কাউকে চাই না পর্ব_৫

0
3490

#কাউকে_চাই_না
#মাশরাফি_আল_মেহেদী
#পর্ব_৫

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো প্রায় এক মাস। এই কয়দিনে আমি বুঝতে পারলাম যে নিধি মেয়েটা কাজের ক্ষেত্রে কতটা যোগ্য। সে কাজে খুব একটা ফাঁকি দেয় না। প্রথম দিনে ধারণা করেছিলাম যে সে হয়তো একটু অলস প্রকৃতির। কিন্তু আমার ধারণাটিকে সে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে নিধি নিজেই। কিন্তু এখনও আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওকে কোথায় যেনো দেখেছি।

আমি, হেলো। নিধিকে আমার কেবিনে আসতে বলুন। তাড়াতাড়ি।

ফোন রাখার পরে প্রায় এক মিনিট পরই নিধি আমার রুমে হাজির হলো।

নিধি, may I come in sir?

আমি, হ্যাঁ। আসেন।

নিধি, বলুন কেনো ডেকেছেন?

আমি, মিস নিধি। আজকে বিকালে কি আপনার কোনো কাজ আছে?

নিধি, না স্যার। আর ঐটা তো অফিস আওয়ার।

আমি, আসলে আজকে একটা কোম্পানির সাথে মিটিং আছে। আর আপনি যেহেতু আমার PA তাই আপনাকে তো যেতেই হবে। আর তার উপর আপনি মোটামুটি বিশ্বস্ত। তাই বললাম

নিধি, নো প্রব্লেম। আজকে বিকালে আমার তেমন কোনো কাজ নেই।

আমি, ওকে। বিকালে রেডি থাকবেন।

নিধি, ওকে স্যার

এইবলে নিধি চলে গেলো তার কেবিনে। আর আমি আবার কাজে মনোযোগ দিলাম। এইভাবে বিকাল হয়ে গেলো।

______________________________________________________________________

বিকাল প্রায় 5 টা বেজে গেছে। এখন অগ্রায়ন মাসের শেষের দিকে। তাই এই সময়টাকে বিকাল বললে ভুল হবে। সন্ধাই বলা যায়। যাই হোক।

আমরা যথাভাবে সেই কোম্পানির হেড অফিসে পৌঁছে যাই। এই ডিলটা যদি কোনোভাবে পেয়ে যাই তবে কোম্পানি শীর্ষ 5 এ চলে আসবে। আর আমাদের ডিলটা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এসেছি।

আমাদের মত অনেক কোম্পানি এসেছে। যথা সময়ে মিটিং শুরু হয়। প্রথমেই আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে নিধি প্রেজেন্টেশন দিতে শুরু করে। আর সে অনেক ভালো উপস্থাপন করতে পারে সেটা অনেক আগেই দেখেছি। তাই তাকেই নিয়ে এসেছি। তার উপস্থাপনা দেখে সবাই রীতিমত অবাকই হয়ে গেছে। তাই শেষে ডিল টা আমরাই পেলাম। কন্ট্রাক্ট পেপার সাইন করে চলে আসতে আসতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেছে। অফিস থেকে বের হওয়ার পরে নিধি আমাকে বললো,

নিধি, স্যার আমরা কি এখন আবার অফিসে যাবো?

আমি, এখনও খোলা আছে যে যাবো?

নিধি, না তাই তো জিজ্ঞেস করলাম। তাহলে আমি রিক্সা করে চলে যেতাম তাই আর কি

আমি, থাক আর রিক্সায় যেতে হবে না। আমি ড্রপ করে দিচ্ছি। (আসলে আমরা বর্তমানে যেই এলাকায় এসেছি এইটা সহর থেকে একটু দূরে। এখানে মানুষজন খুব একটা আসে না। আর এই এলাকাও খুব একটা সুবিধার না। তাই নিধিকে একা যেতে দিলে কখন কি হবে তাতো বলা যায় না। তাই তাকে ড্রপ করে দিয়ে আসাটাই ভালো)

নিধি প্রথমে আসতে না চাইলেও আমার সাথে তর্ক করার সাহস না থাকায় আসতে রাজি হয়। আর আমার ড্রাইভার আজকে আসে নাই। কালকেই ছুটি নিয়ে গেছে। বিধায় আমাকেই ড্রাইভ করতে হচ্ছে আর নিধি পাশেই বসে আছে। গাড়ি চালাতে চালাতে একটা জঙ্গলের ভিতর চলে আসলাম। বলা যেতে পারে জঙ্গলের ভিতর দিয়েই যাওয়ার রাস্তা। আশার সময় হালকা আলো ছিল তাই হয়তো তখন অত কিছু মনে হয় নি। কিন্তু এখন অন্ধকারে পুরাই হরর মুভির মত লাগছে। আর চোখে নিধির তাকিয়ে দেখি আমি যেটা আশা করেছিলাম সেইটাই নিধি একটু ভয় পেয়ে গেছে। আর একটু এগোতেই গাড়িটা হুট করেই থেমে গেলো। নামার পরে বুঝতে পারলাম যে টায়ার পঞ্চার হয়ে গেছে। প্রথমে অতটা চিন্তা হয় নি। আর একটা চাকা তো রিজার্ভে থাকার কথা। কিন্তু পরে দেখলাম যে রিজার্ভে থাকা টায়ার টাতেও হওয়া নেই। এইবার মাথাটা গেলো সাংঘাতিক গরম হয়ে। এই জঙ্গলের ভিতর তো কোনো মেকানিক ও পাবো না। কি করবো কিছুই ভাবতে পারছি না।

এতক্ষণ নিধি গাড়ির ভিতর বসে থেকেই আমার রাগান্বিত কাণ্ড কারখানা দেখছিল আর হাসছিল।

নিধি, যাই হোক রেগে গেলে স্যার কে অনেক কিউট লাগে। (মনে মনে)

নিধি কিছুক্ষন পড়ে বাহিরে এসে দেখার পরে যেনো নিজেরও বেশ চিন্তা হতে শুরু করলো। তার উপর আরেকটা বিপদ। তাহলো এই জঙ্গলের ভিতর ফোনের নেটওয়ার্ক ও পাওয়া যায় না যে কাউকে ফোন করে এইখানে গাড়ি নিয়ে আসতে বলবো।

নিধি, কি করবেন স্যার? এইভাবে ছোটাছুটি করলে ত আর সমস্যার সমাধান হবে না।

আমি, তে কি করবো?

নিধি, সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি যদি কোনো রিক্সা বা গ্যারেজ পাওয়া যায়।

আমি, আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপরে আমি গাড়িটাকে ভালো করে লক করে সামনে হাটা ধরলাম।

নিধি, এইরে!!!!!!

আমি, কি হলো আবার?😏😳😳

নিধি, স্যার আমি না আসলে আমার পার্স আর ফোন সব গাড়িতেই রেখে এসেছি।

আমি, এটা আগে বলবে না?

নিধি, আমার তো কেবল মনে হলো।

আমি, আচ্ছা তুমি এইখানে দাড়াও আমি আমি গাড়ি নিয়ে আসছি

আমি দৌড় দিলাম সেইখান থেকে। আর নিধি দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তখনই নিধি দেখলো সামনে কয়েকটা লোক আসছে। কাছে আসার পরে নিধি বুঝতে পারলো যে তারা মাতাল। তাই নিধি পিছে উল্টা দিকে চলে আসতে গিয়েও তারাই আগে চলে আসলো।

ছেলেগুলোর একজন, দেখ আজকে মনে হয় আমাদের কপাল খুব ভালো। নাহলে পানি না চাইতেই সরবত চলে আসে?

আরেকজন, এই তোরা ওকে ধর ত।

নিধি, দেখুন আপনারা আমার কাছে আসবেন না। আমি চিৎকার করবো।

একজন, আরেহ বলে কি। এইখানে জোরে চিৎকার দিলেও কেউ আসবে না।

নিধি শেষ মেশ কোনো উপায় না পেয়ে দৌড় দেয়। আর সেই লোকগুলোও তার পিছনে পিছনে আসে।

একটা সময় এসে নিধি প্রায় তাদের হাতে ধরা পড়েই গেছে। আর নিধিও বুঝতে পেরেছে যে আজ তারা তার সর্বস্ব নিয়ে নেবে। একজন তার ওড়না ধরে টান দিল****

____________________________________________________________________________________________________________________________________________

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here