কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ পর্ব-২৪

0
5429

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi

“পর্ব-২৪”

‘কী হলো উত্তর দিচ্ছ না কেন?’

আহিবা ভয়ে জমে আছে । যেন নড়তে ভুলে গেছে। দুহাত কচলাচ্ছে অবিরত। সে এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে ওইস্থানে। এদিকে আদ্র আহিবার অবস্থা দেখে হো হা শব্দ করে হাসতে শুরু করল। যেন কোনো জোকার দাড়িয়ে গেম শো করছে তার সামনে। আহিবা আদ্রের হঠাৎ আচরণে বেশ হতভম্ব। এটা কেমন হলো রাগ দেখিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে হাসতে শুরু করল কেন?লোকটা কী পাগল- টাগল হলো নাকি?
আহিবা ভয়টাকে দমিয়ে বলল,

–‘ কী হয়েছে? এভাবে কেন হাসছেন? পাগল হলেন নাকি?’

আদ্র কিঞ্চিৎ হাসি থামিয়ে বলল,

–‘ পাগল এখনো হইনি তবে তোমার মতো বউ থাকলে পাগল হওয়া সুনিশ্চিত। ‘

আহিবা অধর জোড়া গোল করে বলল,

–‘ কেন? কী করেছি আমি?’

–‘ আবার বলছ কী করেছ। অনেক বড় অপরাধ করেছ। সবথেকে বড় অপরাধ করেছ অন্যায়ের প্রতিবাদে না করে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে। আমি তোমার বর সেই হিসেবে তোদের সম্পূর্ণ রাইট আছে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার। তো আমি যখন তোমাকে ধমক দিলাম তখন তোমার অবশ্যই উচিত ছিল প্রতিবাদ করা। কিন্তু তুমি কী করলে ভয়ে সিটিয়ে গেলে। এমন করলে চলবে না মিসেস আদ্র চৌধুরী। আপনাকে আরও শক্ত হতে হবে।বুঝতে পেরেছেন। ‘

এই বলে আদ্র আহিবার নাক ধরে একটা টান দিয়ে ঘরের মধ্যে চলে যেতে নিল। কী মনে করে আবার একবার পেছন ফিরে আহিবার উদ্দেশ্যে বলল,

–‘ বাই দি ওয়ে, নার্ভাসনেসে তোমায় দারুণ মানায়। একদম রসগোল্লা টাইপ। এক কামড়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছে হয়। ‘

আদ্র আর দাড়াল না। দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। এদিকে আহিবা আদ্রের কথায় পুরো টাসকি খেয়ে বসে আছে। এই প্রথম আদ্রের মুখে এমন কিছু শুনল সে। লজ্জায় মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে তার।

————————–

ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে আছে মুগ্ধ। আজ থেকে তার জীবনের নতুন পথ চলার শুরু। খুব ইচ্ছে ছিল ভার্সিটিতে পড়ার কিন্তু সেটা যে কখনো পুরোন হবে ভাবতে পারে নি সে। আজ নিজের স্বপ্নপুরনের দোরগোড়ায় এসে নিজেকে অধিক সুখে সুখী মনে হচ্ছে তার।ভালো রেজাল্টের সুবাদে তার স্বপ্ন আজ পুরনের পথে।
হঠাৎ পেছন থেকে কোনো মেয়েলী কন্ঠস্বরে ধ্যান ভাঙ্গে মুগ্ধর।

–‘ এক্সকিউজ মি…. এভাবে গেট আটকে দাড়িয়ে আছেন কেন? সবাই তো ভেতরে যাবে নাকি? ‘

মুগ্ধ পেছন ফিরে দেখে তার সামনে এক অপরুপা মায়াপরী দাঁড়িয়ে আছে। মুগ্ধ এক ধ্যানে তাকে দেখছে। মেয়েটি মুগ্ধের এমন হ্যাবলাকান্ত দৃষ্টি দেখে সীমাহীন বিরক্তি নিয়ে বলল,

–‘ ও হ্যালো,, কথা বুঝতে পারছেন না নাকি? গেট থেকে সরে দাড়ান। সবাই ওয়েট করছে।’

মুগ্ধ মেয়েটির পেছনে চেয়ে দেখে অনেক স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। মুগ্ধ কিছুটা লজ্জিত হলো। সে মাথা নিচু করে ‘সরি’ বলে দ্রুত পাশে সরে গেল। মেয়েটি সহ সবাই তখন ভেতরে ঢুকে গেল। সবাই ভেতর প্রবেশ করলে মুগ্ধও ভেতরে যায়।

কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটছে আর বারংবার ওই মেয়েটির কথা মনে পড়ছে মুগ্ধের। এমন মেয়ে সে আগে কখনো দেখে নি। অপূর্ব মায়া ভরা তার দৃষ্টি। না চাইতেও তার চোখের সামনে শুধু সেই মেয়েটিই ভেসে উঠছে। কিন্তু কোথায় সেই মেয়েটি? আর দেখা মেলেনি তার সঙ্গে। আনমনে ক্লাস রুমে গিয়ে বেঞ্চিতে বসে পড়ে সে।আশপাশে দৃষ্টি নেই তার। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে যদি তার দেখা মেলে সেই আশায়।

————————–

অফিসে এসে আয়ান আর মৃধা যথেষ্ঠ দুরে দুরে থাকছে। এর একমাত্র কারণ হলো নয়ন ন্যায়রার মনে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করা। ওরা যত দুরে থাকবে শত্রুরা তত খুশি হবে এবং মনে করবে তাদের প্ল্যান সাকসেস। আর তখনই তারা হাল ছেড়ে দেবে এবং সেই সুযোগে তখন ওরা আক্রমণ করবে।

আজ ওদের অফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে। মিটিং টির জন্য ওদের অফিস থেকে বাহিরে যেতে হবে। কারণ মিটিং হবে রেস্টুরেন্টে। বাহিরের কোম্পানির সঙ্গে মিটিং করে তারপর কিছু খাওয়া দাওয়া করে মিটিং শেষ করবে। আয়ানের পি.এ এখনো ন্যায়রাই আছে। সেই সুবাদে ওদের সঙ্গে ন্যায়রাও যাবে। আয়ান মৃধাকে সঙ্গে নিতে চাইলে ন্যায়রা তার ঘোর বিরোধিতা করে বলে,

–‘ এটা কেমন কথা আয়ান। মানছি মৃধা তোর বউ তাই বলে কী তুই অফিসের নিয়ম ভঙ্গ করবি? মৃধা যে পদে আছে সেখান থেকে সে কিছুতেই মিটিংয়ে এটেন্ড করতে পারে না। এটা অনধিকার চর্চা করা নয় কী,আয়ান?’

আয়ান রেগে গেল ভীষণ। সে চোখ মুখ ফুলিয়ে বলল,

–‘ সেটা তোর থেকে জানতে হবে না। তুই তোর চড়কায় তেল দে। মৃধা এভাবে এই কোম্পানিতে চাকরি করুক সেটা আমরা কেউ চাইনি। আফটার অল, সেও আমাদের বিজনেসের অংশীদার। কিন্তু তাকে বোঝানো অসাধ্য। তাই আমরা বাধ্য হয়েই এটা মেনে নিচ্ছি। তুই বরং এ বিষয়ে কথা না বললেই বেটার হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছিস।’

ন্যায়রা আয়ানের কথা শুনে চরম অবাক হলো।এতো তাড়াতাড়ি মৃধার জন্য আয়ানের দরদ দেখে সে প্রচন্ড জেলাস। সেই সঙ্গে সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না আয়ান কী করে মৃধাকে সাপোর্ট করছে। তারা যেটা করেছে তারপর তো মৃধাকে আয়ানের সহ্য করারই কথা নয়। সে মনে মনে ভীষণ চিন্তিত হলো।

এদিকে মৃধা বাহির থেকে ওদের দু’জনের সব কথাই শুনল। আয়ানের প্রতি সে ভীষণ খুশি। আয়ান তার হয়ে ন্যায়রাকে এতগুলো কথা শুনিয়েছে এটা ভাবতেই অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছে তার অন্তঃকরণে। সেই সাথে সে ভাবছে অন্যকিছু। এভাবে আর নয়৷ সেও এবার থেকে তার সমস্ত অধিকার বুঝে নেবে। ঘরে এবং বাহিরে যেটা তার সেটা সে আদায় করে নেবে।

————————–

‘এক্সকিউজ মি, স্যার এসেছে উঠে দাড়াও।’

সেই একই সুমিষ্ট কন্ঠস্বরে অস্থিরতার ছেদ ঘটে মুগ্ধের। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সেই কাঙ্খিত মুখশ্রী তার পানে চেয়ে আছে। মুগ্ধও চেয়ে আছে তার দিকে অপলক। মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

–‘ কী হলো কী দেখছ এভাবে? সামনে দেখো স্যার এসেছেন। ‘

মুগ্ধ থতমত খেয়ে বলে,

–‘ ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ। ‘

তারপর দুজনেই ক্লাসে মন দেয়। মুগ্ধ শুধু ভাবছে এই মেয়েটা কখন তার পাশে এসে বসল।

একে একে সবাই পরিচয় দিচ্ছে তাদের ক্লাস টিচার মনিরুল ইসলাম স্যারকে। আজকেই তাদের প্রথম ক্লাস ভার্সিটিতে এজন্য পরিচয় পর্ব খুবই জরুরি। অনেকের পরে এবার এলো মুগ্ধর পালা। সে তড়িঘড়ি করে বলে দিল তার নাম মুগ্ধ খান। এবার সে অপেক্ষায় আছে তার পাশে থাকা মেয়েটির নাম জানবার। স্যার মেয়েটিকে তার নাম জিজ্ঞেস করতেই সে খুব নমনীয় ভাবে বলল তার নাম মুন্নিয়ারা মৌ। তারপর পর্যায়ক্রমিক ভাবে সবার পরিচয় নিয়ে স্যার ক্লাস শুরু করলেন।এদিকে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে মৌ এর দিকে বারংবার দৃষ্টি পড়ছে মুগ্ধের। মৌ নামটি মস্তিষ্কে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে তার।

————————-

বেলা বারোটায় অফিস থেকে সবাই বের হলো মিটিং এর উদ্দেশ্যে। আজ মৃধা একটি কাঁচি হলুদের সঙ্গে কালো মিক্সিং শাড়ি পরেছে। মূলত মায়ের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে তার এই শাড়ি পড়া। তার মা বলেছে বিয়ের পর মেয়েদের শাড়ি পড়া উচিত। বাড়িতে না হলেও অন্তত বাহিরে বের হলে সে যেন শাড়ি পড়ে। এজন্য মৃধা আজ শাড়ি পরে অফিসে এসেছে। আয়ানের দৃষ্টি কোথাও একটা বারবার মৃধাকে পর্যবেক্ষণ করছে। তার মন অন্যকিছু আবদার করছে বারেবার।

মিটিংয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে উঠতে গিয়ে ঘটল এক ঘটনা। আয়ান ড্রাইভিং সিটে বসা ছিল। আয়ানের পাশে ন্যায়রা বসবে বলে দৃঢ় প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক সেসময়ই মৃধা এসে আয়ানের পাশে বসে পড়ে। ন্যায়রা মৃধার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়। মৃধা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। আয়ানও অনেক বেশিই খুশি হয় মৃধার এমন কাজে।

চলবে,

(প্রিয় পাঠকমহল….. রাতে বোনাস পার্ট দিবো। বারোটার মধ্যেও দিতে পারি কিংবা আরও লেট হতে পারে।)

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here