ওহে প্রিয় পর্ব- ৪২

0
2013

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪২
________________
আধঘন্টা আগে যে বাড়িটা খুশির আমেজে মেতে ছিলো। চলছিলো হৈচৈ, গান বাজনা। সকলের মন ভরে ছিলো নানারকম উৎফুল্লতায়, আধঘন্টা পর মূহর্তেই সে বাড়িতে নেমে এসেছে দুঃখকর পরিস্থিতির সাথে শুনশান নিরবতা। শিফার বড় বোন রেশমি রিজভীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েই আহির কাছে গিয়ে তার আঘাতটা পরখ করে কিছু মেডিসিন দিয়ে দেয়। কপালের এক সাইটে অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। ব্যাথায় পুরো চোখ,মুখও রক্তিম হয়ে ফুলে ওঠেছে মেয়েটার। কিছু সদস্য আহি এবং কিছু সদস্য রিজভীর কাছে রয়েছে। হিয়া আলাদা একটি রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে সকলকেই জ্ঞাত করা হয়েছে রিজভী এবং হিয়ার মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। হ্যাভেন গলা ফাটিয়ে ঘোষণা দিয়েছে রিদিকে শ্বশুর বাড়ি পৌঁছানো মাত্র ঢাকা ব্যাক করবে হিয়া। নানা বাড়ি,মামা বাড়ি আসা চিরকালের জন্য বন্ধ। এই শুনে নানুমনি কান্নাকাটি করে অস্থির,ওদিকে রিজভীর মা হ্যাভেনের মামি ছেলের করুণ দশা দেখে মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে। এতোসব ঝামেলার মাঝে রিদির মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। আগামীকাল তার বিয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে সে। অবিবাহিত অবস্থায় এই রাতটাই এ বাড়িতে শেষ রাত তার। অথচ রাতটা এমন দুর্বিষহ কাটবে ধারণার বাইরে ছিলো। মনটা বিষন্ন করে ভাই আর মায়ের পাশে বসে রইলো সে। তার মা হ্যাভেনের ওপর প্রচন্ড ক্ষোপ প্রকাশ করতে শুরু করলো৷ কিন্তু রিজভী টুঁশব্দও করলো না। মনে মনে শুধু এটুকু প্রতিজ্ঞা করলো যাই হয়ে যাক না কেনো। পানি যখন ঘোলা হয়েছেই ঘোলা পানি সে পান করেই ছাড়বে।
.
হুমায়ুন তালুকদার হ্যাভেনের ওপর প্রচন্ড ক্রোধ প্রকাশ করলো। সেই সাথে নিজ মেয়ের প্রতিও চরম অসন্তুষ্ট হয়েছে। এমন নয় যে তিনি ছেলেমেয়েদের কঠোর নিয়মে বেঁধে রেখেছেন। ছেলে তো কম কুকীর্তি করেনি। ভাতিজারাও ধোয়া তুলিস পাতা নয়। তবে বেশী ভোগান্তি হয়েছে হ্যাভেনকে নিয়েই।তাহলে মেয়ের যদি কারো সাথে সম্পর্ক থাকে তা যদি হয় রিজভীর মতোন ইনোসেন্ট একটা ছেলের সঙ্গে তাহলে এ সম্পর্কের কথা কেনো জানানো হয়নি তাকে? ইতিমধ্যেই সে তার বন্ধুর ছেলের সঙ্গে হিয়ার বিয়ের কথাবার্তা বলে রেখেছিলো। বিষয়টি হ্যাভেন আর রুবিনা ছাড়া কেউ জানেনা। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো হ্যারির জন্য সুপাত্রী নির্বাচন করে তার জীবনটা গুছিয়ে দিয়েই বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করবে৷ হ্যারির বয়সও কম হলো না। ভাইয়ের ছেলে হলেও নিজ সন্তানদের থেকে কম ভালোবাসে না হুমায়ুন তালুকদার হ্যারি,হিরাকে। বেশ অনেকটা সময় নিরবতা পালন করলো হুমায়ুন তালুকদার। হ্যাভেন তার সামনেই সোফায় বিক্ষিপ্ত চেহেরায় বসে আছে। ড্রয়িং রুমে উপস্থিত রয়েছে রিজভীর বাবা,রুবিনা তালুকদার, হ্যাভেনের খালামুনি রত্না এবং তার হাজব্যান্ড। সকলের উদ্দেশ্যেই প্রচন্ড গম্ভীর ভঙ্গিতে হুমায়ুন বললেন,

-‘মেয়ে আমার সিদ্ধান্তও আমার’।

পুরো ঘর জুরে চললো পিনপতন নিরবতা। হ্যাভেন ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই হুমায়ুন তালুকদার দৃষ্টিতে কাঠিন্যতা মিশিয়ে বললো,

-‘এ বিষয়ে কেউ আর টুঁশব্দটিও করবেনা৷ আর না আমার অনুমতি ব্যাতিত কেউ ঢাকা ব্যাক করবে। সময় হলে আমিই এ বিষয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলবো’।

সকলেই স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। শুধু হ্যাভেনকেই ভীষণ বিচলিত দেখা যাচ্ছিলো। হুমায়ুন তালুকদার ছেলেকে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলেন। বোঝালেন শান্ত থাকতে। কিন্তু হ্যাভেন তাকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-‘আমার মনে হয় একি বাড়িতে দুজন মানুষের থাকা ঠিক হবে না। আমি চাই হিয়া ঢাকা ব্যাক করুক’।

-‘আর আমি চাই যে বাড়িতে সারাজীবন থাকতে হবে সে বাড়িতে এখন থেকেই মানিয়ে গুছিয়ে, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলুক ‘।

হুমায়ুন তালুকদারের কথা শুনে সকলেই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো। হ্যাভেন বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,

-‘এটা আমি মানি না’

হুমায়ুন তালুকদারও দাঁড়িয়ে পড়লো। ছেলের দিকে দৃঢ় চোখে চেয়ে বললো,

-‘মেয়ে আমার সিদ্ধান্তও আমার ‘।
.
হুমায়ুন তালুকদারের সিদ্ধান্তে সকলেই সন্তুষ্ট কিন্তু হ্যাভেনের আচরণে প্রচন্ড চিন্তিতও হয়ে আছে। রাত প্রায় অনেক। এতো ঝামেলা এতো ভয়, উত্তেজনা কাটিয়ে সকলের খাবার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু হ্যাভেন খাবেনা জানিয়ে হনহন করে ছাদে চলে যায়। হিয়াও জেদ ধরে বসে আছে খাবেনা৷ বাবার সিদ্ধান্তে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও ভাই তার গায়ে হাত তোলায় প্রচন্ড ক্লেশ অনুভব করছে সে৷ সেই সাথে অভিমানের ভারে ক্ষণে ক্ষণে বুকটা হুহু করে ওঠছে।

সকলেই অনেকটা নিশ্চিন্ত। হ্যাভেনকে নিয়ে মনে কিছুটা ভয় কাজ করলেও তারা এই ভেবেই খুশি যে সামনে রিজভী আর হিয়ারও বিয়ে হবে। শশী সেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে আহিকে পুরো ঘটনা জানাতে এবং খেতে ডাকতে রিদির রুমে যায়। চোখ বুজে শুয়ে ছিলো আহি। শশী তাকে ডাকতেই ওঠে বসলো। শশীও তার পাশে বসে মহা উৎসাহ নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরলো। ভ্রু জোরা কুঁচকে গেলো আহির। প্রশ্ন করলো,

-‘ হ্যাভেনের সমস্যা কি রিজভী ভাইকে মানতে ‘?

শশী নিচের ওষ্ঠ উল্টে দুকাধ উঁচু করে জানেনা বোঝালো তারপর বললো,

-‘ চলো খাবে চলো সবাই খেতে বসেছে ‘।

-‘ আমার খিদে নেই যাও তুমি গিয়ে খাও ‘।

-‘ বাব্বাহ জামাই, বউয়ের কতো মিল সে না খেয়ে রয়েছে বলে তুমিও না খেয়ে থাকবে নিশ্চয়ই ‘?

ভেঙচি কাটলো আহি। বললো,

-‘ আহারে অমন আহ্লাদে গদগদ সম্পর্ক বুঝি আমাদের ‘?

শশী আহির বাহুতে হালকা চাপড় দিয়ে বললো,

-‘ তা নয়তো কি ব্যাথা পেয়েছো তুমি অথচ বুক পুড়ে তার। কেমন অস্থির হয়ে গেছিলো তা যদি দেখতে’।

-‘ রাখোতো যত্তসব ঢং এক গালে কিল মেরে আরেক গালে খিলানো পাবলিক তোমার ভাই বুঝলা ‘?

-‘ এটা আবার কেমন পাবলিক ভাবি ‘?

-‘ এই যে আঘাতটা তো সেই দিলো আবার আঘাত সাড়াতেও অস্থির হয়ে পড়েছে। এটাকেই বলে এক গালে কিলানো আরেক গালে খিলানো। কি…বুঝোনি? গরু মেরে জুতা দান বুঝো ‘?

আহাম্মকের মতো চেয়ে মাথা নাড়ালো শশী। মানে সে একগালে কিলানো আরেক গালে খিলানো না বুঝলেও গরু মেরে জুতা দান বুঝে। আহি মৃদু হেসে বললো,

-‘ দ্যাটস গুড এটার মতোনই ‘।

চোখ,মুখে হাসির ঝলক দেখা গেলো শশীর। তারপর আহির হাত ধরে বললো,

-‘ এবার চলো আমরা খেয়ে নেই ‘।

আহির খিদে নেই তবুও কি যেনো ভেবে চলে গেলো শশীর সঙ্গে।
_________________
সবাই খেতে বসেছে। কেউ কেউ আবার খাওয়া কমপ্লিট করে ওঠেও গেছে। আহি খেয়াল করলো রিদির মা মুখটা বেশ ভার করে সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো আহি। সত্যি হ্যাভেন বেশী বেশী করে ফেলেছে। কোন মা’ই ছেলের এমন মার খাওয়া সহ্য করতে পারবেনা। আত্মীয় বলে হয়তো প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। তবে মনে মনে অনেকেই হ্যাভেনের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে। “সত্যি এই মাথা খারাপ লোকটা আর শোধরালো না ” আফসোসের সুরেই কথা টা ভাবলো আহি৷ তারপর এগিয়ে গিয়ে রুবিনা তালুকদার কে ইশারা করলো। রুবিনা হিয়ার জন্য প্লেটে খাবার বাড়ছিলো। জীবনে মেয়েটাকে উচ্চস্বরে ধমকও দেয়নি কেউ অথচ আজ হ্যাভেন গায়ে হাত তুলেছে। কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে ওঠেছে৷ খেতে চাইবেনা তবুও জোর করে খাওয়াতে হবে। এসবই ভাবছিলো আর খাবার বাড়ছিলো। কিন্তু আহির ইশারায় ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে প্লেট রেখেই এগিয়ে গেলো আহির দিকে বললো,

-‘ কি হয়েছে বসে পড়ো শশীর পাশে ‘।

-‘ আমি আপনার ছেলের সঙ্গে খাবো। শুনলাম উনি ছাদে আছে ওখানে তো বসার জায়গা আলো সবই রয়েছে ভাবছি ওখানেই বসে খাবো আজ ‘।

বিস্ময়ান্বিত হয়ে গেলো রুবিনা। একের পর এক ঝটকা সামলাতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে আজ তাকে। আহি তার মনোভাব বুঝতে পেরে বললো,

-‘চিন্তা করবেন না সবটা সামলে নেবো আর হিয়ার সম্পর্কটাকে ওনি যে বিরোধিতা করছে সেটাও কাটিও নেবো ইনশাআল্লাহ ‘।

চোখ দু’টো ছলছল করে ওঠলো রুবিনার। আহির দুহাত আঁকড়ে ধরে কাঁপা কন্ঠে বললো,

-‘বাচালে মা আমার দৃঢ় বিশ্বাস একমাত্র তুমিই পারবে ওর রাগ টা কমিয়ে সঠিকটা বোঝাতে ‘।
.
একহাতে খাবারের প্লেট নিয়ে ছাদে চলে গেলো আহি। তার পিছু জগ আর গ্লাস নিয়ে সহযোগিতা করলো শশী। ছাদে গিয়ে আশেপাশে চেয়ে হ্যাভেনকে পেলো ছাদের এক কোণায়। বর্ডার ঘেষে মোড়া পেতে স্থির হয়ে বসে আছে মানুষ’টা৷ পড়নে রয়েছে সাদা রঙের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের সঙ্গে কালো রঙের টি-শার্ট। উষ্কখুষ্ক চুলে মুখটা পুরো বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে৷ শুধু মুখই নয় মনও যে প্রচন্ড বিক্ষিপ্ত রয়েছে তা তার নিঃশ্বাসের সঞ্চালনেই বুঝতে পারছে। ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে শশীকে ইশারা করতেই শশী জগ আর গ্লাস নিচে রেখে চলে গেলো। হ্যাভেন তখনো স্থির। ছাদে যে সে বাদে আরো কেউ উপস্থিত হয়েছে সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। আহি কোন বাক্য ব্যয় না করেই আশেপাশে চেয়ে একটু দূরে একটি কাঠের মোড়া দেখতে পেলো। স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে সে মোড়াটা বাম হাতে তুলে নিয়ে একদম হ্যাভেনের মুখোমুখি হয়ে বসে পড়লো। এবার হ্যাভেন একটু নড়েচড়ে ওঠলো। সেই সাথে ভ্রু কুঁচকে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আহি বিনা ভণিতা প্রকাশ করে বললো,

-‘ আপনার খাবার। নিজে খাবেন নাকি খাওয়িয়ে দেবো’?

যদিও তখনকার পরিস্থিতি মনে করে হ্যাভেনের অস্বাভাবিক রাগের কথা স্মরণ করে খানিকটা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো মন। তবুও মনে মনে যুদ্ধ জয় করার ইচ্ছে পোষণ করে ভয়টাকেও সর্বপ্রথম জয় করে নিলো। এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো যদি হ্যাভেন বিন্দু পরিমাণ রাগ দেখায় বা খাবার টা গ্রহণ না করে তাকে অপমান করে তাহলে বিনা বাঁধায় সমস্ত খাবারের সঙ্গে তার পাশে থাকা জগের সম্পূর্ণ পানি আজ অপ্রিয় থেকে প্রিয় স্বামীর মাথায় ঢেলে বিদায় নেবে শুধু ছাদ থেকে নয় তার পুরো জীবন থেকেই।

আহির করা প্রশ্নের উত্তর দিলোনা হ্যাভেন। বরং অদ্ভুত চাহনি নিক্ষেপ করলো তার দিকে। যে চাহনিতে ভড়কে গেলো আহি। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো হাজার গুণ। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হতে শুরু করলো। এক ঢোক গিলে হ্যাভেনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে জিগ্যেস করলো,

-‘আমি কিছু বলেছি’।

এবারেও উত্তর দিলো না হ্যাভেন তবে আহির দিকে একটু ঝুঁকে কপালের ফোলা অংশে আলতো আঙুল ছোঁয়ালো। কেঁপে ওঠলো আহি নড়ে ওঠলো তার ওষ্ঠদ্বয়। মুখ দিয়ে অল্পখানি ‘শশ’ আওয়াজ হলো। সে আওয়াজ হ্যাভেনের কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র বুকটা কেঁপে ওঠলো। কাতর চাহনিতে চেয়ে কন্ঠে কাতরতা মিশিয়ে বললো,

-‘আ’ম সরি মাথা ঠিক ছিলো না আমার ‘।

স্বস্তি পেলো আহি। ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে কোলের ওপর খাবারের প্লেট’টা রেখে পাশে ওঁকি দিয়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ভরে হাতটা ধুয়ে নিলো। হ্যাভেনও সোজা হয়ে বসলো। বললো,

-‘খাওয়িয়ে দেবে’?

আহি মনে মনে খানিকটা ভেঙচি কেটে বিরবির করে বললো ‘এ্যাহ কি ইনোসেন্ট প্রশ্ন যত্তসব ঢং’।

হ্যাভেন ভ্রু কুঁচকে মলিন কন্ঠে বললো,

-‘থাক আমি খাবো না তুমি নিচে চলে যাও’।

আহি এবার খাবারে তরকারি মাখাতে মাখাতে বললো,

-‘সত্যি যাবো? গেলে কিন্তু আর আসবো না এবং সোজা এ বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবো’।

চমকে তাকালো হ্যাভেন মোড়া সহ আহির দিকে আরো এগিয়ে গিয়ে দুকাধ চেপে আতংকিত কন্ঠে বললো,

-‘একদম না তোমার যা করতে ইচ্ছে হয় করো শুধু চলে যেওনা। আহি, আমি তোমায় বার বার বিনাদোষে আঘাত করে ফেলছি। বার বার অন্যের করা শাস্তি তোমায় দিয়ে ফেলছি আমি খুব সরি ‘ বলেই আহির এক গালে আলতো স্পর্শ করলো।

যদিও আজকের করা আঘাতে হ্যাভেনের ওপর তেমন রাগ হয়নি৷ রাগের সময় অমন ভয়ংকর পরিস্থিতি তে তার জায়গায় যে কেউ হলেই হয়তো এমন কিছুর সম্মুখীন হতো। কিন্তু তবুও হ্যাভেনকে উচিত কিছু বোঝানোর আরেকটা সুযোগ সে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছে না। সেই সাথে হিয়া এবং রিজভীর সম্পর্ক’টা যাতে মেনে নেয় সে জন্যও বোঝাতে এসেছে। নয়তো শুধু পরিবারে ঝামেলা সৃষ্টি হবে। যাইহোক না কেনো এ পরিবার’টাকে মন থেকে ভীষণ ভালোবাসে সে।

নিজ হাতে খাবার মেখে এক লোকমা হ্যাভেনের মুখের সামনে ধরলো আহি। পুরো মন,মস্তিষ্ক জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো হ্যাভেনের। বুকের ভিতরটায় ভালোলাগা, ভালোবাসার অন্য এক সুখময় অনুভূতি অনুভব করলো সে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময়। থমকানো চোখে,থমকানো হৃদয়ে খোলা আকাশের নিচে প্রিয়তমার এমন ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য কি সকলেরই হয়? হয়তো হয় তবে সকলের চেয়ে তার অনুভূতির প্রগাঢ়তা সাংঘাতিক। কাঙ্ক্ষিত সময় গুলো, কাঙ্ক্ষিত অনুভূতি গুলো,কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা যখন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই উপহার দেয় তখন বোধ প্রাপ্তির সুখে মরণকেও বরণ করে নেওয়া যায়।

হ্যাভেনের দৃষ্টি, হৃদস্পন্দনের গতিবিধি অনুভব করে আহি মৃদু কন্ঠে বললো,

-‘ খেয়ে নিন হ্যাভেন ‘।

সঙ্গে সঙ্গে আহির হাতের কব্জিতে আলতো ছুঁয়ে খাবারটা মুখে নিলো হ্যাভেন৷ মুখ বন্ধ করে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়েই খাবার চিবুতে লাগলো। আহি নিচের দিকে চেয়ে খাবার মেখে আবার মুখের সামনে ধরতেই হ্যাভেন শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শীতল কন্ঠে ‘সরি’ বলে আগের ন্যায় কব্জিতে ছুঁয়ে খাবারটা মুখে তুললো। আহি তখন তার দৃষ্টিতে স্থির দৃষ্টি মিলিয়ে বললো,

-‘এই সরিটা বার বার আমায় না বলে রিজভী ভাইকে গিয়ে বলে আসবেন কেমন’?

-‘আমার স্টকে সরি অনুভূতি টা খুবই সীমিত সুন্দরী। বাট ইউ নো হোয়াট? ইউ আর সো লাকি তাইতো এই সীমিত অনুভূতি’টা শুধু তোমায়ই উজার করে দিচ্ছি’।

চলবে….
এবার থাকবে কাছে আসার গল্প। সবাই ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। আর হ্যাঁ কেউ একজন বলেছে আমি গল্প টেনে বড় করছি তাকে বলি একটুও টানা হচ্ছে না৷ বরং ভাবা অনুযায়ী আগাচ্ছে এবং শেষ পর্যায়ে চলেও এসেছি। ইদানীং লেখার সময় পাইনা আবার আগ্রহও পাইনা৷ তাই টেনে বড় করার অবস্থায় আমি নেই। বরং শেষ হলে বাঁচি একটু বিরতির খুব প্রয়োজন আমার। তাই অযথা ব্লেম করবেন না কেউ। আর হ্যাঁ গল্পের সব পার্ট ইন্টারেস্টিংও হয় না কোন পার্ট একটু কম আনন্দদায়ক হতেই পারে বোরিংও লাগতে পারে তাই বলে এই নয় লেখিকা টেনে বড় করছে গল্প ওকে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here