ওহে প্রিয় পর্ব-৩৪

0
2165

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩৪
________________
গভীর রাত। চারদিকে বিদঘুটে অন্ধকারের পাশাপাশি নেমে এসেছে গাঢ় নীরবতা। আহির ক্রন্দনধ্বনিগুলো সেই নিরবতাকে ছাপিয়ে থমথমে এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। একজোড়া মানব মানবীর গভীর অনুভূতির স্বাক্ষী হচ্ছে আজ এই নিস্তব্ধ গভীর রাতটি। মেয়েটা কাঁদলো খুব কাঁদলো। হ্যাভেনের বুকে মুখ গুঁজে গায়ের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছিলো মেয়েটা। হ্যাভেনের অশ্রুবর্ষণের খবর মেয়েটা পায়নি। পুরুষ মানুষের অশ্রুপাত ঘটা যেমন সহজতর বিষয় নয়। তেমন সেই অশ্রুপাতের খবর পাওয়া বা কোন মানব স্বচক্ষে সেই অশ্রুবর্ষণ দেখাও সহজ বিষয় নয়।

তারা দু’জন একে অপরের হৃদস্পন্দন অনুভব করছিলো খুব কাছ থেকে। আহি শুনতে পাচ্ছিলো হ্যাভেনের বুকের হাহাকার গুলো। অনুভব করতে পারছিলো অনুতপ্ততার আগুনে পুড়তে থাকা তার হৃদপিণ্ডের ছটফটানিগুলোকে। আনন্দ হচ্ছিল, সুখ হচ্ছিল, মন বলছিলো ‘ইশ সময়টা যেদি এখানেই থেমে যেতো? কারো বুকের ভালোবাসার আর্তনাদ এতো সুখ দেয় কেনো? এ সুখের ঠিকানা এতোদিন অজানাই রয়ে গিয়েছিলো তার। আজ জানতে পেরে বড্ড লোভ হচ্ছে এই আর্তনাদ গুলো দীর্ঘসময় নিয়ে শুনার জন্য। ইচ্ছে করছে মানুষ টার বুকের মধ্যেখানে ঢুকে পড়তে আরো কাছে থেকে আরো গভীরভাবে তার ভালোবাসার আর্তনাদগুলো শুনতে ‘।

হ্যাভেনের হৃদস্পন্দনের গতি চুম্বকের ন্যায় টানতে থাকলো মেয়েটাকে। উন্মাদের মতো তার শার্টের বোতাম টানাটানি করে আবারো সর্বস্ব শক্তি খাঁটিয়ে জরিয়ে ধরে বুকে কান পেতে রইলো। আহির এহেন কান্ডে হকচকিয়ে গেলো হ্যাভেন। এতো জোর খাটানোতে টাল সামলাতে না পেরে খানিকটা পিছিয়েও গিয়েছে। কিন্তু কিছু সময় ব্যায় হতেই আচমকাই যেনো তার সর্বস্ব শক্তি কেউ হরণ করে নিলো। হরণ করে নিলো তার ক্রন্দনধ্বনিগুলোকেও । কান্না থেমে গেছে তবে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দগুলো ঠিকই হ্যাভেনের কর্ণকুহরে পৌঁছাচ্ছে। দু’হাতে আকড়ে ধরে রাখা শার্ট ছেড়ে বুকে গুঁজে থাকা মুখ ওঠিয়ে নিলো আহি। হ্যাভেন তখনো দুহাতে বুকে জরিয়ে রেখেছে তাকে। অপেক্ষায় আছে সে আহির উত্তরের অপেক্ষা। আর একটি বার সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষা। নিজের করা ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু তার সব অপেক্ষা কে তুচ্ছ করে নিজেকে তার বাহুডোর থেকে ছাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠলো আহি। চমকে গেলো হ্যাভেন। অশান্ত আহিকে শান্ত করার জন্য তার দু’গাল নিজের দু’হাতের আঁজলে আবদ্ধ করে নিয়ে বললো,

-‘ শান্ত হও আহি তোমার সব যন্ত্রণা কে ভালোবাসায় পরিণত করতে চাই আমি একটি সুযোগ দাও ‘।

হ্যাভেনের তপ্ত শ্বাস মুখে পড়তেই চোখজোরা বন্ধ করে রুদ্ধশ্বাস ছাড়লো আহি। হ্যাভেন কি করবে বুঝে ওঠতে পারলোনা। শুধু এটুকু বুঝলো দূরে সরে নয় কাছে থেকে পাশে থেকে মেয়েটাকে তার অনুভূতি বোঝাবে। ছোট্ট এক শ্বাস ছেড়ে আহির বিক্ষিপ্ত চেহেরাটায় নজর বুলালো। অতিরিক্ত কান্নার ফলে পুরো মুখশ্রী লালচে বর্ণ ধারণ করেছে মেয়েটার। ঠোঁট জোরাও টকটক করছে। এক ঢোক গিলে প্রচন্ড দ্বিধান্বিত হয়েই দু’হাতের বুড়ো আঙুলে অশ্রুকণাগুলো মুছে দিয়ে আরো কাছে চলে গেলো আহির। নিস্তব্ধতায় একে-অপরকে শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দে চারিদিক কেমন অদ্ভুত মুখরিত হয়ে ওঠলো। দুটো মানুষ দু’টো বছর একসঙ্গে কাটিয়েছে। একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে অসংখ্যবার। তবুও আজ কতো দূরত্ব। এ’টুকুনি কাছে আসাতে আজ কতোই না দ্বিধা। থাকবে নাই বা কেনো? তাদের যে মনের মিলন ঘটেনি। অসংখ্যবার দেহের মিলন ঘটাতে পারলেও একটি বারও পারেনি মনের মিলন ঘটাতে৷ এইজন্যই বোধ হয় বলা হয় দেহের মিলনে কখনোই একটি সম্পর্কের বন্ধন মজবুত হয় না। একটি সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করতে হলে অবশ্যই মনের সঙ্গে মনের মিলন ঘটাতে হবে।

অতিরিক্ত কান্নার ফলে নিঃশ্বাসে ফুসফাস শব্দ হচ্ছে আহির৷ কি জানি এতো কষ্টের মাঝেও কি ভেবে একটুখানি হেসে ফেললো হ্যাভেন। কিন্তু তা আহির দৃষ্টিগোচর হলো না। হবে কি করে সে যে দৃষ্টি নত করে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে চলেছে। হস্ত দ্বারা অশ্রুকণা গুলোকে শুষ্ক করায় ব্যর্থ হয়ে নিমিষেই কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো হ্যাভেন। হ্যাঁ সিদ্ধান্তটি তার কাছে আজ বড় কঠিন। দায়িত্ব নিয়ে যেমন দিনের পর দিন মেয়েটাকে কাঁদিয়ে চলেছে তেমন কান্না থামানোরও দায়িত্বটাও নেওয়া উচিত। আর কিছু ভাবতে পারলো না আর না পারলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে। কপালে, চোখের পাতায়,গালে, চিবুকে ওষ্ঠ দ্বারা স্পর্শ দিতে থাকলো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এতোটাই মোহবিষ্ট হয়ে ওঠলো যে উন্মাদের মতো শুষে নিতে থাকলো তার সকল অশ্রুকণাগুলোকে। চোয়াল ছেড়ে ওষ্ঠ ছোঁয়ায় উদ্যত হতেই নির্লিপ্তে দৃষ্টি মেললো আহি। উদবিঘ্ন হ্যাভেন তার সে দৃষ্টির পরোয়া না করেই ওষ্ঠ মিলনের প্রচেষ্টা করে। কিন্তু পারেনা আহির নরম হাতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে থমকে যায়। তার তৃষ্ণার্ত ওষ্ঠ জোরায় হাত চেপে ধরে ঘনঘন শ্বাস ছেড়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে ওঠে,

-‘ আপনি বড্ড স্বার্থপর হ্যাভেন ‘।

-‘ ভালোবাসার কাছে প্রত্যেকটা মানুষই স্বার্থপর সুন্দরী। একটুখানি স্বার্থপর হয়ে যদি তোমায় সারাজীবনের জন্য পাশে পাই তো সেটুকু স্বার্থপর হতে বিন্দু পরিমাণ আফসোসও থাকবেনা আমার’।

-‘ একটুখানি ‘?

-‘ আমি অনেক বেশিই স্বার্থপর অনেক বেশিই লোভী আমি। তোমার বক্ষঃস্পন্দনে আমার নামটি শোনার বড্ড লোভ জন্মেছে আহি। আমি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই। এই পাওয়া সেই পাওয়া নয়। যে পাওয়া এতোগুলোদিন পেয়ে এসেছি সে পাওয়া নয়৷ আমি তোমায় পেতে চাই শুধু তোমায়। আমি দৈহিক শান্তি নয় মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি চাই তোমার প্রতিটা রাত কাটুক আমার বুকের মাঝে লেপটে থেকে। ভোরের আলোয় সর্বপ্রথম তোমার মুখদর্শন করতে চাই আমি। যে সংসার দু’টো বছর দায়িত্ব নিয়ে বাধ্য হয়ে সাজিয়েছো তুমি সেই ঘর সেই সংসারটা ভালোবাসায় ভরে উঠুক। তোমার ঘর, তোমার সংসার তোমার আমিকে আপন করে নাও প্রিয় ‘।

তাচ্ছিল্য হাসলো আহি। তারপর আচমকাই হ্যাভেনের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,

-‘ চাই চাই চাই। শুরু থেকেই শুধু চাই। কখনো শরীর চাই তো কখনো ভালোবাসা চাই। এতো স্বার্থপর কেনো আপনি? একটুও কি নিঃস্বার্থভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করেনা? নিজেরটা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেন না আপনি। খুব স্বার্থপর, খুব স্বার্থপর আপনি। শুরু থেকে শেষ অবদি আপনি শুধু নিজের কথাই ভাবলেন, নিজের অনুভূতি কেই গুরুত্ব দিলেন, নিজের সিদ্ধান্তকেই মূল্যায়ন করলেন ‘।

-‘ না আহি শুরুটা একান্তই আমার হলেও শেষটায় আমরা হবো শেষটা হবে আমাদের দুজনার ‘।

হুহু করে কেঁদে ওঠলো আহি কলার ছেড়ে আবারো বুকে মুখ গুঁজে শার্ট খামচে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে আধভেজা ভাঙা কন্ঠে বলে ওঠলো,

-‘ আমি দোষী আমি মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। আমি দোষী আমার মাঝে আপনি ভালোবাসা খুঁজে পাননি বলে। কিন্তু হ্যাভেন আপনিও তো আমায় ভালোবেসে বিয়ে করেননি। নিজের স্বার্থে বিয়ে করেছিলেন আপনি আমায়। জানেন, বিয়ে নিয়ে একটা মেয়ের কতো স্বপ্ন কতো আবেগ জরিয়ে থাকে ‘?

-‘ হুম জানি বলেছো তুমি সুদর্শন পুরুষ, স্বপ্নপুরুষ চেয়েছিলে কিন্তু জুটেছে আমার মতোন কুদর্শন, কুপুরুষ ‘। বলেই ভারী নিঃশ্বাস ছাড়লো হ্যাভেন।

আহি আবারো ক্ষেপে গিয়ে কলার চেপে ধরলো। বললো,

-‘ হ্যাঁ আপনি কুদর্শন হ্যাঁ আপনি কুপুরুষ। পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ একটা মানুষ আপনি। ঠকিয়েছেন আপনি আমায় খুব করে ঠকিয়েছেন। আমার জীবনের হিরো হয়ে নয় ভিলেন হয়ে এসেছেন আপনি। কেনো ঠকালেন আমায় কেনো ঠকালেন বলুন ‘?

-‘ ঠকানোর প্রশ্ন আসে কোথায় থেকে যা কিছু হয়েছে কোনটাই তোমার অগোচরে হয়নি ‘।

-‘ হয়েছে। আমার অগোচরে অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে প্রণয় পরিণয় ঘটিয়েছেন আপনি ‘। উচ্চকন্ঠেই কথাটি বললো আহি দু’চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রু ঝড়েই যাচ্ছে তার।

-‘ তুমি তখন আমার জীবনে ছিলেনা। আমার জীবনের ভুল ছিলো ওটা সে ভুলের চরম মূল্যও দিতে হয়েছে আমাকে ‘।

-‘ শুধু আপনাকে? ভুল করেছেন আপনি শাস্তি পেয়েছি আমি সব দিক দিয়ে মূল্য দিতে হয়েছে আমাকে ‘।

-‘ সরি ‘।

-‘ এই সরি’টা কি সব ঠিক করে দিতে পারবে হ্যাভেন? এই সরি’টা পারবে আমার ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া হৃদয়টাকে সাড়িয়ে তুলতে? আপনার এই সরি’কে বলবেন আমার সেদিনের কষ্টটাকে দূর করে দিতে যেদিন আমি শুনেছিলাম রূপসা নামের ঐ মেয়েটি আমার স্বামী দ্বারা ইউজড। যেদিন আমি শুনেছিলাম আমি আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী নই আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। আপনার সরি পারবে আমার ঐ দিনের যন্ত্রণাগুলো নিঃশ্বেষ করে দিতে। ভুলিয়ে দিতে আপনার দ্বারা সকল আঘাতকে? আপনার সরি’কে বলুন না আমার হৃদপিণ্ডের আর্তনাদ গুলোকে থামিয়ে দিতে। আপনার এই সরি’কি পারবে আমার আঘাতপ্রাপ্ত হৃদপিণ্ডের আঘাত মোচন করতে? আমি তো আজো পারি নি সেই আঘাত ভুলতে। আমি আপনাকে ভালোবাসিনি আমি দোষী কিন্তু আমি তো চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আপনি আমার অন্যায় দেখলেন কিন্তু আমার প্রতি হওয়া অন্যায় কেনো দেখলেন না ‘?

বুকের ভিতরটা ছটফটিয়ে ওঠলো হ্যাভেনের। আহির বলা প্রতিটি কথাই তার হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধছে। কষ্ট হচ্ছে, যন্ত্রণা হচ্ছে ইচ্ছে করছে নিজের সমস্ত অতিত নিঃশ্বেষ করে দিতে। ইচ্ছে করছে আহির সমস্ত তিক্ত স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে। ইচ্ছে করছে রূপসা নামক অভিশপ্ত সেই নারীকে নিজ হাতে খুন করতে। বুক কাঁপছে, কাঁপছে হাত,পা। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আহির ক্রন্দনধ্বনি মন,মস্তিষ্ক পুরোটাই চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে। কি করবে সে কি করবে? পাগল পাগল লাগছে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। জীবন এতো জটিল কেনো? বাস্তবতা এতো কঠিন কেনো?

ফুঁপানি কমে এলো আহির হ্যাভেনের বুকে লেপটে রয়েছে সে। সেভাবে থেকেই বললো,

-‘ আমি তিন কবুল পড়েছিলাম হ্যাভেন। আম্মু বলে তিন কবুলের শক্তি নাকি অনেক প্রখর হয়। তাইতো অচেনা অজানা দুটো মানুষ এক দিনের ব্যবধানেই হয়ে ওঠে একে অপরের আপনজন। এই তিন কবুলের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের মা,চাচিরা সারাটাজীবন তাদের স্বামী, সংসারকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা দিয়ে যায়। তাহলে আমি কেনো পারবোনা? আমিও তিন কবুল বলেছি। স্বামী হিসেবে আপনি সবটুকু অধিকারই ফলাচ্ছেন। তাহলে আমি কেনো আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো? মনে মনে নিজেকে তৈরি করে নেই। স্বামী হিসেবে মেনে নিয়ে সবটা মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি। যা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হতে বাধ্য। কিন্তু যখনই আমি ওঠে দাঁড়াতে যাই তখনি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি সহ্য করতে পারিনি। পারিনি মেনে নিতে আমার আগে আপনার জীবনে অন্য নারীর বাস ছিলো। ঠিক যেভাবে প্রতিটা রাত আমার সঙ্গে মিশে থাকেন সেভাবেই অন্য একটি নারীর সঙ্গে মিশে ছিলেন দীর্ঘ একটা সময় জুরে। আমি আপনার স্ত্রী আর সে ছিলো আপনার ভালোবাসা। আমায় করা আপনার প্রতিটি স্পর্শে ভালোবাসা থাকতো না অথচ তাকে আপনি একসময় অজস্র ভালোবাসাময় স্পর্শ দিতেন। আমি মেনে নিতে পারিনি। আজো পারিনা কখনো পারবো না। আমি কখনো অন্য পুরুষের সান্নিধ্যে যাইনি। ভালো বেসে সম্পর্কেও জরাইনি। আমার স্বামীর থেকে আমার প্রত্যাশা কতোখানি বেশি ছিলো ভাবতে পারছেন? আমার সবটা শেষ করে দিয়েছেন আপনারা দু’জন মিলে। নিজের জীবনে আবদ্ধ যখন করলেনই প্রথম কেনো নয়, দ্বিতীয় নারী কেনো হলাম হ্যাভেন উত্তর দিন বলুন ‘।

স্তব্ধ হয়ে গেলো হ্যাভেন। রক্ত লাল দু’চোখ বেয়ে রক্ত ঝড়ার অপেক্ষা মাত্র। বুকের ভিতর রক্তক্ষরণ যন্ত্রণা হচ্ছে তার। তার যন্ত্রণা থেকেও যে অধিক যন্ত্রণায় ভুগছে আহি। এই যন্ত্রণা কি করে লাঘব করবে সে।

উত্তর না পেয়ে আহি বললো,

-‘ দিতে হবে না উত্তর। চাই না কোন উত্তর আমার। সবাই স্বার্থপর। স্বার্থপর এই পৃথিবীতে নিঃস্বার্থতাই অপ্রত্যাশিত ‘।

-‘ আমাদের শেষটায় বিচ্ছেদ থাকতে পারে না আহি’।

-‘ আপনিই তো বলেছেন আপনি অভিনয় চান না। আপনি চান আমাদের দু’জনের মধ্যে যা কিছু ঘটুক আমরা একে অপরের কাছে পরিষ্কার থাকবো সব সময়’।

-‘হুম চেয়েছি’।

-‘ তাহলে আসুক দূরত্ব হয়ে যাই আমি একটুখানি স্বার্থপর। ভালোবাসা বিহীন আর না জড়াই এই বৈবাহিক সম্পর্কে ‘।

-‘ এতো বড় শাস্তি দিও না আহি। আমার প্রাণ নিয়ে নাও তুমি জান দিয়ে দেবো তবুও ডিভোর্স না ‘।

-‘ ভালোবাসার অভিনয়ের চেয়ে ভয়ংকর শাস্তি আর কি হতে পারে? আজ যদি আবেগ প্রবণ হয়ে আপনার দূর্বলতায় দূর্বল হয়ে আপনার কাছে ফিরে যাই আবারো শুরু করি সংসার ধর্ম আপনি খনিকের জন্য সুখী হবেন৷ আমার অভিনয় যতো দিন ধরতে না পারবেন তোতোদিনই সুখী থাকবেন আপনি ‘।

চমকে ওঠলো হ্যাভেন অস্থির হয়ে আহির দু’গালে দু’হাত রেখে অসহায় দৃঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দৃঢ় কন্ঠে বললো,

-‘ অভিনয়? ভালোবাসা একটুও নেই ‘।

হাসলো আহি। নির্লিপ্ত দৃষ্টি মেলে নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,

-‘ ভালোবাসায় কখনো সংশয় রাখতে নেই হ্যাভেন। ভালোবাসা কখনো প্রয়োজন থেকেও আসেনা। আপনার ভালোবাসায় সংশয় প্রয়োজন দু’টোই পেয়েছি আমি। আমার ভালোবাসায় পেয়েছি সংশয়। আপনার মতোন আমিও বড্ড লোভী বরং আপনার চেয়ে অধিক লোভী আমি। ভালোবাসার লোভ যে বড় ভয়ংকর লোভ। ভালোবাসার জন্য একটুখানি নয় বড় বেশিই স্বার্থপর হয়ে যায় মানুষ। আত্মত্যাগ তো অনেক হলো এবার না হয় অনেকটা স্বার্থপর অনেক বেশি পাষণ্ড হয়ে দেখাই। কথা দিচ্ছি যেদিন আমার মন থেকে সব সংশয় দূর হয়ে যাবে। যেদিন অন্তর থেকে সুক্ষ্ম ভাবে অনুভব করবো আপনাকে। যেদিন আপনার চোখে কোন সংশয় থাকবেনা আপনার হৃদয়ে আমি নামক মানুষ টার অস্তিত্ব থাকবে খুবই নিখুঁত সেদিন ফিরে যাবো আমি আপনার কাছে ‘।

-‘ আহি ‘। কাঁপা কন্ঠে ডেকে ওঠলো হ্যাভেন।

-‘ উহুম আমি সে আহি নয় যে আহিকে আপনি চিনতেন। আমি অচেনা আহি আমি স্বার্থপর আহি। আমি চাই শুধু চাই আমি ভালোবাসা চাই আমি ভালোবাসতে চাই। আর এর পিছনে সম্পূর্ণ অবদান চাই শুধুমাত্র আপনার। আমার থেকে দূরে গিয়ে আমায় ভালোবাসতে হবে আমার থেকে দূরে থেকে আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে। আমাকে বিশ্বাস করে আমার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আমার একমাত্র ভরসার হাত হতে হবে আপনারই হাত। ভালোবাসতে হবে নিখুঁত ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় ডুবে গিয়ে আমি ভুলে যাবো আপনার সমস্ত অতিত। যে ভালোবাসায় ডুবে যাবে আমার সমস্ত তিক্ত অনুভূতি গুলো’।

থামলো আহি এক ঢোক গিলে হ্যাভেনের কোলের ওপর ওঠে বসলো। গলা উঁচিয়ে এক হাত কাঁধে চেপে অন্য হাত ঘাড়ে স্পর্শ করে কানের কাছে মুখ ঠেকালো। হ্যাভেন স্তব্ধ। আহি তার স্তব্ধতাকে তোয়াক্কা না করে ফিসফিস করে বললো,

-‘ প্রতিশোধ জিনিসটা বড় ভয়ংকর। তার চেয়েও ভয়ংকর নারীর প্রতিশোধ। আপনার শুরুটায় অন্য নারীর বিচরণ ছিলো সেই ভয়াবহ অপরাধের শাস্তি ভয়াবহ হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয় ডিয়ার হাজব্যান্ড ‘?

চলবে…
ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here