#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-৩”
ভোরের স্নিগ্ধ আলো চোখে মুখে আছড়ে পড়তেই চোখ মেলে তাকালো মৃধা। জানালার দিকে তাকিয়ে অধরে একটা মিষ্টি হাসির রেখা টেনে শোনা থেকে উঠে বসল সে। ঘড়ির কাঁটায় এখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। মৃধার মা প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করে জানালার পর্দা সরিয়ে দেন। যার ফলে বাহিরের প্রথম উদিত আলো এসে সোজা মৃধার বিছানায় পড়ে। এই আলোতেই মৃধার ঘুম ভেঙে যায়। এই আলোর একটা স্পেশাল নামও দিয়েছে মৃধা। যেহেতু ভোরের প্রথম আলো এটা এবং এটা চোখে পড়ার সাথে সাথে মৃধার মন ভালো হয়ে যায় নিজেকে ফ্রেশ ফ্রেশ লাগে এজন্য এটার নাম দিয়েছে “প্রাতক কিরণে স্নিগ্ধ স্নান “। ভোরের আলো গায়ে মাখার পর মৃধা চলে গেল ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে বই নিয়ে বসে পরল। গত রাতে একটুও পড়া হয়নি। এখন পড়া কমপ্লিট করে রাখতে হবে নয়তো সারাদিনে আর সময় পাবে না। মৃধা পড়ায় মনোযোগ দিল আর তার মা গেল নাস্তা তৈরি করতে। নাস্তা বলতে একটা একটা রুটি আর দুটো আলু ভাজা। এই খেয়েই সারাদিন চলবে তাদের।
মৃধা পড়া শেষ করে উঠল নয়টা নাগাদ। ততক্ষণে মুগ্ধর ও ঘুম ভেঙে গেছে। মুগ্ধর জ্বর এখন নেই বললেই চলে। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে সে মৃধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-শুভ সকাল আপুনি
মৃধা ব্যাগে বই গোছাতে গোছাতে জবাব দিল,
-শুভ সকাল ভাই। তোর শরীর ঠিক আছে এখন?
-হ্যাঁ, আপুনি আমি একদম ঠিক আছি
-এরপর থেকে আর কখনো বৃষ্টিতে ভিজবি না ভাই। দেখেছিস কেমন জ্বর বাধিয়ে ফেলেছিলি।
-হুম আপুনি বুঝতে পারছি। এই ক’দিন তোকে আর মা কে নিশ্চয়ই অনেক জ্বালিয়েছি?
মৃধা কলেজ ব্যাগটা টেবিলে ঠেলে রেখে মুগ্ধর কাছে এসে বসে বলল,
-আরে ধুর পাগল ছেলে একটা, তুই আমাদের একটুও জ্বালাসনি। এখন যা তো ফ্রেশ হয়ে নে তাড়াতাড়ি। তারপর একসঙ্গে নাস্তা করব।
-আচ্ছা যাচ্ছি
মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে আসতেই তিনজনে মিলে নাস্তা করে নিল। তারপর মৃধা তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে মা – ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল কলেজের উদ্দেশ্যে। আজ আবার কলেজ শেষ করে চাকরি খুঁজতে বেরতে হবে তাকে।
—————————-
এদিকে এলার্মের শব্দে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো ঘুমন্ত আয়ানের। কানে বালিশ চাপা দিয়েও যখন এলার্মের আওয়াজ রোধ করা গেল না তখন হাতড়ে হাতড়ে টেবিল ঘড়িটা খুঁজে বের করে এলার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পরল।ততক্ষণাৎ ঘুমের ঘোরে কিছু একটা মনে পরতেই এক লাফে উঠে বসল সে। ঘড়ির কাঁটায় চোখ দিয়ে মৃদু আওয়াজে বলল,
-ওহ মাই গড নয়টা পনের বেজে গেছে। আজ তে অফিসে কর্মচারী নিয়োগ ইন্টারভিউ আছে। টাইমলি অফিসে না পৌঁছতে পারলে ভাইয়া খুব বকবে।
আয়ান তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে প্রপার গেট আপে নিচে নামল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখে আদ্র আর তার দাদু ডাইনিং টেবিলে বসে বসে তারজন্য ওয়েট করছে। আয়ান সেখানে উপস্থিত হতেই বুঝতে পারল তার দাদু এখানো তার ওপর রেগে আছে। নয়তো এতক্ষণে হাসিমুখে তাকে টেবিলে আমন্ত্রণ জানাত। আয়ান দাদুর অভিমান বুঝতে পেরে মুচকি হেসে দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-এই যে সুইটহার্ট। কী খবর হ্যাঁ। এখনো রেগে আছো বুঝি? আচ্ছা এই লাস্ট আর কখনো এমন হবে না। পাক্কা প্রমিজ দাদু। প্লিজ প্লিজ প্লিজ এভাবে আর রাগ করে থেকো না।
আয়ানের এমন মিনতি শুনে দাদু আর রাগ করে থাকতে পারল না। সে আয়ানের মাথায় এক হাত রেখে বলল,
– দাদুভাই আমার বয়স হয়েছে। বেশি স্ট্রেস নিতে পারি না। এখন তোমরা যদি আমাকে না বোঝো তাহলে কে বুঝবে বলো?
-বলেছি তো দাদুভাই এই শেষ সুযোগ আর এমন হবে না।
-আচ্ছা বেশ এবার খেতে বসো।
আয়ান আদ্রকে গুড মর্নিং বলে খেতে বসে গেল
খাওয়ার মাঝেই আদ্র বলল,
-আজ তো অফিসে ইন্টারভিউ আছে। শোন আয়ান খুব বুঝে শুনে দক্ষ কর্মী সাজেস্ট করবি
এবারের পর আর কর্মী নিয়োগ দিতে অনেক দেড়ি হবে। তাই খুঁজে খুঁজে দক্ষতা সম্পন্নদের বের করে নিতে হবে।
-হুম ভাইয়া আমি চেষ্টা করব।
খাওয়া শেষে দু -ভাই একসঙ্গে বেড়িয়ে পড়ল অফিসের উদ্দেশ্যে। আদ্র গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আয়ান ফোন স্ক্রল করছে। ঢাকার শহর প্রচন্ড জনবহুল শহর। তেমনই ভরপুর যানবাহনে। সকাল হোক বা রাত এখানকার রাস্তাঘাটে প্রায়ই যানজট লেগেই থাকে। তেমনই আজকের এই ব্যস্ততর দিনেও আদ্র আর আয়ান ফেঁসে গেল যানজটে। আদ্র বিরক্ত হয়ে বারবার ঘড়ির দিকে আর বাহিরে নজর দিচ্ছে। আর আয়ান ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে দেখছে।হঠাৎ একজন বৃদ্ধ এসে ওদের গাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছিল। আয়ান বুঝতে পারল লোকটি তার কাছে ভিক্ষা চাইছে । আয়ান গাড়ির গ্লাস নামিয়ে লোকটির দিকে তাকাল। তারপর সোজা গাড়ি থেকে নেমে পরল।
পথচারী পাড়াপাড় দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার সময় মৃধার চোখ যায় আয়ানের দিকে।সে তখন দেখতে পেল আয়ান রেগে রেগে একজন ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা বলছে। দুরে থাকায় আয়ানের কথা মৃধার কান পর্যন্ত আসছে না। মৃধা আয়ানের ধমকা ধমকির স্টাইল দেখে মনে মনে বলল,
– আসলেই এনাদের মতো বড় লোকরা ভীষণ খারাপ মনের হয়। মানুষকে হেয় করাই এদের কাজ। বুড়ো লোকটাকে কীভাবে কটু কথা বলছে। অসভ্য লোক একটা। সঠিক শিক্ষার প্রচুর অভাব আছে।
মৃধা রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় কলেজের পথে।
এদিকে আয়ান গাড়ি থেকে নেমে বৃদ্ধ লোকটিকে বলছিল,
– এই যে মুরব্বি। এই বয়সে এভাবে ভিক্ষে করছেন কেন? বয়স হয়েছে সে খেয়াল আছে? শরীর খারাপ করলে তখন কে দেখবে আপনাকে?
আয়ানের এমন আদুরে ধমকে বৃদ্ধ লোকটি কেঁদে দিয়ে বলল,
– ভিক্ষা না করলে খাব কী বাবা। ছেলে – মেয়েরা অনেক আগেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।আমি এই তিন দিন ধরে কিচ্ছু খাই নাই। এখন এই বুড়ো বয়সে কেউ কাজ দেয় না তাই তো ভিক্ষা করি এক মুঠো ভাতের আশায়।
আয়ান লোকটির চোখের পানি মুছে দিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে নিল। লোকটি যেতে চায়নি তারপরও আয়ান জোর করে নিয়ে গেছে। আদ্র ভাইয়ের কাজে মনে মনে গর্ববোধ করছে।
ওদিকে সবকিছু পুরোপুরি না জেনেই আয়ানের প্রতি একটা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে মৃধা চলে গেল
অফিসে গিয়েই আয়ান সর্বপ্রথমে বৃদ্ধ লোকটির খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। তারপর তারজন্য দারোয়ানের চাকরি বরাদ্দ করল। বৃদ্ধ আয়ানকে প্রাণ ভরে দোয়া করল।
—————————-
অফিসে আসা থেকেই একজনের পর একজনের ইন্টারভিউ নিয়ে যাচ্ছে আয়ান আর আদ্র। এই পর্যন্ত পাঁচ জনকে সিলেক্ট করেছে। আর বাকি একজন। ইন্টারভিউ নিতে নিতে টায়ার্ড হয়ে যাওয়ায় ওরা দশ মিনিট বিরতি নিয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় এখন বেলা দুটো বাজে। আয়ান কফির মগে চুমুক বসাতে বসাতে টেবিলের সাইডে থাকা ল্যাপটপে চোখ দিল যেখানে সিসি টিভি ফুটেজ কানেক্ট করা আছে। ল্যাপটপে নিভু নিভু চোখে মলিন মুখের মেয়েটিকে দেখে আয়ানের মনে অন্যরকম বিষ্ময় ধরা দিল। সে মনে মনে ভাবল,
-এই মেয়ে এখানে কী করছে? ইন্টারভিউ দিতে এসেছে? এ আবার কী ইন্টারভিউ দিবে?
আয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বেলে চাপ দিল। সাথে সাথে ম্যানেজার এসে হাজির। আয়ান ম্যানেজারকে ল্যাপটপটি দেখিয়ে বলল,
-ওই মেয়েটিকে ভেতরে পাঠান
চলবে,
(আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত দুদিন গল্প না দেওয়ার জন্য। আসলে আমি একটু পারসোনাল ঝামেলায় আছি। তবে ইনশাল্লাহ আবার নিয়মিত গল্প পাবেন)