কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ পর্ব-২৭

0
5958

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
–পর্বঃ২৬
___________________

গুটিগুটি পায়ে মায়ের ঘর থেকে বের হচ্ছে মৃধা। দুপুরের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর সেই যে এসে মায়ের ঘরে যাতক নিয়েছে ভুলেও আর ওমুখো হয়নি। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল নিজেও জানে না। ঘুম ভেঙে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কেউ তাকে দুপুরের খাবার খেতেও ডাকে নি। খিদে তে পেটের মধ্যে রীতিমতো ছুঁচো দৌড়চ্ছে তার। এখন আর কিছু মুখে না দিলেই নয়।

খাবার উদ্দেশ্যে নিচে নামল মৃধা। নিচে তেমন কারো উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় নয়। সে চুপচাপ কিচেনে চলে গেল। সেখানে একজন শেফ রাতের খাবার রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মৃধা তাকে বলে তার জন্য ঝাল ঝাল করে এক বাটি নুডলস তৈরি করে দিতে ৷ এই অসময়ে ভাত খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তার। অর্ডার করে মৃধা এসে সোফায় গাঁ এলিয়ে দেয়। এসি চলছে যার ফলে হাল্কা ঠান্ডা লাগছে তার। তবুও গুটিসুটি মে’রে সোফায় পড়ে আছে। এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি তার। হঠাৎ মুগ্ধ পেছন থেকে এসে আচমকা মৃধাকে “ভাউ” বলে ভয় দিল। মৃধাও সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসল। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে তার। মুগ্ধ মৃধার রিয়াকশন দেখে পেট চেপে ধরে হাসছে। একটু স্বাভাবিক হতেই মৃধা রেগে-মেগে মুগ্ধকে ধাওয়া করতে লাগল সারা বাড়িময়। মুগ্ধ কম যায় না সমানতালে ছুটছে। ছোটাছুটির এক পর্যায়ে মৃধা কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয়। ভয়ে সে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগেই কোনো শক্ত হাতের বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে মুহূর্তেই। পিটপিট করে চোখ মেলে দেখে আয়ান তার কোমর জড়িয়ে আছে। মৃধা বেশ লজ্জা পায়, সাথে অস্বস্তি। এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ জোরে সিটি মা’রে। সেই সিটির শব্দে বাড়ি শুদ্ধ সবাই ড্রইং রুমে উপস্থিত। ততক্ষণে আয়ান মৃধাকে ছেড়ে দিয়েছে। মৃধা দ্রুত অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাড়িয়ে পড়েছে। সবার মধ্য থেকে আফরোজ চৌধুরী উদ্বীগ্ন গলায় বললেন,

” কী হয়েছে এখানে? শব্দ হলো কীসের? আর তোমরাই বা এতো চুপচাপ কেন?”

আয়ান, মৃধা দুজনেই চুপ। মনে হচ্ছে ওদের মুখ তালাবন্ধী। ওদের চুপ দেখে মুগ্ধ মুখ খুলে বলল,

” তেমন কিছু না নানাভাই। এমনিতেই আমি সিটি দিয়েছিলাম। ”

আয়েশা চৌধুরী ছেলের উত্তরে রেগে গিয়ে বললেন,

” এমনটা কেউ করে। আমি আর তোমার নানাভাই জরুরি একটা বিষয়ে কথা বলছিলাম। দিলে তো সবটা নষ্ট করে। ”

আফরোজ চৌধুরী আয়েশা চৌধুরীকে থামানোর উদ্দেশ্যে বলে,

” আহা, বকছিস কেন? ওরা মজা করবে না তো কেন মজা করবে? ওদের তো এখন হাসি মজায় দিন অতিবাহিত করার সময়। যাক বাদ দে, চল আমরা আমাদের আলোচনা শেষ করে আসি। ”

আয়েশা চৌধুরী বাবার কথায় তাল মিলিয়ে বললেন,

” হ্যাঁ বাবা চলো। ”

ওনারা চলে গেলেও থেকে গেল আদ্র আর আহিবা। আদ্র সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে এসে আয়ান আর মৃধার উদ্দেশ্যে বলল,

” মুগ্ধ সিটি টা কেন দিয়েছিল সেটা নিশ্চয়ই তোরা জানিস। ”

আয়ান, মৃধা দুজনেই আমতা আমতা করে বলল,

” আমরা কী জানি। যে বাজিয়েছে সেই জানে।”

অতঃপর দু’জনে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়ল। মৃধার জন্য তৈরি নুডলস টা একজন মেড সার্ভেন্ট তার ঘরে পৌঁছে দিয়ে এলো। ওরা চলে যেতেই মুগ্ধও সেখান থেকে দৌড়ে পালালো। এদের কান্ড দেখে আদ্র আর আহিবা দুজনেই হেসে কুটিকুটি।

____

রাতে মৃধা আয়ানের থেকে কেমন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আয়ানের বিচক্ষণ মস্তিষ্ক এটা বুঝতে খুব একটা দেড়ি করে নি। এই পলায়নের কারণ ও অবশ্য আয়ানের জানা। তবুও বউ এভাবে পালিয়ে বেরালে কারো কী ভালো লাগে। আয়ানের এবার রাগ হচ্ছে ভীষণ। ঠিক তখনই মৃধা ঘরে প্রবেশ করে উদ্দেশ্য তার একটা প্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়া। মৃধা ঘরে ঢুকতেই আয়ান আর এক মুহুর্ত দেড়ি না করে খপ করে মৃধার হাত চেপে ধরল। অতঃপর ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলল,

“এই মেয়ে এভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন? সামান্য একটা কিস ই তো করেছি তাতে এতো পালানোর কী আছে? আর যদি অন্য কিছু করতাম তাহলে তো তোমাকে খুঁজে পাওয়াই যেত না।”

মৃধা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্যকিছু বলতে আয়ান কী বোঝাতে চেয়েছে? এই লোকটা আস্ত অসভ্য। কোনো কিছু মুখে আটকায় না। মৃধার ভাবনায় ছেদ ঘটে আয়ানের ধমকে,

” কী হলো কথা বলছ না কেন?”

মৃধা প্রাণপনে চেষ্টা করছে আয়ানের থেকে মুক্তি পাওয়ার। আয়ান ফের ধমক দিলে মৃধা ভয়ে কেঁপে উঠল। তবুও মুখ খুলল না। হঠাৎই কী মনে করে সে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে বসল। আয়ানের হাতে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল। ব্যথায় আয়ান মৃদু আর্তনাদ করে সঙ্গে সঙ্গে মৃধার হাত ছেড়ে দিল। এই সুযোগে মৃধা দৌড়ে পালালো ঘরের কাছে। দরজার কাছে গিয়ে সে আবার পেছন ফিরে আয়ানকে জিহবা দেখিয়ে ভেঙিয়ে ছুট্টে চলে গেল। আয়ান যেন বোকা বনে গেল। সে ক্ষতস্হানে ডলতে ডলতে বলল,

” কী মেয়ে রে বাবা। আস্ত বজ্জাত। ”

____

“আপনার কী কিছু প্রয়োজন?”

আদ্র এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করতে দেখে কথাটি বলল আহিবা। আদ্র আহিবার দিকে তাকিয়ে ভাবুক চেহারায় বলল,

” হুম। অফিসের একটা আর্জেন্ট ফাইল। এখানেই রেখেছিলাম কিন্তু এখন পাচ্ছি না। ”

আহিবা কোনো কথা না বলে আলমারি থেকে আদ্রের ফাইলটা বের করে দিয়ে বলল,

” ফাইল টা আমিই তুলে রেখেছিলাম। যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায় এটা ভেবে। ”

আদ্র ফাইল টা পেয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। সে আহিবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

” থ্যাংকস ”

আহিবা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

” আপন জনদেরকে ধন্যবাদ দিতে নেই।”

আপনজন কথা টা বারংবার আদ্রের কানে বারি খেতে লাগল। সে মনে মনে ভাবল, সত্যিই কী তাহলে আহিবা তার আপনজন হয়ে উঠতে পেরেছে? নাকি সে আহিবাকে আপনজন বলে মেনে নিতে পেরেছে?

আদ্রের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আহিবা প্রশ্ন করল,

” আপনার হাতের ব্যথা কী একটুও কমেছে? কত করে বললাম ঔষধ টা আমি লাগিয়ে দেই কিন্তু মহাশয় তা তো দিলেন-ই না উল্টে নিজে নিজে পাকামো করলেন। ”

আহিবার উক্তিতে আদ্র হেসে দিয়ে বলল,

” মহাশয়ী, কমেছে আমার ব্যথা। পরের বার অবশ্যই আপনি ঔষধ লাগিয়ে দিবেন। ”

আহিবা মুখ ভার করে বলল,

“থাক তার কোনো প্রয়োজন নেই।”

আদ্র আহিবার গাল আলতো হাতে টেনে দিয়ে বলল,

” রাগ করছেন কেন ম্যাডাম। বললাম তো সরি। এরপর থেকে আমার সব দায়িত্ব আপনার। ”

আহিবা না চাইতেও হেসে দিল। সেই হাসিতে তাল মিলিয়ে হাসল আদ্র।

____

অফিসে আসতেই ন্যায়রা আয়ানকে চেপে ধরেছে। তার কথা হলো, আয়ান কেন মৃধার জন্য এতটা ডেস্পেরেট হয়ে পড়েছিল। তবে কী আয়ান তাকে ভালবাসে? আয়ানের উত্তর শোনার জন্য ব্যাকুল ন্যায়রা। বিরক্তিতে আচ্ছন্ন আয়ানের তখন সাবলীল উত্তর,

” হ্যাঁ, আমি মৃধাকে ভালবাসি। তাতে তোর কীসের প্রবলেম। আমি আমার বউকে ভালবাসতেই পারি। এতে তোর ইন্টারফেয়ার করার কী আছে? ”

ন্যায়রা উত্তেজিত হয়ে চিল্লাতে শুরু করে বলল,

” এসব তুই কী বলছিস? এটা কী করে সম্ভব? এতকিছু করার পরও তুই কী করে ওই মৃধাকে ভালবাসতে পারিস? আমাদের প্ল্যান কী করে ফ্লপ হলো। আমি আর নয়ন…….”

ন্যায়রা আরও কিছু বলতে গিয়ে হঠাৎ থমকে গেল। উত্তেজনায় অনেক কিছু বলে ফেলেছে। সে ভীত চোখে আয়ানের দিকে তাকাল। আয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

” তুই আর নয়ন, কী বল? ”

ন্যায়রা ভয়ে ডোক গিলে বলল,

” কই কিছু না তো।”

আয়ান তাচ্ছিল্য হেসে বলল, ‘ওহ তাই।’ তারপর ফোন থেকে কিছু একটা বের করে ন্যায়রার সামনে তুলে ধরল। ফোনের স্কিনে তাকাতেই ন্যায়রা শকড। ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে তার।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here