#কাউকে_চাই_না
#মাশরাফি_আল_মেহেদী
#পর্ব_৮
আমার খালি ভাবির কথা ভেবে খারাপ লাগছে। আহারে!!!!
এত দিনের সংসার। আর আজ কিনা তারই সামনে ভাইয়া আবার বিয়ে করতে যাচ্ছে। তাও আবার আমারই PA কে?🙄🙄
নাহ। এইটা মানা যায় না। আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।
আমি আব্বুকে বললাম, আব্বু আমার কিছু কথা বলার আছে।
আব্বু, কি কথা??
আমি, তোমরা এইটা ঠিক করছো? বাবা মা হয়ে ভাইয়াকে আটকাও।
আব্বু, ওই আবার কি করলো যে আটকাবো?
আমি, আটকাবে না মানে?? তোমরা এইখানে কি করতে এসেছি?? ভাইয়ার জন্যে মেয়ে দেখতে না?? দেখো ভাইয়ার মেয়েও আছে আর তোমরা…….
আমাকে গোটাটা না বলতে দিয়েই আব্বু বললো,
আব্বু, কি বললে?🙄 আমরা তোমার ভাইয়ার জন্যে মেয়ে দেখতে আসবো কেনো?
আমি, তাহলে কি তোমরা জন্যে?🙀
আব্বু, পাগল হয়ে গেলে নাকি?? আমরা এইখানে এসেছি তোমার বিয়ের জন্যে মেয়ে দেখতে। এখন চুপচাপ বসে থাক।
আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে এইখানে নিয়ে এসেছে। অথচ আমার কাছে বলেও নি। মনে হচ্ছে আমার বিয়েতে আমার কোনো মতামতের কোনো মূল্যই নেই। এখন তো মনে হচ্ছে যে আম্মুর আদৌ কোনো অসুখ ই হয় নি। আমাকে এইখানে নিয়ে আশার পায়তারা। আম্মুকে দেখেতো অসুস্থ মনে হচ্ছে না। এখন এইগুলো ভেবে কোনো লাভ নেই। কিভাবে এইখান থেকে বাঁচা যায় সেইটা ভাবতে হবে। কেনো যে আসতে গেলাম রাজশাহী😔
আব্বু, মেয়ে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আজকেই আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিতে চাই। যদি আপনাদের কোনো সমস্যা না থাকে।
নিধির বাবা, নাহ। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমাদেরও ছেলেকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
আব্বু, তাহলে আর দেরি কিসে? আমি কাজীকে কল দিচ্ছি। তিনি এসেই শুভ কাজটা সেরে ফেলবেন।
আমি শুধু নীরব দর্শকের মত সবাইকে দেখছি। কিছুই মাথায় আসছে না। আর আব্বুর আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে যেনো তারই বিয়ে। সে চট্টগ্রাম থেকে আসলাম আজকেই। আর আজকেই এত চাপ। নাহ কিছুতো একটা করতেই হবে। আর এইখানে সবার সামনে কিছু করতেও পারছি না। নিধিকে বিয়ে কর যাবে না। কারণ সবাই যদি জানতে পারে যে আমি আমার PA কে বিয়ে করেছি তাহলে আমার মানসম্মান থাকবে না। তাই আমাকে আপাতত এইখানটা সামলাতে হবে। তারপরে নাহয় কাল সকালে পালাবো।
অনেক ভাবনা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ করেই মাথা ব্যাথা শুরু করলো। প্রথমে হালকা থাকলেও পরে আস্তে আস্তে বেড়েই গেলো। নাহ আর পারা যাচ্ছে না।
তারপরে মাটিতে পরে গেলাম। আমাকে হঠাৎ করে পরে যেতে দেখে সবাই অনেক ভয় পেয়ে গেলো। আমাকে তুলে সোফায় ভালো করে শুইয়ে দেওয়া হলো। আমার মুখে পানি ছিটানো হলো। তাও আমার জ্ঞান ফিরছে না। শেষ মেষ নিধির বাবা তার পরিচিত একটা ডাক্তারকে কল করলো। ডাক্টার আধা ঘণ্টা পরে আসলো।
ডাক্টার আমাকে ভালো করে দেখলো। দেখে বললো,
ডাক্টার, দেখুন চিন্তার কিছুই হয় নি। ওনার তেমন কিছুই হয় নি। আমি সব সাভাবিক দেখলাম। হয়তো খাওয়া দাওয়ার সমস্যার কারণে প্রেসার কমে গেছে।
ডাক্টার তারপরে চলে গেলো। আমার জ্ঞান প্রায় 3 ঘণ্টা পরে আসলো। আব্বু কাজী সাহেবকে আসতে মানা করেছে। আমরা রাতের বেলা আমাদের বাসায় আসলাম। নিধির পরিবারের লোকজন ডিনার করার জন্যে অনেক রিকোয়েস্ট করলো। কিন্তু আমরা চলে আসলাম।
এসে আমি খেয়াল করে দেখলাম যে সবার মন খুব খারাপ। আমি অত খেয়াল করলাম না। তারপরে একসাথে ডিনার করে নিলাম।
রাতে শুতে শুয়ে ভাবছি যে আজকে বড়ো বাঁচান বেছেছি।😁😏😏
এইবার আসল কাহিনী বলি,
#চলবে
#কাউকে_চাই_না
#মাশরাফি_আল_মেহেদী
#পর্ব_৯
#ফ্ল্যাশব্যাক
আমি যখন কোনো কিছুই প্ল্যান করতে পারছিলাম না যে কিভাবে এইখান থেকে পালাবো। অর্থাৎ এই পরিস্থিতি থেকে বেঁচে ফিরবো সেইটা, তখনই ভাবলাম একটা জিনিসই আমাকে এইখান থেকে আপাতত বাঁচাতে পারবে। তাই সেই অনুযায়ী মাথা ঘুরে যাওয়ার ভাং ধরে ছিলাম। আর ডাক্তারের কথা?…
আমার লো প্রেসার অনেক আগে থেকেই। এইখানে আশার আগেও ছিল। এইটা নতুন কিছু না।
#বর্তমান
এখন প্রায় রাত 1 টা বেজে গেছে। আপাতত যেহেতু বাঁচা গেছে, তার মানে এই না যে আমি সম্পূর্ণ বেচেঁ গেছি। কারণ আজ না হয় কাল ঠিকই আমাকে ধরে বিয়া দিয়ে দিবে। তাই আমাকে যা করার আজকে রাতের মধ্যেই করতে হবে। তাই ঠিক করে নিলাম আমি পালাবো। আর যা করতে হবে এই রাতের মধ্যেই। আমি আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে নিলাম। আর বেরিয়ে পড়লাম। আর আমার কাছে 3 টা সিম থাকে। 2 টা সিমের নম্বর আমার বাড়ির লোকের কাছে আছে। বাকিটার নম্বর বাড়ির লোকেদের কাছে নেই। যাওয়ার আগে ভাবলাম যে একটা চিঠি লেখে যাই। নাহলে আবার অন্য কিছু ভেবে বসে থাকবে। তারপরে ভাবলাম না বেকার খাটনির দরকার নাই। উল্টা পাল্টা ভাবল ভাবুক। 😝
আমি আনুমানিক রাত 3 টায় বেরিয়ে পড়লাম। বেরিয়ে পড়তেই ভেবে নিলাম। কোথায় যাবো??
এখন আপাতত চট্টগ্রামে যাওয়া যাবে না। কারণ ঐখাকার ঠিকানা আমার বাড়ির লোকেদের কাছে আছে। আমি ঐখানে গেলে সবার আগে তারা চট্টগ্রামেই খোঁজ করবে আর ধরা খেয়ে যাবো। আর ধরা পড়লেই আমাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে। তাই ঠিক করলাম সকাল পর্যন্ত কোথাও অপেক্ষা করতে হবে। আর এই কয়েকঘন্টা এর জন্যে আমাকে হোটেলে উঠতে হবে। সেই অনুযায়ী একটা ছোট খাটো হোটেলে উঠলাম। আর আমি আমার সেই 2 টা সিম বাসায় থুয়েই এসেছি। আর আরেকটা সিম সাথে করে নিয়ে এসেছি।
___________________________________
সকাল 7 টায় ঢাকার রাজশাহী থেকে নওগার বাসে উঠালাম। ঠিক করলাম এইখানে 10 দিনের মতো কোথাও থেকে তারপরে আবার চট্টগ্রামে চলে যাবো। কারণ আমাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হলে সেইখানে যেতেই হবে। আর আশার সময় আমার 1 মাস চলার মত টাকা পয়সা নিয়েই এসেছি। তাই ওইসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
সকাল 9 টায় নওগাঁয় পৌঁছে গিয়েছি। এখন এইখানে নেমে সকালের নাস্তা করে নিলাম। এখন আমাকে থাকার একটা জায়গা দরকার। একটা 1 রুমের বাসা পাওয়া গেলেই সমস্যার সমাধান। আর নওগাঁর মত শহরে আর যাইহোক ব্যাচেলর ভাড়া পাওয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বলেই মনে হয়। কিন্তু যতটা সহজ ভাবছিলাম ততটা সহজ না। অনেকে দিতে রাজি হচ্ছে না। তাই ভাবলাম আজ আর হয়তো পাবো না। এখন কোনো একটা হোটেলে একটা রাত কাটানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। আসতে গিয়ে দেখলাম একটা 3 তলা বাসায় টুলেট দেয়া আছে। তাই ভাবলাম নম্বরে একটা কল দিয়েই দেখি। প্রথমবার কল দিয়ে রিসিভ করলো না। 2 য় বার রিসিভ করলো। কথা বলে বুঝতে পারলাম, মধ্যবয়স্ক লোক। সে বাড়িতেই আছে। তাই তার সাথে সামনাসামনি কথা হলো। সে রাজি হয়ে গেলো। আর এইরকম উর্তি শহরে বাড়ি ভাড়া খুব একটা বেশি হয় না। সেটা আগে থেকেই জানা ছিল। এ্যাডভান্স সহ প্রথম মাসে 10 হাজারের মত দেওয়া লাগবে। আর বাড়িটা ফার্নিশড না। তাই যাবতীয় জিনিসগুলো আমাকেই কিনতে হবে। আমার শুধু খাট আর সামান্য কিছু ফার্নিচার হলেই যথেষ্ট। তাই ভাবলাম আজকে রাত হোটেলেই কাটিয়ে কাল সব জিনিস নিয়েই বাড়িতে উঠবো।
চিন্তা অনুযায়ী সব কিছু করে পরের দিন বাড়িতে উঠলাম। 3 তলাটা আমাকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। 2 টা রুম। আর বাড়িওয়ালা থাকেন 2 তলায়। তার একটা স্ত্রী এবং 2 টা মেয়ে আছে। সকালে যখন আসি তখনই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তার স্ত্রীয়ের সাথে। আর তার একটা মেয়ে নওগাঁ তে নাকি থাকে না। আর আরেকটা মেয়ে স্কুলে গিয়েছে। তাই কারো সাথে দেখা হয় নি। এইটা নিয়ে অত চিন্তা করি নি। এখন একটু টানা ঘুমের প্রয়োজন। জানি না ঐদিকে কি হচ্ছে???🙈
___________________________________
সকালে আমাকে ভাবী ডাকতে এসেছিল, যে আজকেই আমাকে বিয়ে করতে হবে এইটা বলার জন্যে কিন্তু রুমের কোথাও আমাকে না পেয়ে সারা বাড়ি যেনো চিন্তায় ভাসতে শুরু করলো। আব্বু ভাইয়া আমায় ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষন পর পর। কিন্তু আমি তো সিমগুলো বাড়িতেই রেখে এসেছি। আব্বুর হঠাৎ মনে পড়ল আমার চট্টগ্রামের বাড়ির লান্ডলাইনের কথা। আমি ঐখানে থাকতে মাঝে মধ্যেই ঐটা থেকে কল করতাম। কিন্তু ওইটাও বেজে বেজে কেউ ধরছে না। বাড়িতে কেউ থাকলে তো ধরবে??😁
গোটা একটা দিন পার হয়ে গেলো তাও আমার কোনো খোঁজ না মেয়ে আব্বু ভাবলো যে পুলিশে ডায়েরি করবে। কিন্তু আম্মু আমার রুমে গিয়ে যেনো সবই বুঝতে পারলো। আমি কোথায় গিয়েছি সেটা বুঝতে না পারলেও আমি কেনো গিয়েছি বা আমি যে নিখোঁজ সেচ্ছায় হয়েছি সেইটা বুঝতে পারলো। পরে আরো ভালো করে খোঁজ খুঁজি করে আমার 2 টা সিম বালিশের নিচ থেকে পেলো। এখন সবই পরিষ্কার। তাই আব্বু আর গেলো না ডায়েরি করতে। বরং আমার উপর প্রচন্ড রাগ করতে থাকলো। আর ঐদিকে নিধিদের পরিবার সবটা জানার পরও যেনো মনে মনে আব্বুর উপর রাগ করলো। কারণ তারা ছেলেকে জর করে বিয়ে দিতে চাইছিল। এতসবের পিছনে আমার বাড়ির লোকগুলো আমাকেই দোষ দিচ্ছিল। তারা ভাবছে যে আমি তো পরিবারের মান রক্ষার্থে বিয়েটা করে নিলেই পারতাম। কিন্তু আমি ভেবে রেখেছি একবার তাদের কথা শুনেই আমার জীবন থেকে অনেক কিছুই চলে গেছে। আর না। তারউপর আমি যদি নিধিকে বিয়ে করি তাহলে আমার অফিসে আমাদের নিয়ে গোসিপ বেড়ে যাবে। সবাই ভাববে যে বস পিয়ে সবার সামনে সাভাবিক ব্যাবহার করলেও তোলে তোলে অনেক কিছু ঘটেছে।
এত কিছু চিন্তা করেই আমি পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঐদিকে এত কাণ্ড ঘটলো আর আমি এইদিকে আরামের ঘুম দিচ্ছি😏😝😝
#চলবে