গেলো সেটা। বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলো তুর। এখানে যে একটা সিক্রেট কামরা থাকতে পারে এটা কারোও ভাবনাও আসবে না। সায়নের রুমে গোপন কামরা কেন? এটার ভেতর থেকে কীসের শব্দ আসছে? তুর ঝুঁকে থাকটার ভেতর মাথা ঢুকাতে যাবে তখনি পেছন থেকে থমথমে গলায় ঢেকে উঠলো সায়ন।

” এখানে কি করছেন রক্তজবা?”

তুর তাড়াহুড়ো করে মাথা বের করতে গিয়ে মাথায় বাড়ি খেলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফিরে তাকালো সায়নের দিকে। সায়নের চোখ দুটো টকটকে লাল। হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল তুর।

” আপনি কোথায় ছিলেন সায়ন? কখন থেকে আপনাকে খুঁজছি।”

” কারো অনুপস্থিতিতে তার রুমে ঢুকে ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে হাত দেওয়াকে চুরি বলে জানেন তো?”

সায়নের কথায় অপমানিত বোধ করল তুর। না চাইতেও হাতের গিফটা বারিয়ে দিল সায়নের দিকে। ত্যাজ নিয়ে বলল,

” এটা দিতে এসেছিলাম কিন্তু আপনি এতো বাজে জানতাম না সায়ন।”

” এখন তো জেনেছেন। চলে যান এখান থেকে আর কখনো অনুমতি ছাড়া আমার ফ্লাটে ঢুকবেন না।”

তুর কিছুক্ষণ সায়নের শুভ্র মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলো। রাগে লাল আভা ছড়িয়েছে চেহারায়। সায়নের বিহেভিয়ারে তুর মনে করেছিল সায়ন হয়তো তুরকে পছন্দ করে কিন্তু এই লোক তো জুবানের চেয়েও খারাপ। রাগে অপমানে গিফটা সায়নের গায়ে ছুড়ে মারলো সে। ” আই হেইট ইউ সায়ন।” বলেই দৌড়ে ফ্লাট থেকে বের হয়ে গেল।

ফ্লাটের দরজা লক করে ওয়ারড্রবের কাছে ছুটে এলো সায়ন। মেয়েটা কিছু দেখেনি তো? আরেকটু হলেই তার আসল পরিচয় জেনে যেতো মেয়েটা। তখন কি ঝামেলাটাই না হতো। ওয়ারড্রের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল সায়ন। মাঝারি আকারের একটা রুম। হালকা নীল আলোর লাইট জ্বলছে। দেয়ালে একটা বোর্ডে অনেককিছু আঁকিবুঁকি করা। সাথে কয়েকজনের ছবি পিন করা। টেবিলে অনেকগুলো কাগজপত্র ছড়ানো ছিটানো সাথে একটা বন্ধু রাখা। কালো লেদারের চেয়ারটায় বসলো সায়ন। বোর্ডের সবগুলো ছবির মাঝে একটা ছবির দিকে তাকিয়ে হাসলো ছেলেটা। ছবিটায় আলতো হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” দুঃখিত রক্তজবা।”

ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন রাত ১ টা ৫ মিনিট। ওভার কোর্ট গায়ে দিয়ে মাথায় হেট পরে নিল সায়ন। মুখে মাক্স লাগাতে ভুল না। বন্ধুকের বুলেট ঠিক আছে কিনা চেক করে বেড়িয়ে পড়ল সে। নির্জন রাস্তা নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। হঠাৎ থেমে গেল সায়ন। মনে হলো কেউ তাকে ফলো করছে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল পুরো রাস্তা ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। মনের ভুল ভেবে সায়ন আবার হাঁটা শুরু করলো। কিছুক্ষণ হাটার পর এবারও মনে হলো কেউ পেছনে আছে। এবার আর মনের ভুল নয় সায়ন দাঁড়িয়ে পড়লো বন্ধুকের খাঁজ থেকে বন্ধুক হাতে নিয়ে নিল। সচেতন দৃষ্টিতে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগল। তার গেম তার সাথেই খেলা হচ্ছে। ক্রুর হাসলো সায়ন।

চলবে……

( দেরি করে গল্প দেওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। কি মনে হয় আপনাদের এই খুন গুলো কি সায়নই করছে নাকি অন্য কেউ? সায়নই যদি খুন গুলো করে থাকে তাহলে সায়নকে ফলো করছে কে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here