কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ পর্ব-২৫

0
5128

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-২৫”

গাড়ি এসে থামল রেস্টুরেন্টের সামনে। একে একে সবাই নেমে গেল গাড়ি থেকে। তারপর সকলে রেস্টুরেন্টের পঞ্চম তলায় উঠল। সেখানে আগে থেকেই তাদের ডিলার কোম্পানি অপেক্ষা করছিল। তাদের এই ডিল টা একটা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে। বিদেশ থেকে তিন জন
ওনার এসেছে তারা আয়ানদের কোম্পানি থেকে পোশাক তাদের দেশে রপ্তানি করতে চায়। এই ডিলটা হলে আয়ানদের জন্য অনেক বড় বেনিফিট।

সবাই বিদেশি লোকগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিল। তারপর তারা নানারকম আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে ডিলটি সম্পন্ন করল। বিদেশি ডিলারদের মধ্যে একজন ছিল একটু অল্প বয়সী। সেই লোকের দৃষ্টি শুরু থেকেই কাজের দিকে কম কিন্তু মৃধার দিকে বেশি। এই ব্যাপারটা সবার দৃষ্টি অগোচর হলেও এড়ায়নি আয়ানের দৃষ্টি। সে ব্যাপারটা বারংবার লক্ষ্য করেছে। ডিল যখন কনফার্ম তখন সেই অল্প বয়স্ক লোকটি বলে উঠল,

–‘ We have a condition.We are willing to make a deal if we meet that.(আমাদের একটা শর্ত আছে। সেটা মানলে আমরা ডিল করতে রাজি।)’

আয়ান, আদ্র সহ উপস্থিত সবাই কৌতুহলী হয়ে ওঠে। সবকিছু ঠিকঠাক তারপর আবার কীসের শর্ত। আয়ান হাসিমুখে জবাব দেয়,

–‘What are the conditions? We are ready to listen.(বলুন কী শর্ত?আমরা প্রস্তুত শোনার জন্য।)

বিদেশি লোকগুলো তখন এক অমায়িক হাসি দিল।যেন তারা আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। হাসি কিঞ্চিৎ থামিয়ে সেই অল্প বয়স্ক লোকটি মৃধার দিকে ইশারা করে বলল,

–‘She is very beautiful and sexy.We want him for one night.(সে খুব সুন্দরী এবং সেক্সি। তাকে আমাদের চাই এক রাতের জন্য।)

লোকটির কথা শেষ হতে দেড়ি তো আয়ানের তাকে আক্রমণ করতে দেড়ি নেই। উড়াধুড়া কিল ঘুষি মা’র’তেই আছে আয়ান লোকটিকে। আদ্রও ভীষণ রেগে গেছে। সে উঠে বাকি দুজনকে টার্গেট করেছে। এদিকে লোকগুলো দিশাহারা হয়ে তাদের বারংবার বলছে,

–‘ What are you doing? We made a mistake.Please leave us.Please stop. (এটা কী করছেন আপনারা? আমাদের ভুল হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের ছেড়ে দিন।)

কে শোনে কার কথা। আয়ান তো মনে হচ্ছে যেন পাগল হয়ে গেছে। আদ্রকেও থামানো যাচ্ছে না। লোক গুলো প্রায় আধমরা হয়ে গেছে মা’র খেয়ে। এদিকে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বাধ্য হয়ে পুলিশকে ফোন করে দিয়েছে। মৃধা কী করবে কিছু ভেবে না পেয়ে অবশেষে আফরোজ চৌধুরীকে ফোন করে দ্রুত এখানে আসতে বলেছে। ন্যায়রা সুযোগ বুঝে আগেই পালিয়েছে।

————————-

‘We can be friends?’

মৌ কিয়ৎক্ষণ চেয়ে রইল মুগ্ধের দিকে। সে আবার সবার সঙ্গে বন্ধুক্ত করে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়ার সবকিছুই তাকে ভেবে চিন্তে করতে হয়। বলা তো যায় না যদি এক কদম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তাহলে তার পরিস্থিতিও হয়তো তার বোনের মতোই হবে। এই সমাজ বড্ড নিষ্ঠুর। এই সমাজে মেয়েদের জীবন বড়-ই কঠিন। মুগ্ধকে পর্যবেক্ষণ করে কেন জানি খুব করে তাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে মৌ এর। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপন ইচ্ছেই মৌ এর মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল,

–‘ অবশ্যই, কেন নয়?’

মুগ্ধ এই উত্তরটার জন্যই অপেক্ষায় ছিল। মুগ্ধ ভীষণ খুশি হলো। সে অধরজোড়া প্রসারিত করে বলল,

–‘ থ্যাংক’স ‘

মৌ এর ওষ্ঠে মৃদু হাসির রেখা। সে উত্তরে ছোট্ট করে বলল, হুম। অতঃপর দুজনে টুকটাক কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে গেল ভার্সিটি থেকে।

———————–

দশ মিনিটের মধ্যে রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেল আফরোজ চৌধুরী। তার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও এসে হাজির। আফরোজ চৌধুরীকে দেখতেই পুলিশ টিমের সকলে তাকে সালাম জানাল। তিনি গিয়ে আদ্র আর আয়ানের হাত থেকে ওদেরকে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। আদ্র আর আয়ান তবুও শান্ত হতে পারছে না। আয়ান তো ছুট্টে গিয়ে আবার কয়েকটা কিল, ঘুষি দিয়ে এসেছে। আফরোজ চৌধুরী অনেক কষ্টে ওদের ওখান থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। তারপর নিজে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বললেন,

–‘ অফিসার বুঝতেই পারছেন এদের অপরাধ টা ঠিক কী। ওরা ভুলেই গিয়েছিল এটা বাংলাদেশ। ওদের দেশের মতো এখানে মেয়েদের শরীর বিক্রির মধ্যদিয়ে ডিল পাস হয় না। এখানে নারীদের সম্মান দেওয়া হয়। মৃধা আমার নাতনি বলে বলছি না ওর জায়গায় অন্য কেউ হলেও আমি এদের বিরুদ্ধে একই সিদ্ধান্তই নিতাম। আপনি ওদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুন।’

অফিসার আফরোজ চৌধুরীকে আস্বস্ত করে বললেন,

–‘ জ্বী স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। এদেরকে আমি দেখে নিচ্ছি। তবে এদের তো আগে হসপিটাল নিতে হবে। আপনার নাতিরা এদের যে অবস্থা করেছে তাতে তো রিস্ক আছে।কোর্টে চালান দেওয়ার আগে কোনো কিছু হয়ে গেলে অনেক বড় বিপদে হয়ে যাবে।’

–‘ যেটা ভালো বুঝেন করেন। ‘

অতঃপর পুলিশ চলে গেল শয়তান গুলোকে নিয়ে। আর আফরোজ চৌধুরী রেস্টুরেন্টে কী কী ক্ষতি হয়েছে তা জেনে নিয়ে সেরূপ ক্ষতি পূরণ দিয়ে নিজেও চলে যান বাড়িতে।

—————————-

বাড়িতে আসতেই সবাই ওদের দেখে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়ল। ধস্তাধস্তির সময় আদ্রের হাতে অনেকটা কেটে গেছে। আর আয়ানের ঠোঁটের কোণে, গলায় কেটে গেছে। গাড়িতে মৃধা বারবার এটা খেয়াল করেছে কিন্তু ওদের যেই পরিমাণে রেগে থাকতে দেখেছে তাতে করে কিছু বলার মতো সাহস করে উঠতে পারেনি।

আয়েশা চৌধুরী ওদের এই অবস্থা দেখে বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

–‘ কী হয়েছে তোমার? এই অবস্থা কী করে হলো?’

আদ্র আর আয়ান ছোট্ট করে উত্তর দিল,’ কিছু হয়নি’।অতঃপর দুজনেই উপরে চলে গেল। ওরা চলে যেতেই মৃধাকে সবাই মিলে চেপে ধরল। অগত্যা মৃধা তখন সবাইকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। ঘটনা বলা শেষ হলে মৃধা আহিবাকে আদ্রকে শান্ত করতে পাঠিয়ে দিল আর নিজেও চলে গেল আয়ানের কাছে।

শাওয়ার নিয়ে সবে মাত্র বের হয়েছে আয়ান। চোখ জোড়া অসম্ভব লাল রঙে আবৃত। হয়তো ভেতরকার রাগটা এখনো দমন করতে পারে নি। ঠোঁটের কোণে কাটা জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায় সে। আয়নার মধ্যে মৃধার মুখশ্রী দৃশ্যমান। আয়ান সেদিকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আলতো স্বরে বলল,

–‘ কী হয়েছে? কিছু বলবে?’

মৃধা আমতা আমতা করে বলে,

–‘ আপনার ঠোঁট আর গলায়…’

মৃধার কথা অসম্পূর্ণ। আয়ানের দৃষ্টি শীতল।সে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দাড়ায় মৃধার সন্নিকটে। অতঃপর ভ্রু কুঁচকে বলল,

–‘ তো…..’

মৃধার দৃষ্টি চঞ্চল।

–‘ তো মেডিসিন নেওয়া প্রয়োজন। নয়তো ইনফেকশন হতে পারে।’

আয়ান মনে মনে খুশি হলো তবুও মুখে কাঠিন্যতা অব্যাহত রেখে বলল,

–‘ তাতে তোমার কী মেয়ে? ‘

মৃধা অস্বস্তিবোধ করছে ভীষণ। কী দরকার ছিল এই লোককে ঔষধ লাগিয়ে দিতে আসার। মনে মনে নিজেকেই হাজার গালি শোনাচ্ছে সে। মৃধার অস্থিরতা দেখে আয়ান আর তাকে বেশি ঘাটল না চুপচাপ খাটের কোণে গিয়ে বসে মৃধার উদ্দেশ্য বলল,

–‘ কারও যদি আমার প্রতি বেশি দরদ হয় তাহলে সে যেন এসে মেডিসিন টা লাগিয়ে দিয়ে যায়।নয়তো আমার মেডিসিনের কোনো প্রয়োজন নেই।’

মৃধার অস্বস্তি যেন আরও বেড়ে গেল। তবুও নিজেকে সংযত করে মেডিসিন বক্সটি নিয়ে আয়ানের সামনে বসল সে। বক্স থেকে একটি মলম বের করে শুরুতে অগ্রসর হলো আয়ানের গলার দিকে। অবিরত হাত কাঁপছে তার। কাঁপা-কাঁপা হাতে মলমের প্রলোপ লাগিয়ে দিল আয়ানের গলায়। এবার পালা ঠোঁটের। আরও কিছু মলম নিয়ে যেই না মৃধা আয়ানের ঠোঁটে লাগাতে যাবে ঠিক তখনই অদ্ভুত কম্পনে তার সারা শরীর কম্পিত হতে শুরু করল। ঠোঁটের ঠিক কাছাকাছি নিয়ে মৃধা যেন স্বত্ব হয়ে গেল। তারপর চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ঝট করে মলমটি লাগিয়ে দিল। মৃধার যেন ধরে প্রাণ ফিরে এলো। সে দ্রুত উঠে চলে যেতে নিচ্ছিল কিন্তু তার আগেই কেউ তাকে হেঁচকা টানে বক্ষঃস্থল বন্দী করে নিল। আচমকা আক্রমণে মৃধা চমকিত হলো ভীষণ। চোখ তুলে ওপরে চাইতেই চোখাচোখি হলো চারটি চোখ। মৃধার কম্পন এবার আরও বেড়ে গেল। অধর জোড়া ঠকঠকিয়ে কাঁপছে। আয়ানের ঘোর লাগা দৃষ্টি সেই অধরে আবদ্ধ। কিয়ৎক্ষণ সময় ব্যয় না করেই মুহূর্তেই আয়ান নিজের অধর দিয়ে দখল করে নিল সেই কম্পিত অধর জোড়া।

চলবে,

(প্রিয় পাঠকমহল,,,, গতকাল বোনাস পার্ট দিতে চেয়েও না দিতে পারার জন্য দুঃখিত। অর্ধেক লিখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সারাদিন আর সময় পাইনি। ঘুম আসলে আমি ঠিক করে গুছিয়ে লিখতে পারিনা ফলে পর্ব অগোছালো হয়ে যায়। এজন্য গতকাল আর বোনাস পার্ট দিতে পারিনি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here