ওহে প্রিয় পর্ব-২৪

0
3014

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২৪
__________
রাত ন’টায় দুজন বডিগার্ড নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো হ্যাভেন। ন’টা এিশের দিকে হ্যারি জিসানকে ম্যাসেজ করে একটি ঠিকানা পাঠিয়ে হিয়ার রুমে নক করলো৷ হিয়া হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে বললো,

-‘ একটু শান্তিতে ঘুমানোও যায় না এ বাড়িতে। কি হয়েছে ডিনারের সময় তো হয়নি ডাকাডাকি কিসের ‘?

হ্যারি হিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে পাশ কাটিয়ে রুমের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-‘ এ বাড়িতে শান্তিতে ঘুমানো যায় না যে বাড়িতে ঘুমানো যায় সে বাড়ি যা না যা নিষেধ কোথায়? সারাদিন গরুর মতো পড়ে পড়ে ঘুমাস আর বলস শান্তিতে ঘুমানো যায় না হ্যাবলা কোথাকার! ‘। বলেই হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা বিছানার একপাশে রেখে গা এলিয়ে দিলো।

হিয়া ‘উফফ তুই হ্যাবলা’ বলে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে এগিয়ে এসে শপিং ব্যাগ দেখতেই বললো,

-‘ আল্লাহ ভাইয়ু গিফ্ট এনেছিস আমার জন্য ‘?

-‘ সারাক্ষণ গিফ্টের ধান্দা তাইনা? এটার ভিতর ইম্পরট্যান্ট একটা জিনিস রয়েছে। সব সেটিং করে ভাবি মা কে জলদি একটা আইডি ওপেন করে দিবি। ভাইয়ের সাথেও এড করে দিবি ক্লিয়ার ‘?

খুশিতে গদগদ হওয়া ভাবটা কমে গেলো হিয়ার। হ্যারির পাশে দু হাঁটু ভাঁজ করে বসে সন্দেহী মুখশ্রী তে ব্যাগের ভিতর ওঁকি দিলো। খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠলো,

-‘ মোবাইল ফোন? আল্লাহ! এটা ভাবির ‘?

হ্যারি কাত হয়ে বোনের দিকে তাকালো। চোখে,মুখে রহস্যময় একটা ভাব ফুটিয়ে তুলে বললো,

-‘ হুম ভাইয়ের অর্ডারেই কেনা হয়েছে ‘।

-‘ হুট করে মোবাইল ফোন কাহিনী কি ব্রো ‘? ভ্রুযুগল উপর নিচ করে প্রশ্নটি করলো হিয়া।

-‘ কাহিনী পরে জানতে পারবি যা বলছি তাই কর আগে যা ভাবি মা’র রুমে যা ‘।

-‘ সিরিয়াসলি হজম করতে পারছিনা দাদান ভাবিকে ফোন তবুও পার্সোনাল ওহ মাই গড! ওহ মাই গড! বিলিভ করতেই কষ্ট হচ্ছে ‘।

-‘ তোকে বিলিভ করতে হবে না যা বলেছি জলদি কর ‘ বলেই এক লাফে ওঠে রুম ত্যাগ করলো হ্যারি। হিয়াও ফোন নিয়ে আহির রুমে চলে গেলো।
.
-‘ কি ব্যাপার সুন্দরী ভাবি জান রাত নটায় ভেজা চুলে পুরো ঘর জুরে শ্যাম্পুর ঘ্রাণ ছড়াচ্ছেন যে ‘?

তয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুচড়িয়ে কাঁধের একপাশে নিয়ে হাত,পায়ে লোশন মাখছিলো আহি। হিয়ার করা প্রশ্নে পিছন না তাকিয়েই বললো,

-‘ বিয়ে করো আমার বরের মতো অসভ্য একটা বর জুটুক কপালে তারপর বুঝবে রাত নটা,দশটায়ও কেনো গোসল করা লাগে ‘।

খিলখিল করে হাসতে হাসতে বিছানার একপাশে বসলো হিয়া৷ আহিও তাঁর পাশে এসে বসলো। বললো,

-‘ এ সময় এ ঘরে কোন সমস্যা ‘?

হিয়া ঠোঁটে দুষ্টু হাসি একে বললো,

-‘ এ সময় না এলে তোমার এই রূপ যে দেখা হতো না ভাবি জান ‘।

হিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ হতেই আহির পুরো মুখশ্রী লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। শাড়ির আঁচল ভালোভাবে গায়ে টেনে আমতা আমতা করে বললো,

-‘ আর বলোনা আজকে দুজন বেশ মারামারি করেছি ‘।

-‘ তাই কে জিতলো ‘? বলেই ভ্রু নাচালো হিয়া।

-‘ ওমা ভারী দুষ্টু তো তুমি ক্ষেপাচ্ছো কেমন ‘।

হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা হিয়ার। আহির লজ্জায় মিইয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে হাসিটা দমিয়ে বললো,

-‘ হয়েছে থাক আর লজ্জা পেতে হবে না এই দেখো দাদান তোমার জন্য কি পাঠিয়েছে ‘ বলেই ফোন এগিয়ে দিলো।

-‘ মোবাইল ফোন! ‘

– ‘ হুম আমিও প্রথম বেশ অবাক হয়েছিলাম হ্যারি ভাইয়া বললো দাদানের অর্ডারেই কেনা হয়েছে ‘।

-‘ এই ফোন আমি নেবো না৷ তোমার ভাইকে আমি হারে হারে চিনি নিশ্চয়ই এটার ভিতর যে সিমটা রয়েছে সেটা ট্র্যাক করা? এতো সাধু সে না যে আমার সুবিধার জন্য ফোন দেবে দিলে অনেক আগেই দিতো নিশ্চিয়ই কোন কাহিনী আছে এটার পিছনে ‘।

-‘ হুম তা তো আছেই হ্যারি ভাইয়া বললো দু’ঘন্টার মধ্যে সব করতে ‘।

চমকে ওঠলো আহি দ্রুত দৃষ্টি ফেললো দেয়াল ঘরিতে ন’টা চল্লিশ বাজে। এগারোটার দিকে কিছু একটা ঘটবে। তাহলে এজন্যই কি এই ফোনের ব্যবস্থা? উদ্বিগ্ন হয়ে বললো আহি,

-‘ ঠিকাছে ঠিকাছে ওনি যখন পাঠিয়েছে নিজের কাছে রাখি কি বলো ‘?

হিয়া সম্মতি জানিয়ে সব কিছু সেটিং করে আহিকেও সব কিছু বুঝিয়ে দিলো। দশটার দিকে বাড়িতে শশুর শাশড়ি ননদ ছাড়া কেউ ছিলোনা। তিনজনকে নিয়েই রাতের খাবার সেড়ে রুমে ফিরলো আহি। মনটা তাঁর বড্ড অস্থিরতায় ভুগছে। এর মধ্যে দুবার হ্যাভেনের নাম্বারে কলও করেছে। কিন্তু রিসিভ হয়নি। দুবার বেজে বেজে কেটে গেছে তৃতীয় বার বিজি দেখিয়েছে। বিরক্ত হয়ে আইডিতে ঢুকে হ্যাভেনের প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করতে থাকলো। কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই হ্যারির আইডি থেকে একটি ম্যাসেজে এলো হিয়াই সবার সাথে আইডিটা এড করে দিয়েছে তখন। ম্যাসেজটি হলো,

-‘ ভাবি মা বিচলিত হবেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইভ শুরু হবে আমি লিংক দিব খানিক বাদেই ‘।

হাত কাঁপতে শুরু করলো আহির। শুষ্ক গলায় রুদ্ধশ্বাস হয়ে ফোনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বসে রইলো।
.
শহড়ের ভিতরেই একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে থাকছে রূপসা। এ’কমাস হ্যাভেনকে অসংখ্যবার তাঁর বাসায় ইনভাইট করলেও আসেনি। সবসময় রাত দশটার পর রেষ্টুরেন্টে মিট করেছে। ফাইনালি আজ হ্যাভেন তাঁর বাসায় আসবে। সেই খুশিতে পুরো ঘরে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে,ছিটিয়ে রেখেছে। গোলাপি রঙের পাতলা একটি শাড়ি পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজেকে বেশ পরিপাটি করে সাজাচ্ছে। আর বার বার ফোন চেক করছে। সাজ শেষে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পা থেকে মাথা অবদি নিজের দিকে নজর বুলিয়ে মুচকি হাসলো। পিছনের চুলগুলো কাঁধের এক পাশে ছড়িয়ে দিলো যাতে তাঁর ফর্সা,মসৃণ পিঠটা হ্যাভেনের চোখে পড়ে অতি সহজেই। কি নেই তাঁর চোখ ঝলসানো রূপ নজর কাড়া ফিগার, ভরা যৌবন সব আছে সব। ভাবতেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠলো। সেসময়ই কলিং বেল বেজে ওঠলো। রূপসা চমকে গিয়ে দ্রুত নিজেকে আরেকবার আয়নাতে দেখে নিয়ে বুকের একপাশে আঁচল সড়িয়ে চোখে, মুখে আবেদনময়ী ভাব ফুটিয়ে তুলে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। দরজা খুলে অপরপাশের ব্যাক্তিটিকে দেখে দুপা পিছিয়ে গেলো। কিন্তু সে ব্যাক্তিটি পিছালো না বরং রক্তিম চোখ,মুখে এগিয়ে এসে হাতে থাকা রডটা দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে শুরু করলো রূপসার গায়ে। আর বলতে থাকলো,

-‘ শালীর ঘরের শালী আমার সাথে বাটপারি? এতোই খেলাধূলার শখ আয় আজ তোর শখ মেটাই ‘।

সে ভয়াবহ আঘাত সহ্য করতে না পেরে ‘ওমা গো’ বলেই এক চিৎকার দিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লো রূপসা। আর বলতে থাকলো,

-‘ বাঁচাও কে আছো বাঁচাও আমায়। মেরে ফেললো আমায় বাঁচাও ‘ বলতে বলতে ফোন হাতে নিয়েই হ্যাভেনের নাম্বারে কল করলো ।

জিসান ক্ষিপ্ত হয়ে রূপসার চুলের মুঠী ধরে বিশ্রি গালিগালাজ করতে করতে আবারো মারতে শুরু করলো। এদিকে রূপসা চিৎকার করেই যাচ্ছে। একসময় জিসান ক্লান্ত হয়ে থেমে গিয়ে কাকে যেনো ফোন করলো। এই সুযোগে রূপসা হ্যাভেনকে লাগাতার ফোন করেই যাচ্ছে। হ্যাভেন ফোন রিসিভ করতেই রূপসা হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললো,

-‘ তুমি কোথায় হ্যাভেন জিসান আমাকে মেরে ফেললো প্লিজ বাঁচাও আমায় ‘।

বিকৃত আওয়াজে হো হো করে হাসতে লাগলো হ্যাভেন। চিৎকার করে বাজে ভাষায় গালি দিয়ে বললো,

-‘ তুই কি করে ভাবলিরে বেঈমানের বাচ্চা তোর সাথে আমি লুতুপুতু করতে যাবো? তোর সাথে আজ এ মূহুর্ত থেকে যা যা ঘটবে গতদিনে যা যা ঘটেছে সবটাই আমার প্ল্যানমাফিক। তোর মতো মা*র শরীরে এই হ্যাভেন থুথু ফেলতেও যাবেনা। কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে দেখ ওখানে ঠিক কি কি ঘটে। নরক বানিয়ে দিব তোর জীবন আমি ‘।

-‘ না হ্যাভেন না তুমি আমার সাথে এটা করতে পারোনা৷ তুমি ভুলে গেছো আমাদের ভালোবাসার কথা? ভুলে গেছো আমাদের ভালোবাসাময় সেই দিনগুলোর কথা। কতো ভালোবাসা কতো প্রেম কতো স্মৃতি ‘? বলেই ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো।

-‘বেঈমানরা বেঈমানী করার সময় যেমন কোন স্মৃতি মনে রাখেনা এই হ্যাভেনও বেঈমানদের কোন স্মৃতি মনে রাখেনা। তুই হলি বেঈমানের বাচ্চা’ বলেই ফোন কেটে দিলো৷

জিসান ফোনে কথা বলা শেষ করতেই রূপসার তল পেটের নিচে পরপর লাথি দিতে শুরু করলো। আর বললো,

-‘ খুব শখ না আজ তোর শখই মিটাবো আমি ‘।

সহ্য করতে না পেরে মেঝেতে গড়াগড়ি আর চিৎকার শুরু করে দিলো রূপসা। পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন এসে ভীর জমিয়েছে ৷ পুলিশের গাড়ি সাংবাদিক সব এসে হাজির। পুলিশ এবং সাংবাদিক আসার পরই ক্ষ্যান্ত হয় জিসান। পুলিশকে দেখে রূপসা সাহায্য চায়। কিন্তু রূপসার বিরুদ্ধে আগেই প্রতারণার অভিযোগ করে ক্যাস করেছে জিসান। জিসানকে দিয়ে এসব করিয়েছে হ্যাভেন। যেহেতু হ্যাভেন একজন সংসদ সদস্য সেহেতু এসব নর্দমার ধারেকাছে আসা তাঁর পলিটিক্যাল জীবনে হুমকি স্বরূপ৷ তাই ঠান্ডা মাথায় আড়ালে থেকে অপরাধীর শাস্তির ব্যাবস্থা করেছে। কাঁটা দিয়েই আজ কাঁটা তুললো সে। আজ থেকে সাত বছর আগে যেভাবে হ্যাভেনের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলো রূপসা আজ এতো বছর পরও একইভাবে জিসানের সঙ্গেও প্রতারণা করতে যাচ্ছিলো। সময় সব সময় এক পাক্ষিক কাজ করেনা। আজ সময় এসেছে উচিত শাস্তি পাওয়ার তাই প্রতারণার দায়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো রূপসাকে। প্রতিটি নিউজ চ্যানেল থেকে শুরু করে ভার্চুয়াল জগতেও ঘটনা টি ছড়িয়ে গেলো। লোকচক্ষু তে রূপসার স্থান আজ নরকের কীটের সমতুল্য। এই ঘটনাটি আমাদের সমাজের প্রতিটি ব্যাক্তির চোখেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো পাপ বাপকেও ছাড়েনা। বেঈমানদের এভাবেই হ্যানস্তা করতে হয়। সমাজের জঘন্যতম ঘৃণ্য নারীদের এভাবেই শাস্তি দিতে হয়৷ যাতে আর কেউ কারো সাথে প্রতারণা করার আগে অন্তত দুবার ভাবে।

পুরো ঘটনাটাই স্বচক্ষে দেখে ভয়ে শিউরে ওঠলো আহি। হাত,পা অনবরত কাঁপছে তাঁর। সে সময়ই ফোন বেজে ওঠলো কাঁপা হাতেই ফোন রিসিভ করলো আহি,

-‘ কি গো সুন্দরী ভয় পেয়েছো ‘? সুরেলা কন্ঠে বললো হ্যাভেন৷

-‘ আ’আপনি কোথায় ‘? কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো।

-‘ খুব বেশী ভয় পেয়েছো নাকি? আই লাইক ইট সুন্দরী। তোমার এই ভয়কে ভীষণ পছন্দ করি আমি।
ভালো করে দেখে নিয়েছো তো বেঈমানদের উপযুক্ত শাস্তি ঠিক কি ‘?

-‘ আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় আসুন আমার শরীর খারাপ লাগছে প্লিজ এখুনি আসুন ‘।

আহির ভয় পাওয়ার কথা শুনেও দ্রুত বাড়ি ফিরলো না হ্যাভেন। তাঁর ফিরতে রাত প্রায় দু’টো বেজে গেলো। নেশা করে টলতে টলতে রুমে ঢুকলো সে। সবেই চোখটা লেগে গিয়েছিলো আহির। দরজায় শব্দ হওয়াতে চমকে ওঠে বসলো। হ্যাভেন একহাতে দরজা ধরে ঢুলুঢুলু শরীরে এগিয়ে টানা চোখে তাকিয়ে রইলো আহির দিকে। আহি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে হ্যাভেনকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো,

-‘ থ্যাংকিউ হ্যাভেন, থ্যাংকিউ সো মাচ’।

নেশাগ্রস্থ অবস্থায় হ্যাভেন সবসময় অন্য এক হ্যাভেন থাকে। না রাগ না ক্ষোপ না কোন হিংস্র আচরণ কোন কিছুই পরিলক্ষিত হয় না তাঁর মাঝে। যা হয় তা কেবল মুগ্ধই করে আহিকে। চোখ বুজে অন্ধভাবে সন্তর্পণে এই হ্যাভেনের প্রেমে পড়া যায় ।

হ্যাভেনও জরিয়ে ধরলো আহিকে। কানের কাছে মুখ ঠেঁকিয়ে উত্তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো,

-‘ নারীতে নারীতে এতো তফাত কেনো সুন্দরী? কেউ ভাঙে তো কেউ গড়ে। এই ভাঙা গড়ার মধ্যেখানে আমাদের মতো অবলা কিছু পুরুষ জাতি যে গভীর সংকটে থাকে ‘।

মুখ তুলে হ্যাভেনের মাতাল চোখের দিকে তাকালো আহি। ব্যাঙ্গ করে বললো,

-‘ উমহ কি আমার অবলা পুরুষ আসছে রে ‘।

মৃদু হাসলো হ্যাভেন। সেই হাসিতে আহির ভিতরটায় উথাল-পাতাল শুরু হয়ে গেলো। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

-‘ আপনার এই রূপ এই হাসি দীর্ঘস্থায়ী কেনো হয় না হ্যাভেন? আপনি কি জানেন আপনার এই মাতাল রূপে সেই শুরুতেই আঁটকে গেছি আমি ‘।

হ্যাভেন তাঁর সে চাহনী সে মোহময় বাক্যকে উপেক্ষা করে পাঁজা কোল করে নিয়ে বিছানায় ধপাস করে ফেলে দিলো। কোমড়ে বেশ লাগলো বলে ‘আহ ‘ করে ওঠলো আহি। সেই আর্তনাদ শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসলো হ্যাভেন। আহি ক্ষেপে গিয়ে তাঁর বুকে কিল শুরু করে দিতেই সে হাত আঁটকে পাশে শুয়ে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

-‘ ঘুমাও সুন্দরী ‘।

আহি পরম শান্তিতে বুকে মুখ গুজে বললো,

-‘ ভালোবাসেন আমায় ‘?

-‘ ভালোবাসলে ঠকতে হবে সুন্দরী দ্বিতীয় বার ঠকতে চাইনা ‘।

মনটা ভার করে হ্যাভেনকে জরিয়ে ধরেই শুয়ে রইলো আহি। বেশ অনেকটা সময় হ্যাভেন কি সব বির বির করে বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। সে ঘুমাতেই আহি বললো,

-‘ খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে হ্যাভেন। আপনার বুকের ভিতর প্রতিশোধের সমস্ত আগুন নিভে গেছে আজ। বুকের ভিতর তীব্র যন্ত্রণাটারও পরিসমাপ্তি ঘটেছে আজ। এখন শুধু আপনার শূন্যতা দূর করার পালা। ভালো যদি নাই বাসেন নেশার ঘোরে বুকে টেনে কেনো নেন? এই উত্তর কি দিতে পারবেন আপনি ‘? লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হ্যাভেনের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।

.
পাখির কিচিরমিচির শব্দে চারিদিক মুখরিত। আহির ঘুমন্ত ভারী উত্তপ্ত নিঃশ্বাসগুলো হ্যাভেনের বুকের মধ্যেখানে গিয়ে ঠেকছে। ঘড়িতে সময় তখন কতো জানা নেই। আবছা দৃষ্টিতে তাকালো হ্যাভেন। আহির শরীরের উষ্ণতা অনুভব করতেই বেশ ভালোভাবে চোখ দুটো মেললো। আহির ঘুমন্ত নিষ্পাপ শুভ্রময় চেহেরাটা দেখে গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো। নিজের গায়ে থেকে আহির হাত সড়িয়ে ওঠে বসলো। মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছে তাঁর শাওয়ার না নিলে এই ঝিমঝিম ভাবটা ছাড়বেনা। তাই বিছানা ছাড়তে উদ্যত হতেই আহি তাঁর হাত টেনে ধরলো৷ ঘুমকাতুরে গলায় বললো,

-‘আরেকটু পর ওঠুন না ‘।

এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

-‘ ন্যাকামো হচ্ছে ন্যাকামো? এই বলেছিলাম দূরে সড়ে ঘুমাতে? সারারাত বুকে মাথা রেখে কে ঘুমাতে বলেছিলো আমি ‘? ধমকে ওঠলো হ্যাভেন।

আহি হাই তুলতে তুলতে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। শাড়ির আঁচল বুকে টেনে মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো,

-‘ উমহ ন্যাকা নেশা করে মাতাল হয়ে এসে জরাজরি করেতো আপনিই ঘুমালেন এখন সব দোষ হয়ে গেলো আমার ‘? বলেই হ্যাভেনের দিকে এগিয়ে গিয়ে গলা জরিয়ে ধরে ঠোঁট জোড়া চৌকা করে হ্যাভেনের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই করে বললো,

-‘ একটুখানি চুমু খেয়ে সকালটা আমার চুমুময় করে দিন না ‘?

চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো হ্যাভেনের। আবার শুরু হয়ে গেলো এই মেয়ের পাগলামি ভাবতেই এক ঢোক গিলে গলা থেকে হাতদুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

-‘ চুপচাপ বিছানা ছাড়ো ‘।

-‘ উমহ না না চুমু খেয়ে সকালটা শুরু করতে চাই জান একটা চুমু দিন না ‘?

-‘ চুপপ। একদম চুপপ ফারদার এমন বেহায়ার মতো আচরণ করবে না আহি ভালোয় ভালোয় বলছি ‘। বলেই এক ঝটকায় ছাড়িয়ে বিছানা ছাড়লো হ্যাভেন।

আহিও চটপট বিছানা থেকে ওঠে হ্যাভেনের সম্মুখে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার চেপে ধরে বললো,

-‘ আপনার মতো বড় মাপের অভিনেতা আমি দুটো দেখিনি। সারাক্ষণ বউয়ের শরীরে উন্মাদের মতো মেতে থাকেন তখন সমস্যা হয়না আর বউ যদি ভালোবেসে স্বেচ্ছায় একটুখানি চুম্মা চায় তাই হয়ে যায় বেহায়া তাই না। চুমু দিন বলছি, দিন চুমু নয়তো আজ বিদ্রোহ চলবে। নারী পুরুষ সমান অধিকার শুধু নিজের ইচ্ছেতেই সব করবেন আমার ইচ্ছে তেও করতে হবে নিন চুমু খান ‘ বলেই গলা জরিয়ে আবারো ঠোঁট এগিয়ে দিলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here