ওহে প্রিয় পর্ব-১৪

0
2069

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৪

৮.
ভয়ংকর সেই রাতটির পর সবকিছুই কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। ছেলেগুলোর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হলেও আমি বা নির্মল কেউ স্বাভাবিক হতে পারিনি। নির্মলের মা আর ছোট বোন এসে দুদিন থেকে যায়। আমাকে এবং নির্মলকে স্বান্তনা দেয়। স্বাভাবিক হওয়ার জন্য ইতিবাচক কথাবার্তা বলে তবুও নির্মল গুম হয়ে রুমে দরজা আটকে বসে থাকে। আমিও রুম থেকে বের হইনা। সেরাতে যদি আমি আগবাড়িয়ে কথাগুলো না বলতাম তাহলে হয়তো আমাদের স্বামী-স্ত্রীই ভাবতো ওরা। খারাপ মেয়েছেলে ভেবে সুযোগের সৎব্যবহার করতে চাইতো না৷ আর না আমরা অমন বিশ্রি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতাম। দুদিন থাকার পর নির্মলের মা আর ছোট বোন চলে যাওয়ার পরই নির্মল আমার সাথে দেখা করতে আসে। কিন্তু আমি ওর মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলাম না তাই দরজাটা অবদি খুলিনি। অনেক ভেঙে পড়ে নির্মল। সেদিনের সেই ভয়াবহ দৃশ্য এবং সেদিনের পর থেকে আমার অবহেলা। দুটোই ভয়ানক ভাবে আহত করে ওকে। ফলস্বরূপ রাতে গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। রাত যখন দু’টো ছুঁই ছুঁই তখন দরজায় টোকা পড়ে দরজা খুলতেই নির্ঝর ভয়ার্ত চোখ,মুখে বলে,

-‘ আপু ভাইয়ার অনেক জ্বর তারাতাড়ি চলো। জ্বরের ঘোরে বার বার তোমাকে ডাকছে ‘।

বুকটা হুহু করে ওঠে আমার জেসমিন কে ডেকে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যাই দোতলায়। গিয়ে দেখি বেচারা জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে কাঁপছে আর বিরবির করে কি যেনো বলছে। জেসমিন ওর কপাল চেক করে আঁতকে ওঠা গলায় বললো,

-‘ সে কিরে গা যে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ‘।

আমিও চেক করে দেখি অবস্থা বেগতিক। নির্ঝর বললো,

-‘ আমি আম্মুকে এখুনি ফোন করছি ‘।

-‘ না নির্ঝর এতো রাতে আন্টিকে ফোন করোনা আমরা আছিতো তয়ালে ভিজিয়ে নিয়ে এসো। জেসমিন তুই যা আমাদের রুম থেকে জ্বরের ওষুধ গুলো নিয়ে আয় ‘।

-‘ আপু ভাইয়া রাতে কিছু খায়নি ‘। বললো নির্ঝর।

আমি চটে গিয়ে বললাম,

-‘ কেনো খায়নি কেনো? এতো বাড়াবাড়ি কিসের ওর নিজেকে কি মনে করে মহাপ্রেমিক? প্রেমিক পুরুষ’?

নির্ঝর মাথা নিচু করে বাথরুম গিয়ে তয়ালে ভিজিয়ে নিয়ে এলো। ততোক্ষণে আমি নির্মলের গা থেকে গেঞ্জি খুলে ফেলেছি। অতি যত্নসহকারে পুরো শরীর মুছে দিয়ে জলপট্টি দিতে থাকলাম। জেসমিনকে বললাম খাবার গরম করতে। নির্ঝর আমার পাশেই নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলো। আর নির্মল জ্বরে পুরোই বেধান্দা। খাবার গরম করে নিয়ে আসার পর নির্ঝরের সাহায্যে নির্মলকে আধশোয়া করে বসিয়ে নিজ হাতে খাওয়িয়ে দেই। বেচারার চোখ,মুখ লাল টকটক করছিলো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানিও বের হচ্ছিল। অল্প খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে শুইয়িয়ে দিলাম। আরো কিছুক্ষণ জলপট্টি দিতে থাকলাম। জেসমিন সোফায় শুয়েই ঘুমিয়ে গেলো। নির্ঝর বিছানার একপাশে ঝিমাতে থাকলো। শরীরে একটু আরাম পেয়ে নির্মল আমার কোলে মাথা গুঁজে ভারি শ্বাস ফেলতে ফেলতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। আমি মৃদু হেসে ওর চুলগুলোয় আলতো করে হাত বুলাতে থাকলাম। যখন আমার চোখ জোড়াও লেগে আসছিলো ঠিক তখনি জড়ানো গলায় নির্মল বললো,

-‘ সাবা ‘।

চমকে ওর দিকে তাকাতেই বুকের ভিতর কিছু কামড়ে ধরেছে এমন অনুভূতি হলো আমার। নির্মল অসহায় মুখে আধভেজা চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করলাম,

-‘ কি হয়েছে খারাপ লাগছে ‘?

নির্মল মলিন হেসে মাথা নাড়িয়ে না বোধক সম্মতি জানালো। আমি চেয়েই রইলাম ওর মুখের দিকে। ও হাত বাড়িয়ে আমার এক গালে স্পর্শ করে অস্ফুট স্বরে বললো,

-‘ ভালোবাসি তো অভিমানীনি। আই এম সরি তো প্রিয় ‘।

সরি বলার সময় বাচ্চা দের মতো অন্যহাতে কানের লতিতে ছুঁয়েছিলো। আমি তখন হেসে ফেললেও আমার চোখ বেয়ে অশ্রুকণারা ঝড়ছিলো। নির্মল গাল থেকে হাত সড়িয়ে চোখ বুজে বললো,

-‘ প্রথম দর্শনে কাউকে দেখে তোমার বুকের ভিতর ধক করে ওঠেছে সাবা বা কিছু তোমার পেট চেপে ধরেছে এমন অনুভূতি হয়েছে ‘?

আমি কিছু বললাম না। কেমন যেনো নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। শরীরে কেমন দূর্বলতা অনুভূত হচ্ছিল। একদম স্থির হয়ে বসে ছিলাম। আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে কেমন নেশামাখা গলায় বুলি আওড়াচ্ছিলো নির্মল।

-‘ আমার হয়েছে। সেদিন তোমায় দেখে আমার ঠিক এমনটাই অনুভূতি হয়েছিলো। কিন্তু সেটা ছিলো ভালোবাসার পূর্ব মূহুর্ত। ভালোবাসা শুরু হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত আমাকে যতোটা সুখ দিয়েছে তাঁর থেকে অধিক যন্ত্রণা দিয়েছে পুরোপুরি ভালোবাসা অনুভব করার পর। ভালোবাসা, Love এর পূর্ণরূপ কি জানো প্রিয় ‘?
L= Lakes Of Sorrows ( দুঃখের সাগর )
O= Ocean Of tears ( অশ্রু মহাসাগর )
V= Valley Of Death ( মৃত্যু উপত্যকা )
E= End Of Life ( জীবন শেষ )

সচকিত হয়ে একহাতে ওর মুখ চেপে ধরলাম। আকুল হয়ে বলে ওঠলাম,

-‘ চুপ নির্মল এসব বলোনা ‘।

নির্মল আমার হাত ছুঁয়ে হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেলো। সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে হাত সড়িয়ে ফেললাম আমি। নির্মল শ্লেষমিশ্রিত হাসি দিলো। আমি ভীষণ ইতঃস্তত বোধ করছিলাম। আমার অনুভূতি বুঝতে পেরে ও বললো,

-‘ আমি খুবই তৃষ্ণার্ত সাবা ‘।

-‘ পানি আনছি বালিশে মাথা রাখো ‘।

-‘ সব তৃষ্ণা কি পানিতে মেটে প্রিয় ‘?

আমি নিরুত্তর হয়ে বসে রইলাম। নির্মল আবারো দুর্বল কন্ঠে বললো,

-‘ ভালোবাসার তৃষ্ণা মেটাতে পারবে না প্রিয়? এ তৃষ্ণা যে ভয়াবহ তৃষ্ণা প্রিয় । এ তৃষ্ণা না মিটলে যে মরেও শান্তি নেই। তোমার ভালোবাসা বিহীন আমার মরণ যে বড় অতৃপ্তকর হবে। তোমার চোখের সামনে তেষ্টায় ছটফট করছি আমি। তোমার হৃদয়ে কি একটুও কম্পন সৃষ্টি করে না? তুমি কি শুনতে পাওনা এই বুকের হাহাকার’?

সহ্য করতে না পেরে দুহাতে কান চেপে ধরে বললাম,

-‘ প্লিজ নির্মল চুপ করো আমি সহ্য করতে পারছিনা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার ‘।

-‘ আমিও পারছিনা সাবা বেলা ফুরিয়ে গেলে আফসোস বিহীন কিছুই রবেনা তোমার মিলিয়ে নিও’।

ওর বলা সে বাক্যটি আমার অন্তরে গিয়ে বিঁধলো। থমকে গিয়ে নিচু স্বরে ডেকে ওঠলাম ‘নির্মল ‘।

আমার সে রূপ দেখে নির্মল নিজেকে সামলে নিয়ে সহাস্যে বললো,

-‘ ওরে আমার দেমাগি সুইটহার্ট পুরো শরীরে না বুকে কম্পন তুলে তবেই আমি ক্ষ্যান্ত হবো। নাকি বুকেও কম্পন ধরেছে জানেমান ‘? বলেই ভ্রু নাচালো।

আমি দূর্বল কন্ঠে বললাম,

-‘ জ্বর সেড়ে গেছে তোমার নির্মল এবার সড়ো আমাকে যেতে দাও ‘।

আমি জোর করে ওকে সড়াতে নিতেই আমার দুহাত আঁকড়ে ধরে মিনতির সুরে বললো,

-‘ ভালোবাসতে বলবো না, কাছে আসতেও বলবো না শুধু একটি বার প্রিয় সম্বোধন তো করতেই পারো সাবা। আমার বুকের হাহাকার থামিয়ে দাও। মরুভূমির বুকে এক ফোঁটা বৃষ্টির ঠাই দাও। আর ফিরিয়ে দিও না ‘।

আমি ওর হাত এক ঝটকায় সড়িয়ে জেসমিন কে ডাকতে শুরু করি। নির্মল গা এলিয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে দেখতে থাকে আমার কার্যকলাপ। যতোক্ষণ না আমি জেসমিন কে নিয়ে বের হচ্ছিলাম ততোক্ষণ সে চেয়েই ছিলো। আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর হয়তো দীর্ঘ এক নিঃশ্বাসও ফেলেছিলো।

৯.
শেষরাতেও ঘুম হলো না আমার৷ ভালোবাসার বেড়াজালে আঁটকে পড়েছি আমি। এখান থেকে মুক্ত হতে চেয়েও পারছিনা৷ নির্মলের আকুতি আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না৷ এসবের ভীড়ে পড়াশোনায়ও ভীষণ ক্ষতি হচ্ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে কোন একটা এবার বেছে নেবোই। হয় নির্মলকে চিরতরে জীবন থেকে বিদায় করবো। এর জন্য প্রথম কাজ হবে বাসাটা ছেড়ে দেওয়া। অনার্স শেষ হতে একবছর আছে আর একটা বছর লুকিয়ে হলেও কাটিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যাবো। এটুকু শিক্ষা নিয়ে যা পারি একটা কর্ম যোগার করবো। নয়তো ওর ভালোবাসা কে গ্রহণ করে নিয়ে বাকি জীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেবো। আমার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মা কে আমার ভীষণ প্রয়োজন। মায়ের সান্যিধ্য লাভ করতে পরেরদিনই জামা-কাপড় গুছিয়ে বের হয়েছি এমন সময় নির্মল দৌড়ে আমার ব্যাগটা ছিনিয়ে নিলো।
সেদিন ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না আমি। নির্মল রুদ্ধ কন্ঠে বললো,

-‘ তুমি কোথাও যাবে না সাবা প্লিজ। সরি সাবা রাতে জ্বরের ঘোরে কি বলেছি না বলেছি মাথা ঠিক ছিলোনা৷ ক্ষমা করো আমায় ‘।

আমি নিচের দিকে মাথা রেখেই বললাম,

-‘ আমি আম্মার কাছে কদিন থাকতে যাচ্ছি শুক্রবারই এসে পড়বো ‘।

মামি আর জেসমিনও নির্মল কে বোঝালো। জেসমিন আর মামিও যাবে নানাবাড়িতে। ওদের কথা শুনে নির্মল অসহায় চোখ, মুখে চেয়ে কাঁপা গলায় বললো,

-‘ আমিও যাবো ‘।

আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাতেই ও চটপটে গলায় বলে ওঠলো,

-‘ না মানে তোমাকে বাসে ওঠিয়ে দিতে যাবো চলো ‘।

আমি মৃদু হেসে মামি আর জেসমিনের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রিকশায় ওঠার পর নির্মল ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো, সে পাল্টে গেছে, আমি তাঁর জীবনে আসার পর তাঁর সবকিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। আমি, জেসমিন আর সরস্বতী বাদে প্রেজেন্ট তাঁর কোন মেয়ে বন্ধুও নেই। আরো অনেক কথা বললো নির্মল। আমি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে ওর কথা গুলো শুনছিলাম। আর মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম ‘ বাড়ি থেকে ফিরে এসে অনেক বড় সারপ্রাইজ দেবো তোমায় নির্মল অতি সুখে তুমি জ্ঞান হারাবে না তো ‘? নির্মল কথা বলার ফাঁকে আড় চোখে আমাকে দেখছিলো কিন্তু আমি সরাসরিই ওর দিকে চেয়ে ছিলাম৷ রিকশা থেকে নামার পর আমি নির্মলকে বলি কফি খাবো। তাই কফিশপে নিয়ে যায় আমায়৷ দুজন মুখোমুখি বসে ছিলাম। আমি চাইছিলাম নির্মল আমার চোখের দিকে তাকাক। কিন্তু ও তাকাচ্ছিলোই না। তাই নিজে থেকেই আবদার করলাম আমার চোখের দিকে তাকাতে। ও যখন তাকালো আমি প্রশ্ন করলাম,

-‘ কি দেখতে পেলে ‘?

-‘ কি আর দেখবো দেমাগি মেয়ের সুইট রূপই দেখতে পেলাম ‘। বলেই সশব্দে হেসে ওঠলো নির্মল।

পুরুষ আর নারীর ভালোবাসায় বিশাল ফারাক। একজন পুরুষ যেভাবে তাঁর ভালোবাসা কে মনের অনুভূতি কে প্রকাশ করতে পারে একজন নারী তা কখনোই পারে না। পুরুষের চোখে ভালোবাসার সরূপ সুস্পষ্ট ফুটে ওঠলেও। নারীর চোখে তা সুস্পষ্ট ফুটে ওঠে না৷ বা ফুটে ওঠলেও প্রগাঢ় দৃষ্টি ছাড়া তা ধরা সম্ভব নয়৷ পুরুষ মনের কথা চিরকাল প্রকাশিত থাকলেও নারী মনের কথা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রকাশিত থাকে। নারীর ভালোবাসার গভীরতা যতো বেশী তা প্রকাশ করার ক্ষমতা ততো কম।

নির্মলের কথা শুনে সাবা বিরক্তি তে কপালে তিন ভাঁজ ফেলে ওঠে দাঁড়ালো। নির্মল বুকের বা পাশে চেপে ধরে বলে ওঠলো,

-‘ অপেক্ষায় আছি প্রিয় তোমার ফেরার ‘?

ঠোঁটের কোনায় বিশ্বজয়ী হাসি ফুটে ওঠে আমার। নির্মলও তৃপ্তির হাসি হেসে ওঠে দাঁড়িয়ে আচমকাই আমার কপালে চুমু খেয়ে ছুটেই বেরিয়ে যায়। আমি স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে স্থির চোখে চেয়ে থাকি ওর যাওয়ার পানে। সেদিন টাংগাইল পর্যন্ত নির্মল এগিয়ে দেয় আমায়। বাসে পাশাপাশি সিটে বসে ঢাকা থেকে টাংগাইল অবদি আসে। পুরো সময়টাই আমার মুখপানে একধ্যানে চেয়েছিলো নির্মল। সেদিনই প্রথম আমি ওর দৃষ্টি কে অবহেলা করিনি। সেদিনই প্রথম ওর অনুভূতি কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করিনি। সেদিনই প্রথম ওর হাতে হাত রেখে আশ্বস্ত করি আমি ওর শুধুই ওর। আমি জানতাম আমার অনুভূতি কে আমার আম্মা অবমূল্যায়ন করবে না। আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিই হচ্ছে আমার আম্মা। আম্মা পাশে থাকলে আমার আর কিছু চাইনা। আম্মার সাপোর্ট পেলে আমার আর কাউকে লাগবেনা৷ বাস থেকে নামার পূর্ব মূহুর্তে নির্মল আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

-‘ বহু তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি প্রেম পিপাসায় মরি মরি জান দ্রুত চলে এসো নয়তো খবর পাঠিও। তোমার সনে আমার ঠাই যতোদিন না হচ্ছে ততোদিন এই তৃষ্ণা মিটবে না ‘।

ও যখন বাস থেকে নেমে যাচ্ছিলো খুব পিছু ডেকে বলতে ইচ্ছে করছিলো,

-‘ ওহে প্রিয় এবার তোমার অপেক্ষার অবসান ঘটতে চললো বলে ‘।

কিন্তু বললাম না। ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট হয় বেশী। তিনটে বছর ধৈর্য ধরতে পেরেছে আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরলে দোষ কোথায়?

বাড়ি ফিরতেই খুশিতে আম্মার চোখ চকচক করে ওঠলো। আব্বাও বেশ খাতিরযত্ন করে ঘরে তুললেন। দৌড়ে গেলেন দোকানে আপু আর দুলাভাই কে ফোন দিতে। আব্বার যাওয়া দেখেই আম্মার মুখ টা কালো হয়ে গেলো৷ বললো,

-‘ আবার শুরু হবো অত্যাচার কেনো এলি মা ‘?

আমি আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

-‘ আম্মা চিন্তা করো না। আমাদের চিন্তার দিন এবার শেষ ‘। বলেই আম্মাকে সব খুলে বললাম। সব শুনে আম্মা ভয়ে থড়থড় করে কাঁপতে থাকলো আর বলতে থাকলো,

-‘ তুই শহড়ে পড়ার নাম করে ছেলে মানুষের সাথে পিরিত বাজাইলি সাবা তোর আব্বা আমারে খুন কইরা ফালাবো ‘।

আমি আম্মার মুখ ছাপিয়ে ধরে ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,

-‘ আম্মা আস্তে বলো সবাই শুনবে আমি প্রেম করিনি আম্মা তুমি বুঝতে ভুল করছো ‘ বলেই আবারো বুঝিয়ে বললাম। আম্মা শিক্ষিত না গ্রামের বোকা সোকা মেয়ে মানুষ এসবে তাঁর জ্ঞানমূলক ধারনা নেই। তাই খোলামেলা আলোচনা করলাম। কিন্তু শুরুতে দেওয়া আম্মার চিৎকার কান পেতে ঠিক শুনে নেয় আমার চাচি। এবং পুরো বাড়িসুদ্ধ লোকের কানে পৌঁছে দেয় “সাবা শহড়ে গিয়ে ব্যাটাছেলের সাথে পিরিত বাজাইছে”

চলবে..

নেক্সট পার্ট দুদিন পর দিব। যেহেতু অতিত শেষ হবে গুছিয়ে লিখতে টাইমও লাগবে। তাই কেউ ইনবক্স বা কমেন্ট বক্সে গল্প নিয়ে তাড়া দিবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here